একটি মারাত্মক অবহেলা : রুশো, নিউটন, ফ্যন্সি ইত্যাদি বিজাতীয় নাম রাখা
সন্তানের সুন্দর নাম রাখা পিতা-মাতার কর্তব্য। পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের হক। তবে সুন্দর নাম বলতে- তা হতে হবে ইসলামসম্মত নাম। নাম অসুুন্দর বা আপত্তিকর হওয়ার কারণে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু সাহাবীর নাম পরিবর্তন করে সুন্দর অর্থবহ নাম রেখেছেন।
এক সাহাবীর নাম ছিল আব্দুল হাজার (পাথরের বান্দা)। নবীজী শুনলেন- তাকে আব্দুল হাজার বলে ডাকা হচ্ছে। তাকে ডেকে বললেন, তোমার নাম কী? সে বলল, আব্দুল হাজার। তখন নবীজী বললেন, বরং তুমি আব্দুল্লাহ (আল্লাহ্র বান্দা)। -আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস ৮১১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস ২৫৯০১
নামের অনেক গুরুত্ব। নামের মাধ্যমেই ব্যক্তির ব্যাপারে আমরা প্রাথমিক ধারণা পাই- সে মুসলিম না অমুসলিম। নামের অসঙ্গতির কারণে কখনো কখনো ব্যক্তির সাথে অযাচিত আচরণও হয়ে যায়। তাই আমাদের জীবনে নামের অনেক গুরুত্ব।
এমনিভাবে নামের সাথে সংস্কৃতি ও আদর্শের বিষয়টিও জড়িত। সন্তানের নাম রাখার ক্ষেত্রে কোন্ বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রাখা হচ্ছে- সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।
সন্তানের নাম রাখার সময় আমরা সুন্দর অর্থবহ নাম বা বড় ব্যক্তি বা প্রিয় ব্যক্তিত্বের নামের বিষয়টি খেয়াল রাখি। কোনো নবীর নামে সন্তানের নাম রাখি বা কোনো সাহাবী-তাবেয়ী কিংবা বড় কোনো বুযুর্গের নামে সন্তানের নাম রাখি। নবীজী থেকে আমরা এ বিষয়ে নির্দেশনা পাই। নবীজীর সন্তান ইবরাহীম জন্ম নিলে নবীজী ইরশাদ করলেন,وُلِدَ لِي اللَّيْلَةَ غُلَامٌ، فَسَمَّيْتُهُ بِاسْمِ أَبِي إِبْرَاهِيمَ.
রাতে আমার একটি পুত্রসন্তান জন্ম নিয়েছে। আমি আমার পিতার নাম অনুসারে (ইবরাহীম আলাইহিস সালামের নামানুসারে) তার নাম রেখেছি- ইবরাহীম। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩১৫
এ হল সন্তানের নাম রাখার ক্ষেত্রে ইসলামের আদর্শ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা হল, আমাদের সমাজের কিছু মুসলিম ভাই দ্বীনী বিষয়ে অজ্ঞতা বা স্বীয় দ্বীন ও সংস্কৃতির প্রতি হীনম্মন্যতার কারণে কিংবা বিজাতীয় কালচার বা ব্যক্তির প্রতি দুর্বলতার কারণে- তারা সন্তানের নাম রেখে দেন কোনো বিজাতির নামানুসারে; রুশো, নিউটন, ফ্যন্সি ইত্যাদি। এটি বড়ই দুঃখজনক বিষয়। আর এটি যদি হয় ইসলামী নামের প্রতি অবজ্ঞা বশত তাহলে তো ঈমানের খতরা।
কিয়ামতের দিন তো ব্যক্তিকে তার ও তার পিতার নামসহ ডাকা হবে। এখন কোনো কাফের খেলোয়াড়, অভিনেতা বা ইসলামের দুশমনের নামে সন্তানের নাম রাখা হল, তো কিয়ামতের দিন তাকে সকল সৃষ্টির সামনে ঐ কাফেরের নামে ডাকা হবে! সেদিন আমার সন্তানের কেমন লজ্জায় পড়তে হবে? আর এটা কেমন কথা, আমার সন্তান মুসলিম আর আমি তার নাম রেখে দিব কোনো অমুসলিমের নামানুসারে!
কারো নামে সন্তানের নাম রাখার একটি উদ্দেশ্য তো থাকে নেক ফাল; আল্লাহ যেন সন্তানকে অমুকের মত নেক বানান। কিন্তু কাফেরের নামানুসারে নাম রাখার দ্বারা একজন মুমিনের কী উদ্দেশ্য হতে পারে? ঐ কাফেরের মত হওয়া? নাউযু বিল্লাহি মিন যালিক!
তবে আমাদের এ আলোচনার দ্বারা এও উদ্দেশ্য নয় যে, ইসলামসম্মত নামই সবকিছু; সন্তানের ইসলামসম্মত নাম রাখলাম তো সব দায়িত্ব আদায় হয়ে গেল, তার দ্বীনী তরবিয়ত ইত্যাদি নিয়ে আর ভাবতে হবে না। বরং আমাদের উদ্দেশ্য হল, সন্তানের নাম রাখার ক্ষেত্রে আমাদের অবহেলা এবং এক্ষেত্রে ইসলামের কিছু নির্দেশনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা।
সুতরাং সন্তানের নাম রাখার ক্ষেত্রে আমরা বিষয়গুলো খেয়াল রাখব। আল্লাহ আমাদের সন্তানের নাম রাখার ক্ষেত্রে নবীজীর সুন্নাহ্ অনুসরণের তাওফিক দিন, তাদেরকে ইসলামী আদর্শের উপর গড়ে তোলার তাওফিক দিন এবং আমাদেরকে জীবনের প্রতিটি বিষয়ে ইসলামী আদর্শের উপর টিকে থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন