এতদাঞ্চলে ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’: পরিচিতি, মহিমা ও মজলুমি
[এই লেখাটি আজ থেকে প্রায় বার বছর আগে আমার ওয়ালিদ ছাহেবের হুকুমে লেখা হয়েছিল। বিভিন্ন কারণে তা এ যাবৎ অপ্রকাশিত থেকে গেছে। আল্লাহ তাআলার মেহেরবানী নজরে ছানীর পর এখন তা ছাপার সুযোগ হল। দুআ করি আল্লাহ একে নিজ দয়া ও অনুগ্রহে উপকারী বানান। আমীন। -আবদুল মালেক]
ভূমিকা
কয়েকমাস আগে আমার আব্বাজান আমাকে একটি পুস্তিকা দিয়ে বললেন, কিছু লোক এই পুস্তিকাটি বিভিন্ন মসজিদ ও মজমায় বিনামূল্যে বিতরণ করছে। এর দ্বারা মানুষের মধ্যে ফিতনা হচ্ছে। এই পুস্তিকাটির বিষয়ে কিছু লেখ। পুস্তিকাটির শিরোনাম হল, ‘ছৈয়দ মো: আবিদ শাহ মোজাদ্দেদী আল মাদানী, প্রেসিডেন্ট আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাত বাংলাদেশ-এর পক্ষ হইতে বাহাছের চ্যালেঞ্জ ওহাবী তবলীগী জামাত, লা মোজাহাবী জমাত, দেওবন্দী দল, কাদিয়ানী আহমদী জমাত, বাহাই ফেরকা, রাফিযী ফেরকা, নাস্তিক ফেরকা, ঈছাঈ ফেরকা এবং দুনিয়ার সমস্ত বেদ্বীন ও গোমরাহ ফেরকাগুলির প্রতি’।
ছোট আকারের সর্বমোট ষোল পৃষ্ঠার এই পুস্তিকাটিতে প্রথম আট পৃষ্ঠায় কিছু লোকের নাম দেওয়া হয়েছে। যাদের নামের সাথে যুক্ত নানা উপাধি থেকে স্পষ্ট যে, এদের অধিকাংশই সাধারণ মানুষ। এদের সম্পর্কে দাবি করা হয়েছে যে, এরা সকলেই বইটি পড়ে বুঝে শুনে এতে স্বাক্ষর করেছে। অথচ এই সাক্ষরের কী অর্থ তা আমার বোধগম্য নয়। এইসব সাধারণ মানুষও কি এই চ্যালেঞ্জে শরীক, না এর অন্য কোনো অর্থ আছে!
অবশিষ্ট আট পৃষ্ঠায় কয়েকজন হক্কানী রব্বানী আলেমের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যারা ছিলেন ভারতবর্ষের আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আপন যুগের প্রথম সারির উলামায়ে কেরাম। তাদের উপর নানা কুফরী কথাবার্তা আরোপ করে তাদেরকে কাফের সাব্যস্ত করা হয়েছে (নাউযুবিল্লাহ) এবং এ ব্যাপারে- হিন্দুস্তানের জনাব আহমদ রেযা খানের ঐসব কথাবার্তার পুনরাবৃত্তি ঘটানো হয়েছে, যা মিথ্যা হওয়া দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেছে এবং যা মিথ্যা হওয়া ওদেরও জানা আছে, যারা এইসব কথাবার্তার ভিত্তিতে হক্কানী উলামায়ে কেরামকে কাফের আখ্যা দিয়ে থাকে।
বেরেলীর খান সাহেব রুসুম ও বিদআতের প্রচার-প্রসারে খুবই তৎপর ছিলেন এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আলেমগণের নামে নানা কুফরী কথা রচনা করে এবং তাদের সঠিক বক্তব্যসমূহকে মনগড়া ব্যাখ্যার মাধ্যমে কুফরী কথার রূপ দিয়ে তাদেরকে কাফের আখ্যা দেওয়ার ব্যাপারে ছিলেন সিদ্ধহস্ত। শরয়ী প্রয়োজনে কাফেরকে কাফের আখ্যা দিতে হয়। কিন্তু খান সাহেব বেরলভী আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের শীর্ষ ব্যক্তিবর্গকে -যারা ছিলেন খাঁটি মুসলমান- কাফের আখ্যা দেওয়ার কাজে মগ্ন ছিলেন।
আলোচ্য পুস্তিকায় খান সাহেবের সেইসব মিথ্যাচারেরই পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে যা মিথ্যা হওয়া প্রকাশ্য দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট এবং যার উত্তরে বহু বই পুস্তকও রচিত হয়েছে। যা আবেদ শাহ সাহেবের জানা থাকাটাই স্বাভাবিক।
পুস্তিকাটি মিথ্যাচার ও মিথ্যা অপবাদের একটি সমষ্টি। যথা,
১. এতে ‘আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত’ এই পবিত্র নামের অপব্যবহার করা হয়েছে এবং ‘আহলে বিদআত ওয়াল ফুরকাত’-এর ব্যাপারে প্রয়োগ করা হয়েছে।
২. ‘ওহাবী’ শব্দের ভুল প্রয়োগ হয়েছে। এমন লোকদেরকে ওহাবী বলা হয়েছে যাদের মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব রাহ.-এর সাথে কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। না উস্তায-শাগরিদের, না পীর-মুরীদির, না চিন্তা-চেতনার।
৩. এতে হক্কানী আকাবির উলামা, যারা ছিলেন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর প্রধান ব্যক্তি এবং যারা তাদের সমগ্র জীবন বিদআত নির্মূল করে সুন্নতের প্রচার প্রসারের জন্য ওয়াক্ফ করে দিয়েছিলেন, যাঁরা কুফর শিরক এবং ভ্রান্ত রসম-রেওয়াজের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন এমন মহামতি ব্যক্তিদেরকে এতে কাফের আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
৪. পুস্তিকাটিতে ভারতবর্ষে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের মুখপাত্র দারুল উলূম দেওবন্দের মহান ব্যক্তিবর্গকে একটি ‘ফের্কা’ সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং এদের নামকরণ করা হয়েছে ‘দেওবন্দী দল’ বলে। অথচ এইসব বুযুর্গানে দ্বীন ছিলেন ফের্কাবাজীর চরম বিরোধী এবং তারা শুধু আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের মত ও পথের উপর অবিচল থাকাকেই দ্বীন বলে বিশ্বাস করতেন।
৫. এতে তাবলীগ জামাআতকেও অর্থাৎ কুরআন-সুন্নাহ ও সালাফে সালেহীনের পবিত্র সীরাতের আলোকে হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ. দ্বীনের দাওয়াত ও তাবলীগের যে নিয়ম গ্রহণ করেছেন যারা ঐ নিয়মে দাওয়াতের কাজ করেন এবং দ্বীনের বিষয়ে উদাসীন মানুষের মাঝে দ্বীনের চেতনা জাগ্রত করেন- এই বরকতময় দ্বীনী জামাআতকেও একটি গোমরাহ দল সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ.-কে কাফের আখ্যা দেওয়া হয়েছে। অথচ তিনি ছিলেন গত শতাব্দীর মুজদ্দিদগণের একজন।
এইসব নির্জলা মিথ্যা বর্ণনা করতে গিয়ে অনেক ঐতিহাসিক সত্যকে বিকৃত বা গোপনও করতে হয়েছে। অথচ কী নিঃসঙ্কোচে তারা এই মারাত্মক গর্হিত কর্ম করে গেছে!
