হজ্ব : হাদীস ও আছারের আলোকে
[চলতি ১৪৩৭ হিজরী (২০১৬) হজ্ব মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে অনেক আল্লাহর মেহমান বাইতুল্লাহ্য় পৌঁছে গেছেন। এ সময়ে প্রতি বছরেই দারুল ইফতাগুলোতে হারামাইন থেকে হাজ্বী সাহেবগণ বিভিন্ন মাসআলা নিয়ে ফোন করে থাকেন। এবারও এ ধরনের বহু ফোন আসছে। তার মধ্যে একটি ফোন ছিল এক হাজ্বী দেশ থেকে হজ্বের ইহরাম করে গিয়েছেন। তার সঙ্গীরা ওমরার ইহরাম করে গিয়েছেন। তার সঙ্গীরা ওমরার ইহরাম করছেন দেখে তাদেরকে তিনি তিরস্কারও করেছেন এ বলে যে, তোমরা না হজ্বে যাবা। কিন্তু মক্কা মুকাররমা গিয়ে তিনি তামাত্তুকারীদের সাথে ওমরা করে মাথা মুণ্ডিয়ে ফেলেছেন। অর্থাৎ এ হাজ্বী ইফরাদ ও তামাত্তুর পার্থক্য বুঝেন না। এ ধরনের মাসআলা শুনে হজ্ব-বিষয়ক মাসায়েল আলকাউসারে আবার ছাপার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছে। তাই যিলকদ ১৪৩০ হিজরী-নভেম্বর ২০০৯ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রকাশিত ‘হজ্ব : হাদীস ও আছারের আলোকে’ প্রবন্ধটি কিছুটা পরিমার্জন ও সংক্ষিপ্ত করে পুণঃমুদ্রণ করা হল। -সম্পাদক]
হজ্ব তিন প্রকার : তামাত্তু, কিরান ও ইফরাদ।
মক্কার বাইরে অবস্থানকারী ব্যক্তিরা উপরোক্ত যেকোনো প্রকার হজ্ব করতে পারেন। এতে তাদের ফরয হজ্ব আদায় হবে। তবে উপরোক্ত তিন প্রকার হজ্বের মধ্যে সর্বোত্তম হল হজ্বে কিরান, এরপর তামাত্তু, এরপর ইফরাদ। নিচে প্রতিটির পরিচয় ও জরুরি মাসাইল উল্লেখ করা হল।
এক. কিরান
মীকাত অতিক্রমের পূর্বে উমরা ও হজ্বের ইহরাম বেঁধে একই ইহরামে উমরাহ ও হজ্ব উভয়টি আদায় করা। প্রথমে মক্কা মুকাররামা পৌঁছে উমরা করা অতঃপর এই ইহরাম দ্বারা হজ্বের সময়ে হজ্ব করা এবং কুরবানী দেওয়া।
দুই. তামাত্তু হজ্ব
হজ্বের মাসসমূহে মীকাত থেকে শুধু উমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধা এবং মক্কা মুকাররামায় পৌঁছে উমরার কাজ সম্পন্ন করার পর চুল কেটে বা চেঁছে ইহরামমুক্ত হয়ে যাওয়া। অতঃপর এই সফরেই হজ্বের ইহরাম বেঁধে হজ্বের নির্ধারিত কাজগুলো সম্পন্ন করা এবং কুরবানী দেওয়া।
তিন. ইফরাদ
মীকাত থেকে শুধু হজ্বের নিয়তে ইহরাম বাঁধা এবং মক্কা মুকাররমা পৌঁছে উমরা না করা বরং (সুন্নত তাওয়াফ) তাওয়াফে কুদূম করে ইহরাম অবস্থায় হজ্বের জন্য অপেক্ষা করতে থাকা। অতপর নির্ধারিত সময়ে হজ্বের আমলগুলো সম্পন্ন করা।
উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. বলেন, বিদায় হজ্বে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমাদের মধ্যে কেউ (তামাত্তুর নিয়তে প্রথমে) উমরার জন্য তালবিয়া পাঠ করলেন, কেউ (কিরানের নিয়তে) হজ্ব ও উমরার জন্য তালবিয়া পাঠ করলেন এবং কেউ (ইফরাদের নিয়তে) শুধু হজ্বের ইহরাম করলেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জে ইফরাদের জন্য তালবিয়া পাঠ করলেন। যারা শুধু হজ্ব বা একত্রে হজ্ব-উমরার (কিরানের) ইহরাম গ্রহণ করেছিলেন তারা ১০ যিলহজ্বের পূর্ব পর্যন্ত ইহরাম থেকে মুক্ত হননি। -সহীহ বুখারী ১/২১২
ইহরামের নিয়ম
ইহরামের মূল বিষয় হচ্ছে হজ্ব বা উমরার নিয়তে তালবিয়া পাঠ। এর দ্বারাই ইহরাম সম্পন্ন হয়ে যায়।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মাথায় সিঁথি করা অবস্থায় ইহরামের তালবিয়া পাঠ করতে দেখেছি। তিনি বলেছেন,
لَبَّيْكَ اللهُمَّ، لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لَا شَرِيكَ لَكَ .
এই বাক্যগুলোর অতিরিক্ত কিছু বলেননি। -সহীহ মুসলিম ১/৩৭৬
তবে ইহরাম করার সুন্নত তরীকা হল মোচ, নখ এবং শরীরের পরিষ্কারযোগ্য লোম চেঁছে বা কেটে পরিষ্কার করবে। উত্তমরূপে গোসল করবে, গোসল সম্ভব না হলে ওযু করবে। পুরুষগণ দু’টি নতুন বা ধৌত করা সাদা চাদর নিবে। একটি লুঙ্গির মতো করে পরবে। অপরটি চাদর হিসাবে ব্যবহার করবে। পায়ের পাতার উপরের অংশ খোলা থাকে এমন চপ্পল বা স্যান্ডেল পরবে। মহিলাগণ স্বাভাবিক কাপড় পরবে। তাদের জন্য ইহরাম অবস্থায় জুতা-মোজা পরার অবকাশ রয়েছে। ইহরাম বাঁধার আগে খালি শরীরে আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব। শরীরের আতর বা ঘ্রাণ ইহরাম গ্রহণের পর বাকি থাকলেও অসুবিধা নেই। তবে ইহরামের কাপড়ে আতর বা সুগন্ধি না লাগালেই ভালো। কেননা ইহরামের কাপড়ে এমন গাঢ় আতর বা সুগন্ধি লাগানো নিষেধ, যা ইহরামের পরও বাকি থাকে। মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে ইহরাম বাঁধার আগে দুই রাকাত নফল নামায পড়বে। অতঃপর যে হজ্ব আদায়ের ইচ্ছা, সে অনুযায়ী নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করবে।
নিচে ইহরামের প্রতিটি বিষয় দলীলসহ আলোচনা করা হল
১. মোচ, নখ এবং শরীরের পরিষ্কারযোগ্য লোম চেঁছে বা কেটে পরিষ্কার করা।
২. ইহরামের উদ্দেশ্যে উত্তমরূপে গোসল করা।
হযরত যায়েদ বিন ছাবেত রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইহরাম করার জন্য গায়ের পোশাক খুলতে এবং গোসল করতে দেখেছেন। -জামে তিরমিযী ১/১০২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৫৮৪৭
গোসল সম্ভব না হলে ওযু করে নেওয়া।
মাসআলা : ঋতুমতী মহিলার জন্য ইহরামের আগে গোসল করা মুস্তাহাব। -গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ৬৯
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোনো নারী হায়েয বা নেফাস অবস্থায় মীকাতে পৌঁছলে গোসল করবে এবং ইহরাম গ্রহণ করবে। অতপর হজ্বের যাবতীয় কাজ করতে থাকবে। শুধু বাইতুল্লাহর তাওয়াফ ব্যতীত। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৭৪০
৩. পুরুষদের দু’টি সাদা চাদর প্রয়োজন হবে, যা নতুনও হতে পারে কিংবা ধোয়াও হতে পারে। একটি লুঙ্গির মতো করে এবং অপরটি চাদর হিসাবে পরিধান করবে। কালো রংয়ের কিংবা পুরুষের জন্য অনুমোদিত এমন যেকোনো রংয়ের কাপড় পরিধান করাও জায়েয।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ চুল আঁচড়ালেন, তেল লাগালেন এবং লুঙ্গি ও চাদর পরিধান করে মদীনা থেকে হজ্বের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। তিনি জাফরানযুক্ত ব্যতীত অন্য কোনো চাদর ও লুঙ্গি পরতে নিষেধ করেননি। -সহীহ বুখারী ১/২০৯
৪. পায়ের পাতার উপরের উঁচু অংশ খোলা থাকে এমন চপ্পল বা স্যান্ডেল পরা।
৫. মহিলাগণ স্বাভাবিক পোষাক পরবে।
আসওয়াদ ও আলকামা রাহ. বলেন, মহিলাগণ ইহরাম অবস্থায় নিজ অভিরুচি মাফিক পোষাক পরিধান করতে পারবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৪৪১৯
মাসআলা : মহিলাগণ ইহরাম অবস্থায় জুতা-মোজা ব্যবহার করতে পারবে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. মহিলাদেরকে ইহরাম অবস্থায় চামড়ার মোজা এবং পাজামা পরার অনুমতি দিতেন। তিনি বলেন, ছফিয়্যা রা. চামড়ার মোজা পরিধান করতেন, যা ছিল তাঁর হাটু পর্যন্ত। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস : ১৫৯৬৯ আরো দেখুন : হাদীস ১৫৯৬৫
মহিলাগণ হাত মোজা ব্যবহার করতে পারবে।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, মহিলাগণ ইহরাম অবস্থায় হাত মোজা এবং পাজামা পরিধান করতে পারবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৪৪৪০
বিখ্যাত তাবেয়ী কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ রাহ. বলেন, ইহরাম গ্রহণকারিনী হাত-মোজা ও পাজামা পরিধান করবে এবং পূর্ণ মুখম-ল আবৃত রাখবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৫৯৬৮
৬. ইহরাম করার আগে খালি শরীরে আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব। শরীরের আতর ও ঘ্রাণ যদি ইহরাম বাঁধার পর অবশিষ্ট থাকে তবুও কোনো অসুবিধা নেই।
উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম গ্রহণের সময় তাঁর সর্বাধিক উত্তম সুগন্ধিটি ব্যবহার করতেন। তিনি বলেন, ইহরাম বাঁধার পর তাঁর শ্মশ্রু ও শির মোবারকে তেলের ঔজ্জ্বল্য দেখতে পেতাম। -সহীহ মুসলিম ১/৩৭৮
৭. মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে ইহরাম করার পূর্বে দুই রাকাত নফল নামায পড়া। -গুনইয়াতুন নাসিক ৭৩; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ. ৯৯; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮২
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্বের উদ্দেশ্যে মদীনা থেকে রওনা হয়ে যুলহুলাইফাতে পৌঁছলেন এবং দুই রাকাত নামায পড়লেন। অতপর যুলহুলাইফার নিকট যখন উটনী তাঁকে নিয়ে উঠে দাঁড়াল তখন তিনি তালবিয়া পাঠ করলেন...। -সহীহ মুসলিম ১/৩৭৬
৮. ইহরাম : (পুরুষ হলে তখন টুপি বা মাথায় কোনো কাপড় থাকলে খুলে ফেলতে হবে)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, মুখম-ল ও তার উপরের অংশ মাথার অন্তর্ভুক্ত। অতএব ইহরাম গ্রহণকারী থুতনী থেকে উপরের কোনো অংশ আবৃত করবে না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৪৪৫২
মাসআলা : তামাত্তুকারী প্রথমে শুধু উমরার নিয়ত করবে, ইফরাদকারী শুধু হজ্বের নিয়ত এবং কিরানকারী হজ্ব ও উমরার নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করবে।
মাসআলা : পুরুষ উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করবে এবং মহিলাগণ নিম্নস্বরে। -মানাসিক পৃ. ১০০, গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ৭৪, আদ্দুররুল মুখতার পৃ. ৪৮৪
সাইব ইবনে ইয়াযিদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার নিকটে জিবরাইল আ. এলেন এবং বললেন, আমি যেন আমার সাহাবীদেরকে উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠের নির্দেশ দেই। -জামে তিরমিযী ১/১৭১
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, মহিলাগণ উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করবে না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৪৮৮২
তালবিয়া
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তালবিয়া এই-
لَبَّيْكَ اللهُمَّ، لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لَا شَرِيكَ لَكَ.
