রজব ১৪৩৭   ||   এপ্রিল ২০১৬

শয়তানের তীর

আবু আহমাদ

শয়তানের তীর! তীর দিয়ে শয়তান কী করে? তীর তো যুদ্ধের একটি অস্ত্র। এটি দিয়ে তো যুদ্ধ করতে হয় অথবা শিকার করতে হয়। শয়তান কি যুদ্ধ করে? কিংবা শিকার?

হাঁ, শয়তান যুদ্ধ করে, শিকার করে। সে বনী আদমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, বনী আদমকে শিকার করে। আল্লাহ যখন তাকে বিতাড়িত করলেন, তখন সে বনী আদমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল। সে আল্লাহকে বলল, (তরজমা) “...আমিও তোমার সরল পথে বনী আদমের জন্য ওঁত পেতে থাকব। অতপর আমি তাদের কাছে আসব; তাদের সামনে থেকে, পিছন থেকে, ডান দিক থেকে, বাম দিক থেকে। এবং তুমি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে পাবে না।Ñসূরা আরাফ (৭) : ১৬-১৭

নযর হচ্ছে শয়তানের তীর। এর দ্বারা সে শিকার করে বনী আদমকে। বরবাদ করে বনী আদমের ঈমান-আমল। ফাঁসিয়ে দেয় বনী আদমকে পাপের চোরাবালিতে। ডুবিয়ে দেয় পাপের সাগরে। নযর নামক এই তীর বনী আদমকে শিকার করার সবচেয়ে সহজ অস্ত্র শয়তানের জন্য। বনী আদম ভাবে, একটু নযরই তো! ব্যস! কখনো কখনো এক নযরেই বনী আদম কুপোকাত।

আমার এ চোখ আল্লাহ্র মহা দান। তাঁর দেয়া অমূল্য নিআমত, যা দিয়ে আমি এই সুন্দর পৃথিবীটা দেখি। অবাক চেয়ে থাকি আল্লাহ্র অপরূপ সৃষ্টির দিকে। চেয়ে থাকি ঐ নীল আকাশের দিকে, মিটিমিটি জ্বলে থাকা ঐ তারকারাজির দিকে। উপভোগ করি চাঁদের ¯িœগ্ধ আলো। রং বে-রঙের ফুলের সৌন্দর্যে আমি মুগ্ধ হই। এ চোখ দিয়েই আমি আল্লাহর কালাম তিলাওয়াত করি। (আর আমি যদি আল্লাহ্র হুকুম ও সন্তুষ্টি মোতাবেক এ চোখ ব্যবহার করি, তাহলে আল্লাহর কাছে আশা রাখি, আখিরাতে আমি আল্লাহকে দেখব।) আবার স্মরণ করি, এ চোখ আমার রবের মহা নিআমত। এ চোখ আমার কাছে আমার সৃষ্টিকর্তার আমানত।

তিনি এ নিআমত সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞাসা করবেন; এর কী শুকরিয়া আমি আদায় করেছি। এ আমানত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন; আমি কি তাঁর দেয়া এ আমানত রক্ষা করেছি?

কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে,

إِنَّ السَّمْعَ وَالبَصَرَ وَالفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا.

...নিশ্চয় কান, চোখ, হৃদয় এর প্রতিটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। Ñসূরা বনী ইসরাঈল (১৭) : ৩৬

কত মানুষের চোখ নেই। আবার কত মানুষের আমার মতই চোখ আছে; দেখতে একেবারে আমার চোখের মতোই। কিন্তু তার দৃষ্টিশক্তি নেই; সে দেখতে পায় না। সুন্দর এ পৃথিবীটা দেখতে পায় না। তোমার শোকর হে আল্লাহ! আমাকে তুমি এ নিআমতের শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দান কর।

আমার ভয় করা উচিত, আমি যদি এ চোখ দিয়ে আল্লাহর নাফরমানি করি, হারাম জিনিস দেখি, আর আল্লাহ আমার এ চোখ অন্ধ করে দেন, ছিনিয়ে নেন দৃষ্টিশক্তি!