প্রচারিত চ্যালেঞ্জটির হাকীকত
চ্যালেঞ্জেরও তো কিছু নিয়ম-নীতি আছে। যেমন এই নিয়মটির কথাই ধরুন, চ্যালেঞ্জের জন্য তো চ্যালেঞ্জ দাতাকে চ্যালেঞ্জ গ্রহীতার সাথে মোকাবেলা করতে সক্ষম হতে হবে। অথচ এখানে যার নামে চ্যালেঞ্জটি প্রচার করা হচ্ছে অর্থাৎ জনাব আবেদ শাহ, তিনি তো বহু আগেই ১৯৮৮ সনে মৃত্যুবরণ করেছেন। তো এখন ২০০৪ সালে এই চ্যালেঞ্জ তার নামে এবং তার ভাষায় প্রকাশ করার ও প্রচার করার কী অর্থ? তিনি কি কবরে থেকেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারীর সাথে আলোচনা করবেন? পুস্তিকাটিতে এটাও বলা হয়নি যে আবেদ শাহের অবর্তমানে এখন এই চ্যালেঞ্জ অমুকের পক্ষ থেকে!!
এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, এখানে মূল উদ্দেশ্য আলোচনায় বসা নয় বরং সাধারণ মুসলমানদের পেরেশান করা এবং তাদের ঈমান-আকীদায় সংশয় সৃষ্টি করা।
দ্বিতীয়ত, চ্যালেঞ্জ এমন কাউকে করা যায় যে সংশ্লিষ্ট বিষয়টি বোঝে এবং চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মত যোগ্যতা রাখে। সাধারণ মানুষের মধ্যে চ্যালেঞ্জকে একটি ইশতেহার রূপে বিলি করা নিঃসন্দেহে দায়িত্বহীনতার পরিচায়ক। যা থেকে বেঁচে থাকা অতি জরুরি ছিল।
তৃতীয়ত, চ্যালেঞ্জ এমন ব্যক্তিকে করা যায়, যে চ্যালেঞ্জদাতার বিপরীত মত পোষণ করে। এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ প্রদানের উদ্দেশ্য হয়, তাকে তার দাবি বা মত থেকে সরিয়ে চ্যালেঞ্জদাতার কাছে যা সত্য ও সঠিক তা স্বীকার বা গ্রহণ করানো। এ তো অতি স্পষ্ট ও সর্বজন স্বীকৃত কথা। কিন্তু এ পুস্তিকায় এই স্বীকৃত বিষয়টিও লঙ্ঘন করা হয়েছে। এতে তো হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ.সহ ছয়জন আকাবির আহলে হক্ব আলিমকে অন্যায়ভাবে কাফির আখ্যা দেয়া হয়েছে এবং যারা তাদেরকে কাফির মনে করবে না তাদেরকেও কাফির বলা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন এই যে, এর সাথে কাদিয়ানী, বাহাই, রাফেযী, দাহরিয়া ও ঈসায়ীদের কী সম্পর্ক? দ্বীন ও ঈমানের সাথে এইসব লোকের কী সংযোগ যে, ওরা এই আকাবির আলিমগণকে মুসলমান মনে করে আর তাদের বিরোধীদেরকে বেদ্বীন ও বিদআতী? তাহলে এ বিষয়ে ঐ অমুসলিমদেরকেও চ্যালেঞ্জ করার কী অর্থ?
চ্যালেঞ্জ করার অধিকার কে রাখে?