(লাব্বাইক আল্লা-হুম্মা লাব্বাইক-লাব্বাইক লা শারীকা লাকা লাব্বাইক ইন্নাল হামদা ওয়ান নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারীকা লাক।) -সহীহ মুসলিম ১/১৭৫
মাসআলা : মহিলাগণ ওযর অবস্থায় অর্থাৎ মাসিক ঋতুস্রাব, সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব ইত্যাদি থাকলেও তালবিয়া পাঠ ও ইহরাম করতে পারবে। হজ্বের অন্যান্য কাজও করা যাবে। তবে এ অবস্থায় তাওয়াফ করা ও নামায পড়া জায়েয নয়।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মহিলাগণ হায়েয বা নেফাস অবস্থায় মীকাতে এলে গোসল করবে এবং ইহরাম গ্রহণ করবে। অতপর হজ্বের আমলসমূহ সম্পন্ন করবে শুধু তওয়াফ ব্যতীত। -সুনানে আবু দাউদ ১/২৪৩
মাসআলা : ইহরামের হালতেও মহিলাদের জন্য পরপুরুষের সামনে চেহারা খোলা নিষেধ। তাই এ অবস্থায় এমনভাবে চেহারা আবৃত রাখা জরুরি যাতে মুখম-লের সঙ্গে কাপড় লেগে না থাকে। এখন এক ধরনের ক্যাপ পাওয়া যায়, যা পরিধান করে সহজেই চেহারার পর্দা করা যায়।
উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে হজ্বের ইহরাম অবস্থায় ছিলাম। হাজ্বীদের কাফেলা যখন আমাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করত তখন আমরা মাথা থেকে চেহারার উপর চাদর ঝুলিয়ে দিতাম। যখন তারা আমাদেরকে অতিক্রম করে যেত তখন চাদর সরিয়ে ফেলতাম। -সুনানে আবু দাউদ ১/২৫৪
হযরত আলী রা. মহিলাদেরকে নিষেধ করতেন তারা যেন ইহরাম অবস্থায় নেকাব ব্যবহার না করে। তবে চেহারার উপর দিয়ে কাপড় ঝুলিয়ে দিবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৪৫৩৯; আদিল্লাতুল হিজাব ৩২৯-৩৩৪; নাইলুল আওতার ৫/৭১ মানাসিক ১১৫, ফাতহুল বারী ৩/৪৭৫
মাসআলা : ইহরাম অবস্থায় ইহরামের পোশাক পরিবর্তন করা যাবে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় ‘তানয়ীম’ নামক স্থানে কাপড় পরিবর্তন করেছিলেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৫০১০
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ বিষয়
১। পুরুষের জন্য শরীর বা শরীরের কোনো অঙ্গের আকার অনুযায়ী তৈরিকৃত বা সেলাইকৃত কাপড় পরিধান করা নিষিদ্ধ। যেমন : পাঞ্জাবি, জুব্বা, শার্ট, সেলোয়ার, প্যান্ট, গেঞ্জি, কোট, সোয়েটার, জাঙ্গিয়া ইত্যাদি।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, মুহরিম কী কী কাপড় পরতে পারবে? তখন তিনি ইরশাদ করলেন, জামা, পাগড়ি, পাজামা, টুপি ও মোজা পরবে না। -সহীহ মুসলিম ১/৩৭২
মাসআলা : ইহরামের কাপড় ছিঁড়ে গেলে তা সেলাই করে কিংবা জোড়া দিয়ে পরিধান করা যাবে। -রদ্দুল মুহতার ২/৪৮১, শরহু লুবাবিল মানাসিক ৯৮
মাসআলা : ইহরাম অবস্থায় সেলাইযুক্ত ব্যাগ ব্যবহার করা ও বেল্ট বাঁধা নিষিদ্ধ নয়।
তাবেয়ী উরওয়া রাহ. মুহরিমের জন্য টাকা-পয়সা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হেফাযতের উদ্দেশ্যে ব্যাগ ব্যবহার করা বৈধ মনে করতেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৫৬৯৯
তাউস রাহ. বলেন, মুহরিম কোমরবন্দ (বেল্ট) ব্যবহার করতে পারবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৫৬৮৯
২। পুরুষের জন্য মাথা ও মুখম-ল আবৃত করা নিষেধ।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, মুখম-ল ও তার উপরের অংশ মাথার অন্তর্ভুক্ত। অতএব ইহরাম গ্রহণকারী থুতনী থেকে উপরের দিকে আবৃত করবে না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৪৪৫২
এ প্রসঙ্গে মহিলাদের বিধান ইতিপূর্বে উল্লেখিত হয়েছে। তাদের জন্য মুখম-ল আবৃত করা নিষেধ নয়। তবে মুখম-লে কাপড় লাগানো নিষেধ। তাই তারা পর পুরুষের সামনে এমনভাবে মুখম-ল আবৃত করবেন যেন তাতে কাপড়ের স্পর্শ না লাগে।
৩। পুরুষের জন্য পায়ের পাতার উপরের উঁচু হাড় ঢেকে যায় এমন জুতা পরিধান করা নিষেধ। তাই এমন জুতা বা স্যান্ডেল পরতে হবে যা পরলে ওই উঁচু অংশ খোলা থাকে। -রদ্দুল মুহতার ২/৪৯০
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা চাদর, লুঙ্গি ও চপ্পল পরে ইহরাম বাঁধবে। যদি চপ্পল না থাকে তবে চামড়ার মোজা পায়ের পাতার উঁচু হাড়ের নীচ পর্যন্ত কেটে পরিধান করবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ৪৮৮১
৪। ইহরাম করার পর আতর বা সুগন্ধি লাগানো নিষেধ।
হযরত ইয়া‘লা ইবনে উমাইয়্যা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জিঈররানা নামক স্থানে অবতরণ করলেন, তখন এক ব্যক্তি তার কাছে এলেন, যার পরনে ছিল জাফরান মিশ্রিত এক ধরনের সুগন্ধিযুক্ত জুব্বা। ... রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, সুগন্ধির চিহ্ন দূর কর এবং জুব্বা খুলে ফেল।’-সহীহ মুসলিম ১/৩৭৩
মাসআলা : সুগন্ধিযুক্ত তেল, যয়তূন ও তিলের তেলও লাগানো যাবে না। সুগন্ধি সাবান, পাউডার, স্নো, ক্রীম ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না।
বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত আতা রাহ. বলেন, ‘ইহরামকারী তার শরীরে কিংবা কাপড়ে সুগন্ধিযুক্ত তেল লাগালে তার উপর কাফফারা ওয়াজিব হবে।’ -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৪৮৩৩
মাসআলা : ইচ্ছাকৃতভাবে ফল-ফুলের ঘ্রাণ নেওয়া মাকরূহ।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. মুহরিমের জন্য ফুলের ঘ্রাণ নেওয়া অপছন্দ করতেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ১৪৮২৭
আবুয যুবাইর রাহ. বলেন, আমি জাবির রা.কে জিজ্ঞাসা করলাম, ইহরামকারী কি ফুল বা সুগন্ধি শুঁকতে পারে? তিনি বললেন, না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৪৮২৮
৫। নখ কাটা কিংবা শরীরের কোনো স্থানের চুল, পশম কাটা বা উপড়ানো নিষেধ।
হযরত আতা, তাউস ও মুজাহিদ রাহ. প্রমুখ বিখ্যাত তাবেয়ীগণ বলেন, ‘মুহরিম তার বগলের নিচের পশম উপড়ালে বা নখ কাটলে তার উপর ফিদয়া দেওয়া ওয়াজিব হবে।’ -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৩৬০৪
৬। ইহরাম অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করা বা স্ত্রীর সামনে এ সংক্রান্ত কোনো কথা বা কাজ করা নিষেধ।
কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) ‘হজ্বের মাসগুলি সুবিদিত। অতএব যে ব্যক্তি এ মাসগুলিতে হজ্ব করা স্থির করে হজ্বে সে অশ্লীল কিছু করবে না, গুনাহ করবে না এবং ঝগড়া বিবাদ করবে না। -সূরা বাকারা (২) : ১৯৭
এক ব্যক্তি তাওয়াফে যিয়ারতের পূর্বে স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়ে গেল। তাদের সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি একটি উট জবাই করার নির্দেশ দিলেন। -মুআত্তা মুহাম্মাদ পৃ. ২৩৮
হযরত ইবনে আব্বাস রা.কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল যে, আমি ইহরামের হালতে কামভাবের সাথে নিজ স্ত্রীকে চুম্বন করেছি। এখন আমার করণীয় কী? তিনি উত্তরে বললেন, তুমি একটি কুরবানী কর। -কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ পৃ. ৫৩
৭। কোনো বন্য পশু শিকার করা বা শিকারীকে সহযোগিতা করা নিষিদ্ধ।
কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) তোমাদের উপর স্থলের প্রাণী শিকার করা হারাম করা হয়েছে যে পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায় থাক। -সূরা মায়িদাহ (৫) : ৯৬
৮। ঝগড়া-বিবাদ সাধারণ সময়েও নিষিদ্ধ। ইহরাম অবস্থায় তা আরো ভয়াবহ।
কুরআন মাজীদে আছে, (তরজমা) ‘হজ্বের মাসগুলি সুবিদিত। অতএব যে ব্যক্তি এ মাসগুলিতে হজ্ব করা স্থির করে, হজ্বে সে অশ্লীল কিছু করবে না, গুনাহ করবে না এবং ঝগড়া বিবাদ করবে না। -সূরা বাকারা (২) : ১৯৭
