ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ!
[অসুস্থ পিতামাতার খেদমত, অসুস্থ ব্যক্তির ‘ইয়াদত’ এবং অসুস্থ ব্যক্তির সেবা-শুশ্রুষাকারীদের শান্ত¡না দেওয়া অথবা পরামর্শ দেওয়া এসকল বিষয়ে যেমন মুহাব্বত ও আন্তরিকতার উপস্থিতি কাম্য, তেমনি এক্ষেত্রে হেকমত ও সমঝদারির পরিচয় দেওয়া দরকার। এক কথায় ইসলামের শেখানো সকল আদাবের প্রতি যত্নবান থাকা জরুরি। আমাদের অনেকেরই এসকল বিষয়ের ইসলামী আদাব জানা নেই। স্নেহাস্পদ মাওলানা আবরারুয যামানের রোজনামচার এই লেখাটি থেকে উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রত্যেক পাঠকের উপকৃত হওয়ার মত অনেক কিছুই রয়েছে। তাই তার অনুমতি সাপেক্ষে রোজনামচাটি আলকাউসারে ছাপা হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে আমাদের সকলকে উপকৃত করুন। -আবদুল মালেক]
পৃথিবীর ইতিহাস কত বছরের? আমার জানা নাই। শত সহস্র বছরের তো হবেই। সংখ্যাটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারব না। তবে একটা বিষয় আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি। পৃথিবীর এ সুদীর্ঘ ইতিহাসে কোনো মানুষ প্রেম ও ভালোবাসার তাগিদে তার প্রিয় মানুষটিকে মেরে ফেলতে চায়নি। আমি জানি, এমনটা কখনো হয়নি। হবেও না কোনোদিন। যাকে আমি ভালোবাসি, আমি চাইব, সে বেঁচে থাকুক। ভালোমতই বেঁচে থাকুক। ভালোবাসার সেই মানুষটা যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে, রোগ শোকে কাতর হয়ে পড়ে, আমার চেষ্টা ও প্রচেষ্টা তখন দ্বিগুণ হবে। আমার কাতরতাও বেড়ে যাবে। উপায় খুঁজবো- কীভাবে সে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। আমার সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে দেব। তার সুস্থতার উপায় খুঁজে বেড়াবো, পৃথিবীর এ প্রান্তে সে প্রান্তে। আমার অস্তিত্ব জুড়ে একটাই অস্থিরতা থাকবে, আমার প্রিয়জন কীভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।
যোহরের নামাযের পর মসজিদে নামাযের জায়গায় বসে আছি। দেখা হল এক ভাইয়ের সাথে। কুশল বিনিময় হল। আমার আব্বার খোঁজখবর নিলেন। আব্বা হাসপাতালে ভর্তি আছেন শোনে আফসোস করলেন। দীর্ঘ এক বছর প্রায় হতে চলল, আব্বা সম্পূর্ণ শয্যাশায়ী। ব্রেইনস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে পুরোপুরি মাযূর হয়ে আছেন। কথাবার্তা নড়াচড়া খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ। বিলকুলই বন্ধ। প্রাণ রক্ষার প্রয়োজনে নাকে নল লাগানো আছে। ঐ নলের সাহায্যে কিছু তরল খাদ্য শরীরে পৌঁছানো হয়। যাবতীয় প্রয়োজন বিছানার মধ্যেই সারতে হচ্ছে। আব্বার ঘরটাই এখন হাসপাতাল। বরং বলতে গেলে আইসিইউ। আমাদের জীবনের এখন অন্যতম প্রধান ব্যস্ততা আব্বাকে নিয়ে। এ হল আব্বার হালত। এ হল আমাদের হালত। সব জানেন আমার দেখা হওয়া সেই ভাই। সব শোনলেন। শোনে আফসোস করলেন। এটাই মুমিনের শান। কারো পেরেশানীতে শান্ত¡না দান, সমবেদনা প্রকাশ একটি ভালো কাজ। এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম, তিনি আমার দিকে কিছুটা এগিয়ে এলেন। খুবই আন্তরিকতার সাথে আমাকে পরামর্শ দান করলেন। বললেন, আমার পরিচিত এক ভাই আছেন। তিনি একটি খতম জানেন। খতমটার জন্য দুই হাজার টাকার মত খরচ হয়। খুবই ‘পাওয়ারফুল’ খতম। খতমটা পড়লে রোগী হয়ত একদম সুস্থ হয়ে যাবে। আর নয়ত...।
