বৈশ্বিক তাপমাত্রা এবং চাঁদি ও চাপা সমাচার
পরিবেশ-সচেতন ভদ্র মহোদয়গণ জানেন, সারা বিশ্বের উষ্ণতা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব কোথায় কীভাবে পড়ছে এবং ভবিষ্যতে কী কী ভয়াবহতার আশঙ্কা রয়েছে এসব বিষয়ে পত্রপত্রিকায় মাঝে মধ্যেই প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছে। আর বিভিন্ন আলামত থেকে অনুমিত হচ্ছে যে, এই ক্রমবর্ধমান উষ্ণতা কেবল বাইরের পরিবেশেই নয় একেবারে অভ্যন্তরীণ শীতল স্থানগুলোকেও উষ্ণ করে তুলছে। এ দেশের শ্রদ্ধেয় বুদ্ধিজীবীদের অতি সংরক্ষিত চির শীতল মস্তিষ্কও যদি এর প্রভাবে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে তাহলে অবস্থা যে খুবই ভয়াবহ সে সম্পর্কে কোনো সংশয় থাকতে পারে না। আমরা মনে করি, অতি দ্রুত পরিবেশপ্রেমীদের দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা কর্তব্য। সচেতন বিশ্ব নেতৃবৃন্দকেও আর নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকলে চলবে না।
আপার চেম্বারের উষ্ণতা ‘ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য’ বিষয় নয়। আমরা জানি, মাথার চাঁদি হাত বুলিয়ে উষ্ণতা পরিমাপ করার একটা সনাতন পদ্ধতি এ দেশে প্রচলিত রয়েছে। আবার খাঁটি সরিষার তেলে পানীয় জল মিশিয়ে হাতের তালুতে ভালোভাবে ফেটা হলে হলুদ বর্ণের যে দ্রবণ তৈরি হয় তা চাঁদিতে ঘষে উষ্ণতা নিবারণের প্রাকৃতিক পদ্ধতিও গ্রামবাংলায় সমাদৃত। কিন্তু আমাদের আলোচ্য বিষয় সাধারণ চাঁদি নয়, বুদ্ধিজীবীর চাঁদি। অতএব ওখানে হাত বুলানোর আশা করা বামুন হয়ে চাঁদে হাতে ছোঁয়ানোর মতোই কল্পনা বিলাসমাত্র।
অতএব এই উষ্ণতা যখন বিভিন্ন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে স্বয়ং আবির্ভূত হন কেবল তখনই আমরা তাঁর দেখা পাই।
কিছু দিন আগে একটি বিশেষ নীতিমালা প্রণীত হয়েছিল। সকল শ্রেণীর মুসলিম জনগণের আন্দোলন বিক্ষোভের মুখে তা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। জনগণও আপাতত শান্ত হয়েছেন, কিন্তু উঁচু ঘরানার ওই শ্রেণীটির বাক্যবাণ স্থগিত হওয়ার কোনো লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। এটারও অবশ্য একটা ভালো দিক রয়েছে। ফার্সী ভাষায় নাকি প্রবাদ আছে- ‘তা মরদ ছুখান না গুফতা বাশদ আয়েব ও হুনরশ নেহুফতা বাশদ’ অর্থাৎ বাকযন্ত্র সঞ্চালন করলেই মর্দের পরিচয় প্রকাশিত হয়।
এতদিন আমাদের ওই পন্ডিতরা বলছিলেন, ‘ওই নীতিতে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কিছু নেই এবং যারা এর বিরোধিতা করছেন তারা ওটা পড়েও দেখেননি।’ অথচ এ দেশের সাধারণ জনগণ জানেন, এ বিষয়ে আলিম-উলামার সঙ্গে ধর্ম ও আইন উপদেষ্টার একাধিক বৈঠক হয়েছে এবং নীতিমালার কোন কোন ধারা সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী তা চিহ্নিত করে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ক বিভিন্ন সংবাদ তখন পত্রপত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিতও হচ্ছিল।
ইদানীং দেখা যাচ্ছে সূর পাল্টেছে। বলা হচ্ছে, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা...ইত্যাদি। অর্থাৎ এবার ব্যাখ্যায় নেমে পড়া গেল। কিন্তু এখানে যে মৌলিক প্রশ্নটা এসে যায় তা এই যে, ‘ব্যাখ্যা’ বিষয়টা কি এতই লা-ওয়ারিশ যে, যার যখন ইচ্ছা সেই তখন তার চাঁদিতে একটি করে চাঁটি মেরে যাবে। অবস্থা দেখে তো মনে হচ্ছে, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের জন্য আজকাল আর অক্ষরজ্ঞানেরও প্রয়োজন নেই। শুধু একটি বস্ত্তরই প্রয়োজন। প্রমিত বাংলায় যাকে বলে বাকপটুতা। খাস বাংলায় চাপা।
একজন কিন্তু একটা ভালো কথা বলে ফেলেছেন। তবে শঙ্কা জাগে, ভবিষ্যতে তা কার্যকর করতে গেলে কী ল্যাঠাই না তারা পাকিয়ে তোলেন। ওই নারী নেত্রী বলেছেন, ‘বিক্ষোভের মুখে যদি একে স্থগিতই করতে হল তাহলে সরকার বিষয়টা আগে ভেবে দেখেনি কেন?’ যুক্তির কথা। রাগের মাথায় বলে ফেললেও একটা প্রয়োজনীয় কথা বলা হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো নীতিমালা তৈরি করার আগে ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও পরামর্শ করার একটি ধারা আরম্ভ করা যেতে পারে। আমাদের নীতি নির্ধারকরা যদি বিষয়টি ভেবে দেখেন তাহলে বোধ হয় ভালোই হয়। -বিনতে নূর
‘নওরোযোনা কুল্লা ইয়াওম’
ইমাম আবু হানীফা রহ.-এর পৌত্র ইসমাইল বলেন, ‘আমরা বংশগতভাবে পারসিক। কখনো আমাদের বংশে দাসত্বের স্পর্শ লাগেনি। আমার দাদা (ইমাম আবু হানীফা, মূল নাম নুমান ইবনে ছাবিত) আশি হিজরী মনে জন্মলাভ করেন। তিনি যখন শিশু তখন একদিন আমার পরদাদা ছাবিত তাকে নিয়ে হযরত আলী ইবনে আবী তালিব রা-এর কাছে যান। আলী রা. তার জন্য ও তার বংশধরদের জন্য বরকতের দুআ করেন। আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে আশা করি যে, আল্লাহ তাআলা হযরত আলী রা.-এর ওই দুআ কবুল করেছেন।
‘ছাবিতের পিতা নুমান ইবনে মারযুবান ‘নওরোয দিবসে’ হযরত আলী রা.কে ফালুদা উপহার দিয়েছিলেন। হযরত আলী রা. বললেন, ‘নওরোযোনা কুল্লা ইয়াওম’। অর্থাৎ বছরে একদিন নয়, মুসলিমদের ‘নওরোয’ তো প্রতিদিন।
কেননা মুসলিমগণের ইবাদত-বন্দেগী, নামায-দুআ, আল্লাহর সান্নিধ্য কামনা এগুলো তো প্রতিদিনই ঘুরে ঘুরে আসে। মুসলিমের উৎসব-দিবস তাই প্রতিদিন। -সূত্রা : তারীখু বাগদাদ ১৩/৩২৬