রজব ১৪২৯   ||   জুলাই ২০০৮

তালেবানে ইলমে নবুওয়তের প্রতি কিছু প্রয়োজনীয় নির্দেশনা

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

আজ থেকে পাঁচ বছর আগে ১৪২৪ হিজরীতে একবার মারকাযুদ দাওয়াহ থেকে শিক্ষা সমাপনকারী সকল তালিবে ইলমকে মারকাযে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল,তাদের কর্মজীবনের ব্যস্ততা সম্পর্কে অবগতি লাভ করা এবং তাদের  সঙ্গে মতবিনিময় করা। এ সময় মারকাযের আসাতিযায়ে কেরামের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর কিছু প্রয়োজনীয় কথা লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল এবং তাদের সামনে পেশ করা হয়েছিল। কিছু বন্ধু যখন বিষয়টি জানলেন তখন আলকাউসারের শিক্ষার্থীদের পাতায় তা প্রকাশ করার অনুরোধ করেন যেন মাদরাসার নেসাববদ্ধ পড়াশোনা সমাপ্ত করে কর্মজীবনে পদার্পনকারী তালাবায়ে কেরামের সামনে কথাগুলো থাকে। এ পরমর্শ আমাদের কাছেও মুনাসিব বলে মনে হয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে, সকল তালিবে ইলমকে এই বিষয়গুলোর ওপর আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

আমীনুত তালীম

মারাকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা

মুতামারু আবনাইল মারকায ২৯ রবীউল আউয়াল ১৪২৪ হিজরী মোতাবেক ২০ মে ২০০৪ ঈসাব্দে (মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা-এর সূচনা ১৪১৬ হিজরী থেকে ১৪২৪ হিজরী পর্যন্ত শিক্ষাগ্রহণকারী আলেমবৃন্দের সম্মেলন) উপলক্ষে মারকাযের আসাতিযায়ে কিরামের পক্ষ থেকে মারকাযের সন্তানদের প্রতি এই নির্দেশনা ও কর্মপন্থা দেওয়া হচ্ছে। যা সুচিন্তিত কোনো দীর্ঘ বয়ান বা একেবারে গোছালো কোনো প্রবন্ধ নয়; বরং বিক্ষিপ্তভাবে যেহেনে আসা একটি সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি মাত্র। এর উদ্দেশ্য শুধু স্মরণ করিয়ে দেওয়া ও দৃষ্টি আকর্ষণ করা। অবশ্য এগুলো যে জরুরি বিষয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আল্লাহ তাআলা সবাইকে এ নির্দেশনা গ্রহণ করে উল্লেখিত কর্মপন্থা অনুসারে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

ব্যক্তিগত সংশোধন ও উন্নতির  চিন্তা এবং এ বিষয়ে অনতিবিলম্বে গ্রহণীয় পদক্ষেপসমূহ

এ প্রসঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, নিজের সংশোধন ও উন্নতির ফিকির। কেননা দ্বীনী বিষয়ে সবার আগে নিজের দিকেই নজর ফেরানো কর্তব্য। সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে শুধু মত প্রকাশের চর্চা এবং বিরাজমান পরিস্থিতির পরিবর্তনের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ না করা এমনকি (এ বিষয়ে কোনো সংকল্প ও কর্ম পরিকল্পনা না থাকা) সত্ত্বেও শুধু সমস্যার মুখরোচক আলোচনা নিঃসন্দেহে একটি অনর্থক কাজ। তদ্রূপ বৃহত্তর পরিসরে বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে চিন্তাবিদ সেজে নিজস্ব ক্ষেত্র ও সামর্থ্যের বিষয়গুলো সম্পর্কে উদাসীন থাকা অতি ন্যক্কারজনক ব্যাপার।

মোটকথা, প্রত্যেকের প্রথম কর্তব্য হল, নিজের সংশোধন ও উন্নতির চিন্তা করা। নিম্নোক্ত সকল বিষয়েই উন্নতির প্রচেষ্টা হওয়া উচিত।