আর নয়ত কী হবে সেটা আমার পক্ষে এখানে উল্লেখ করা সম্ভব না। আমার পক্ষে সম্ভব না। আমার আব্বাকে যারা অন্তর দিয়ে ভালবাসেন তাদের কারো পক্ষেই সম্ভব না। কারণ, আমি আব্বাকে দেখেছি। কীভাবে তিলে তিলে নিজেকে ক্ষয় করেছেন। উদ্দেশ্য একটাই ছিল, কিছু মানুষ তৈরি হোক। কিছু মানুষ তৈরি হল। যখন একটি বিরাট মানব কাফেলা তৈরি হল, তাঁর হাত ধরে, তাঁর অবিশ্বাস্য শ্রম, মেহনত ও মুজাহাদার পথ ধরে; তখন, ততদিনে তিনি অসম্ভব রকম ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। তিনি এখন একা চলতে পারেন না। আমাদেরকে তৈরি করার জন্য তিনি অনেক কথা বলেছেন। অনেক শব্দ উচ্চারণ করেছেন। তাঁর উচ্চারণ থেকে আমরা শিখেছি অনেক কিছু। এখন তিনি ক্লান্ত। আগের মত আর বলতে পারেন না। না, তিনি এখন এতটাই ক্লান্ত যে, কিছুই বলতে পারেন না। কিছু বলতে চাইলে সেই মানুষগুলোর মুখের দিকেই তাকিয়ে থাকেন, নির্বাক তাকিয়ে থাকেন, যাদেরকে তিনি এতকাল কথা বলা শিখিয়েছেন। তাঁর হাতের কোমল স্পর্শে, তাঁর যবানের মধুর সম্বোধনে, তাঁর চোখের গভীর চাহনীতে জীবনের সার্থকতার সন্ধান পেয়ে যাওয়া একজন মানুষকে যদি কেউ পরামর্শ দেয়, ‘খতম’ পড়ান, হয় সুস্থ হয়ে উঠবেন, নয়ত...।
সেই মানুষটার পক্ষে কি সম্ভব এমন পরামর্শ সহ্য করে নেয়া। আমার মনে যখন ব্যথা আসে, আমার ঠোটের অবয়বটা একটু পাল্টে যায়। কেমন বাঁকা বাঁকা হয়ে আসতে চায়। আমার পরিচিত সেই ভাইয়ের ‘এহেন’ পরামর্শ শোনার পর আমার অবস্থাটা এমনই হল। আমি নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করলাম। তারপর বেশি কিছু না বলে মজলিস থেকে প্রস্থান করলাম। মনে পড়ে, এতটুকু তাকে বলতে পেরেছিলাম, যে আল্লাহ মেরে ফেলতে জানেন, সে আল্লাহ সুস্থও করতে জানেন।
মনে পড়ল সেই সাদাসিধা মানুষটার গল্প। দুআ করলেন তিনি,
اللَّهُمَّ ارْحَمْنِي وَمُحَمَّدًا وَلَا تَرْحَمْ مَعَنَا أَحَدًا.
হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আর মুহাম্মাদকে রহম করুন। আমাদের সাথে আর কাউকে রহম করবেন না।
নবীজী মৃদু হাসলেন এবং বললেন,
لَقَدْ حَجَّرْتَ وَاسِعًا আল্লাহর রহমত তো অনেক প্রশস্ত। তুমি একে এমন সংকুচিত করে দিচ্ছো কেন?
মনে পড়ল তার কথা। তিনি নবীজীকে ভালোবেসেই এমন দুআ করেছিলেন। কিন্তু হয়তবা ভেবেছিলেন, সবাইকে রহম করতে গেলে তো আল্লাহর রহমতের খাযানায় কমতি এসে যাবে। তখন প্রিয় মুহাম্মাদের ভাগে কম পড়ে যাবে। প্রিয় মুহাম্মাদের ভাগে কম পড়ুক- এটা তিনি সহ্য করতে পারছিলেন না। এজন্য এমন দুআ করলেন। নবীজী শিখিয়ে দিলেন দুআ করার পদ্ধতি। নবীজী সেই সরল সহজ মানুষটার ভালোবাসায় মুগ্ধ হলেন। কিন্তু ভালোবাসা প্রকাশের এ উসলূব ও পদ্ধতি নবীজী পছন্দ করলেন না। পরামর্শদাতা আমার সেই ভাই, আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, তিনি আমার আব্বাকে, আমাকে ও আমাদের সবাইকে ভালোবেসেই এ কথা বলেছেন। এমন পরামর্শ দিয়েছেন। ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করতে গিয়ে ভুল করে বসেছেন। তিনি বুঝতে পারেননি, একজন সন্তানের জন্য এমন পরামর্শ কতটা বেদনাদায়ক। বুঝতে পারেননি, কথাটা বলে তিনি আসলে একটি কলিজা থেকে তাজা রক্ত ঝরিয়েছেন। বুকের গভীরতম জায়গায় তার চেয়েও গভীর একটি ক্ষত সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে বোঝার তাওফীক দান করুন!