সবশেষে যে বিষয়টি উল্লেখ করতে চাই তা হল, চ্যালেঞ্জ করার অধিকার একমাত্র হক্বপন্থীরই রয়েছে যখন হক প্রতিষ্ঠার জন্য চ্যালেঞ্জের প্রয়োজন অনুভূত হয়। কিন্তু যে বা যারা মিথ্যা এবং না-হকের অনুসারী তার তো কখনোই চ্যালেঞ্জ করার অধিকার রাখে না। না শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে, না যুক্তি-বুদ্ধির দৃষ্টিকোণ থেকে। এই মূলনীতির বিচারেও উল্লেখিত চ্যালেঞ্জটি উত্তীর্ণ নয়। কারণ চ্যালেঞ্জকারীরা খুব ভালোভাবেই জানেন যে, আলোচিত বিষয়ে তাদের দাবিদাওয়া সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অবাস্তব। হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ. এবং যে ছয় আকাবির আলেমে দ্বীন সম্পর্কে আবেদ শাহ সাহেব কুফরীর অপবাদ আরোপ করেছেন তাদের সকলেরই কুফর ও শিরক থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র থাকা আর তাওহীদ ও ঈমান এবং সুন্নত ও শরীয়ত প্রতিষ্ঠার পথে তাদের জীবন ওয়াক্ফ থাকার বিষয়টি আবেদ শাহ সাহেব জানতেন না- এমন দাবি কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। শুধু একটি দলীয় ভ্রান্ত রেওয়াজকে টিকিয়ে রাখাই এইসব চ্যালেঞ্জ ও মিথ্যাচারের উদ্দেশ্য বলে প্রতীয়মান হয়, যা কোনো নীতিবান মানুষের দ্বারা সংঘটিত হওয়া এক অকল্পনীয় ব্যাপার।
যেহেতু চ্যালেঞ্জটি সংশ্লিষ্ট উসূল ও নীতিমালায় উত্তীর্ণ নয় এ কারণে আমি তা গ্রহণ করে এ বিষয়ে কিছু লেখা অনুচিত মনে করি। অন্যদিকে পুস্তিকাটি পড়ে অনেক সহজ সরল মুসলমান বিভ্রান্ত হতে পারেন এবর্ং আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের শীর্ষস্থানীয় উলামা সম্পর্কে ভুল ধারণার শিকার হতে পারেন, বরং একশ্রেণীর লোক এইসব অনাচার-মিথ্যাচারকে শিরক ও বিদআতের প্রচার ও বিস্তারের উপায় হিসেবে গ্রহণ করেছে, তাই এ বিষয়ে সত্য ও বাস্তব কথাটি সংক্ষেপে হলেও স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া এবং পুস্তিকাটিতে যেসব মিথ্যা ও অবাস্তব কথা বলা হয়েছে তা চিহ্নিত করে দেওয়া অবশ্য-কর্তব্য মনে করছি।
আল্লাহ তাআলা ইখলাস নসীব করুন এবং এর দ্বারা আমাকে ও তাঁর বান্দাদেরকে উপকৃত করুন। আমীন।
وما توفيقي إلا بالله عليه توكلت وإليه أنيب
প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয়
এ প্রবন্ধে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ আলোচিত হয়েছে :
১. আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের পরিচয় ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
২. ‘আহলুল বিদআত ওয়াল ফুরকাত’-এর পরিচয় ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
৩. ‘ওহাবী’ কাকে বলে এবং এই শব্দের ইতিহাস।
৪. উম্মাহর যেসকল আকাবির আলিমকে এ পুস্তিকায় কাফের আখ্যা দেওয়া হয়েছে তাদের বাস্তব অবস্থান ও মর্যাদা এবং কাফির আখ্যাদান -কর্মের স্বরূপ।
‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’
পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, উম্মাহর সকল দলের মধ্যে সিরাতে মুসতাকীমের উপর অবিচল দলটি হল ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’। এবং একমাত্র এই দলটিই ‘ফিরকায়ে নাজিয়াহ’ (মুক্তিপ্রাপ্ত দল) ও ‘ত্বায়েফায়ে মানসুরাহ’ (সাহায্যপ্রাপ্ত জামাত) যাদের সম্পর্কে হাদীস শরীফে আছে মুক্তির অঙ্গিকার এবং কিয়ামত পর্যন্ত খোদায়ী মদদ ও নুসরত শামেলে হাল হওয়ার সুসংবাদ। এজন্য সিরাতে মুসতাকীম থেকে বিচ্যুত দলগুলোকেও দেখা যায় ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’ নামে নিজের পরিচয় দিতে। আর এ বিষয়ে হিন্দুস্তানের বেরলভী বা রেজভী ফের্কা অন্যান্য গোমরাহ ফের্কার চেয়ে অধিক তৎপর। এরা বাস্তবে ‘আহলুল বিদআত ওয়াল ফুরকাত’ (বিদআতী দল) হওয়া সত্ত্বেও নিজেদেরকে ‘সুন্নী’ ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত’ নামে পরিচয় দিয়ে থাকে। আর প্রকৃত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ্র লোকদেরকে ‘ওহাবী’ নামে আখ্যায়িত করে।
অথচ ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’ নামটিতেই রয়েছে এ নামে অভিহিত হওয়ার মানদ-, যার ভিত্তিতে আসল-নকলের পার্থক্য নিরূপণ করা অতি সহজ। এ কারণে যে বা যারা উপযুক্ততা ছাড়া এই নাম ব্যবহার করবে তাকে প্রকাশ্যে লজ্জিত হতে হবে। কারণ, নাম ও কর্মের পার্থক্যের মধ্য দিয়েই তার স্বরূপ প্রকাশিত হয়ে পড়বে।
এই নামের উৎস
নাজাতপ্রাপ্ত দলের এই নাম মূলত নিম্নোক্ত হাদীসসমূহ থেকে গৃহীত-
এক.
أَلَا إِنَّ مَنْ قَبْلَكُمْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ افْتَرَقُوا عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، وَإِنَّ هَذِهِ الْمِلَّةَ سَتَفْتَرِقُ عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ: ثِنْتَانِ وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ، وَوَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ، وَهِيَ الْجَمَاعَةُ .
জেনে রেখো, তোমাদের পূর্ববর্তী আহলে কিতাব বায়াত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে । আর এ উম্মত বিভক্ত হবে তিয়াত্তর দলে। বায়াত্তর দল জাহান্নামী হবে আর একটি দল জান্নাতী হবে। সেই দলটি হচ্ছে ‘আলজামাআহ’। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৫৯৬; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৬৯৩৭, হাদীসটির সনদ সহীহ।
দুই.
إِنَّ بني إسرائيل تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً، قَالُوا: وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي.
قال الترمذي: هَذَا حَدِيثٌ مُفَسَّرٌ غَرِيبٌ، لاَ نَعْرِفُهُ مِثْلَ هَذَا إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ.
বনী ইসরাঈল বায়াত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে আর আমার উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ছাড়া আর সবাই জাহান্নামী হবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা কারা? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, যারা আমার ও আমার সাহাবীগণের পথে অবিচল থাকবে।’ -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৪১, কিতাবুল ঈমান
তিন.
إِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرى اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ.
তোমাদের যারা আমার পরে বেঁচে থাকবে তারা অবশ্যই বহু মতভেদ দেখবে। তখন আমার সুন্নাহ ও আমার পরের খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ অবলম্বন করো। তা মজবুতভাবে ধারণ করো এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে রেখো। আর নবআবিষ্কৃত বিষয়াদি থেকে অবশ্যই বেঁচে থেকো। কারণ (দ্বীনের নামে আবিষ্কৃত) সকল নতুন বিষয় বিদআত আর সকল বিদআত গোমরাহী। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬৬৯২; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৬০৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৭৬ হাদীসটির সনদ সহীহ।
এই হাদীসগুলো থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, যখন উম্মতের মধ্যে বহু মত ও পথের উদ্ভব ঘটবে তখন সিরাতে মুসতাকীমের উপর দৃঢ়পদ থাকার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ ও খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করতে হবে। সেই নাযুক মুহূর্তে তারাই হবে নাজাতপ্রাপ্ত যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাহর উপর অটল থাকবে এবং একই সাথে নিজেকে ‘আল জামাআহ’-এর অন্তর্ভুক্ত রাখবে। বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন করবে না।
যেহেতু নাজাতপ্রাপ্তদের মূল বৈশিষ্ট্য হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাহর উপর অবিচলতা ও ‘আল জামাআহ’ থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়া, এজন্য তাদেরকে ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’ অর্থাৎ ‘সুন্নাহ ও জামাআহ ধারণকারী’ নামে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এর বিপরীতে যারা সুন্নাহ ত্যাগ করে বিদআত অবলম্বন করে এবং মুসলমানদের জামাআত থেকে বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন করে উম্মাহর মাঝে বিভেদ ও অনৈক্য সৃষ্টি করে তাদের নাম ‘আহলুল বিদআতি ওয়াল ফুরকাত’ অর্থাৎ বিদআত ও বিচ্ছন্নতা অবলম্বনকারী।
সূরা আলে ইমরান ১০৬ ও ১০৭ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা আখেরাতের প্রসঙ্গে বলেছেন, যেদিন এক দলের চেহারা উজ্জ্বল হবে আর অপর দলের চেহারা কালো হবে।’ এর তাফসীরে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত,
يَعْنِي: يَوْمَ الْقِيَامَةِ، حِينَ تَبْيَضُّ وُجُوهُ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ، وَتَسْوَدُّ وُجُوهُ أَهْلِ البِدْعَة وَالْفُرْقَةِ.
অর্থাৎ ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের’ চেহারা উজ্জ্বল হবে আর ‘আহলুল বিদআত ওয়াল ফুরকাতের’ চেহারা কালো হবে। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৪১৯; আদদুররুল মানসূর ফিত তাফসীরি বিল মা’সূর, সুয়ূতী ৪/৬৩; শরহু উসূলি ইতিকাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামাআহ, লালিকায়ী ১/৭৯ প্যারা নং ৭৪
‘আস্সুন্নাহ’ ও ‘আলজামাআহ’-এর অর্থ
আমরা জেনেছি যে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর বৈশিষ্ট্যই হল, সুন্নাহর অনুসরণ ও ‘আল জামাআহ’-য় শামিল থাকা। তা থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়া। এখন আমাদেরকে এই দুই শব্দের মর্ম বুঝতে হবে।
কুআন হাদীসের আলোকে আলিমগণ ‘সুন্নাহ’র অর্থ বর্ণনা করেছেন,
وَالسُّنَّةُ: هِيَ الطَّرِيقَةُ الْمَسْلُوكَةُ، فَيَشْمَلُ ذَلِكَ التَّمَسُّكَ بِمَا كَانَ عَلَيْهِ هُوَ وَخُلَفَاؤُهُ الرَّاشِدُونَ مِنَ الِاعْتِقَادَاتِ وَالْأَعْمَالِ وَالْأَقْوَالِ.
অর্থাৎ দ্বীনের যে পথ ও পন্থার উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও খোলাফায়ে রাশেদীন ছিলেন, আকীদা-বিশ্বাস, আমল ও কর্ম তথা দ্বীনের সকল বিষয়ে তাদের ঐ পথ ও পন্থাই হচ্ছে ‘সুন্নাহ’। -জামিউল উলূমি ওয়াল হিকাম, ইবনে রজব পৃ. ৪৯৫; আস সুন্নাতুন নাবাবিয়্যাহ ওয়া মাদলূলুহাশ শরয়ী, আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ
‘আল জামাআহ’-তে রয়েছে চারটি বিষয় :
১. আমীরুল মুমিনীন বা সুলতানের কর্তৃত্ব স্বীকারকারীদের থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়া এবং শরীয়তসম্মত বিষয়ে তার আনুগত্য বর্জন না করা। (দ্রষ্টব্য : ফাতহুল বারী ১৩/৩৭, হাদীস ৭০৮৪-এর আলোচনায়)
২. শরীয়তের আহকাম ও বিধানের ক্ষেত্রে উম্মাহর আমলে মুতাওয়ারাছ তথা সাহাবা-তায়েয়ীন যুগ থেকে চলে আসা কর্মধারা এবং উম্মাহর সকল আলিম বা অধিকাংশ আলিমের ইজমা ও ঐক্যের বিরোধিতা না করা। (দ্রষ্টব্য : উসূলের কিতাবসমূহের ইজমা অধ্যায়)
৩. হাদীস-সুন্নাহ এবং ফিকহের ইলম রাখেন এমন উলামা-মাশাইখের সাথে নিজেকে যুক্ত রাখা। ইমাম তিরমিযী রাহ. আহলে ইলম থেকে আলজামাআর যে ব্যাখ্যা বর্ণনা করেছেন তা এই-
أهل الفقه والعلم والحديث
অর্থাৎ জামাআ হচ্ছে ফিকহ ও হাদীসের ধারক আলিম সম্প্রদায়। (কিতাবুল ফিতান, বাবু লুযুমিল জামাআ, হাদীস ২১৬৭-এর আলোচনায়)
