মুহাররম ১৪৩৭   ||   নভেম্বর ২০১৫

সময় কাজে লাগানোর উপায়

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

আজ বাইশে রমযান। দেখতে দেখতে উনত্রিশ রমযান এসে পড়বে। একটু টেরও পাওয়া যাবে না। সময় আপন গতিতে বয়ে চলেছে।

اِنَّ عِدَّةَ الشُّهُوْرِ عِنْدَ اللّٰهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِیْ كِتٰبِ اللّٰهِ یَوْمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ

নিশ্চয়ই আকামÊলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কিতাবে আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা বারটি...। Ñসূরা তাওবা (০৯) : ৩৬

সময়ের নেযাম আল্লাহ তখন থেকেই সৃষ্টি করেছেন। এখন যেমন দিনরাত তখনও তেমন দিনরাত ছিল। আর দিনরাত সব মানুষের ক্ষেত্রে সমান। পার্থক্য শুধু এখানে যে, কারো সময়ের মধ্যে বরকত আছে। কারো সময়ের মধ্যে বরকত নেই। এই যে আমরা বলি সময় কোন দিক দিয়ে যায়এটা হল সময়ের বেবরকতির কারণে। আবার অনেকে বলে, ‘সময় যাচ্ছে না কেন? সময় কাটছে না কেন?’-এটা কখনো হয় পেরেশানীর হালত কিংবা দুঃখ-কষ্টের অবস্থার কারণে। সেটা ওযর। সেটা একটা স্বভাবের দুর্বলতা। এ ধরনের অবস্থা ছাড়াও কখনো মনে হয় সময় দ্রæত শেষ হয়ে গেল।  কখনো মনে হয় সময় ফুরায় না। মুমিনের শান এটাও না, ওটাও না। মুমিনের শান হল সময়ের বরকত নষ্ট করে এমন কাজ থেকে বেঁচে থাকা। যাতে সময়ের বরকত লাভ করা যায়। আর সময় কাটানোর জন্যে কোনো কাজ পাচ্ছে না এমন অবস্থা তো মুমিনের হতেই পারে না। কারণ আল্লাহ তাআলা নেক আমলের এত উপায়, ইবাদতের এত রাস্তা খুলে রেখেছেন যে, সকল পরিস্থিতিতে সর্বাবস্থায় বান্দার জন্য নেক আমলের রাস্তা খোলা। তার এ কথা বলার সুযোগ নেই যে, ‘সময় কাটছে না। আমাদের দেশের যানজট তো যাকে বলে নজিরবিহীন। যানজটের সময় রাস্তায় তাকালে আপনার মনে হবে, যেন বিশাল একটা গাড়ীর গ্যারেজ। সব একজায়গায় গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছে। এ যানজটে আমাদের অনেক সময় নষ্ট হয়। এ সময়গুলোকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়?

আমার একসময় নিয়োমিত আজিমপুর যাওয়া হত প্রফেসর হযরতের মজলিসে শরীক হওয়ার জন্যে। তখন যাওয়ার সময় যানজট তেমন নাহলেও আসার সময় তো অবশ্যই পড়তে হত। আমার খুব কষ্ট হত। একেবারে বিরক্তি এসে যেত। পরে হঠাৎ একদিন যেহেনে এসেছে এটা তো একটা বাস্তবতা। এটা তো আমার বিরক্ত হওয়ার কারণে দূর হবে না। এরপর থেকে আমি বাসে ওঠার আগে ইতেকাফের নিয়ত করি। মসজিদের ইতিকাফ নয়। এটা হল, গাড়ীতে ওঠার আগে নিয়ত করিÑ আমি এখানে কিছু সময় কাটাবো। কিছু সময় এখানে আল্লাহবিল্লাহ করব। এ বাসটিই এখন আমার মানযিল। গাড়ীতে মোতালাআও করতে পারি না। চোখে সমস্যা হয়ে যায়। এজন্যে গাড়ীতে আমি যিকরে ফিকরে সময় কাটাই। এরপর থেকে আমার ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে পড়ে থাকলেও কোনো কষ্ট হত না। গরম লাগত এই যা। নয়ত বেকার বসে আছি রাস্তায় বসে আছিÑ এ পেরেশানী লাগত না।

তো মুমিনের জন্যে তো রাস্তা খোলা। আপনি কেন ধরে রেখেছেন, ঐ কাজটি আমার কাজ। আরবে যে সকল জায়গায় লম্বা লাইন ধরতে হয় সেখানে কিছু দূর পর পর লেখা থাকে

دقائق الانتظار املءها بالاستغفار .

অপেক্ষার মুহূর্তগুলো ইস্তিগফারের মাধ্যমে পূর্ণ করুন।মক্কা থেকে মদীনায় যাওয়ার পথে আপনি বড় বড় সাইন বোর্ডে লেখা দেখতে পাবেন, ‘সুবহানাল্লাহ। কিছু দূর গিয়ে আবার দেখতে পাবেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। এভাবে রাস্তায় বড় বড় সাইনবোর্ডে আপনি বিভিন্ন যিকির-আযকার লেখা দেখতে পাবেন। এটা অনেক ভাল। এটাও একপ্রকার দাওয়াত। এটা দেখলে যিকরের কথা মনে হবে।

তো আমাদের সময়গুলোকে কাজে লাগানোর জন্যে আল্লাহ অনেক উপায় রেখেছেন। যদি নেক কাজের প্রকার সীমিত হত এবং এর জন্যে অনেক আয়োজন করতে হত তাহলে এটা আমাদের জন্যে অনেক বড় পেরেশানীর কারণ হত। বরং বলা ভাল, এটাই হত আমাদের সব চেয়ে বড় পেরেশানী। কিন্তু আল্লাহ তাআলা নেক কাজ আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। অধিকাংশ নেক কাজই দেখবেন একেবারে সহজ। তকী ছাহেব হুযুরের আসান নেকিয়াঁএকটি যবরদস্ত কিতাব। আল্লাহ তাঁকে জাযায়েখায়ের দান করুন। এ বিষয়ে বাজারে নতুন আরো কিতাব এসেছে। কিন্তু হযরতের কিতাব পুরানো। আর এ পুরো কিতাবটি হযরত লিখেছেন হাওয়াই জাহাযে। 

 

[রমযানুল মোবারক ১৪৩৫ হিজরীর ইতিকাফে প্রদত্ত বয়ান থেকে]

 

 

advertisement