ক- আক্বীদাগত দিক

বর্তমান ফিতনার যুগে খুবই সতর্ক থাকা উচিত। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বীদা-বিশ্বাস,    চিন্তা-চেতনা এবং রুচি ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অধিক জ্ঞান ও পরিপক্ক ধারণা অর্জন করা এবং এর ওপর অটল-অবিচল থাকা ফরয। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, ইলমের দৃঢ়তা বা যুহদ ও তাকওয়ার কমতির কারণে আজকাল কওমী মাদরাসারও বহু ফাযেল নিজেদের আক্বীদা-বিশ্বাস পরিবর্তন করছেন এবং মাসলাক থেকে বিচ্যুত হচ্ছেন। প্রতিদিন নতুন নতুন গোমরাহী সৃষ্টি হচ্ছে এবং বিভিন্ন রূপে আত্মপ্রকাশ করছে। পথভ্রষ্ট লোকেরা প্রাচীন ও বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বহু গোমরাহীপূর্ণ মতাদর্শ নতুন ও আকর্ষণীয় আঙ্গিকে ইতিবাচক ভঙ্গিতে উপস্থাপন করছে। এ পরিস্থিতিতে অন্যদের সাথে মাসলাকে দেওবন্দের (যা পাক-ভারত-বাংলায় মাসলাকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতেরই অপর নাম) সাথে সম্পৃক্ত আলেমগণও বিভ্রান্ত হচ্ছেন। এজন্য পূর্বের চেয়েও অনেক বেশি সতর্কতা ও সচেতনতা অবলম্বন করা সময়ের দাবি। পর্দার আড়ালের মূল বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো অস্পষ্ট আহবানে সাড়া না দেওয়া আমাদের অবশ্য কর্তব্য। ইদানীং কত আন্দোলন এবং কত পার্টি যে বেনামে বা আকর্ষণীয় নামে আত্মপ্রকাশ করছে তার ইয়ত্তা নেই। আলেমদের নতুন প্রজন্মকেই এদের আহবানে অধিক প্রভাবিত হতে দেখা যাচ্ছে, অথচ জ্ঞান ও বুদ্ধির দাবি এই ছিল যে, যে কোনো দাওয়াতে সাড়া দেওয়ার আগে তার নীতিমালা ও কর্মসূচি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের উসূলের কষ্টিপাথরে যাচাই করে দেখা। কিন্তু  দুঃখজনক  বাস্তবতা এই যে, দূরদর্শিতা ও ইলমের গভীরতা না থাকার কারণে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই এসব আহবানে সাড়া দেওয়া হচ্ছে।

এ জাতীয় নতুন নতুন আহবানের স্বরূপ বোঝার ক্ষেত্রে মনে রাখার মতো ছোট কিন্তু অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি মূলনীতি এই যে, সমসাময়িক উলামা-মাশায়েখের দ্বীনী জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ব্যাপারে অনাস্থা প্রকাশ অর্থাৎ তাদেরকে দ্বীনের বিষয়ে স্থুল জ্ঞানী, বা স্বল্প প্রজ্ঞার অধিকারী মনে করা এবং উম্মাহর স্বীকৃত ব্যক্তিবর্গের   প্রতি গোমরাহী, ফিসক ইত্যাদির অভিযোগ আরোপ করা যে দল বা আন্দোলনের চিন্তার অন্তর্ভুক্ত সে আন্দোলন বা দল কোনোভাবেই হক্ব হতে পারে না।

আর যদি তাতে সাহাবা-তাবেয়ীন-তাবে তাবেয়ীনের সম্পর্কে কিংবা তাঁদের কোনো একজনেরও সম্পর্কে (নাউযুবিল্লাহ) মূর্খতা বা ভ্রষ্টতার অভিযোগ থাকে তবে তো এ আন্দোলনের ভ্রষ্টতার বিষয়ে কোনো ধরনের সন্দেহও থাকা উচিত নয়।

উপরোক্ত দুটি আলামত একদিকে যেমন স্পষ্ট অন্যদিকে অত্যন্ত শক্তিশালী ও সিদ্ধান্তমূলক। এর কোনো একটি আলামতের মাধ্যমে যদি কোনো আন্দোলন বা দলের দাওয়াতের ব্যাপারে আপনার মনে অনাস্থা সৃষ্টি  হয়  তবে বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে যখন এদের স্বরূপ সামনে এসে যাবে তখন দেখবেন এই আলামত দুটি অতি কাজের জিনিস ছিল এবং আলামত হিসেবে একদম সঠিক ছিল। এজন্য এই আলামতের কোনো একটি কোনো আন্দোলন বা দলের মধ্যে পাওয়া গেলে তাদের সংশ্রব থেকে দূরে থাকা এবং তাদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করার জন্য বাড়তি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সময় ক্ষেপণ করা উচিত নয়।

বলাবাহুল্য, জরুরিয়্যাতে দ্বীন অর্থাৎ দ্বীনের স্বতঃসিদ্ধ কোনো বিষয়কে অস্বীকার বা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের স্বীকৃত বিষয়াবলিকে সরাসরি অস্বীকারের উপর কোনো দল তাদের দাওয়াতের ভিত্তি স্থাপন করে না।  কেননা, এতে প্রথম পর্যায়েই তাদের প্রকৃত রূপটি প্রকাশিত হয়ে পড়বে। এরপরও যদি কোনো দল বা দাওয়াতের মধ্যে উপরোক্ত বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে, তবে তার বিষয়টা তো একদম স্পষ্ট। এরপরও কোনো আলেমের প্রতারিত হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।

