ভালো কাজে অগ্রগামী হব পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেব
মুসলিম সব সময় চেষ্টা করে, তার কারণে যেন কেউ কষ্ট না পায়। বরং সে অন্যের কষ্ট দূর করতে চেষ্টা করে। অন্যকে আরাম পৌঁছাতে চেষ্টা করে। আরেক ভাই যেন কষ্টের শিকার না হন এজন্য সে নিজে কষ্ট করে। এটিই মুমিনের আখলাক। এটিই নবীজীর শিক্ষা।
পথ চলতে কারো যেন কষ্ট না হয় বা কেউ যেন দুর্ঘটনার শিকার না হন, এজন্য আমাকে সতর্ক হতে হবে। পথে এমন কিছু ফেলব না, যার কারণে অন্যের কষ্ট হয়। নিজে তো এ থেকে বিরত থাকবই পাশাপাশি পথে পড়ে থাকা কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেব, যাতে অন্যের কষ্ট না হয়।
আর পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়া- এটা আমার ঈমানের দাবি। নবীজী বলেছেন,
الْإِيمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُونَ - أَوْ بِضْعٌ وَسِتُّونَ - شُعْبَةً، فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَدْنَاهَا إِمَاطَةُ الْأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ، وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الْإِيمَانِ .
ঈমানের সত্তরটিরও (বা নবীজী বলেছেন, ষাটটিরও) বেশি শাখা-প্রশাখা রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম শাখা হচ্ছে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা। আর সর্বনি¤œ শাখা হচ্ছে (পথ চলার সময়) পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়া। আর লজ্জা ঈমানের একটি অঙ্গ। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৫
আমি পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দিলে আল্লাহ খুশি হয়ে আমার গুনাহ মাফ করে দেবেন। একটি হাদীসে এসেছে-
এক ব্যক্তি পথ দিয়ে যাচ্ছিল, সে দেখল পথে একটি কাঁটাদার ডাল পড়ে আছে। সে পথ থেকে তা সরিয়ে দিল। এ কাজে আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হলেন এবং এর পুরস্কার স্বরূপ তাকে মাফ করে দিলেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯১৪
শুধু তাই নয়, অন্যের কষ্ট দূর করলে, পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দিলে আল্লাহ এত বেশি খুশি হন যে, এ সামান্য কাজের কারণে ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাতের ফায়সালা করে দেন।
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে জান্নাতে ঘুরে বেড়াতে দেখেছি- এ নেক আমলের কারণে যে, সে দেখল, চলার পথে একটি ডাল ভেঙে ঝুলে রয়েছে, যা মুসলমানদের কষ্ট দিচ্ছে (চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে)। তো লোকটি ডালটি কেটে সরিয়ে দিল, যাতে লোকদের কষ্ট না হয়। (এর বিনিময় স্বরূপ আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখেল করলেন।) -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯১৪
আর এ কাজটিকে নবীজী একটি সদাকা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। নবীজী বলেছেন, পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়া একটি সদাকা। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৯৮৯
বিভিন্ন সময় সাহাবীগণ নবীজীর কাছে উপদেশ তলব করতেন। একবার সাহাবী আবু বারযা রা. নবীজীর কাছে উপদেশ তলব করলেন। বললেন, আল্লাহর রাসূল! আমাকে কিছু পাথেয় দান করুন (উপদেশ দিন), যা আমার উপকারে আসবে। নবীজী তাকে কিছু উপদেশ দিলেন। এক পর্যায়ে বললেন, তুমি পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬১৮
এই বিষয়টিকে নবীজী যারপরনাই গুরুত্ব দিয়েছেন। সাহাবীগণকে উৎসাহিত করেছেন। এটি দেখতে একটি ছোট আমল হলেও মানুষের জীবনে এর গুরুত্ব অনেক। কারণ, একটু অসতর্কতার কারণে অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আমার ফেলে রাখা কলার ছিলকায় হতে পারে কারো পা ভাঙবে, যা তার সারা জীবনের ভোগান্তি বয়ে আনবে। বা আমি নিজেও তো দুর্ঘটনার শিকার হতে পারি। তেমনি রাস্তায় আমার ফেলে রাখা একটি ইট বা গাছের ডালের কারণে ঘটে যেতে পারে অনেক বড় একসিডেন্ট।
আমার কারণে কেউ পথ দিয়ে চলতে গিয়ে কষ্ট পাবে বা একসিডেন্টের শিকার হবে- এটা হতে পারে না। মুমিন এটা মানতে পারে না। কারণ সে তো নবীজীর বাণী শুনেছে- পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়া- ঈমানের একটি শাখা।
অনেক সময় আমি মানুষের কষ্টের কারণ হচ্ছি, কিন্তু সেদিকে আমার নযর যায় না। যেমন রাস্তার পাশে ময়লা ফেলে রাখা, যার কারণে ঐ পথ দিয়ে চলতে মানুষের কষ্ট হয়। নাক চেপে ধরে ঐ পথ অতিক্রম করতে হয়। আমার নিজেরও এর কারণে কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু আমি খেয়াল করছি না- এর কারণ আমি নিজেও।
আমাকে দেখে ছোটরা শিখবে। আমি যদি নিজে আমল করি, তাহলে আমাকে দেখে আমার ছোটরা শিখবে এবং এটা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে।
র্কুরা ইবনে ইয়াস আলমুযানী রাহ. তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, আমি একবার মা‘কিল ইবনে ইয়াসার রা.-এর সাথে কোথাও যাচ্ছিলাম। পথে তিনি একটি কষ্টদায়ক বস্তু দেখে সরিয়ে দিলেন। কিছুদূর পর আমিও এমন একটি কষ্টদায়ক বস্তু দেখে সরিয়ে দিলাম। তখন তিনি আমার হাত ধরে বললেন, ভাতিজা! কোন জিনিস তোমাকে এ কাজে উদ্বুদ্ধ করল? উত্তরে তিনি বললেন, আপনাকে দেখে শিখলাম। আপনার অনুসরণ করলাম। তখন তিনি বললেন, (তাহলে শোনো বলি!), আমি নিজ কানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
“যে ব্যক্তি মুসলিমদের পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দিল, তার নামে একটি নেকি লেখা হবে। আর যার একটি নেকি কবুল হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -আলজামিউল কাবীর, তবারানী, হাদীস ৫০২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৭৪৭৯ মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস ৪৭৪৮