৯। কাপড় বা শরীরের উকূন মারা নিষিদ্ধ। -আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৮৬-৪৯০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৪
বিখ্যাত তাবেয়ী ইকরিমা রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করা হল, ইহরামকারী তার কাপড়ে উকূন দেখতে পেলে কী করবে? উত্তরে তিনি বললেন, আলতোভাবে ধরে যমীনে রেখে দিবে, মেরে ফেলবে না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৩২৯৭
মাসআলা : আরাফায় অবস্থানের পূর্বে স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হলে হজ্ব নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে তাকে একটি দম দিতে হবে এবং পরবর্তী বছর ঐ হজ কাযা করা জরুরি। -আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৫৮-৫৫৯, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৪৪, মানাসিক ১১৭
এক ব্যক্তি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর নিকট এসে বলল, আমি ইহরাম অবস্থায় স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছি। এখন আমার কী করণীয়? তিনি বললেন, তোমরা উভয়ে হজ্বের অবশিষ্ট আমলগুলো সম্পন্ন করবে। অতপর আগামী বছর এ হজ্ব কাযা করবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৩২৪৫
মাসআলা : ইহরাম অবস্থায় মাথা ও মুখ ব্যতীত পূর্ণ শরীর চাদর ইত্যাদি দিয়ে আবৃত করা যাবে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, এক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় সওয়ারীর পিঠ থেকে পড়ে মৃত্যুবরণ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তাকে বড়ই পাতা মেশানো পানি দিয়ে গোসল দাও এবং তার পরনের কাপড় দু’টি দ্বারা কাফন পরাও। তার চেহারা ও মাথা আবৃত করো না। কেননা সে কিয়ামতের দিন উত্থিত হবে তালবিয়া পড়তে পড়তে। -সহীহ মুসলিম ১/৩৮৪
মাসআলা : কান, ঘাড়, পা ঢাকা যাবে। মাথা ও গাল বালিশে রেখে শোয়া যাবে। তবে পুরো মুখ বালিশের উপর রেখে ঢেকে শোয়া যাবে না। -মানাসিক ১২৩-১২৪, গুনইয়াতুন নাসিক ৯৩
উমরার পদ্ধতি
উমরার ফরয দুটি
১। উমরার ইহরাম করা। অর্থাৎ উমরার নিয়তে তালবিয়া পাঠ করা।
২। বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করা ।
উমরার ওয়াজিব দুটি
১। সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করা।
২। মাথার চুল মুণ্ডানো বা কটা।
উমারা আদায়ের পদ্ধতি হল, মীকাত থেকে শুধু উমরার ইহরাম করবে। এরপর মক্কা পৌঁছে বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করবে। অতপর সাফা-মারওয়ার সায়ী করবে। তারপর মাথার চুল মুণ্ডিয়ে বা ছোট করে হালাল হয়ে যাবে।
মাসআলা : উমরার তাওয়াফ ও যে তাওয়াফের পর সায়ী আছে সেই তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করা অর্থাৎ বীরদর্পে কাঁধ দুলিয়ে কিছুটা দ্রুত বেগে চলা সুন্নত। তদ্রƒপ পুরো তাওয়াফে ইজতিবা করা (পরিধেয় চাদর ডান বগলের নীচে দিয়ে বের করে বাম কাঁধের উপর রাখা) সুন্নত। তবে এ দু’টি বিষয়-রমল ও ইজতিবা শুধু পুরুষের জন্য সুন্নত। -মানাসিক ১২৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৯৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৫
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, হজ্ব ও উমরায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাওয়াফ করতেন তখন প্রথম তিন চক্করে রমল করতেন। বাকি চার চক্করে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতেন। এরপর দু’ রাকাত নামায পড়তেন। এরপর সাফা-মারওয়া মাঝে সায়ী করতেন। -সহীহ মুসলিম ১/৪১০
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, জিঈররানা নামক স্থান থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ উমরা করেছেন। তাঁরা তাওয়াফকালে ‘রমল’ করেছেন এবং পরিধেয় চাদর (ডান কাঁধ খালি রেখে) বগলের নিচ দিয়ে বের করে বাম কাঁধের উপর রেখেছেন। -সুনানে আবু দাউদ ১/২৫৭; মুসনাদে দারেমী, হাদীস ১৯৭৪; জামে তিরমিযী ১/১৭৪
মাসআলা : মহিলাদের জন্য রমল নেই।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, মহিলাদের জন্য ‘রমল’ করার বিধান নেই। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৩১১১
মাসআলা : সকল তাওয়াফের পর দুই রাকাত নফল নামায পড়া ওয়াজিব। তাওয়াফ নফল হোক বা ফরয। আর এই দুই রাকাত নামায মাকামে ইবরাহীমের পিছনে পড়া মুস্তাহাব।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় এলেন তখন বাইতুল্লাহর চারপাশে সাত বার তাওয়াফ করলেন। তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহীমের পেছনে দু’ রাকাত নামায পড়লেন। এরপর সাফা-মারওয়ার দিকে গেলেন।... -সহীহ বুখারী ১/২২০
মাসআলা : মাকামে ইবরাহীমের পিছনে পড়া সম্ভব না হলে মসজিদে হারামের যে কোনো স্থানে এই দুই রাকাত নামায পড়া যাবে।
মাসআলা : তাওয়াফ পরবর্তী দুই রাকাত নামায তাওয়াফের পর অবিলম্বে আদায় করা উত্তম। বিনা ওজরে বিলম্বে পড়া মাকরূহ। তবে মাকরূহ ওয়াক্ত হলে পরে পড়বে। -রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৯, মানাসিক ১৫৫, গুনইয়াতুন নাসিক ১১৬
মাসআলা : একাধিক তাওয়াফ করে পরবর্তী দুই রাকাত নামাযকে একত্রে পড়া মাকরূহ।
নাফে‘ রাহ. থেকে বর্ণিত, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. একত্রে একাধিক তাওয়াফ করা অপছন্দ করতেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক সাত চক্করে (অর্থাৎ এক তাওয়াফের পর) দুই রাকাত নামায পড়া জরুরি। তিনি একত্রে দুই তাওয়াফ করতেন না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ৯০১২
মাসআলা : তাওয়াফের পরের সময় যদি মাকরূহ ওয়াক্ত হয়ে থাকে তবে মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর একাধিক তাওয়াফের নামায একত্রে আদায় করা যাবে। -গুনইয়াতুন নাসিক ১১৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৭
আতা রাহ. বলেন, উমন রা, ফজরের পর তাওয়াফ করেন। অতপর সওয়ার হয়ে তুয়া নামক স্থানে এসে অবতরণ করেন। এরপর নামায পড়েন।... -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৩৩২৬
হযরত মিছওয়ার ইবনে মাখরামা রা. ফজরের পর একত্রে তিন তাওয়াফ করতেন এবং সূর্যোদয়ের পর প্রত্যেক তাওয়াফের জন্য দুই রাকাত নামায আদায় করতেন। তিনি আসরের পরও অনুরূপ করতেন। অতপর সূর্যাস্তের পর প্রত্যেক তাওয়াফের জন্য দুই রাকাত নামায আদায় করতেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৩৪২২
উমরার সায়ী
‘সাঈ’ হল, সাফা-মারওয়ার মাঝে সাত চক্কর দেওয়া। সাফা থেকে শুরু করে মারওয়াতে পৌঁছলেই এক চক্কর হবে। এরপর মারওয়া থেকে সাফাতে আসলে দ্বিতীয় চক্কর হবে। এভাবে সাফা-মারওয়ার মাঝে ৭ চক্কর পূর্ণ করতে হবে। সাঈর প্রথম চক্কর শুরু হবে সাফা থেকে আর সপ্তম চক্কর শেষ হবে মারওয়াতে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১২১৮
মাসআলা : সাঈর সময় সবুজ দুই পিলারের মধ্যবর্তী স্থান পুরুষের জন্য মধ্যম গতিতে দৌড়ে অতিক্রম করা মুস্তাহাব। কিন্তু মহিলাগণ দৌড়াবেন না। স্বাভাবিকভাবে হাঁটবেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৬৪৪
মাসআলা : সাঈ সমাপ্ত করার পর মাথা মুণ্ডিয়ে বা চুল ছোট করে এহরাম মুক্ত হয়ে যাবেন। এ পর্যন্ত উমরার কাজ শেষ হল। তামাত্তু হজ্বকারীগণ এখন থেকে হজ্বের এহরাম বাধার আগ পর্যন্ত বৈধ সব কাজ করতে পারবেন। অবশ্য হারামের এলাকায় সাধারণভাবে নিষিদ্ধ কাজসমূহ যেমন, শিকার করা ইত্যাদি তখনও নিষিদ্ধই থাকবে।