৪. মুসলিম শাসনকর্তার অধীনস্ত মুসলমানদের জামাত। -আল ইতিসাম, শাতিবী, শরহু উসূলি ইতিকাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামাআহ
সুতরাং কেউ আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অর্থ, সে দ্বীনের প্রতিটি বিভাগে :
১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতের উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে। আকাইদ, ইবাদত, ইত্যাদি কোনো ক্ষেত্রেই নিজের জন্য নতুন কোনো পথ নির্বাচন করবে না। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো আকাইদ ও ইবাদতই গ্রহণ ও অনুসরণ করবে, যা গ্রহণ ও অনুসরণ করেছিলেন খোলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবায়ে কেরাম। সকল প্রকারের বিদআত ও রুসুম-রেওয়াজ থেকে দূরে থাকবে। লেনদেন, সামাজিকতা, আচার-ব্যবহার অর্থাৎ দ্বীন-দুনিয়ার সকল ক্ষেত্রে সুন্নাহর শিক্ষাকেই অন্য সব কিছুর উপর প্রাধান্য দিবে।
২. কোনো বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন ও উলামায়ে হক্বের ইজমা ও ঐকমত্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও অবস্থানের বিরোধিতা করবে না। ইজমার বিরুদ্ধাচরণ করে এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত হবে না- مَنْ شَذَّ شَذَّ في النار
যে দলছুট হল সে দলছুট হয়ে জাহান্নামে পতিত হবে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২১৬৭
৩. কোনো ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহর অনুসৃত পথ থেকে বিচ্যুত হবে না। আল্লাহ তাআলার ইরশাদ-
وَ مَنْ یُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْۢ بَعْدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُ الْهُدٰی وَ یَتَّبِعْ غَیْرَ سَبِیْلِ الْمُؤْمِنِیْنَ نُوَلِّهٖ مَا تَوَلّٰی وَ نُصْلِهٖ جَهَنَّمَ ؕ وَ سَآءَتْ مَصِیْرًا۠.
কারো নিকট সুপথ প্রকাশিত হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতিত অন্য পথ অনুসরণ করে তবে যা সে গ্রহণ করেছে তাতে তাকে ছেড়ে দেব এবং তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব। আর তা কতই না মন্দ আবাস। -সূরা নিসা (৪) : ১১৫
৪. মুসলমানদের অধিকাংশ আহলুর রায় (أهل الحل والعقد) কোনো আমীরের আনুগত্যের ব্যাপারে একমত হলে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বা অভিযান পরিচালনা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকবে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য
উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ ছাড়াও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ্র এক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য এও যে, তারা কোনো ‘মুসলমান’কে ‘কাফের’ আখ্যা দেয় না। ‘কাফের’ শব্দটিকে একটি গালি হিসেবে ব্যবহার করা বা অন্যের উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে তাকে কাফের আখ্যা দেওয়া তো দূরের কথা, গুনাহে কবীরায় লিপ্ত হওয়ার কারণে বা এমন কোনো কারণে যা ‘কুফরী’ হওয়া স্পষ্ট নয়- কোনো মুসলমানকে কাফের বলে না। কিন্তু বিদআতী লোকদের বিশেষ পরিচয়ই হল, এরা ‘মুসলমান’দের ‘কাফের’ আখ্যা দিয়ে থাকে। কারো উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে অর্থাৎ তার নামে কুফরী কথাবার্তা বানিয়ে বা তার কোনো সঠিক কথাকে বিকৃত করে কুফরী কথার রূপ দিয়ে তাকে ‘কাফের’ সাব্যস্ত করা এদের পক্ষে অতি সহজ। কোনো কোনো বিদআতী সম্প্রদায় এমনও ছিল যারা কবীরা গুনাহের কারণে মুসলমানদের কাফের আখ্যা দিত। আবার কতক বিদআতী এমনও ছিল যারা নিজেদের দলের লোক ছাড়া অন্য সকলকে কাফের বলত। এই নীতি ও কর্মের বিদআতী যে শুধু অতীতেই ছিল তা নয়, এখনও আছে।
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের এ বৈশিষ্ট্যও এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের ‘সুন্নাহ’র অনুসরণ থেকে। কারণ তাঁরা আহলে ক্বিবলা (পারিভাষিক অর্থে)-কে কাফের বলতে নিষেধ করেছেন এবং ‘আলজামাআত’-এর মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করতে নিষেধ করেছেন। আর সত্য কথা হল, কেউ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ্র অন্তর্ভুক্ত হবে আবার মুসলমানদের কাফেরও বলবে এটা কখনো হতে পারে না।
সালাফে সালেহীন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ্র বৈশিষ্ট্যসমূহের আলোচনায় এ বৈশিষ্ট্যও অতি গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেছেন। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ্র পরিচয় দিয়ে ইমাম আবু হানিফা রাহ.-এর এ বাণী তো অতি প্রসিদ্ধ। তিনি বলেছেন,
الْجَمَاعَة ان تفضل أَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعَلِيًّا وَعُثْمَانَ وَلا تَنْتَقِصَ أَحَدًا مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَلا تُكَفِّرَ النَّاسَ بِالذُّنُوبِ وَتُصَلِّيَ على من يَقُول لَا إِلَهَ إِلا اللَّهُ، وَخَلْفَ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَتَمْسَحَ عَلى الْخُفَّيْنِ وَتُفَوِّضَ الأَمْرَ إِلَى اللَّهِ وَتَدَعَ النُّطْق فِي اللَّهِ جَلَّ جَلالُهُ.