فالله خير حافظا وهو أرحم الراحمين

খ-আমলগত দিক

এ বিষয়ে হাদীস শরীফের নির্দেশনা-

اتق المحارم تكن أعبد الناس

সর্বদা স্মরণ রাখা উচিত। গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা, নাওয়াফেল, আযকার, আদইয়ায়ে মাছুরাহ ও দরূদ শরীফের ব্যাপারে আমলীভাবে যত্নবান হওয়া সবধরনের উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একটি তাকবীনী শর্ত এবং এ বিষয়ে শরয়ী নির্দেশনাও বিদ্যমান রয়েছে।

وَ لَنْ تَجِدَ لِسُنَّتِ اللّٰهِ تَحْوِیْلًا۝۴۳

তালিবে ইলমের জন্য দিনের শুরুতে চার রাকাআত নামায আদায় করা এজন্যও গুরুত্বপূর্ণ যে, হাদীসে কুদসীতে বলা হয়েছে-

ابن آدم اركع لي أربع ركعات أكفك آخره

আর মাগরিবের পরে দুই-চার রাকাআত যা সম্ভব হয় আদায় করা সাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত। মুহাম্মাদ বিন নাসর মারওয়াযীর কিতাবের একটি মুরসাল বর্ণনায় একে সালাতুল আওয়াবীন নামেও উল্লেখ করা হয়েছে।

আকাবির এ বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন যে, কোনো ওযরের কারণে শেষ রাতে জাগা সম্ভব না হলে শোয়ার আগে ক্বিয়ামুল্লায়লের নিয়তে দুই-চার রাকাআত নামায পড়বে।

এই সামান্য পরিমাণ নফল এবং সাথে ছয় তাসবীহর আমল এমন কিছু বেশি কাজ  নয়, যা গাফেল প্রকৃতির মানুষের জন্যও বোঝা হতে পারে। তাই এই সামান্য আমলের ব্যাপারে অবশ্যই যত্নবান হওয়া উচিত। তিলাওয়াত, নাওয়াফেল, আযকার ও আদইয়ায়ে মাছুরাহ-এর মাধ্যমে অন্তরের পরিচ্ছন্নতা অর্জিত হয় যা ইলমী ও আমলী উভয় ধরনের উন্নতির পক্ষেই সহায়ক। এ ছাড়া এসব আমল যে প্রত্যেক মুমিনের জন্য ইবাদত হিসেবেও করণীয়, তা তো বলাই বাহুল্য।

এ বিষয়ে হযরত মাওলানা মনযূর নুমানী রাহ.-এর বয়ান আপ কোন্ হ্যায়, কিয়া হ্যায়, আপকা মানযিল কিয়া হ্যায়, (যা দীর্ঘদিন যাবত মরকাযের প্রত্যেক শিক্ষাবর্ষের শুরুতে নিয়মিত পড়া হয়) প্রত্যেক ভাইয়ের বারবার পড়া উচিত।

গ-হুকুক আদায় করা এবং লেনদেনে স্বচ্ছতা

বিশেষত ইজতিমায়ী হক্বসমূহের ব্যাপারে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। মাদারিসের ওয়াকফকৃত সম্পত্তি ও সাধারণ সম্পত্তি, নির্ধারিত সময়সূচি ও নিয়মাবলি এবং প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অর্পিত দায়িত্ব ও হক্বসমূহের ব্যাপারে সচেতন ও যত্নবান হওয়া উচিত। ব্যক্তিগত দুর্বলতা বা চারপাশের পরিবেশ থেকে প্রভাবিত হয়ে এসব বিষয়ে আমাদের মধ্যেও যেন সামান্যতম অবহেলা বা শিথিলতা প্রবেশ না করে-এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখা অপরিহার্য।

এ প্রসঙ্গে আমানতদারী ও হুকূক আদায় এবং লেনদেনে স্বচ্ছতার বিষয়ে কিতাব ও সুন্নতের নির্দেশনা এবং রিসালাতুল মুসতারশিদীন, ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন, তালীমুদ্দীন, ছাফাইয়ে মুআমালাত ইত্যাদি রচনায় উল্লেখিত আলোচনা এবং

আকাবিরের জীবন-চরিত যথা আপবীতী, আকাবিরে দেওবন্দ ক্যায়া থে ইত্যাদিতে উল্লেখিত ঘটনাবলি সর্বদা মনে রাখা উচিত। বিশেষত হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুমের নতুন তাজদীদী কিতাব-যিকর ও ফিকর অত্যন্ত গুরুত্ব ও মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করা উচিত এবং এর আলোকে নিজের অবস্থা ও কর্মকে যাচাই করা উচিত।

