রজব ১৪২৯   ||   জুলাই ২০০৮

আমেরিকান সেনাবাহিনীর পাকিস্তানী সেনা নিধন : নতুন কিছু নয়, ইতিহাসের শত সহস্রতম পুনরাবৃত্তি

গত ১০ জুন রাতের ঘটনা। আফগান-সীমান্তের কাছে এক মার্কিন হামলায় ১১ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়েছে। বলা হচ্ছে, এ হামলা রহস্যজনক। সত্যিই কি রহস্যজনক? পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন কারো কাছেই এটা কোনো রহস্যজনক বিষয় নয়। পারভেজ মোশাররফের ক্ষমতাহীন হওয়ার পর এখন যারা পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতায় তাদের জন্য কি এটা একটা সতর্ক-সংকেত?

বর্তমান সময়ে ধর্মীয় পরিচয়টাকে যতই অবহেলা করা হোক এবং যতই তাকে এড়িয়ে যাওয়ার ভান ও অভিনয় করা হোক, সত্যি কথা এই যে, এই পরিচয় এড়িয়ে যাওয়া মোটেই সম্ভব নয়। এটাই বাস্তব সত্য এবং বাস্তবতা হাত তুলে বার বার এ কথাটাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।

ধর্মীয় পরিচয় সত্য বলেই আরব জাহানের বুকের মধ্যে অবৈধ ইসরায়েল সৃষ্টি হয়েছে। ধর্মীয় পরিচয় সত্য বলেই বিশ্বের মুসলিম  দেশগুলিতে  ধর্মান্তরিতকরণের  পরিকল্পনা  বিপুল  শক্তিতে  বাস্তবায়িত হচ্ছে। ধর্মীয় পরিচয় সত্য বলেই  ইরাকে ও আফগানিস্তানে অসংখ্য মানুষ সীমাহীন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। কিন্তু তবু এই অসত্যই সবচেয়ে বেশি প্রচারিত যে, ধর্মীয় পরিচয়ই হল সবচেয়ে ক্ষীণ পরিচয় আর জীবন-যাত্রার সবচেয়ে গৌণ অনুষঙ্গ!!

আশ্চর্য গরমিল এই যে, শুধু মুসলমানদেরকেই বলা হচ্ছে, ধর্মীয় পরিচয় ভুলে যাও। শুধু মুসলমানদেরকেই বলা হচ্ছে, তোমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ভুলে যাও, তোমাদের ধর্মের শিক্ষা ও আদর্শকে পরিত্যাগ কর, আর বস্ত্তবাদী ও ভোগবাদী জীবন-ব্যবস্থায় ভেসে পড়। তোমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে ওই আদর্শের ঘ্রাণও পেতে না পারে-এজন্য আমাদের দেওয়া শিক্ষা ব্যবস্থা তোমাদের সমাজে বাস্তবায়িত কর। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, কেন ইসলাম সম্পর্কে অমুসলিম শক্তিগুলোর এত সংবেদনশীলতা? কেন এত ভয় ও শঙ্কা? ইসলামী জাগরণকে প্রতিহত করতে বস্ত্তবাদী ও ভোগবাদী বিশ্বের কেন এত মাথাব্যাথা?

সত্যি কথা এই যে, একমাত্র ইসলামই ওই জীয়নকাঠি যার রয়েছে গাফলতের ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলার ক্ষমতা। একমাত্র ইসলামী আদর্শের জীয়ন-স্পর্শেই মুসলিম উম্মাহ আবার ফিরে পেতে পারে হারানো অতীত। ইসলামী আদর্শের মাধ্যমেই আবার উদিত হতে পারে বঞ্চিত ও শোষিত মানবতার ভাগ্যের সিতারা। মুসলিম উম্মাহর এই জাগরণে যারা ভীত ও শঙ্কিত তারাই নিরন্তর মন্ত্র জপছে-ভুলে যাও, ভুলে যাও। তাহলে পাবে শন্তি, পাবে উন্নতি ও অগ্রগতি! দুর্ভাগ্যবশত মুসলিম উম্মাহর কোনো অংশ যদি এই মন্ত্রে বশীভূত হয়ে যায় তাহলে তাদের পরিণাম কী হবে? তাদের এই আত্মবিস্মৃতির পরের দৃশ্যটা কী? ওই দৃশ্যটা কি বারবার ইতিহাসের পর্দায় ঘুরে ঘুরে আসেনি? সে দৃশ্য কি শান্তি ও উন্নতির? গণতন্ত্র ও অগ্রগতির? সে দৃশ্য কি প্রতারিতের সর্বস্ব হারানোর দৃশ্য নয়?

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হায়দান খান বোতি নাকি বলেছেন, এ ঘটনার পর আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে নতুন করে ভেবে দেখতে হবে। কেননা, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমরা তাদের সহযোগিতা করেছি আর অপরদিকে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের হামলার শিকার হয়েছে। (দৈনিক ইনকিলাব ১৫ জুন)

সকল মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদেরই নতুন করে ভাবা উচিত। পুরানো বিষয়ও নতুন করে ভাবলে কখনো কখনো শুভফল আসে। ভিজে যাওয়া যে ম্যাচের কাঠি দুই বার অগ্নি উৎপাদন করেনি তৃতীয় বারে যে সে জ্বলে উঠবে না তা-ই বা কীভাবে বলি! আমাদের মুসলিম নেতৃবৃন্দের সবচেয়ে বড় সমস্যা এই যে, তারা চিন্তা করেন পাশ্চাত্যের মগজ দিয়ে । চিন্তা-ভাবনার নতুন এই ধারায় তারা যদি নিজস্ব মগজ ব্যবহার করেন তাহলে নতুন বাস্তবতা তাদের সামনে উদ্ভাসিত হলেও হতে পারে। মুসলিম  হিসেবে আমরা কুরআন মজীদের বাণীতেই বিশ্বাস রাখি যে, ইয়াহুদী ও নাসরানী সম্প্রদায় কখনো তোমার ওপর সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না তুমি তাদের ধর্মের অনুসারী হয়ে যাও।

তাই বলি, ভাবুন। নিজের পরিচয় সম্পর্কে ভাবুন, অন্যের পরিচয় সম্পর্কেও ভাবুন। আর পরিচয়-বিস্মৃতির পরিণাম সম্পর্কেও ভাবুন। সম্ভবত এই ধর্মীয় পরিচয়ই আবার আপনাদের জাগিয়ে দিবে। আর নতজানুতা ও চিন্তার পরাধীনতা থেকে এবং গাদ্দারী ও বিশ্বাসঘাতকতা থেকেও বাঁচিয়ে দেবে। 

 

 

 

advertisement