আমরা অনেক সময় আল্লাহকেই পরামর্শ দেই। আল্লাহকে পরামর্শ দেয়ার প্রয়োজন কী? আমাদের কাজ তো হল, আল্লাহর কাছে ফকীরের মত চাওয়া ও চাইতে থাকা। কিন্তু আমরা অনেক সময় আল্লাহকে পরামর্শ দেই। আল্লাহকে বোঝানের ‘চেষ্টা’ করি, আল্লাহ! এখন এই পরিস্থিতিতে এটা না করে এটা করলেই ভাল হবে। আমাদের কিছু কিছু দুআ ও আবদার থেকে এমনটাই জাহির হয়। আল্লাহ, যদি সুস্থতা তাকদীরে না থাকে, তাহলে তাকে ঈমানের সাথে উঠিয়ে নেন। এর মানে হল, নাউযুবিল্লাহ, আল্লাহ বুঝতে পারছেন না, তাকদীরে যেহেতু সুস্থতা নাই, এখন তিনি কী করবেন! আমি তাই আল্লাহকে পরামর্শ দিচ্ছি, আপনি তাকে মেরেই ফেলুন। সহজ সমাধান। মরে যাওয়াকেই আমরা অনেকে সমাধান মনে করি। অথচ মরে যাওয়া তো তখনই সমাধান হতে পারে যখন আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, মরার পর তিনি এখনকার হালত থেকে আরামে থাকবেন। মরার পর তিনি শান্তি পাবেন। অথচ আমরা কেউ জানি না, যার জন্য মৃত্যুর দুআ করছি, মৃত্যুর পর তার হালত কী হবে। একটা বিষয় জানা আছে। তা হল, তার কী অবস্থা হবে সেটা আমরা দেখবো না। এতে আমাদের কিছু আরাম হবে। কষ্ট দেখতে আমাদের ভালো লাগে না। এ ধরনের দুআ থেকে এমন ধারণাই তৈরি হয় যে, আমরা আসলে নিজেরা ‘ঝামেলা’ থেকে মুক্ত হতে চাচ্ছি। আমরা আসলে ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে গেছি। আর ভালো লাগে না রোগী নিয়ে ঝক্কি ঝামেলা। এবার একটু শান্তি পেতে চাই। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মাফ করুন। এমন ধারণা থেকে আমাদেরকে আমাদের সমাজের সব মানুষকে হেফাযত করুন।
আমাদের উচিত পাহাড়পুরী হুযূরের শুধু সুস্থতার জন্যই দুআ করা। শরীয়তপুরের একজন আলেমে দ্বীন। আব্বাজানের মুজায। মাওলানা মুহিউদ্দীন শরীয়তপুরী। সেদিন ফোন করলেন। আব্বাজানের হালত জানলেন। কান্না কান্না কন্ঠে জানালেন তিনি তাঁর শায়খের জন্য নিয়মিত কী দুআ করেন। তিনি দুআ করেন, “আল্লাহ! আপনি আইয়ূব আলাইহিস সালামের মত আমাদের হযরতকেও সুস্থতা দান করুন”। কুরআন ও হাদীসের বিভিন্ন বিবরণ ও ইশারা থেকে আমরা যা বুঝি, আইয়ূব আলাইহিস সালামের অসুস্থতা যা-ই ছিল, তার আশেপাশের মানুষজনের ধারণা ও বিশ্বাস ছিল- এ দুরারোগ্য ব্যধি। এ রোগ থেকে সুস্থতা সম্ভব নয়। আল্লাহ তাআলা তার কুদরতের মুযাহারা করলেন। আইয়ূব আলাইহিস সালাম সুস্থ হয়ে উঠলেন। রোগ শোক তো সবার যিন্দেগীতেই আসে। হযরত আইয়ূব আলাইহিস সালামের রোগ যদি সবার থেকে ভিন্ন কিছু না হয়, তাহলে কুরআনে এত আয়োজন করে কেন তাঁর রোগের আলোচনা আসে?