হজ্বের পদ্ধতি
হজ্বের ফরয তিনটি :
১। ইহরাম বাঁধা। ইতিপূর্বে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
২। উকূফে আরাফা।
৩। তাওয়াফে যিয়ারত।
হজ্বের ওয়াজিবসমূহ এই-
১। মুযদালিফায় অবস্থান করা
৫। সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করা।
২। নির্দিষ্ট দিনগুলোতে নির্ধারিত সময়ের ভেতর জামরাতে রমী তথা কংকর নিক্ষেপ করা।
৩। তামাত্তু ও কিরান হজ্ব আদায়কারীর জন্য দমে শোকর তথা হজ্বের কুরবানী।
৪। মাথার চুল মুণ্ডানো বা ছোট করা।
৬। মীকাতের বাহির থেকে আগত লোকদের ‘তাওয়াফে বিদা’ করা।
হজ্বের পাঁচ দিনের আমল
নিম্নে ৮ যিলহজ্ব থেকে ১২ যিলহজ্ব পর্যন্ত হজ্বের পাঁচ দিনের আমলগুলোর কর্মপদ্ধতি ও সংশ্লিষ্ট মাসায়িল আলোচনা করা হচ্ছে :
প্রথম দিন ৮ যিলহজ্ব
আজ সূর্যোদয়ের পর সকল হাজ্বীকে ইহরাম অবস্থায় মিনা গমন করতে হবে। যোহর থেকে পরবর্তী দিনের ফজর পর্যন্ত মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামায মিনায় পড়া এবং ৮ তারিখ দিবাগত রাত্রি মিনায় অবস্থান করা সুন্নত। -রদ্দুল মুহতার ২/৫০৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৭
হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৮ যিলহজ্ব মিনায় গমন করলেন এবং সেখানে যোহর, আসর, মাগরিব, ইশা ও ফজর নামায আদায় করলেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৪৭৫৫
হজ্বের ইহরাম : ইফরাদ হজ্ব ও কিরান হজ্ব আদায়কারী হজ্বের ইহরাম পূর্ব থেকেই করে থাকে। তামাত্তু হজ্ব আদায়কারী আজ মিনায় যাওয়ার পূর্বে হজ্বের ইহরাম করবেন।
হযরত জাবির রা. বলেন, যখন আমরা ইহরাম থেকে মুক্ত হলাম তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আদেশ করলেন, আমরা যেন মিনার উদ্দেশে রওনা হওয়ার সময় ইহরাম করি। আমরা আবতাহ নামক স্থানে ইহরাম করলাম। -সহীহ মুসলিম ১/৩৯২
হজ্বের ইহরাম বাঁধার স্থান
মাসআলা : মহিলাগণ নিজ নিজ অবস্থান স্থল থেকেই ইহরাম বাঁধবে। পুরুষরাও হোটেল বা আবাস-স্থান থেকে ইহরাম বাঁধতে পারে। তবে পুরুষের জন্য সম্ভব হলে মসজিদে হারামে এসে নিয়ম অনুযায়ী ইহরাম বাঁধা ভালো।
ইসমাইল ইবনে আবদুল মালিক থেকে বর্ণিত, হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর রাহ. ৮ যিলহজ্ব স্বস্থান থেকে পায়ে হেঁটে বের হলেন, আমিও তার সঙ্গে বের হলাম। তিনি মসজিদে হারামে প্রবেশ করে দুই রাকাত নামায আদায় করলেন। অতপর মসজিদ থেকে বের হয়ে কাবার দিকে ফিরে তালবিয়া পাঠ করলেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৫৯৩১
মাসআলা : হজ্বের ইহরামের পর থেকে ১০ তারিখ জামরা আকাবায় কংকর নিক্ষেপের পূর্ব পর্যন্ত তালবিয়া পড়তে থাকবে। কংকর নিক্ষেপের পর থেকে তালবিয়া বন্ধ হয়ে যাবে। -মানাসিক ২২৫; গুনইয়াতুন নাসিক ১৭০
হযরত ফযল ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরা আকাবায় কংকর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করেছেন। -সহীহ মুসলিম ১/৪১৫
মিনায় অবস্থান না করা
মাসআলা : ৮ তারিখ দিবাগত রাতে যদি কেউ মিনায় অবস্থান না করে কিংবা এ তারিখে মোটেই মিনায় না যায় তাহলেও তার হজ্ব আদায় হয়ে যাবে। তবে মাকরূহ হবে। -মানাসিক ১৮৮-১৮৯; আহকামে হজ্ব ৬২
তাবু মিনার বাইরে হলে
মাসআলা : মিনায় জায়গা সংকুলান না হওয়ার কারণে মিনার এলাকার বাইরে বহু তাবু লাগানো হয়। যেহেতু এটি জায়গার সংকীর্ণতার ওজরে করা হয়ে থাকে তাই আশা করা যায়, এ সকল তাবুতে অবস্থানকারীরাও মিনায় অবস্থানের ফযীলত পেয়ে যাবে।
নির্ধারিত সময়ের আগেই মিনার উদ্দেশে রওয়ানা
মাসআলা : মিনায় রওয়ানা হওয়ার সময় হল ৮ তারিখ সূর্যোদয়ের পর। কিন্তু আজকাল ৭ তারিখ দিবাগত রাতেই মুআল্লিমের গাড়ি রওয়ানা হয়ে যায় এবং রাতে রাতেই মিনায় পৌঁছে যায়। যদিও ৮ তারিখ সূর্যোদয়ের পর রওয়ানা হওয়া নিয়ম এবং এটিই ভালো, কিন্তু অধিক ভিড়ের কারণে আগে চলে যাওয়া দোষের বিষয় নয়। -মানাসিক ১৮৮; গুনইয়াতুন নাসিক ১৪৬, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৭
হাজ্জাজ রাহ. বলেন, আমি হযরত আতা রাহ.-কে ‘ইয়াওমুত তারবিয়া’র একদিন পূর্বে (অর্থাৎ ৭ তারিখে) মিনায় যাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি তা দোষের বিষয় মনে করেননি। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৫৫৩৪
তাকবীরে তাশরীক
মাসআলা : ৯-১৩ যিলহজ্ব প্রত্যেক ফরয নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক পড়া ওয়াজিব। তাই প্রত্যেক হাজ্বীকে এ বিষয়ে যত্নবান হতে হবে।
হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি যিলহজ্বের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক পাঠ করতেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ৫৬৭৮
দ্বিতীয় দিন ৯ যিলহজ্ব
উকূফে আরাফা
৯ যিলহজ্স সূর্য ঢলার পর থেকেই উকূফ করা সুন্নত। সূর্যাস্তের আগে আরাফায় পৌঁছে গেলে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উকূফ করা ওয়াজিব। সূর্যাস্তের আগে আরাফা ত্যাগ করা জায়েয নয়। আরাফায়া উকূফের প্রধান সময় ৯ যিলহজ্ব সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত। কিন্তু কেউ যদি এ সময়ের ভেতর আরাফায় পৌঁছতে না পারে তাহলে আগত রাতের সুবহে সাদিকের মধ্যে স্বল্প সময় আরাফার ময়দানে উপস্থিত থাকলেও এই ফরয আদায় হয়ে যাবে।
হযরত আবদুর রহমান ইবনে ইয়া‘মার রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হজ্ব হল (উকূফে) আরাফা। যে ব্যক্তি আরাফার রাত (অর্থাৎ ৯ তারিখ দিবাগত রাত) পেল তার হজ্ব পূর্ণ হল।’ -সুনানে নাসাঈ ২/৩৭
অন্য হাদীসে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে আরাফায় রাতের কিছু অংশ অবস্থান করেছে তার হজ্ব পূর্ণ হয়েছে আর যে তা করল না তার হজ্ব হয়নি। অতএব সে উমরা করে ইহরাম থেকে মুক্ত হবে এবং পরবর্তী বছর পুনরায় হজ্ব করবে। -সুনানে দারাকুতনী ২/২৪১; গুনইয়াতুন নাসিক ১৫৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৯; আহকামে হজ্ব ৬৩
হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলার পর ক্বসওয়া নামক উটনীতে আরোহণ করে রওনা হয়েছেন এবং বাতনে ওয়াদি অর্থাৎ আরাফায় এসে খুতবা দিয়েছেন। অতপর সেখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করেছেন। -সহীহ মুসলিম ১/৩৯৭
যোহর ও আসর একত্রে পড়া
মাসআলা : মসজিদে নামিরার জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারলে যোহর ও আসর একত্রে ইমামের পিছনে আদায় করবে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার দিন সকালে ফজর নামায পড়লেন এবং মিনা থেকে আরাফার উদ্দেশে রওনা হলেন। আরাফায় পৌঁছে নামিরাতে অবস্থান করলেন। নামিরা হল আরাফার ঐ স্থান যেখানে ইমাম অবস্থান করেন। অতপর যখন যোহরের সময় হল তখন দ্রƒত নামায আদায় করলেন এবং যোহর ও আসর একত্রে পড়লেন। অতপর খুতবা দিলেন। খুতবা শেষে আরাফার মাওক্বিফের দিকে রওনা হলেন এবং সেখানে উকূফ (অবস্থান) করলেন। -সুনানে আবু দাউদ ১/২৬৫
উকূফে আরাফার করণীয়
উত্তম হল, তাঁবুর বাইরে খোলা আকাশের নিচে এসে কিবলামুখী হয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দুআ করা। -সহীহ মুসলিম ১/৩৯৮
হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটে আরোহণ করে মাওক্বিফে এলেন।... অতপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত কিবলামুখী হয়ে এখানে উকূফ করেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৫৬২২