‘আবু বকর, উমর, আলী ও উসমান রা.-কে শ্রেষ্ঠ মনে করবে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সাহাবীর অসম্মান করবে না, গোনাহের কারণে মানুষকে কাফের আখ্যা দিবে না, যে কালিমা পাঠ করে তার মৃত্যুতে জানাযার নামায পড়বে। কালেমা পাঠকারীর ইমামতিতে নামায পড়তে অসম্মত হবে না। চামড়ার মোজার উপর মাস্হ করবে। সব কিছুকে আল্লাহর উপর ন্যস্ত করবে আর আল্লাহ তাআলার সত্তার বিষয়ে মুখ খুলবে না।’ -আলইনতিকা, ইবনে আব্দুল বার পৃ. ৩১৪-৩১৫
ফিকহে হানাফীর প্রসিদ্ধ কিতাব ‘আল বাহরুর রাইক’ (তাকমিলাহ)-এ ফিকহের প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য কিতাব ‘আলহাভী’ থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে যে,
أَهْلُ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ مَنْ فِيهِ عَشَرَةُ أَشْيَاءَ: الْأَوَّلُ أَنْ لَا يَقُولَ شَيْئًا فِي اللَّهِ تَعَالَى لَا يَلِيقُ بِصِفَاتِهِ. وَالثَّانِي: يُقِرُّ بِأَنَّ الْقُرْآنَ كَلَامُ اللَّهِ تَعَالَى وَلَيْسَ بِمَخْلُوقٍ. الثَّالِثُ: يَرَى الْجُمُعَةَ وَالْعِيدَيْنِ خَلْفَ كُلِّ بَرٍّ وَفَاجِرٍ. وَالرَّابِعُ: يَرَى الْقَدَرَ خَيْرَهُ وَشَرَّهُ مِنْ اللَّهِ تَعَالَى. وَالْخَامِسُ: يَرَى الْمَسْحَ عَلَى الْخُفَّيْنِ جَائِزًا. وَالسَّادِسُ: لَا يَخْرُجُ عَلَى الْأَمِيرِ بِالسَّيْفِ. وَالسَّابِعُ: يُفَضِّلُ أَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ وَعَلِيًّا عَلَى سَائِرِ الصَّحَابَةِ. وَالثَّامِنُ: لَا يُكَفِّرُ أَحَدًا مِنْ أَهْلِ الْقِبْلَةِ بِذَنْبٍ. وَالتَّاسِعُ: يُصَلِّي عَلَى مَنْ مَاتَ مِنْ أَهْلِ الْقِبْلَةِ. وَالْعَاشِرُ: يَرَى الْجَمَاعَةَ رَحْمَةً وَالْفُرْقَةَ عَذَابًا.
‘আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের অন্তর্ভুক্ত সে, যার মধ্যে দশটি বৈশিষ্ট্য থাকবে :
১. আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে এমন কিছু না বলা যা তাঁর গুণাবলীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
২. স্বীকার করা যে, কুরআন আল্লাহর কালাম, তা মাখলূক বা তাঁর সৃষ্টি নয়।
৩. নেককার গোনাহগার উভয় শ্রেণির মানুষের পিছনেই জুমা ও দুই ঈদের নামায পড়াকে জায়েয মনে করা।
৪. তাকদীরের ভালো-মন্দ আল্লাহর পক্ষ থেকে হওয়ার বিশ্বাস রাখা।
৫. চামড়ার মোজার উপর মাস্হ করাকে জায়েয মনে করা।
৬. আমীরের বিরুদ্ধে তরবারী উত্তোলন করা থেকে বিরত থাকা।
৭. আবু বকর, উমর, উসমান ও আলী রা.-কে অন্য সকল সাহাবী থেকে শ্রেষ্ঠ বিশ্বাস করা।
৮. গুনাহের কারণে কোনো আহলে কিবলাকে কাফের আখ্যা না দেওয়া।
৯. আহলে কিবলার অন্তর্ভুক্ত কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার জানাযার নামায আদায় করা।
১০. মুসলমানদের মধ্যকার ঐক্যকে রহমত ও অনৈক্যকে আযাব মনে করা। -আল বাহরুর রাইক, তাকমিলাহ, খ- ৮, পৃ. ১৮২ কিতাবুল কারাহিয়্যাত
قال صاحب الكشاف : في هذا الفصل شروط وزيادات لأصحابنا يجب أن تراعى.
কাশশাফ গ্রন্থকার বলেন, এ প্রসঙ্গে আমাদের আলিমগণের আরো কিছু বিষয়াদি রয়েছে, যার প্রতি লক্ষ্য রাখাও অপরিহার্য। -প্রাগুক্ত
এ আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, যারা হক্কানী আলিমগণের পিছনে নামায পড়া তো দূরের কথা, তাদের কেউ ওদের মসজিদে নামায পড়তে গেলে ওরা সেই মসজিদ ধৌত করা ছাড়া তাতে নামায পড়ে না বা নামায পড়াকে জায়েয মনে করে না ওরা কখনো ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতে’র অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না।
এই উপমহাদেশে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত
আলহামদু লিল্লাহ সর্বদাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের মুহাক্কিক আলিমগণ সচেতন ছিলেন। যখনই কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’ থেকে বিচ্যুত হয়েছে তখনই হক্কানী আলিমগণ তাদের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন এবং তাদের মতামতের অসারতা দলীল-প্রমাণের আলোকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