এসব বিষয়ে শিথিলতা ও উদাসীনতার চলমান প্রবাহে গা ভাসিয়ে না দিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও সচেতনতা অবলম্বন করা এবং নিজেকে দৃঢ়পদ রাখার চেষ্টা করা কর্তব্য। ইনশাআল্লাহ এতে চারপাশের পরিবেশেও ভালো প্রভাব পড়তে আরম্ভ করবে।

বলাবাহুল্য, ব্যক্তিগত বা সামাজিক সকল কাজের চেয়ে নিজ দায়িত্বের সাথে সম্পর্কযুক্ত হুকুকে লাযিমাহ-অপরিহার্য কাজগুলোই সর্বাধিক অগ্রগণ্য।

ঘ-তাযকিয়ায়ে নফস ও অন্তরের পরিশুদ্ধি

 

বিষয়টির গুরুত্ব সর্বজনবিদিত। আর এর প্রয়োজনও সবার জন্যই। কিন্তু যারা ইলমের সাথে সম্পৃক্ত তাদের তাফাক্কুহ ফিদ্দীন অর্জিত হওয়ার জন্য তা শর্তও বটে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :

لَّا یَمَسُّهٗۤ اِلَّا الْمُطَهَّرُوْنَؕ۝۷۹

ইজতিমায়ী জীবন শান্তিময় বানানোর জন্য এ ছাড়া কোনো উপায় নেই। কেননা ধৈর্য্য, বিনয় ইত্যাদি গুণ অর্জন করা এবং হিংসা-হাসাদ ও এ জাতীয় মন্দ প্রবণতা থেকে অন্তরকে পবিত্র রাখা ইজতিমায়ী জীবনকে নির্বিঘ্ন করা এবং ঝগড়া-বিবাদ ও মনোমলিন্য থেকে রক্ষা করার একমাত্র উপায়।

এ বিষয়ে সর্বাধিক মুরাকাবা ও ইহতিমাম, তাওয়াজু, ছবর ও শোকর, তাফয়ীজ-তাওয়াক্কুল অর্জন করা, যুহদ এবং উজব, হিংসা-দ্বেষ,  দুনিয়ার লালসা    মহববত  ইত্যাদি  থেকে  অন্তরকে পবিত্র করার জন্য বিশেষভাবে ইহতিমাম করা উচিত।

এজন্য আল আদাবুল মুফরাদ, রিয়াযুস সালেহীন, তাহযীবুল আখলাক ইত্যাদি কিতাবে উপরোক্ত বিষয়ে যে হাদীসগুলো বর্ণিত হয়েছে সেগুলো চিন্তা ও আমলের মধ্যে নিয়ে আসা উচিত। এ ছাড়া ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন, তাবলীগে দ্বীন, শরীয়ত ও তরীকত, বাছায়েরে হাকীমুল উম্মত, আনফাসে ঈসা, ইত্যাদি কিতাবের কোনো একটি থেকে আখলাকে হাসানার স্বরূপ ও আলামত আর তা অর্জনের পন্থা এবং রাযায়েল এর স্বরূপ,  আলামত    তা  থেকে অন্তরকে পবিত্র করার পদ্ধতি জানার জন্য মনোযোগ সহকারে আমলের নিয়তে মুতালাআ করা উচিত। এরপর সে অনুযায়ী নিজের কাজ-কর্ম, কথাবার্তা ও আচার-ব্যবহারের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা উচিত। যাতে ধীরে ধীরে রাযায়েল-এর চিকিৎসা পূর্ণতায় পৌঁছে। পাশাপাশি যদি কোনো আল্লাহ ওয়ালার সোহবত ও তাঁর পরামর্শ গ্রহণের সুযোগ হয় (যা ইচ্ছা করলে এ যুগেও সম্ভব) তবে তো নূরুন আলা নূর।

তাযকিয়ায়ে নফস ও অন্তরের পরিশুদ্ধির বিষয়টি, বলা যায়, বর্তমান সময়ে শুধু কিতাবাদির শোভাবর্ধন করছে। কর্ম ও চরিত্রে এ বিষয়গুলো প্রতিফলিত করা আমাদের সবার জন্য অপরিহার্য। এ বিষয়ে রোগের অনুভূতি হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যা আমাদের অনেকের মধ্যেই নেই। এ জন্য রাযায়েলের (মন্দ আখলাক) স্বরূপ ও আলামতগুলো জেনে নিজের কথা, কাজ, অবস্থা এবং অন্যের সাথে মেলামেশার সময়ের আচরণগুলো সূক্ষ্ম বিচার করে নিজের রোগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। যাতে চিকিৎসার ফিকির এবং এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন।

(চলবে ইনশাআল্লাহ) 

 

 

advertisement