কে বেশি আপন?
হয়ত তুমি ভাবতে পারো, এ প্রশ্নের উত্তর তো সহজ। সবাই জানে মা-বাবাই সবচেয়ে আপন। সবচেয়ে কাছের। মা থেকে কি কেউ আপন হতে পারে? বাবা থেকে কি কেউ কাছের হতে পারে?
যে মা সন্তানের জন্য সকল স্বার্থ ত্যাগ করেন। নিজের খাবারের কথা ভুলে যান। পোশাকের কথা ভুলে যান। ঘুমের কথা ভুলে যান। সন্তানের জন্য নিজের কোনো কষ্টই কষ্ট মনে করেন না। যে মা কষ্ট পান, যদি সন্তান কষ্ট পায় আর আনন্দিত হন, যদি সন্তান আনন্দিত হয়। এমন দরদী ও মমতাময়ী মায়ের চেয়ে কি কেউ আপন হতে পারে?
যে বাবা নিজের রক্ত পানি করে সারাদিন সন্তানের জন্য কষ্ট করেন। নিজের পোশাক না কিনে সন্তানের জন্য কেনেন। নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ান। এভাবে তিলে তিলে নিজেকে শেষ করে সন্তানকে বড় করেন। তার চেয়ে কি কেউ আপন হতে পারে?
তাহলে ‘কে আপন’ এই প্রশ্ন দ্বারা কী বুঝানো উদ্দেশ্য?
একটু ভেবে দেখি, আমি যখন মায়ের পেটে ছিলাম কে আমাকে খাইয়েছেন? আমি যখন পৃথিবীতে এলাম কে আমার জন্য বুকের দুধের ব্যবস্থা করেছেন? কে আমাকে বসার ও হাঁটার শক্তি দিয়েছেন?
কে করেছেন এগুলো? আল্লাহই করেছেন। যিনি আমার, তোমার সবার রব। এবার আমিই ভাবি, কে আমার সবচেয়ে আপন, সবচেয়ে কাছের?
আর মা-বাবা হলেন আল্লাহর পরে সবচেয়ে আপন।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি তোমাদের গলদেশের রগ থেকেও তোমাদের কাছে অবস্থান করি’। Ñসূরা ক্বফ : ২৬
গলদেশের রগ মানে গলার দুই পাশের রক্তানালী যা মানুষের অনেক কাছের। আল্লাহ বলেছেন, আমি সেই রগ থেকেও তোমাদের কাছে অবস্থান করি।
আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো। Ñসূরা মুমিন : ৬০
তুমি যে অবস্থাতেই থাকো না কেন আল্লাহকে ডাকবে তো অবশ্যই তাঁকে কাছে পাবে। আর তিনি তোমার ডাকে সাড়া দিবেন।
এবার তো বুঝলে আল্লাহ কতটা কাছের, কত আপন! তোমার আমার, সবার। তাই এসো আল্লাহকেই বেশি মুহাব্বত করি। কারণ, তিনিই সবচেয়ে আপন, তার চেয়ে আপন আর কেউ নেই। আর আল্লাহর মুহাব্বত পূর্ণ হয় রাসূলের আনুগত্যের দ্বারা। আল্লাহ বলেছেন, (তরজমা) হে রাসূল! আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে মুহাব্বত করো তাহলে আমার অনুসরণ কর। Ñসূরা আলে ইমরান : ৩১
রাসূলের অনুসরণ হয় রাসূলের সুন্নত অনুযায়ী আমল করার দ্বারা। রাসূলের আদর্শকে নিজের জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করার দ্বারা। রাসূল যা করতে বলেছেন তা করার দ্বারা আর যা থেকে নিষেধ করেছেন তা বর্জন করার দ্বারা।
সাথে সাথে এ কথাও ভালো করে মনে রাখি, যে আল্লাহ আমার এত আপন, এত কাছের তার কথা কিছুতেই অমান্য করা যাবে না। কোনোভাবেই তাঁকে অসন্তুষ্ট করা যাবে না। গোনাহ করা যাবে না। কারণ গোনাহ বান্দাহকে আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
হে আল্লাহ! আপনি যেমন আমাদের কাছের এভাবে আমরাও যেন আপনার কাছের হতে পারি। আমীন।