ইংরেজ আমলে যখন হিন্দুস্তানের বিভিন্ন এলাকার বিদআতী আলিমরা বিশেষ করে বেরেলীর জনাব আহমদ রেযা খান ও তাঁর সমমনা বিদআতী আলিমরা সাধারণ্যে প্রচলিত ভ্রান্ত রসম-রেওয়াজ এবং শিরকী ও বিদআতী কর্মকা-ের সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতাদানে সর্বশক্তি ব্যয় করল তখন ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতে’র মুখপাত্ররূপে শিরক-বিদআতের মূলোৎপাটনে যারা সবচেয়ে অগ্রগামী ছিলেন তারা হলেন দারুল উলূম দেওবন্দের সন্তানগণ এবং এর আকাবির ও মাশাইখ। অপরদিকে বিদআতের প্রতিষ্ঠা ও পৃষ্ঠপোষকতায় সবচেয়ে অগ্রগামী ছিলেন বেরেলীর জনাব আহমদ রেযা খান। ফলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত ও আহলে বিদআতের এই ইখতিলাফ সাধারণের ভাষায় দেওবন্দী-বেরলভী ইখতিলাফ নামেই প্রসিদ্ধ হয়ে যায়। অথচ তা মূলত ছিল তাওহীদ ও র্শিক, সুন্নত ও বিদআত এবং সত্য ও মিথ্যার ইখতিলাফ।
তাওহীদ, সুন্নত ও হক্বের পতাকাবাহী ছিলেন দারুল উলূম দেওবন্দের সন্তানগণ, এর আকাবির ও মাশাইখ। যার জাজ্বল্যমান প্রমাণরূপে আজও রয়েছে তাদের অজ¯্র রচনা, পত্রাবলী ও বক্তৃতা সংকলন। লাখো শিষ্য, মুরীদ ও ভক্ত, হাজারো মাদরাসা, মসজিদ ও খানকাহ।
অপর দিকে শিরকী কর্মকা-; বিদআত, রসম ও রেওয়াজ ইত্যাদির পৃষ্ঠপোষকতাদানকারী জনাব আহমদ রেযা খান ও তার সমমনা আলিমদের রচিত বই পুস্তক, কর্মকা- এবং এদের প্রতিষ্ঠিত দ্বীনী প্রতিষ্ঠানসমূহ এদের অবস্থানের সাক্ষ্য দিচ্ছে।
কিন্তু ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির ধারায় দেখা যাচ্ছে অতীতের বিদআতী সম্প্রদায়গুলোর মত এরাও হক্বপন্থীদের নাম আত্মসাৎ করে নিজেদেরকে ‘সুন্নী জামাত’ ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত’ বলে জোরে শোরে প্রচার করছে। আর হক্বপন্থী আলিমগণকে আখ্যায়িত করছে ‘ওহাবী’ নামে, যা সম্পূর্ণ অবাস্তব ও ভিত্তিহীন।
আহলুল বিদআত ওয়াল ফুরকাত-এর
পরিচয় ও নিদর্শন
উপরোক্ত আলোচনা থেকে ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ্’-এর পাশাপাশি ‘আহলুল বিদআতি ওয়াল ফুরকাহ’-এর পরিচয়ও স্পষ্ট হয়ে গেছে। সংক্ষেপে বলা যায়, যারা সুন্নত পরিত্যাগ করে বিদআত আবিষ্কার করে এবং উম্মাহর মাঝে নানা দলের সৃষ্টি করে, উপযুক্ত কারণ ছাড়া মুসলমানদেরকে কাফের আখ্যা দিয়ে মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে- এরাই হল ‘আহলুল বিদআত ওয়াল ফুরকাত’।
শরীয়তের পরিভাষায় বিদআত বলে, যে আক্বীদা, কর্ম বা মতকে কোনো শরয়ী প্রমাণ ছাড়াই শরীয়তের অংশ বানিয়ে নেওয়া হয়েছে। অন্য শব্দে- যে আক্বীদা, আমল, আমলের নিয়ম, চিন্তা ও মতকে শরীয়তের অংশ মনে করা হয় অথচ এর পক্ষে না সুন্নতে রাসূল রয়েছে, না সুন্নতে খোলাফায়ে রাশেদীন, না সুন্নতে সাহাবা। এরপর বিষয়টি যদি শরীয়তের কোনো দলীলের বিরোধী হয় তবে তা দুই কারণে হারাম হবে; বিদআত হওয়ার কারণে এবং শরীয়তের বিরোধী হওয়ার কারণে।
‘আল ফুরকাত’ শব্দে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো রয়েছে :
১. সাহাবায়ে কেরামের ‘ইজমা’র বিরোধিতা।
২. মুজতাহিদ ইমাম ও হক্কানী উলামায়ে কিরামের ইজমার বিরোধিতা।
৩. মুসলিম উম্মাহর অভিন্ন পথ ও কর্মের বিরোধিতা।
এখানে যে বিষয়টি বিশেষভাবে বোঝা উচিত তা এই যে, মুসলিম উম্মাহর অভিন্ন পথ আর সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত রসম-রেওয়াজ এই দুইটি এক বিষয় নয়। প্রথমটিতে সাধারণ মুসলমান, হক্কানী উলামা এবং দ্বীনের হক্কানী দায়ীগণ সবাই একমত থাকেন। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় বিষয়টি কতক সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত থাকলেও হক্কানী উলামা ও দ্বীনদার ব্যক্তিবর্গ এর বিরোধিতা করেন এবং সুন্নতের প্রতি মানুষকে পথনির্দেশ করেন।
৪. মুসলমানদের সর্বজনস্বীকৃত আমীরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা।
৫. শরীয়তের দৃষ্টিতে উপযুক্ত কারণ ছাড়া কোনো মুসলিমকে কাফের আখ্যা দেওয়া।
৬. হকপন্থীদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা বা কোনো বিষয়ে বিচ্ছিন্ন কোনো মত প্রকাশ করে মানুষের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। -আল ইতিসাম শাতিবী খ. ১, পৃ. ১৭-১৪১, ১৮৭-১৯৩, ৩৬৭-৫১৪; খ. ২, পৃ. ৬৬৯-৬৯০, ৭১১-৭১২, ৭৩২-৭৪২, ৭৬৭-৭৭৮
আশা করি, উপরের আলোচনা থেকে আহলে বিদআতের পুরো পরিচয় স্পষ্ট হয়েছে এবং এ-ও স্পষ্ট হয়েছে যে, যারা আকীদা, ইবাদাতের মধ্যে নতুন নতুন বিষয়ের সংযোজন করে এবং রসম-রেওয়াজকে নিজের দ্বীন বানিয়ে নেয় এরপর তা প্রমাণ করার জন্য কুরআন-হাদীসে তাহরীফ বা অপব্যাখ্যা করে এইসকল গর্হিত কাজে তাদের সমর্থন না করার কারণে বা তাদের বিরোধিতা করার কারণে আহলে হককে তিরস্কার করে বা কাফের আখ্যা দেয়- এরা হাজার বার নিজের নামের সাতে ‘সুন্নী’ শব্দ ব্যবহার করলেও কখনো আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না।
