একটি ভিত্তিহীন বর্ণনা
ফজরের নামায তরক করলে চেহারার জ্যোতি কমে যায়, যোহরের নামায তরক করলে...
যে ব্যক্তি ফজরের নামায তরক করে তার চেহারার জ্যোতি কমে যায়। যে ব্যক্তি যোহরের নামায তরক করে তার রিযিকের বরকত কমে যায়। যে ব্যক্তি আসরের নামায তরক করে তার শরীরের শক্তি কমে যায়। যে ব্যক্তি মাগরিবের নামায তরক করে তার সন্তানরা তার কোনো কাজে আসবে না। যে ব্যক্তি এশার নামায তরক করে তার ঘুমের শান্তি চলে যায়।
নামায তরক করার ক্ষতি হিসেবে অনেকে এ বর্ণনাটি পেশ করে থাকেন। এবং এটি লোকমুখে হাদীস হিসেবে খুব প্রসিদ্ধও বটে। কিন্তু বাস্তবে এটি নবীজীর হাদীস নয়; একটি ভিত্তিহীন বর্ণনা।
হাদীসের নির্ভরযোগ্য কোনো কিতাবে আমরা এর কোনো সূত্র পাইনি; সহীহ-যঈফ কোনো ধরনের সূত্রেই পাওয়া যায়নি। সুতরাং এটিকে হাদীস হিসেবে বর্ণনা করা যাবে না।
বেশ কিছু আয়াত-হাদীসে নামায তরক করার বিষয়ে সাবধানবাণী উচ্চারিত হয়েছে। নামায তরক করার ক্ষতি বা শাস্তি হিসেবে সেগুলোই বর্ণনা করা উচিত। এধরনের জাল বর্ণনা পরিহার করা উচিত।
এ বিষয়ক কয়েকটি আয়াত ও সহীহ হাদীস নিচে উল্লেখ করা হলÑ
সূরা মারইয়ামের ৫৯ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا.
তারপর তাদের স্থলাভিষিক্ত হল এমন লোক, যারা নামায নষ্ট করল এবং ইন্দ্রিয় চাহিদার অনুগামী হল। সুতরাং অচিরেই তারা তাদের কুকর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। Ñসূরা মারইয়াম (১৯) : ৫৯
জাহান্নামীদের জিজ্ঞাসা করা হবেÑ তোমরা কেন জাহান্নামী হলে? তারা উত্তরে বলবে, আমরা মুসল্লী (নামাযী) হতে পারিনি। কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছেÑ
مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ، قالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ.
তোমাদেরকে কিসে ‘সাকার’ জাহান্নাম-এ নিক্ষেপ করল? তারা বলবে, আমরা মুসল্লীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না (আমরা নামায পড়তাম না)। Ñসূরা মুদ্দাছ্ছির (৭৪) : ৪২-৪৩
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছেÑ
بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكُ الصَّلَاةِ.
নামায হল বান্দা ও কুফ্র-শিরকের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৮২
আর বিশেষভাবে আসরের নামায তরক করার উপরেও সাবধানবাণী উচ্চারিত হয়েছেÑ
مَنْ تَرَكَ صَلاَةَ العَصْرِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ.
যে ব্যক্তি আসরের নামায তরক করল, তার আমল বরবাদ হল। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৫৫৩
সুতরাং নামায তরক করা বিষয়ে এজাতীয় সহীহ হাদীসগুলোই আমরা বলব এবং ভিত্তিহীন বর্ণনা থেকে বিরত থাকব।