আমরা অনেক সময় সাধারণ ভালো কাজে লিপ্ত থেকে খুশি হয়ে যাই। চিন্তাও করি না যে, এর চেয়েও অনেক বেশি ভালো কাজে মশগুল থাকতে পারতাম। এভাবে আমাদের প্রচুর সময় অপচয় হয়ে যায়। এটা আবার একা একা বোঝা যায় না। এটা বুঝতে হলে ঐ কাফেলার এবং ঐ পথের অভিজ্ঞ পথিকদের জিজ্ঞেস করতে হয়। তাঁদের নিকট থেকে জেনে নিতে হয় কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়। অন্যথায় তুমি এমন কাজে লিপ্ত হয়ে যেতে পার যাতে না তোমার ফায়দা আছে, না তোমার কওমের। অথচ তুমি যদি পরামর্শ করতে তাহলে হয়ত আল্লাহ তাআলা তোমাকে এমন কোনো কাজে লাগাতেন যে কাজে পুরো উম্মত ফায়দা পেত। সুতরাং মুরব্বীকে জিজ্ঞেস করতে হয় যে, আমি কী করব?
যেমন আল্লাহ না করুন-এখন আমার এই জযবা পয়দা হল যে, আমি সংস্কৃত ভাষা শিখব এবং হিন্দুদের ধর্মীয় গ্রন্থগুলো তাদের ধর্মীয় ভাষায় অধ্যয়ন করব। তাহলে বুঝতে সহজ হবে। নেক নিয়ত, নেক কাজ, কিন্তু ফায়দা কতটুকু? এর দ্বারা আমার এবং জাতির বিশেষ কী ফায়দা হবে? অনেক মুসলমান তো সংস্কৃত ভাষায় পণ্ডিত হয়েছিলেন। ড. শহীদুল্লাহও এ ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন। কিন্তু কী ফায়দা হয়েছে? আমি শুধু আফসোস করি যে, উনি এটা করতে গেলেন কেন?
তো এক্ষেত্রে নিজে নিজে কোনো ফয়সালা করা যাবে না। মুরব্বীকে জিজ্ঞাসা করতে হবে। তুমি ইংরেজি শিখতে চাও? মুরব্বীকে জিজ্ঞেস কর। তিনি তোমার এবং কওমের ফায়দা মনে করলে অনুমতি দিবেন। অন্যথায় নিষেধ করবেন।
তুমি আরবী চর্চা করবে না বাংলা, ফিকহ চর্চা করবে না হাদীস, সে ফয়সালা চোখ বন্ধ করে করা যাবে না; বরং দেখতে হবে যে, ভবিষ্যতে তুমি এবং তোমার কওম কোনটা দ্বারা বেশি উপকৃত হবে। সেটা করতে হবে। দুনিয়ার লাইনের লোকেরা কিন্তু এটা করছে।
সাধনা ও ক্ষেত্র
শুধু ভালো কাজে সময় ব্যয় করাই সময়ের সঠিক ব্যবহার নয়। এর চেয়ে ভালো কাজ তোমার দ্বারা হতে পারত কি না সেটাও লক্ষ রাখা জরুরি। আর তা একা একা কখনোই সম্ভব নয়। কোনো মুরব্বীর দিকনির্দেশনা অবশ্যই জরুরি।
আমাদের আকাবির, যাদের নাম আমরা গর্বের সঙ্গে স্মরণ করি, তাদের বিস্ময়কর বিভিন্ন ঘটনা কিতাবে দেখতে পাই। সময়কে কাজে লাগানোর এমনসব দৃষ্টান্ত, যা এ যুগে বিশ্বাসযোগ্যই মনে হবে না।
কিন্তু ওই কলেজ-ছাত্রীর ঘটনা শুনে আমার চিন্তাধারা পাল্টে গিয়েছে। এখন দুনিয়ার লোকেরা সাধনা করছে। না হলে দুনিয়ার এত উন্নতি হচ্ছে কীভাবে? আসল কথা হল এখনো কুরবানী আছে তবে ক্ষেত্রটা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। আগের যুগে যে কুরবানী ছিল তা এখন নেই এটা ভুল ধারণা। মেধা, যোগ্যতা ও মেহনত না থাকলে বাংলাদেশেও এমন এমন বিস্ময়কর আবিষ্কার কীভাবে হচ্ছে! সবই আছে তবে ক্ষেত্র ভিন্ন হয়ে গেছে।
আমাদের মাদরাসাগুলোতে বিপুল সম্ভাবনা আছে, কিন্তু আমরা সাধনা করি না। অল্প পড়েই বলি, সময়ে কুলায় না। এটা ঠিক না। আমাদের আরো অনেক সম্ভাবনা আছে। যা করেছ তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যেও না। যা করতে পারতে কিন্তু করনি, তার জন্য আফসোস কর।
তোমরা যারা নওজোয়ান তাদের হাতে অনেক সময় আছে। তোমার সময় ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগাও। আমার অনেক সময় হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। সেগুলো আর ফিরে পাব না। এখন চাইলেও সেগুলো আর কাজে লাগাতে পারব না। শুধু আফসোস করতে পারব। তোমাদেরও যেদিন হুশ হবে সেদিন তোমরাও কাজ শুরু করবে, কিন্তু পিছনের সময়গুলো তো ফিরে পাবে না। যে উপলব্ধি এখন আমার হচ্ছে তা যদি তোমাদের হয়ে যায় তাহলে তোমরা অনেক ভাগ্যবান।
সবকিছু সময়মতো কর। মুনাযযাম যিন্দেগী যাপন কর। তাহলে অনেক বরকত হবে। কখনো জোশে দশ পারা তেলাওয়াত করলে। কখনো এক পারাও করলে না এটা ঠিক না। এতে বরকত হয় না। একটা নিযামুল আওকাত তৈরি করে সে অনুযায়ী চল, বরকত পাবে। তাযকীরের জন্য নিযামুল আওকাতটা লিখে রাখ। নিযামুল আওকাত থাকলে সময়কে কাজে লাগাতে পারবে। অন্যথায় সময়কে ত্রিশভাগও কাজে লাগাতে পারবে না। আরো মনে রেখ, তুমি যদি এখনই নিযামুল আওকাতের ক্ষেত্রে দৃঢ়তা দেখাতে পার, সব কাজে নিযামুল আওকাত অনুসরণ কর, সময়ের প্রতি লক্ষ রাখ তাহলে তোমার নির্ধারিত সময়ে কেউ তোমাকে কাজে ডাকবে না। ছোট হলেও কেউ তোমাকে অবজ্ঞা করবে না। সবাই তোমার সময়কে শ্রদ্ধা করবে।
আল্লাহ তাআলা সবাইকে তাওফীক দান করুন। আমীন।