দুইটি গুরুত্বপূর্ণ আলামত
প্রতি যুগের বিদআতপন্থীদের এক গুরুত্বপূর্ণ আলামত হল, এরা খুব আকর্ষণীয় নামে নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকে। কিন্তু তা হয় বাস্তবের সম্পূর্ণ বিপরীত। এরা আহলে হকের নাম কিংবা বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্যের শুধু শিরোনামটি আত্মসাৎ করে নিজেদের জন্য ব্যবহার করে। আর আহলে হকের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারে লিপ্ত হয় এবং তাদেরকে মন্দ নামে অভিহিত করে। -আল ইতিসাম, শাতিবী ১/৩৪-৩৯, শরহু উসুলি ই‘তিকাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামাআহ, লালেকায়ী, ২/২০০-২০১, ২০৪
যেমন হাদীস অস্বীকারকারী লোকেরা নিজেদেরকে ‘আহলে কুরআন’ নামে পরিচয় দিয়ে থাকে। অথচ তাদের নাম হওয়া উচিত হাদীস অস্বীকারকারী। মু‘তাযিলাহ ফেরকা নিজেদের অভিহিত করে ‘আহলুল আদ্ল ওয়াত তাওহীদ’ নামে। অথচ তাদের ভ্রান্ত মতবাদের ভিত্তি হল তাওহীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের অস্বীকারের উপর। একইভাবে বর্তমানের বিদআতীরা নিজেদের অভিহিত করে ‘আশেকে রাসূল’, ‘সুন্নী’ নামে আর নিজেদের ফেরকাকে পরিচিত করে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত’ নামে। অপরদিকে প্রকৃত ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত’-কে ওহাবী বলে এবং তাদেরকে রাসূলের শানে বে-আদবীর অভিযোগে অভিযুক্ত করে। অথচ তারাই তাওহীদ ও সুন্নতকে জীবিত করা এবং বিদআত ও র্শিককে নির্মূল করার মহান ব্রতে নিজেদের পূর্ণ জীবন ওয়াকফ করেছিলেন। সুন্নতের অনুসরণ এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুহাব্বত ছিল যাদের বৈশিষ্ট্য এবং যারা ছিলেন এর জন্য ফিদা ও কুরবান।
আহলে বিদআতের দ্বিতীয় বড় আলামতটি হল, এরা কথায় কথায় মুসলমানদের কাফের আখ্যা দেয়। অন্যকে ‘ফাসেক’ ‘গোমরাহ’ বলা তো এদের সাধারণ চরিত্র। এদের গোঁড়া লোকেরা শুধু ফাসেক বা গোমরাহ আখ্যা দিয়ে নয়, একেবারে ‘কাফের’ আখ্যা দিয়ে তবেই ক্ষান্ত হয়।
শরীয়তে কোনো ব্যক্তিকে কাফের ঘোষণা করার নীতিমালা নির্ধারিত। একজন কালিমা পাঠকারী মুসলমান, যে বাইতুল্লাহকে কিবলা মানে, মুসলমানদের মত নামায পড়ে, মুসলমানদের জবাইকৃত পশু হালাল মনে করে- তাকে কখন এবং কিসের ভিত্তিতে কাফের ঘোষণা করা যায় এর নীতিমালা শরীয়তে নির্ধারিত। আহলে বিদআত এসব নীতির অনুসরণ তো দূরের কথা, নিজেরা কুফরী কথাবার্তা রচনা করে তা অন্যের উপর আরোপ করতে এবং এর ভিত্তিতে কাফের আখ্যা দিতে এরা সিদ্ধহস্ত।
এসব কাজই জনাব আহমদ রেযা খান বড় বড় আলেমদের ব্যাপারে করেছেন এবং তারই অন্ধ অনুসরণ করেছেন জনাব আবেদ শাহ সাহেব।
‘আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত’ এবং ‘আহলুল বিদআতি ওয়াল ফুরক্বাতে’র এই সংক্ষিপ্ত পরিচিতির পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া কঠিন নয় যে, বাংলা-পাক-ভারতের রেজভী জামাত, যারা নিজেদেরকে সুন্নী বলে পরিচয় দেয়, আসলেই কি এরা সুন্নী না বিদআতী।
‘রেজভী’রা যেসব ‘আকীদা’ ও ‘আমল’কে নিজেদের ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য বলে বিশ্বাস করে, যেসব বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ্র আলেমদের সাথে তাদের বিরোধ- যদি ‘সুন্নাহ’ বা ‘ইজমা’য় সেসব আক্বীদা ও আমলের ভিত্তি থেকে থাকে তাহলে তারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মধ্যে শামিল। অন্যথায় নিঃসন্দেহে আহলুল বিদআতি ওয়াল ফুরকাতের অন্তর্ভুক্ত।
কিন্তু কোনো সত্যানুসারী ব্যক্তির কাছে অস্পষ্ট নয় যে, এদের বিশেষ আকাইদ ও আমলসমূহের কোনো ভিত্তি ‘সুন্নাহ’ ও ‘ইজমা’ তে থাকা তো দূরের কথা, ‘সুন্নাহ’ ও ‘ইজমা’য় বরং এর বিপরীত দলীল বিদ্যমান। আলকাউসার যিলকদ ১৪৩৭ হি. সংখ্যায় ‘বেরলভী মতবাদ : ভিত্তিহীন আকীদা ও ভ্রান্ত ধ্যানধারণা’ শিরোনামে উদাহরণস্বরূপ তাদের বিদআতী ও শিরকী আকীদা ও আমলসমূহের মধ্যে সামান্য কয়েকটি উল্লেখ করা হয়েছে। সুন্নত ও ইজমা-এ যার কোনো দলীলই নেই। বরং যা সরাসরি শরীয়তের দলীলসমূহের পরিপন্থী।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)