সূর্যাস্তের পূর্বে আরাফা থেকে বেরিয়ে যাওয়া
অনেকে সূর্যাস্তের আগেই মুযদালিফার উদ্দেশে রওনা হয়ে যায়। এরূপ হয়ে গেলে কর্তব্য হল পুনরায় আরাফায় ফিরে আসা। অন্যথায় দম দিতে হবে। -মানাসিক ২১০; গুনইয়াতুন নাসিক ১৬০; রদ্দুল মুহতার ২/৫৫২
বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত হাছান রাহ. বলেন, ইমামের পূর্বে যে মুযদালিফায় পৌঁছবে তার উপর দম আসবে।
অন্য বর্ণনায় আছে, আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর বলেন, ইমাম সূর্যাস্তের পর আরাফা থেকে রওনা হবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৫৪১৭
৯ তারিখ সূর্যাস্তের আগে আরাফায় পৌঁছতে না পারলে
কেউ যদি ৯ তারিখ সূর্যাস্তের আগে আরাফার ময়দানে কোনো কারণে পৌঁছতে না পারে তবে সুবহে সাদেক হওয়ার আগে কিছু সময়ের জন্য আরাফায় অবস্থান করলেও ফরয আদায় হবে। আর এ কারণে দম বা অন্য কিছু ওয়াজিব হবে না। তবে মূল সময় আরাফায় না পৌছার কারণে অনেক ফযীলত থেকে বঞ্চিত হবে। -মানাসিক ২০৫-২০৬; গুনইয়াতুন নাসিক ১৫৯
হযরত আবদুর রহমান ইবনে ইয়া‘মার রা. থেকে বর্ণিত, নজদের কিছু লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এল। তখন তিনি আরাফায় অবস্থান করছিলেন। তিনি এক ব্যক্তিকে এই মর্মে ঘোষণা করতে বললেন যে, হজ্ব হল আরাফা। যে ৮ তারিখ দিবাগত রাতে ফজরের পূর্বে আরাফায় পৌঁছল সে হজ্ব পেল। -জামে তিরমিযী ১/১৭৮
মাসআলা : আরাফার ময়দানে ‘বাতনে উরানা’ নামক একটি স্থান রয়েছে। মসজিদে নামিরার পশ্চিমের কিছু অংশ এর অন্তর্ভুক্ত। এখানে উকূফ গ্রহণযোগ্য নয়।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘পূর্ণ আরাফা উকূফের স্থান তবে তোমরা ‘বতনে উরানা’ থেকে উপরে চলে আসবে।’ -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস ১৪০৬৩
মুযদালিফার উদ্দেশে রওনা
মাসআলা : আরাফার ময়দান থেকে সূর্যাস্তের পর মাগরিবের নামায না পড়ে মুযদালিফার উদ্দেশে রওয়ানা হতে হবে। সূর্যাস্তের পর বিলম্ব না করাই শ্রেয়। -রদ্দুল মুহতার ২/৫০৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩০
হযরত উসামা ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার উদ্দেশে রওনা হলেন। পথিমধ্যে এক উপত্যকায় নেমে ইস্তিঞ্জা সারলেন এবং অযু করলেন। আমি বললাম, নামায! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নামায সামনে। এরপর মুযদালিফায় এসে পূর্ণ অযু করলেন এবং ইকামত দিয়ে মাগরিব নামায আদায় করলেন। -সহীহ বুখারী ১/২২৭
৯ তারিখ দিবাগত রাত্রির মাগরিব ও ইশা
মাসআলা : আজ মাগরিব ও ইশা ইশার ওয়াক্তে মুযদালিফায় গিয়ে পড়তে হবে। কেউ যদি মুযদালিফায় পৌঁছার আগেই রাস্তায় মাগরিব-ইশা পড়ে নেয় কিংবা মুযদালিফায় পৌঁছার আগে শুধু মাগরিব পড়ে তবে উভয় ক্ষেত্রে মুযদালিফায় পৌঁছে পুনরায় মাগরিব-ইশা একত্রে পড়া জরুরি। -মানাসিক ২১৬, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩০, গুনইয়াতুন নাসিক ১৬৪
হযরত উসামা ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফা থেকে রওনা হয়ে মুযদালিফায় পৌঁছলেন। অতপর মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করলেন। -সহীহ মুসলিম ১/৪১৬
মাসআলা : ইশার ওয়াক্তের মধ্যে (সুবহে সাদিকের পূর্বে) মুযদালিফায় পৌঁছা সম্ভব না হলে পথিমধ্যে মাগরিব-ইশা পড়ে নিবে। এক্ষেত্রে মুযদালিফায় পৌঁছার পর ইশার ওয়াক্ত বাকী থাকলে এ দুই নামায পুনরায় পড়তে হবে। -তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২৮, আলবাহরুর রায়েক ২/৩৪২, আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪০৪, তাতারখানিয়া ২/৪৫৮, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩০; গুনইয়াতুন নাসিক ১৬৪
ইশার ওয়াক্তের পূর্বেই মুযদালিফা পৌঁছে গেলে
মাসআলা : যদি কেউ ইশার ওয়াক্তের পূর্বে মুযদালিফায় পৌঁছে যায় তবে সে তখন মাগরিব পড়বে না; বরং ইশার ওয়াক্ত হওয়ার পর মাগরিব-ইশা একত্রে আদায় করবে। -মানাসিক ২১৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫০৯; গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ১৬৪
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের নামায ইশার ওয়াক্তে আদায় করেছেন। -সহীহ মুসলিম ১/৪১৬; গুনইয়াতুন নাসিক ১৬৭; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী পৃ. ২২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫০৮
মাসআলা : মুযদালিফায় দুই নামায একত্রে পড়ার জন্য জামাত শর্ত নয়। একা পড়লেও দুই নামায একত্রে ইশার সময় পড়বে। তবে নিজেরা জামাত করে পড়া ভালো। -মানাসিক ২১৪, গুনইয়াতুন নাসিক ১৬৩-১৬৪
মাসআলা : মুযদালিফায় রাত্রি যাপন করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
হযরত জাবির রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় এসে মাগরিব ও ইশার নামায আদায় করলেন। এরপর সুবহে সাদিক পর্যন্ত শয্যাগ্রহণ করলেন। -সহীহ মুসলিম ১/৩৯৮
৩য় দিন ১০ যিলহজ্ব
উকূফে মুযদালিফা
মাসআলা : উকূফে মুযদালিফার সময় ১০ তারিখ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত। সুবহে সাদিকের পর সামান্য কিছু সময় অবস্থান করে মুযদালিফা ত্যাগ করলেও ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে সূর্যোদয়ের কিছু পূর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করা সুন্নত। -মানাসিক ২১৫, ২১৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩০; গুনইয়াতুন নাসিক ১৬৫
হযরত কাসেম রাহ. বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রা.-কে বলতে শুনেছি, হজ্বের একটি সুন্নত এই যে, ফজরের নামায পড়ে মুযদালিফায় অবস্থান করবে। যখন (সূর্যোদয়ের পূর্বে) আলো ছড়িয়ে পড়ে তখন রওনা হবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৫৫৬৫
মাসআলা : উকূফে মুযদালিফা ওয়াজিব। তাই বিশেষ ওযর ব্যতীত নির্ধারিত সময়ে উকূফ না করলে দম ওয়াজিব হবে।
ইবরাহীম রাহ. বলেন, যে ব্যক্তি মুযদালিফার পাশ দিয়ে অতিক্রম করল অথচ তার জানা নেই যে, এখানে উকূফ করতে হয় ফলে সে উকূফ না করে মিনায় চলে গেল তাকে দম দিতে হবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৫৪৬৬
মাসআলা : ভিড়ের কারণে সূর্যোদয়ের আগে মুযদালিফায় পৌঁছা সম্ভব না হলে দম ওয়াজিব হবে না। -মানাসিক ২১৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫১১
উকূফের স্থান
মাসআলা : মুযদালিফা ময়দানের যেকোনো অংশেই উকূফ করা যায়। তবে মসজিদে মাশআরে হারামের নিকট উকূফ করা উত্তম।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. নিজ পরিবারের দুর্বল ব্যক্তিদেরকে অগ্রসর করে দিতেন। তারা মুযদালিফায় এসে রাতে মাশআরে হারামের নিকটে অবস্থান করতেন এবং যতক্ষণ ইচ্ছা যিকিরে মশগুল থাকতেন।’ -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৪০৭৫; সহীহ মুসলিম ১/৪১৮
মাসআলা : মুযদালিফার বাইরে মিনার দিকে ‘ওয়াদিয়ে মুহাস্সির’ নামক স্থানে উকূফ করা যাবে না। কারণ এখানে উকূফ করা নিষিদ্ধ। এ স্থানের উকূফ ধর্তব্য নয়। -গুনইয়াতুন নাসিক ১৬৭; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী পৃ. ২২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫০৮
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, ‘বতনে মুহাসসির ব্যতীত পুরো মুযদালিফা উকূফ করার স্থান।’ -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৪০৭২, ১৪০৭১
