বিভ্রান্তি : নতুন এজেন্ডার সন্ধানে!
তিনি আগে ছিলেন আইনে। এখন এসেছেন খাদ্যে। আগে হাফ ছিলেন। এখন ‘ফুল’ হয়েছেন। সে সঙ্গে বেড়েছে প্রভাব-প্রতিপত্তি। ফাও হিসেবে কিছু ‘উন্মাদনা’ও। অন্তত তার ইদানিংকালের উক্তিগুলো সেটিরই ইঙ্গিত বহন করে। গত ২১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের একটি অনুষ্ঠানে তিনি আক্কেলগুড়–ম করা বক্তব্যই তো দিলেন। তার কথা : ‘আজকে যেভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো কওমী মাদরাসা গড়ে উঠেছে প্রত্যেকটি এলাকায়। একেকটি এলাকায় কতগুলো মাদরাসা আপনি হিসাব করতে পারবেন না। এসব মাদরাসা থেকে ট্রেনিংক্যাম্প যেগুলো আবিষ্কার হচ্ছে, যেখানে অস্ত্র পাওয়া যাচ্ছে এমনসব অস্ত্রের ভাণ্ডার সেখানে, আপনারা এই সমাজকে রক্ষা করতে হলে তাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হতে হবে।’ কাছাকাছি বক্তব্য তিনি আবারো দিয়েছেন ২৮ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে। তাহলে কি পুরাই আউট!
খাদ্য-সাহেবের অবস্থা তো হচ্ছে এই। তার আরেক পেশাগত ভাইয়ের কথা শুনুন। তিনি বলেছেন একদিন পর। ২২ জানুয়ারি। তার কাজ নৌপরিবহন নিয়ে। কিন্তু মন-প্রাণ তার পড়ে থাকে সড়ক-পরিবহনে। এক টকশো-ঝগড়ায় তিনি জানিয়েছেন, আগে নাকি তিনি মানুষের চোখশুদ্ধ উপড়ে ফেলতেন। সেই চোখ-উঠানো ‘নায়ক’ বলেছেন, ‘এখনও মাদরাসাছাত্ররা স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্বাস করে না। উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর বাড়িতে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে। তারা তার নিদর্শন ধ্বংস করেছে। সংস্কৃতির ওপর হামলা করে তারা পাকিস্তানী ভাবধারা সৃষ্টি করতে চায়। এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। দেশবিরোধী চক্রকে নিঃশেষ না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’
বি.বাড়িয়ায় পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় মাদরাসা-ছাত্র হত্যার কথা দেশবাসী জেনেছেন। কিন্তু দেশবাসীকে জানানো হয়েছে শুধু পরের দিনের ক্ষুব্ধ প্রতিবাদের কথাটুকু। আগের রাতে মাদরাসা-ছাত্র হত্যার বিষয়টি বেমালুম চেপে গেছে ওরা। দলবদ্ধভাবে। বিভিন্ন অবস্থান ও প্রান্ত থেকে। এখন শুরু করেছে উল্টাপাল্টা কথা। মাদরাসা-বিরোধী মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষক বিরোধী। মসজিদের খুতবার স্বাধীনতা বিরোধী। এরা কি তবে ইসলামের সব চর্চারই টুঁটি চেপে ধরতে চাইছে? একসময় ‘স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির’ কথা বলা হতো। ‘জামাত-শিবিরের’ কথা বলা হতো। ‘জঙ্গিবাদী-মৌলবাদী’ শক্তির কথা বলা হতো। বলা হতো- এসব শক্তিকে নির্মূল করবেন তারা। এখন কি তবে সব মসজিদ-মাদরাসার বিরুদ্ধেই তারা উঠে পড়ে লাগলেন? মাদরাসার ছাত্র. ইসলামী শিক্ষা- সব কিছুরই উচ্ছেদ প্রয়াসে তারা লিপ্ত হলেন? বললেন তো ‘দেশবিরোধী চক্রকে (মাদরাসা-ছাত্র) নিঃশেষ না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে’। এ বক্তব্যে তো তাই মনে হচ্ছে। আমরা জানি না, শাহবাগী রাজিব-ওয়াসিফ-অভিজিতের ‘আত্মাই’ কি এখন রথি-মহারথিদের উপর ভর করেছে কি না। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্য তো এ-জাতীয় হঠকারিতার বিরুদ্ধে উচ্চারিত হয়েছে। আমরা দেখেছি, তিনি বলেছেন, ইসলাম ধর্ম ও প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামের ওপর যে কোনো আঘাত ও কটূক্তি তিনি সহ্য করবেন না। তবে কি তাকে অন্ধকারে রেখেই নানান জন মুখের তুবড়ি ছুটিয়ে চলেছেন?
এরকম মাদরাসাবিরোধী ডুগডুগি বাজানো পরিবেশের মধ্যেই আরেক মন্ত্রীর স্ত্রী বললেন অদ্ভুত কথা। তার ভাষায় : ‘আযানে শব্দদুষণ হচ্ছে। শহরে ওয়ায-মাহফিল, তাবলীগ বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’ তিনি আবার স্বামীর বদৌলতে একটি দৈনিক পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। এই মহিলা একটি পাক্ষিক কিংবা সাপ্তাহিক নারী পত্রিকারও সম্পাদক। আগে থেকেই। সেই পত্রিকার পক্ষ থেকে এক সময় তসলিমা নাসরিনকেও পুরস্কৃত করা হয়েছিল। মনে মেযাজে অনেকে তাকে তসলিমার স্বগোত্রীয়ই মনে করেন। ফার্মগেটে কুতুববাগীর গোমরাহীর বিরুদ্ধে কথা বলা এক কথা। আর ওয়ায-মাহফিল ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা বলা ভিন্ন কথা। আগের কথাটি বলতে গিয়ে তিনি থামেননি। বরং ভিন্ন কথাটিই বললেন বেশি জোর দিয়ে। এরা কি তবে ইবলিসের এজেন্ডা বাস্তবায়নে দলবেঁধে নামলেন? নামতেই পারেন। বিশ্বাসী মুসলমানদের তাতে কী? নামায-রোযা মসজিদ-মাদরাসা, খুতবা-বয়ান কোনো কিছু কি বন্ধ করা যাবে? কোনো কিছুরই বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা কি ক্ষুণ্ন হতে দেওয়া যাবে? কিছুতেই যাবে না। এবং ইনশাআল্লাহ এসব ইবলিসির মুখোশ উন্মোচন করতে করতেই সব চালাতে হবে।