আমাদের চিন্তার কমযোরী। আল্লাহ তাআলার রহমতকে আমরা দারুণ সংকুচিত করে ফেলেছি। আল্লাহ তাআলার রহমত কখনো সংকুচিত হয় না। সমস্ত সংকোচ, সমস্ত সীমাবদ্ধতা আমাদের ধারণার মাঝেই। পৃথিবীর সমস্ত রোগ একটা সময় দুরারোগ্য ছিল। চিকিৎসা আবিষ্কার হয়েছে। রোগীরা সুস্থ হয়েছে। আমার আব্বাজানের যেই রোগ। তার নাম ব্রেইনস্ট্রোক। ব্রেইনের মধ্যে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষ থাকে। কোষগুলো মানব দেহকে নিয়ন্ত্রণ করে। আমার আব্বার ব্রেইনের সেই কোষগুলো অকেজো হয়ে গেছে। আমাদের দেশের তাবৎ ডাক্তার কবিরাজ হাকিম সবার একই কথা, এ রোগের চিকিৎসা এখনো আবিষ্কার হয়নি। এজন্য আমাদের অনেকে বিস্ময়কর সেই ‘খতম’-এর ফিকির পর্যন্ত পৌঁছে গেছেন। সেদিনের সেই ফোন। শরীয়তপুরের আলেমের ফোনালাপের পর, মনের মধ্যে বিস্ময়কর জোর অনুভব করলাম। হতাশা মাঝেমাঝেই গ্রাস করতে চায়। আলহামদুলিল্লাহ, আইয়ূব আলাইহিস সালামের গল্প মনের সমস্ত গ্লানিকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দিল।
আলহামদু লিল্লাহ, দীর্ঘদিন যাবৎ আব্বার খেদমতের সুযোগ হচ্ছে। এ দীর্ঘ সময়ে আব্বার মুতাআল্লিকীন মুহিব্বীন অসংখ্য মানুষের সাথে দেখা হয়েছে। তারা বিভিন্ন সময়ে আব্বাকে দেখতে এসেছেন। দুআ করেছেন। আমাদেরকে শান্ত¡না দিয়েছেন। আমাদের ব্যাথিত মন শান্ত হয়েছে। এর মধ্যে কিছু কিছু কথা এমনও হয়েছে যেগুলো শান্ত্বনার জন্যই বলা হয়েছিল কিন্তু শান্ত্বনার চেয়ে অনেক বেশি মনের মধ্যে ব্যথা সৃষ্টি করেছে। এক ভাই সেদিন আব্বার যন্ত্রণাকাতর হালত দেখে প্রশ্ন করলেন, হুযূর মৃত্যু শয্যায় শুয়ে আছেন কতদিন হল? আমরা কোনো উত্তর দিতে পারিনি। এমন প্রশ্নের উত্তর পৃথিবীতে এখনো হয়ত আবিষ্কার হয়নি। আব্বার পিঠের নিচের বিছানাটা বিশেষ উপায়ে তৈরি। আব্বার মত স্থীর পড়ে থাকা রোগী যারা, শুধু তাদের জন্য উপযোগী বিছানা। এক ভাই প্রশ্ন করলেন, হুযূরের ইন্তেকালের পর বিছানাটার কী হবে। সে ভাইয়েরও প্রশ্নের উত্তর আমাদের কাছে ছিল না। সেদিন তো আরো বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছিল। আব্বাকে দেখতে এসেছেন এক ভাই। তিনি আব্বার পূর্ব পরিচিত। ঘনিষ্ঠ মানুষ। আব্বার মাথার কাছে চেয়ার টেনে বসলেন। কিছুক্ষণ বসে থাকলেন। আমাদের সাথে কথা বললেন। তার কথার মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল, হুযূর তো হুযূরের নিজের অসতর্কতার কারণেই অসুস্থ হয়েছেন। হুযূর নিজের ব্রেইনটাকে সীমাতিরিক্ত খাটিয়েছেন। মাথায় চাপ দিয়েছেন ধারণ ক্ষমতার বাইরে। এজন্যই আজকে হুযূরের এ অবস্থা। রোগী দেখতে এসে রোগীকেই দুষতে থাকার এমন বিরল দৃশ্যও মাঝেমধ্যে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দেখান। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সহীহ সমঝ দান করুন। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।