মাসআলা : অতিশয় বৃদ্ধ, নারী কিংবা অধিক পীড়িত ব্যক্তির জন্য মুযদালিফায় অবস্থান না করে আরাফা থেকে সোজা মিনায় চলে যাওয়ার অনুমতি আছে। এতে তাদের উপর দম বা কোনো কিছু ওয়াজিব হবে না। -মানাসিক ২১৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩১
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা. বলেন, মুযদালিফার রাতে সওদা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট মিনায় চলে যাওয়ার অনুমতি চাইলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিলেন। কেননা সওদা ছিলেন তখন ভারী ও ধীর গতিসম্পন্ন। -সহীহ বুখারী ১/২২৮
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফার রাতে তাঁর পরিবারের দুর্বল ব্যক্তিদের সঙ্গে যাদের পূর্বেই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন আমি তাদের মধ্যে শামিল ছিলাম।’ -সহীহ বুখারী ১/২২৭
মিনায় রওনা
১০ যিলহজ্ব সূর্যোদয়ের সামান্য পূর্বে মিনার উদ্দেশ্যে রওনা করবে। সূর্যোদয় পর্যন্ত বিলম্ব করা সুন্নতের খেলাফ। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৬৮৩
১০ম যিলহজ্বের দ্বিতীয় ওয়াজিব জামরায়ে আকাবার রমী
রমীর পদ্ধতি
মাসআলা : রমী অর্থ কংকর নিক্ষেপ করা। মসজিদে হারামের দিক থেকে সর্বশেষ কংকর নিক্ষেপের স্থানকে ‘জামরা আকাবা’ বলে। এখানে ১০ যিলহজ্ব ৭টি কংকর নিক্ষেপ করতে হয়।
আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ বলেন, ‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. ‘বাতনে ওয়াদী’ থেকে জামরা আকাবায় ৭টি কংকর নিক্ষেপ করলেন এবং প্রতি কংকর নিক্ষেপের সময় তাকবীর বললেন।’ -সহীহ মুসলিম ১/৪১৮, ৪২০
মাসআলা : কংকর নিক্ষেপের স্থানে যে চওড়া দেয়াল আছে তাতে কংকর লাগানো জরুরি নয়; বরং বেষ্টনীর ভিতরে পড়াই যথেষ্ট। দেয়ালের কংকর লেগে তা যদি বেষ্টনীর বাইরে গিয়ে পড়ে তবে তা ধর্তব্য হবে না, ঐ কংকর পুনরায় নিক্ষেপ করতে হবে। কংকর দেয়ালের গোড়ায় মারা ভালো। দেয়ালের উপরের অংশে মারা অনুত্তম। -গুনইয়াতুন নাসিক ১৭১ রদ্দুল মুহতার ২/৫১২
মাসআলা : প্রথম দিনের সাতটি কংকর মুযদালিফা থেকে সংগ্রহ করা মুস্তাহাব।
মুজাহিদ রাহ. বলেন, তিনি জামারাতে নিক্ষেপের জন্য মুযদালিফা থেকে কংকর সংগ্রহ করতেন।’ -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৩৬২৩
অবশ্য অন্য জায়গা থেকে নিলেও ক্ষতি নেই।
বিখ্যাত তাবেয়ী আতা রাহ. ও সায়ীদ ইবনে জুবাইর রাহ. থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, ‘যেখান থেকে ইচ্ছা কংকর সংগ্রহ করতে পার।’ -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস, ১৩৬২৮, ১৩৬২৪
কংকর কেমন হবে
মাসআলা : বুট বা ছোলার দানার মতো ছোট কংকর মারা ভালো। বড়জোর খেজুরের বিচির মতো হতে পারে। বড় পাথর মারা মাকরূহ। তদ্রূপ নাপাক কংকর মারাও মাকরূহ। কংকর নাপাক হওয়ার আশঙ্কা থাকলে তা ধুয়ে নিক্ষেপের কাজে ব্যবহার করা যাবে। -মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ. ২২২
জামরা আকাবাতে রমীর সময়
মাসআলা : সম্ভব হলে ১০ যিলহজ্ব সূর্যোদয়ের পর থেকে সূর্য ঢলে যাওয়া পর্যন্ত সময়ের ভিতর রমী করা মুস্তাহাব।
হযরত জাবির রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইয়াওমুন নাহর’ (অর্থাৎ ১০ যিলহজ্ব) চাশতের সময় রমী (কংকর নিক্ষেপ) করেছেন। আর পরবর্তী দিবসসমূহের রমী সূর্য ঢলে যাওয়ার পরে করেছেন। -সহীহ মুসলিম ১/৪২০
তবে ১০ তারিখ সুবহে সাদিক থেকে ১০ তারিখ দিবাগত রাতের সুবহে সাদিক পর্যন্ত রমী করা জায়েয।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ১০ যিলহজ্ব মিনায় এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, আমি সন্ধ্যার পর রমী করেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘কোনো সমস্যা নেই।’ -সহীহ বুখারী ১/২৩৪
উল্লেখ্য, বিনা ওজরে মুস্তাহাব সময় রমী না করে অন্য সময় রমী করা মাকরূহ। কিন্তু আজকাল যেহেতু মুস্তাহাব সময়ে রমীর স্থানে প্রচ- ভিড় হয় তাই মহিলা ও দুর্বলদের মতো অন্যদের জন্যও মুস্তাহাব সময়ের বাইরে রমী করার অবকাশ রয়েছে। ওজর থাকার কারণে তা মাকরূহ হবে না। -গুনইয়াতুন নাসিক ১৬৯-১৭০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২৩৩
সাত কংকর সাত বারে মারতে হবে
মাসআলা : কেউ যদি সাত কংকর একবারে নিক্ষেপ করে তবে এক কংকর মারা হয়েছে বলা হবে। এক্ষেত্রে আরো ছয়টি কংকর পৃথক পৃথক মারতে হবে। -আহকামে হজ্ব ৭৫
মাসআলা : জামরা আকাবায় রমীর পর দুআর জন্য এখানে অবস্থান না করা সুন্নত। তাই আজ কংকর মেরে দুআর জন্য বিলম্ব করবে না; বরং কংকর মেরে দ্রুত স্থান ত্যাগ করবে। -মানাসিক ২২৪
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বাতনে ওয়াদী থেকে জামরা আকাবায় কংকর নিক্ষেপ করতেন। অতঃপর জামরা আকাবার নিকট অবস্থান না করে স্থান ত্যাগ করতেন এবং বলতেন, আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এভাবে করতে দেখেছি। -সহীহ বুখারী ১/২৩৬
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরা আকাবায় এসে কংকর নিক্ষেপ করেছেন অতপর সেখানে অবস্থান করেননি। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৩৫৭৪
সময়মতো রমী না করলে
মাসআলা : ১০ তারিখ দিবাগত রাতের সুবহে সাদিকের আগে জামরা আকাবার রমী করতে না পারলে ইমাম আবু হানীফা রহ.-এর মতে দম ওয়াজিব হবে।
অন্যকে দিয়ে রমী করানো
মাসআলা : প্রত্যেক হাজী পুরুষ হোক বা মহিলা, নিজের রমী নিজেই করবে। শরয়ী কোনো ওযর ব্যতীত শুধু ভিড়ের অজুহাতে অন্যের দ্বারা রমী করানো জায়েয নয়। শরয়ী ওযর ব্যতীত অন্যকে দিয়ে রমী করালে তা আদায় হবে না। এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে পুনরায় নিজের রমী করতে হবে। -গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ১৮৮
মাসআলা : ঋতুমতী মহিলাগণও রমী করতে পারবে। -সহীহ বুখারী ১/২২৩
১০ম যিলহজ্বের তৃতীয় ওয়াজিব
দমে শোকর বা হজ্বের কুরবানী
মাসআলা : তামাত্তু ও কিরান হজ্ব আদায়কারীদের জন্য একটি কুরবানী করা ওয়াজিব।
আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) তারপর যখন তোমরা নিরাপদে থাক তখন যে ব্যক্তি উমরাকে হজ্বের সঙ্গে একত্র করে লাভবান হয় সে (যবেহ করবে) কুরবানী, যে পশু সহজলভ্য হয়...। -সূরা বাকারা (২) : ১৯৬
ইবনে ওমর রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় এলেন তখন লোকদেরকে লক্ষ করে বললেন, তোমাদের মধ্যে যারা কুরবানীর পশু সঙ্গে এনেছ তারা যেন হজ্ব সম্পন্ন করার পূর্বে হালাল (ইহরামমুক্ত) না হয়। আর যারা কুরবানীর পশু সঙ্গে আনেনি তারা তাওয়াফ করবে এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করে চুল ছেঁটে হালাল হয়ে যাবে। অতঃপর (নির্ধারিত সময়ে) হজ্বের ইহরাম করবে এবং কুরবানী করবে ...। -সহীহ মুসলিম ১/৪০৩
মাসআলা : জামরায়ে আকাবার রমীর পর কুরবানী করবে এবং মাথা মু-াবে। -সহীহ মুসলিম ১/৪২১
মাসআলা : ইফরাদ হজ্বকারীর উপর হজ্বের কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। তবে করলে ভালো।
মাসআলা : ইফরাদ হজ্বকারীদের যেহেতু ওয়াজিব কুরবানী নেই তাই তারা রমীর পরই চুল কাটতে পারবে। রমীর আগে চুল কাটলে দম ওয়াজিব হবে। -শরহু মাআনিল আছার ১/৪৪৭
দমে শোকর বা হজ্বের কুরবানীর সময়
মাসআলা : ১০ যিলহজ্ব কংকর নিক্ষেপের পর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত সময়ের ভিতর কুরবানী করতে হবে। সুন্নত সময় শুরু হয় ১০ যিলহজ্ব সূর্যোদয়ের পর থেকে।
