শাওয়াল ১৪৩৬   ||   আগস্ট ২০১৫

বিশ্বাস : ভিমরতিবিদদের জন্য

আবু তাশরীফ

দুজনের বয়সই আশি ছুঁই ছুঁই। বয়স্ক মানুষ। কত অভিজ্ঞতা হয়েছে জীবনে। সেসব অভিজ্ঞতার কারণে চিন্তা ও বোধে তাদের কত পরিণত হওয়ার কথা ছিল। সেই দুজনই এখন একই জায়গার বন্ধু। বয়স্ক বন্ধু। কই আমরা তাদের সম্মান করব, উল্টো এদের নাম শুনলে এখন আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতে হয়। উপায় তো নেই, যেসব ঈমানবিরোধী ভাইরাস নিয়ে এরা ঘুরছেন- কখন কার ক্ষতি হয়ে যায় বলা মুশকিল।

একজনকে আমরা গত হজ্বের সময় থেকেই চিনেছি। আগেও তো আমরা তাকে চিনতাম। বড় রাজনীতিক। বড় দলের বড় নেতা। এমপি-মন্ত্রী! বাপরে কী দাপট! কিন্তু হঠাৎ করে ভেতরের সব দুর্গন্ধ একসঙ্গে তিনি উগড়ে দিলেন। আমরা নতুন করে তখন তাকে চিনলাম। অবশ্য এ ধরনের উল্টাপাল্টা কথা আগে যে তিনি একদমই বলেননি, এমন নয়। এই সুরে কথা বলার ঐতিহ্য কিছুটা ছিলই তার। আগেও বলতেন, একটু রেখে-ঢেকে বলতেন। রাজনীতির শ্লোগান দিয়েই সেসব কথা আড়াল করে ফেলা হতো। কিন্তু গত হজ্বের সময় হজ্ব, তাবলীগ জামাত এবং রাসূলে কারীম সাল্লøাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে একটু বেশি বলে ফেলেছিলেন। সঙ্গে বলেছিলেন দলের প্রধানের পুত্র সম্পর্কে। জানি না বিপদটা  কোন কারণে এসেছিল?

ব্যস, তার মন্ত্রীত্ব গেল। দলের পদ গেল। জেলে ঢুকানো হলো। সবই হলো খুব ইজ্জত-খাতিরের সাথে। কয়েক দিন চললো চোর-পুলিশ খেলা। পুলিশ-কর্তারা তাকে ধরতে গিয়েও যেন ভয়ে তটস্থ হলো। জেলগেটে তার মাথা হেঁট করতে হলো না। সরকারের কর্তারা পর্যন্ত ভড়কে গিয়েছিল। কিন্তু সেই রাজনীতিকের চরিত্র ছিল খুব মজবুত। এতসব কিছু বলা-কওয়ার পরও তিনি ইবলিসের দীক্ষা থেকে একচুল নড়তে রাজি হননি। তার বক্তব্য ও অবস্থান থেকে সরতে ও অনুতাপ প্রকাশ করতে একদমই সম্মত হননি। কী বীর বাহাদূর!

দিন আগে তিনিই সগর্বে রেহাই পেলেন। আদালত উল্টো তার পক্ষ হয়ে সরকারের কোনো কোনো চেয়ারকে নোটিশ করেছে- কেন তার সব মামলা বাতিল করা হবে না। স্পিকার মহিয়সী বলেছেন, তিনি নাকি এমপি ঠিকই আছেন। আর কালোবিড়াল খ্যাত আরেক গুপ্ত পÐিত বলেছেন, ওই মুরব্বির এমপিত্ব যাওয়ার মতো কোনো ব্যাপার নাকি ঘটেইনি। আর এর মধ্যেই তার বয়সের আরেকজন বাঙালি বুড়ো তার সুরটাকেই আরো চড়া করে উচ্চারণ করেছেন। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ওই বয়স্ক ভদ্রলোক আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম থেকে নিয়ে নবী-সাহাবী, পর্দা, মুসলমানের নাম ইত্যাদি সব বিষয়ে নতুন কিছু সবক শুনিয়েছেন। এ ঘটনায় বাংলাদেশের আম মুসলমানরা আবার বড় একটি হোচট খেল।

এই লোক দুজনের মাথায় ইসলাম নিয়ে অনেক রাগ। তারা এই শেষ বয়সে আল্লাহ-আল্লাহর রাসূলকেও ছাড়তে রাজি নয় (নাউযুবিল্লাহ)। জীবনভর কী কাজ করেছেন এরা? একজন রাজনীতি করেছেন। একজন কলাম লিখেছেন। এতে তো অবস্থান আরেকটু উপরেও যেতে পারতো। কিন্তু না, তারা ইবলিসের তৃতীয় শ্রেণীর শাগরিদ হিসেবেই খাতায় নাম লেখালেন। টাকা-পয়সা আর নৈতিক চরিত্রের ক্ষেত্রে দুজনকে নিয়েই রাস্তাঘাটে অনেক কেচ্ছা শোনা যায়। বয়স্ক মানুষ তারা। সেসব আমরা উচ্চারণ করতে চাই না।

একটা বিষয় লক্ষ করার মতো। এরা  কি নতুন কোনো কথা বলেছেন? ইসলামের বিরুদ্ধে নতুন কোনো তত্ত¡ কিংবা আবিষ্কার? না, একটু সচেতন যে কেউ খেয়াল করলে দেখবেন, গত দশ-পনের বছরে বাংলাবøগে ইসলাম নিয়ে যেসব মিথ্যাচার ও নি¤œমানের বিষোদ্গার চলছে- এ দুই বয়স্ক মূর্খমহাজন ইসলাম সম্পর্কে সেসবেরই একটি দুটি অংশ বড় ভাব নিয়ে আউড়ে গেছেন। হজ্ব, রমযান, নামায, মিরাজ, পর্দা, নারী, সীরাত, ইসলামী সংস্কৃতি, ইসলামী রাষ্ট্র, জিহাদ- এসবই হচ্ছে ক্রুসেডার প্রাচ্যবিদদের পুরনো লক্ষবস্তু। বিভিন্ন বাংলাবøগে সেসবের প্রতিই গালাগালি ও বিদ্বেষ ছড়ানো হয়ে থাকে। এ-দুজন সেখান থেকেই টুকলিফাই করেছেন।

এদের দুজন যে কেবল ইবলিসের নাস্তিক্যবাদী শাখার এজেন্সি নিয়েছেন- ব্যাপার এতটুকুতে শেষ নয়। এদের দুজনের নামদুটিও খুব সুন্দর। ভেবে দেখবেন, এত সুন্দর ইসলামী নাম আমার-আপনারটাও নয়। এরকমই আরেকটি নাম ছিল আহমদ শরীফ। সেই কীর্তিমানের কথাও নিশ্চয়ই পাঠকের মনে আছে। এরা দুজনই নিউইয়র্কের মতো শহরে গিয়ে এই কাÐ ঘটিয়েছেন। আশ্চর্যের বিষয় হল, দ্বিতীয়জন কাজটি করেছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির আয়োজন করা সভায়। কী কারণে সেখানে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তার কোনো ব্যাখ্যা পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া যায়নি।   এদের দুজনের ইবলিসী বক্তব্যের পরই শাহবাগীরা এদের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন দিয়েছে। সুতরাং দেশবাসী! এরা এবং এদের মতো ভিমরতিবিদদের ব্যাপারে আমাদের মন-মগজে সতর্কতা গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। 

 

 

advertisement