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) আমি চাইলে তাদের চোখ (দৃষ্টিশক্তি) লোপ করে দিতাম। তখন তারা পথ চলতে চাইলে কীভাবে দেখতে পেত!” [সূরা ইয়া সীন (৩৬) : ৬৬] সুতরাং হে আল্লাহ, আমাকে রক্ষা কর চোখের যাবতীয় গুনাহ থেকে। সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গুনাহ থেকে।

আমি পথ চলি আর চোরা চোখে এদিক ওদিক তাকাই। আমি ভাবি কেউ আমাকে দেখছে না। আল্লাহ আমাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন; না বান্দা! কেউ দেখছে না, এমন নয়। তোমার সাথে চলতে থাকা মানুষ বা পৃথিবীর কোনো মানুষ যদি না দেখে, তোমাকে যিনি এ চোখ দান করেছেন, তিনি কিন্তু দেখছেনÑ

يَعْلَمُ خَائِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ.

তিনি (আল্লাহ) জানেন চোখের চোরাচাহনি এবং সেইসব বিষয়ও, যা বক্ষদেশ লুকিয়ে রাখে। Ñসূরা মুমিন (৪০) : ১৯

কেউ কেউ মনে করে যে, একবার দেখলে সমস্যা নেই (সুতরাং একবার তাকাই)। এটা তাদের বুঝার ভুল। প্রথম কাজ তো দৃষ্টি অবনত রাখা, যার নির্দেশ আল্লাহ কুরআনে কারীমে দিয়েছেন। এটি রক্ষা করার পরও যদি হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে যায় তাহলে করণীয় কীÑ এ সম্পর্কে এক সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, اصْرِفْ بَصَرَكَতুমি তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নাওÑসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২১৪৮

আর আলী রা.-কে নবীজী বলেছেন,

يَا عَلِيُّ لَا تُتْبِعِ النَّظْرَةَ النَّظْرَةَ، فَإِنَّ لَكَ الأُولَى وَلَيْسَتْ لَكَ الآخِرَةُ.

হে আলী! (হঠাৎ) দৃষ্টি পড়ে যাওয়ার পর আবার দ্বিতীয়বার তাকিয়ো না। কারণ, (হঠাৎ অনিচ্ছাকৃত পড়ে যাওয়া) প্রথম দৃষ্টি তোমাকে ক্ষমা করা হবে, কিন্তু দ্বিতীয় দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ২৭৭৭

আমার প্রিয় চোখ। আমি যদি তা আল্লাহর হুকুম মতো ব্যবহার না করি, হারাম জিনিস দেখি, তাহলে আমার চোখই কাল কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে আমার নামে নালিশ করবেÑ হে আল্লাহ! সে আমার দ্বারা অমুক পাপ করেছে। অমুক হারাম বস্তুর দিকে তাকিয়েছে। কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) ...তাদের কান, তাদের চোখ, তাদের ত্বক তাদের  কৃতকর্ম সম্বন্ধে সাক্ষী দিবে, তাদের বিরুদ্ধে। Ñসূরা হা-মীম আসসাজদাহ (৪১) : ২০

চোখের ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য নবীজী দুআ শিখিয়েছেনÑ

اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِيْ، وَمِنْ شَرِّ بَصَرِيْ، وَمِنْ شَرِّ لِسَانِيْ، وَمِنْ شَرِّ قَلْبِيْ، وَمِنْ شَرِّ مَنِيِّيْ.

হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় চাই; আমার শ্রবণশক্তির অনিষ্ট হতে। আমার দৃষ্টির অনিষ্ট হতে। যবানের অনিষ্ট হতে...। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৫৫১

এক  উর্দু কবিতায় পড়েছি। যার মর্মার্থ এমনÑ

তুমি যা করছ লোক চক্ষুর আড়ালে, অতি গোপনে।

স্মরণ রেখ বন্ধু! তোমাকে সর্বদা দেখছেন, যিনি আছেন আসমানে। 

 

 

advertisement