ইকরিমা রাহ. বলেন, আমি তামাত্তু হজ্ব করলাম, কিন্তু কুরবানী করতে ভুলে গেলাম। ইতিমধ্যে (কুরবানীর) দিনগুলো অতিবাহিত হয়ে গেল। তখন আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, (তুমি দু’টি কুরবানী করবে) তামাত্তুর জন্য একটি এবং বিলম্ব করার কারণে একটি। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৫৭০৯
কুরবানীর স্থান
মাসআলা : হজ্বের কুরবানী হেরেমের সীমার ভিতরে করা জরুরি। হেরেমের বাইরে জবাই করলে হজ্বের কুরবানী আদায় হবে না। -শরহু মাআনিল আছার ১/৪৫০
মাসাআলা : হেরেমের যে কোনো স্থানে কুরবানী করা যায়। মিনাতে করা জরুরি নয়।
জাবির রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘গোটা মিনা কুরবানীর স্থান এবং মক্কার সকল গলি চলার পথ ও কুরবানীর স্থান।’ -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস, ১৫৭৭৩; রদ্দুল মুহতার ২/৫৩২
হজ্বের কুরবানীর গোশত
মাসআলা : হজ্বের কুরবানীর গোশত ঈদুল আযহার কুরবানীর মতো। হাজ্বী নিজেও তা খেতে পারবে। -সহীহ মুসলিম ১/৩৯৯
১০ যিলহজ্বের চতুর্থ ওয়াজিব মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছোট করা
মাথা মুণ্ডানোর সময়
মাসআলা : ১০ যিলহজ্ব কুরবানীর পর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত মাথা মুণ্ডানোর সুযোগ আছে। এর চেয়ে বিলম্ব করলে দম ওয়াজিব হবে।
মাসআলা : মাথা হলক করলে বা চুল মুণ্ডালেই ইহরাম মুক্ত হয়ে যাবেন। এরপর থেকে স্ত্রী ব্যতীত ইহরামের নিষিদ্ধ সবকিছুই হালাল হয়ে যাবে।
উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, যখন তোমাদের রমী, কুরবানী ও চুল মুণ্ডন সমাপ্ত হল তখন স্ত্রী ছাড়া সবকিছু তোমাদের জন্য হালাল। -আলক্বিরা লিমাক্বাসিদি উম্মিল কুরা পৃ. ৪৭১; হিদায়া ১/২৭৬; গুনইয়াতুন নাসিক ১৭৫; রদ্দুল মুহতার ২/৫৫৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৩০; মাবসূতে সারাখসী ৪/৭০
চুল কাটার পরিমাণ
মাসআলা : মাথার চুল না মুণ্ডিয়ে যদি খাটো করে তবে আঙুলের এক কর (প্রায় এক ইঞ্চি) পরিমাণ ছোট করা ওয়াজিব। মহিলাগণ অন্তত এতটুকু ছোট করবে।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, ‘মহিলাগণ ইহরাম অবস্থায় চুল একত্র করে তা থেকে আঙুলের এক কর পরিমাণ ছোট করবে।’ -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৩০৬৫
ইবরাহীম রাহ. বলেন, ‘মহিলাগণ আঙুলের এক কর পরিমাণ চুল ছোট করবে।’ -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৩০৭৩
মাসআলা : এ পরিমাণ চুল মাথার এক চতুর্থাংশ থেকে কাটা হলেই হালাল হয়ে যাবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস, ১৩০৬৮
মাসআলা : মাথার এক অংশ মুড়িয়ে অন্য অংশে চুল রাখা বা ছোট বড় করে রাখা মাকরূহ তাহরীমী। তাই এমন করবে না। -রদ্দুল মুহতার ২/৫১৫; মানাসিক পৃ. ২২৯
মাসআলা : জামরা আকাবার কংকর নিক্ষেপের পর হজ্ব আদায়কারী নিজের চুল কাটার আগে অন্যের চুল কাটতে পারবে।
ইবনে জুরাইজ রাহ. বলেন, আমি আতা রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, এক ব্যক্তি জামরা আকাবার রমী (কংকর নিক্ষেপ) করেছে কিন্তু এখনো চুল মুণ্ডন করেনি। সে কি অন্যের চুল কামিয়ে দিতে পারবে? তিনি বললেন, হাঁ, পারবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৬১৩৯
মাসআলা : কারো মাথা পূর্ব থেকে মুণ্ডানো থাকলে কিংবা পুরো মাথা টাক থাকলে হালাল হওয়ার জন্য মাথায় ক্ষুর বুলিয়ে নেওয়াই যথেষ্ট। -বাদায়েউস সানায়ে ২/২১২, রদ্দুল মুহতার ২/৫১৬, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩১
তাবেয়ী মাসরূক রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করা হল, যে ব্যক্তি উমরা করে চুল মুণ্ডন করেছে এরপর হজ্ব করেছে সে কী করবে? তিনি বলেন, ‘সে তার মাথায় ক্ষুর বুলিয়ে নিবে।’ -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৩৭৯৯
নাফে রাহ. বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর পুরো মাথা ছিল কেশবিহীন। তাই তিনি হজ্ব-উমরার সময় মাথার উপর ক্ষুর বুলিয়ে নিতেন।’ -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৩৮০৩
মাথা মুণ্ডানোর স্থান
মাসআলা : হাজ্বীদের ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্য মিনাতে মাথা মুণ্ডানো বা চুল কাটা সুন্নত।
আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় এসে জামরা আকাবায় কংকর নিক্ষেপ করলেন। অতপর মিনায় নিজ অবস্থানস্থলে গেলেন এবং কুরবানী করলেন। এরপর চুল মু-নকারীকে চুল মুণ্ডানোর আদেশ করলেন। প্রথমে ডান পাশের চুলের দিকে ইশারা করলেন। অতপর বাম পাশের চুলের দিকে। অতঃপর কেশ মোবারক লোকদের মাঝে বিতরণ করে দিলেন। -সহীহ মুসলিম ১/৪২১
মাসআলা : হেরেমের সীমার ভিতর অন্য কোথাও চুল মুণ্ডালেও ওয়াজিব আদায় হবে।
ইবরাহীম রাহ. বলেন, চুল কেবল মক্কাতেই মুণ্ডানো যাবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৪০৭৮
মাসআলা : হরমের বাইরে মাথা কামালে দম ওয়াজিব হবে। -আহকামে হজ্ব ৭৯; মানাসিক পৃ. ২৩০
হজ্বের তৃতীয় ফরয তাওয়াফে যিয়ারত
তাওয়াফে যিয়ারতের সময়
মাসআলা : সুন্নত হল জামরা আকাবার রমী, কুরবানী এবং মাথা কামানোর পর তাওয়াফ করা।
জাবির রা. থেকে বর্ণিত ... রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃক্ষের নিকটবর্তী জামরায় ৭টি কংকর নিক্ষেপ করলেন। অতপর কুরবানীর স্থানে গিয়ে কুরবানী করলেন। এরপর সওয়ারীতে আরোহণ করে বাইতুল্লাহর উদ্দেশে রওনা হলেন এবং মক্কায় যোহরের নামায আদায় করলেন। -সহীহ মুসলিম ১/৩৯৯
মাসআলা : যদি ১২ তারিখ সূর্যাস্ত হয়ে যায় এবং তাওয়াফে যিয়ারত করা না হয় তবে দম দেওয়া জরুরি। -রদ্দুল মুহতার ২/৫১৭, ৫৩৩, আহকামে হজ্ব ৮০
ইবরাহীম রাহ. বলেন, যদি ঐ দিনগুলোতে তা (তাওয়াফে যিয়রাত) না করা হয় তবে দম দিতে হবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৩২২৭
মাসআলা : অসুস্থ হলেও তাওয়াফে যিয়ারত নিজেকেই করতে হবে। প্রয়োজনে হুইল চেয়ার ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু অন্যকে দিয়ে তাওয়াফ করানো যাবে না।
উম্মে সালামা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অসুস্থতার অভিযোগ করলাম। তিনি বললেন, ‘সওয়ারীতে আরোহণ করে ভিড় থেকে দূরে সরে তাওয়াফ করো।’ -সহীহ বুখারী ১/২২১
মাসআলা : পায়ে হেঁটে তাওয়াফ করার সামর্থ্য থাকাবস্থায় হুইল চেয়ারে করে বা অন্য কোনো বাহনে চড়ে তাওয়াফে যিয়ারত করা যাবে না। করলে দম দিতে হবে। -রদ্দুল মুহতার ২/৫১৭; মানাসিক পৃ. ২৩৩
হিশাম ইবনে উরওয়া রাহ. বলেন, ‘আমার বাবা লোকদেরকে বাহনে চড়ে তাওয়াফ করতে দেখলে নিষেধ করতেন।’ -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৩৩০৬
তাওয়াফে যিয়ারাতে রমল ও সায়ী
মাসআলা : যারা মিনায় যাওয়ার পূর্বে হজ্বের সায়ী করেছে অর্থাৎ ইফরাদ হজ্বকারী যদি তাওয়াফে কুদূমের পর সায়ী করেন তদ্রƒপ তামাত্তু ও কিরানকারী ভিন্ন করে নফল তাওয়াফের পর সায়ী করলে তাদের যেহেতু তাওয়াফে যিয়ারতের পর সায়ী করতে হবে না তাই এই তাওয়াফে তাদেরকে রমলও করতে হবে না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৫২৯৮, ১৫৩০০
মাসআলা : যারা ইতিপূর্বে হজ্বের সায়ী করেনি তাদের যেহেতু এই তাওয়াফের পর সায়ী করতে হবে তাই তাওয়াফে রমলও করতে হবে।
ঋতুমতী মহিলার তাওয়াফ
