না রী : নারী উন্নয়ন নীতি নিয়ে শেষ পর্যন্ত সরকার কী করবে?
যা আশঙ্কা করা হয়েছিল তাই ঘটতে দেখা গেছে। আশঙ্কা করা হয়েছিল সম্প্রতি সরকার ঘোষিত নারী উন্নয়ন নীতি নিয়ে শেষ পর্যন্ত আন্দোলন রাজপথ স্পর্শ করতে পারে এবং রক্তপাতের ঘটনাও ঘটতে পারে। অতি জরুরি সংশোধনযোগ্য কোনো বিষয় নিয়ে অপ্রয়োজনীয় কালক্ষেপণ করলে এমনটিই ঘটে। গত ১০ ও ১১ এপ্রিল বৃহস্পতি ও শুক্রবার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের আশেপাশে এ নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো কয়েকটি ইসলামী দলের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। প্রথম দিনের চেয়ে দ্বিতীয় দিনে অর্থাৎ ১১ এপ্রিল শুক্রবার বাদ জুমা এ ধরনের ঘটনার তীব্রতা বেশি ছিল। ইসলামী দলগুলোর কর্মী ও পুলিশ উভয় দিকেই হতাহত হয় বেশ কয়েকজন।
নারী উন্নয়ন নীতির পবিত্র কুরআন বিরোধী কয়েকটি ধারা এবং ব্যাপকভাবে ইসলামী আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক আরো কিছু ধারা পরিবর্তনের দাবি তোলা হয় এ নীতি ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই। প্রথম দিকে সরকারের উপদেষ্টারা এ প্রতিবাদে কান না দিলেও পরবর্তীতে আলেম-উলামাদের বিভিন্ন গ্রুপ এবং কয়েকটি ইসলামী সংগঠনের সুপারিশে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়। এসব ক্ষেত্রে আইন ও ধর্ম উপদেষ্টা ইতিবাচকভাবে সক্রিয় থাকলেও মহিলা বিষয়ক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীকে দেখা গিয়েছে নারী উন্নয়ন নীতিতে কোনো পরিবর্তন না আনায় অনমনীয়তা প্রকাশ করতে এবং ইসলামী দলগুলোর দাবি আন্দোলনকে মৌলবাদী আস্ফালন বলে মন্তব্য করত। এতে বিক্ষুব্ধ ইসলামী জনতার মাঝে ক্ষোভ আরো বেড়ে যায়। এমনকি নারী উন্নয়ন নীতি থেকে আপত্তিকর ধারাগুলো বাদ দেওয়ার উপদেষ্টা পর্যায়ে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় তাতেও অনাস্থা জন্ম নেয়। গত ১০ ও ১১ এপ্রিলের ঘটনায় এসবই ছিল মূল কারণ।
পরে অবশ্য গত ১৭ এপ্রিল পর্যালোচনা কমিটির পক্ষ থেকে একটি রিপোর্ট জমা দেওয়া হয় ধর্ম উপদেষ্টার হাতে। ধর্ম-উপদেষ্টা অবশ্য পর্যালোচনা কমিটির সে সুপারিশকে গুরুত্ব দিয়ে নারী উন্নয়ন নীতি সংশোধনের আশ্বাস দেন এবং পূর্বের নীতি স্থগিত ঘোষণা করেন। এর ফলে গত ১৮ এপ্রিল শুক্রবার জুমা পরবর্তী প্রোগ্রাম সব ইসলামী দলগুলো প্রত্যাহার করে নেয়। ভিন্ন ভিন্নভাবে হলেও আলেম উলামা ও ইসলামী দলগুলোর মাঝে এ বিষয়ে একটা জোটবদ্ধতা লক্ষ করা গিয়েছে। এবং এখন তাদের প্রায় সবারই দাবি হচ্ছে, প্রস্তাবিত নারী উন্নয়ন নীতি বাতিল বা সংশোধন, উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীর পদত্যাগ এবং ১০ ও ১১ এপ্রিলের আন্দোলনে বন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তিদান। দেখা যাচ্ছে, এ সব দাবি নিয়ে ঘরোয়া পর্যায়ে মিটিং, বিক্ষোভ ও বিবৃতি চালু আছে। ভবিষ্যতে করণীয় কিছু কিছু ঘরোয়া প্রোগ্রামেরও ধারাবাহিকতা বজায় আছে। এখন সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ কতোটা সুস্থিরতা ও
সুচিন্তাপ্রসূত হয় এবং সার্বিক ক্ষেত্রে কতটা দূরদৃষ্টির পরিচয় পাওয়া যায় তার ওপরই এ বিষয়ক ভবিষ্যত কর্মকান্ড নির্ভর করছে। একশ্রেণীর ধর্মবিদ্বেষী রাজনৈতিক দলের উস্কানি এবং ব্যাপকভাবে ইসলামী আদর্শের প্রতিকূলে বুঝে না বুঝে অবস্থান গ্রহণকারী মিডিয়ার পাতা ফাঁদে পা না দিলেই সরকারের জন্য, দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল হয়। নারী উন্নয়ন নীতির বিরুদ্ধে ইসলামী মহলের বক্তব্য ও প্রতিবাদের ঘটনাকে কয়েকটি চিহ্নিত মিডিয়া এত বেশি ইন্ধনের আগুন দিয়ে পরিবেশন করেছে যে, তাতে মনে হতে পারে সরকারের সশস্ত্র খড়গহস্ত হওয়া ছাড়া এ বিষয়ে কোনো নিষ্পত্তি সম্ভব নয়। আশার কথা ইন্ধনের সেসব আগুন কোথাও পাত্তা পায়নি।