যিলকদ ১৪৩৬   ||   সেপ্টেম্বর ২০১৫

যদি ফুল হয়ে ফোটো

আবু আহমাদ

আমাদের মাদরাসার একটি টবে ছোট্ট একটি আধমরা গাছ ছিল। গাছটি ছোট, দেখতে তেমন সুন্দর না, তারপর আবার আধমরা। সেটি ছিল মাদরাসার সদর দরজার সামনে, আরো অনেক রংবেরঙের ফুলগাছের সাথে। দেখতে বড়ই বে-মানান লাগছিল। তাই টবটি নিয়ে মাদরাসার পেছন দিকে এক জায়গায় রেখে এলাম।

বেশ কিছুদিন গাছটি অবহেলায় পড়ে থাকল। তারপর গাছটি একটু বড় হল, নতুন পাতা ছাড়ল এবং একটি সতেজ গাছে পরিণত হল। অজান্তেই গাছটি আমার নজরে পড়ে গেল। তারপর যখন গাছটিতে কুঁড়ি এলো তখন সকাল বিকাল গাছটির খবর রাখতে শুরু করলাম; কবে ফুল ফুটবে?

তারপর একদিন গাছটিতে ফুল ফুটলো; লাল টকটকে ফুল। কী সুন্দর ফুল! এখন কি এ গাছটিকে আর পেছন দিকে ফেলে রাখা যায়?

ততদিনে যে টবে গাছটি ছিল, টবটি অনেক নোংড়া হয়ে গিয়েছে। টবটি পরিষ্কার করলাম এবং গাছটিকে সদর দরজার সবচেয়ে সামনে রাখলাম; প্রবেশ করা মাত্রই যেন এটি সবার নযরে পড়ে।

এইযে একটি অবহেলিত গাছ ও তার জাতে ওঠা এবং ফুল দেওয়া, অবহেলা থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়াÑ এর মধ্যে আমার, আপনার সবার জন্য রয়েছে শিক্ষা।

প্রতিটি শিশুই ছোট্ট চারাগাছের মত, ফুলের কলির মত। তার মধ্যে রয়েছে বিশাল বৃক্ষ হয়ে বিকশিত হওয়ার এবং সুন্দর ফুল হয়ে ফুটে ওঠার যোগ্যতা। দর্শকের দৃষ্টি কাড়ার যোগ্যতা, ঘ্রাণে ঘ্রাণে পৃথিবীকে সুবাসিত করার সুপ্ত প্রতিভা।

আজ আমি ছোট্ট শিশু। কিন্তু আমার মাঝে রয়েছে অনেক বড় হওয়ার যোগ্যতা। আজ হয়ত আমাকে কেউ গুরুত্ব দিবে না, আর এটাই স্বাভাবিক। অথবা আমি নিজেই আমার নিজেকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। কিন্তু যখন আমি মেহনত করব; অনেক মেহনত করে ফুল হয়ে ফুটব, ইল্ম, আমল ও ইখলাসের দ্বারা সুশোভিত হব; সুবাসিত হব, তখন আমার জাতি আমাকে তাদের মাথার মুকুট বানিয়ে নিবে।

আমরা থানবী রাহ.-এর নাম শুনি, মুফতী শফী রাহ., হাফেজ্জী হুযুর রাহ.-এর নাম শুনি, আরো কত শত মহামনীষীর নাম শুনিÑ যাঁরা ইল্ম ও আমলে, ইখলাস ও আখলাকে, যোগ্যতা ও খেদমতে সদ্য ফোটা, শিশিরভেজা লাল টকটকা গোলাবের মত সুন্দর ও সুঘ্রাণময় ছিলেন। যাঁদের সুবাসে আজও আমরা সুবাসিত।

তাঁরা কি শুরুতেই এমন ছিলেন? তাঁরাও আমার-তোমার মত একটি ছোট্ট শিশু ছিলেন, সম্ভাবনাময় ফুলের কুঁড়ি ছিলেন।

সুতরাং এসো হে বন্ধু! আজ থেকেই চেষ্টা করি, নিজেকে গুরুত্ব দিতে চেষ্টা করি, নিজেকে গড়ে তুলি; ইলম-আমলের, আখলাক ও ইখলাসের সুন্দরতম ফুলরূপে।

এর অর্থ এটা নয় যে, তুমি শুধু যশ-খ্যাতির জন্য, মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধ হওয়ার জন্য মেহনত করবে। বরং তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইখলাসের সাথে মেহনত করে যাবে। ইলমে-আমলে সুন্দর হবে। সুন্দর আখলাকের অধিকারী হবে। তাহলে আল্লাহর কাছেও প্রিয় হবে, মানুষের মাঝেও প্রিয় হবে। এভাবেই জাতি তোমাকে মূল্যায়ন করবে এবং তুমি ধন্য হবে দুনিয়াতে ও আখেরাতে। 

 

 

advertisement