আল্লাহর স্মরণ
‘তাহলে আল্লাহ কোথায় আছেন?!’
বিখ্যাত সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. মদীনা থেকে মক্কায় যাচ্ছিলেন। পথে একটি পাহাড়ের পাশে তার যাত্রাবিরতি হল। পাহাড় থেকে একজন লোক নেমে এল। ইবনে ওমর জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি রাখাল? সে বলল, জী হাঁ। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বললেন, আমার কাছে একটি ছাগল বিক্রি করবে? সে বলল, আমি একজন গোলাম মাত্র। ছাগলের মালিক এখানে নেই। এবার ইবনে ওমর রা. তাকে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে বললেন, তোমার মালিককে বলবে, বাঘে খেয়ে ফেলেছে। এ কথা শোনামাত্র রাখালটি ফিরে গেল এবং যেতে যেতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আঙ্গুল উঁচিয়ে বললÑ
فأين الله عزوجل؟
(তাহলে আল্লাহ কোথায় আছেন?!)
ইবনে ওমর রা. তার কথায় বিগলিত হলেন এবং বাক্যটির পুনরাবৃত্তি করতে লাগলেনÑ
فأين الله عزوجل؟
এরপর মদীনায় পৌঁছা পর্যন্ত তিনি এ কথার পুনরাবৃত্তি করতে লাগলেনÑ
قال الراعي: فأين الله؟
(রাখাল বলেছে, তাহলে আল্লাহ কোথায় আছেন?!)
মদীনায় ফিরে তিনি ঐ রাখালটির মালিকের খোঁজ করলেন এবং তাকে কিনে আযাদ করে দিলেন এবং তার জন্য ছাগলের পাল কিনে দিলেন। Ñসিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৩/২১৬; আলইসাবা ৪/১৮৭; তারীখু মাদীনাতি দিমাশক ৩১/১৩২; আলমুজামুল কাবীর ১২/২৬৩
‘তোমাদের সাথেই তারা আছেন’
সালাফ তাদের শীষ্য-সংশ্লিষ্টদের আল্লাহর স্মরণের শিক্ষা দিতেন। সুফিয়ান ছাওরী রাহ. একদিন তাঁর সঙ্গীদের বললেনÑ
لَوْ كَانَ مَعَكُم مَنْ يَرْفَعُ حَدِيْثَكم إِلَى السُّلْطَانِ، أَكُنْتُم تَتَكَلَّمُوْنَ بِشَيْءٍ؟
তোমাদের সঙ্গে যদি এমন কেউ থাকে, যে তোমাদের কথা সুলতানের কাছে পৌঁছে দিবে তোমরা কি কোনো কথা বলবে?
সঙ্গীরা বললেনÑ لا জ্বী না
তিনি তখন বললেনÑ
فَإِنَّ مَعَكُم مَنْ يَرْفَعُ الحَدِيْثَ.
তাহলে জেনে রেখো তোমাদের সাথে এমন লোক আছেন যিনি কথা পৌঁছান। অর্থাৎ ফেরেশতাগণ। Ñসিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৭/২৬৮
হাতিম আলআসাম রাহ. সঙ্গীদের আল্লাহর স্মরণ শিক্ষা দিতে গিয়ে বললেনÑ
لَوْ أَنَّ صَاحِبَ خَبَرٍ جَلَسَ إِلَيْكَ، لَكُنْتَ تَتَحَرَّزُ مِنْهُ، وَكَلاَمُكَ يُعرَضُ عَلَى اللهِ فلاَ تَحْتَرِزُ!
কোনো সংবাদ-সংগ্রহকারী যদি তোমার কাছে বসে, তবে তো তুমি তার ব্যাপারে খুব সাবধান থাক। এদিকে তোমার কথা আল্লাহর কাছে পেশ করা হচ্ছে, কিন্তু তুমি সাবধান হও না। Ñসিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ১১/৪৮৭
আমাকে উপদেশ দিন
এক ব্যক্তি উহাইব ইবনুল ওর্য়াদ রাহ.-কে বললÑ عظني আমাকে নসীহত করুন।
তিনি বললেনÑ
اتق أن يكون الله أهون الناظرين إليك.
সাবধান! আল্লাহ না হন যেন তোমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বহীন দর্শক ।
এক ব্যক্তি এক বুযুর্গকে বললেনÑ أوصني আমাকে কিছু অসীয়ত করুন।
তিনি বললেনÑ انظر إلى السماء আকাশের দিকে তাকাও। লোকটি আকাশের দিকে তাকাল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনÑ أتدري من خلق هذا؟ জান, কে তা সৃষ্টি করেছেন? লোকটি বললÑ الله আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। তিনি বললেনÑ
إن من خلقها لمطلع عليك حيث كنت فاحذره.
এ বিস্তৃত আকাশের যিনি ¯্রষ্টা তিনি তোমাকে দেখছেন, যেখানেই তুমি থাক। সুতরাং তাকে ভয় কর। Ñহিলয়াতুল আওলিয়া ১০/৩৫
যে আল্লাহকে ভয় করে
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেছেনÑ
من اتّقى الله لم يشف غيظه، ومن خاف الله لم يفعل ما يريد، ولولا يوم القيامة لكان غير ما ترون.
যে আল্লাহর শাস্তি থেকে আত্মরক্ষা করতে চায় সে তার ক্রোধ চরিতার্থ করে না। যে আল্লাহকে ভয় করে সে মনমতো চলে না।
(ওহে!) কিয়ামত যদি না থাকত তাহলে তোমরা ভিন্ন কিছু দেখতে! Ñনাদরাতু নাঈম ৮/৩২৪২; ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন ৩/১৭৬
মুহাম্মাদ ইবনে কা‘ব রাহ. বলেছেন,
ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ اسْتَكْمَلَ الْإِيمَانَ بِاللهِ : إذَا رَضِيَ لَمْ يُدْخِلْهُ رِضَاهُ فِي البَاطِل، وَإِذَا غَضِبَ لَمْ يُخْرِجْهُ غَضَبُهُ عِنِ الحَقِّ، وَإِذَا قَدَرَ لَمْ يَتَنَاوَلْ مَا لَيْسَ لَه.
যার মাঝে তিনটি গুণ আছে তার ঈমান পূর্ণাঙ্গ হয়েছে : যে আনন্দের সময় অনাচারে লিপ্ত হয় না। ক্রোধের সময় ন্যায় থেকে বিচ্যুত হয় না। আর ক্ষমতার সময় যা তার প্রাপ্য নয় তা গ্রহণ করে না। Ñনাদরাতু নাঈম ৮/৩২৪৩; ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন ৩/১৭৬