মাসআলা : ঋতুমতী নারীর স্রাব চলা অবস্থায় তাওয়াফ করা নিষেধ। তাই পবিত্র হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা রা. বলেন, আমি যখন মক্কায় পৌঁছলাম তখন আমার হায়েয চলছিল। আমি বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করিনি এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করিনি। তিনি বলেন, তখন আমি এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অভিযোগ করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাজ্বী যে কাজগুলো করে তুমিও তা করতে থাক। শুধু বাইতুল্লাহর তাওয়াফ পবিত্র হওয়া পর্যন্ত করবে না। -সহীহ বুখারী ১/২২৩
মাসআলা : ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগে পবিত্র হয়ে গেলে অবশ্যই এর ভেতরে তাওয়াফ সেরে নিতে হবে। যদি ১২ তারিখ সূর্যাস্তের ভিতর পবিত্র না হয় তাহলে পবিত্র হওয়ামাত্র আদায় করবে। এক্ষেত্রে বিলম্বের কারণে কোনো জরিমানা আসবে না। -রদ্দুল মুহতার ২/৫১৯
পবিত্র হওয়ার আগেই দেশে ফিরতে হলে
মাসআলা : যদি কোনো মহিলা হায়েয বা নেফাস অবস্থায় থাকার কারণে তাওয়াফে যিয়ারত করতে না পারে, আর তার দেশে ফেরার সময় হয়ে যায়, কোনোভাবেই তা বাতিল করা বা বিলম্ব করা সম্ভব না হয় তবে এই অপারগতার কারণে সে এ অবস্থাতেই তাওয়াফ করবে। আর এজন্য একটি উট বা গরু জবাই করবে। সাথে আল্লাহ তাআলার দরবারে ইস্তিগফারও করবে। মোটকথা কোনো অবস্থাতেই তাওয়াফে যিয়ারত না করে দেশে যাবে না। অন্যথায় তাকে আবার মক্কায় এসে তাওয়াফ করতে হবে। যতদিন তাওয়াফ না করবে ততদিন স্বামীর সাথে থাকতে পারবে না। -রদ্দুল মুহতার ২/৫১৮-৫১৯; মাআরিফুস সুনান ৬/৩৫৭-৩৫৮
হজ্বের ৪র্থ দিন ১১ যিলহজ্ব
মাসআলা : ১১ ও ১২ যিলহজ্বের রাত্রিতে মিনায় অবস্থান করা সুন্নত। কেউ যদি মিনায় না থাকে তবে সুন্নতের খেলাফ হবে বটে, কিন্তু কোনো প্রকার জরিমানা দিতে হবে না। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩৩
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দিন যোহর পড়ে মক্কায় এলেন (তাওয়াফে যিয়ারতের জন্য) অতপর মিনায় ফিরে গেলেন এবং আইয়্যামে তাশরীকের রাত্রিগুলো মিনায় অবস্থান করলেন ...। -সুনানে আবু দাউদ ১/২৭১
১১ যিলহজ্ব রমীর সময়
মাসআলা : যোহরের সময় থেকে আগত রাত্রের সুবহে সাদিক পর্যন্ত রমীর সময়।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলে যাওয়ার পর রমী করতেন। -জামে তিরমিযী ১/১৮০
মাসআলা : সম্ভব হলে এই রমী সূর্যাস্তের আগে করে নেওয়া ভালো। সূর্যাস্তের পর মাকরূহ সময়।
হাসান রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি রাতে রমী করাকে মাকরূহ বলেছেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৫৫৫১
উরওয়া রাহ.ও রাতে রমী করাকে মাকরূহ বলেছেন। -মুসন্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৫৫৫২
মাসআলা : মহিলা ও দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য কিংবা অত্যধিক ভিড়ের কারণে সূর্যাস্তের পর এই রমী করার অবকাশ রয়েছে।
আমর রা. বলেন, এক ব্যক্তি আমাকে জানিয়েছেন যে, তিনি একজন উম্মুল মু’মিনীনকে (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী) সূর্যাস্তের সময় রমী করতে দেখেছেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৫৫৫৬
আতা ও তাউস রাহ. থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি দিনে রমী করতে ভুলে যায় সে রাতে রমী করতে পারবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৫৫৫৭
মাসআলা : ১১ যিলহজ্ব তিন জামরাতেই রমী করতে হবে। প্রথম দুই জামরাতে রমী (কংকর নিক্ষেপ) করে কিবলামুখী হয়ে দুআ করা সুন্নত। জামরায়ে আকাবার রমীর পর দুআ নেই। -রদ্দুল মুহতার ২/৫২১
উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহর পড়ে দিনের শেষ ভাগে (তাওয়াফে যিয়ারতের উদ্দেশ্যে) মক্কায় এলেন। অতপর মিনায় গেলেন এবং আইয়্যামে তাশরীকের রাতগুলো মিনায় যাপন করলেন। তিনি সূর্য ঢলে যাওয়ার পর রমী করতেন। প্রতি জামরায় ৭টি করে কংকর নিক্ষেপ করতেন এবং প্রতি কংকর নিক্ষেপের সময় তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলতেন। প্রথম ও দ্বিতীয় জামরায় দীর্ঘ সময় অবস্থান করতেন এবং কাকুতি-মিনতির (সঙ্গে দুআ) করতেন। তৃতীয় জামরায় রমী করে সেখানে অবস্থান করতেন না। -সুনানে আবু দাউদ ১/২৭১
পঞ্চম দিন ১২ যিলহজ্ব
রমীর তৃতীয় দিন
মাসআলা : এদিনও রমী করার সময় যোহরের সময় থেকে রাতের সুবহে সাদিক পর্যন্ত।
মাসআলা : আজও তিন জামরাতেই কংকর নিক্ষেপ করতে হবে।
উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা সিদ্দীকা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আইয়্যামে তাশরীকের রাতগুলোতে মিনায় অবস্থান করতেন এবং সূর্য যখন ঢলে যেত তখন প্রতি জামরায় ৭টি করে কংকর নিক্ষেপ করতেন। -সুনানে আবু দাউদ ১/২৭১
মাসআলা : ১১ ও ১২ তারিখ যোহরের পূর্বে রমীর সময় শুরু হয় না। তাই এ সময় কেউ রমী করলে তা আদায় হবে না।
হযরত জাবির রা. বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১০ যিলহজ্ব চাশতের সময় কংকর নিক্ষেপ করতেন। পক্ষান্তরে পরবর্তী দিনগুলোতে রমী করতেন সূর্য ঢলে যাওয়ার পর।’ -সহীহ মুসলিম ১/৪২০
১৩ যিলহজ্ব, রমী করা
মাসআলা : ১২ তারিখ দিবাগত রাতে মিনায় থাকা উত্তম এবং ১৩ তারিখ রমী করাও উত্তম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চতুর্থ দিন অর্থাৎ ১৩ তারিখ রমী করে মিনা ত্যাগ করেছিলেন।
ইতিপূর্বে একাধিকবার উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আইয়্যামে তাশরীক (অর্থাৎ ১১, ১২ ও ১৩ যিলহজ্ব) মিনায় অবস্থান করেছেন এবং মিনায় রাত্রি যাপন করেছেন।
তবে কেউ যদি মিনা ত্যাগ করতে চায় তাহলে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগেই চলে যেতে হবে। কেননা, ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে রমী করে মিনা ত্যাগ করতে না পারলে সূর্যাস্তের পর মিনা ত্যাগ করা মাকরূহ। তবে এ কারণে দম বা কোনো কিছু ওয়াজিব হবে না।
আর মিনায় ১৩ তারিখ সুবহে সাদিক হয়ে গেলে ঐ দিন রমী করা ওয়াজিব। রমী না করে চলে যাওয়া না জায়েয এবং এতে দম ওয়াজিব হবে। -রদ্দুল মুহতার ২/৫২১, আহকামে হজ্ব ৮৫
মাসআলা : ১৩ তারিখ যোহরের পূর্বেও রমী করা জায়েয।
হযরত ইবনে আবী মুলাইকা রাহ. বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-কে লক্ষ্য করছিলাম। দেখলাম তিনি দ্বিপ্রহরের সময় সূর্য ঢলে যাওয়ার পূর্বেই রমী করলেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৪৭৯৫, ১৪৭৯৩
মাসআলা : তবে যোহর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রমী করার সুন্নত ওয়াক্ত। -রদ্দুল মুহতার ২/৫২১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩৩
তাওয়াফে বিদা
মাসআলা : মীকাতের বাইরে অবস্থানকারী হাজ্বীদের জন্য মক্কা মুকাররামা ত্যাগ করার আগে একটি তাওয়াফ করা ওয়াজিব। একে তাওয়াফে বিদা বলা হয়। এই তাওয়াফ মক্কা থেকে বিদায়ের সময় করা উত্তম।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, লোকেরা চতুর্দিকে চলে যেতে আরম্ভ করল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কেউ যেন বাইতুল্লাহর নিকট তার শেষ উপস্থিতি ব্যতীত ফিরে না যায়। -সহীহ মুসলিম ১/৪২৭
মাসআলা : তাওয়াফে যিয়ারতের পর হাজ্বী নফল তাওয়াফ আদায় করলেও তা দ্বারা বিদায়ী তাওয়াফের ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। অবশ্য এরপরও ভিন্ন করে বিদায়ী তাওয়াফের নিয়তে একটি তাওয়াফ করে নেওয়া ভালো।
লক্ষণীয়
হজ্বের মৌলিক বিষয়গুলো উপরে উল্লেখ করা হল। এগুলো ছাড়াও হজ্বের আরো বহু মাসআলা রয়েছে। প্রয়োজন হলে কোনো নির্ভরযোগ্য আলেম থেকে তা জেনে নেওয়া আবশ্যক।