রমযান অর্জনের মওসুম তবে ... রোযাকে ঢাল বানান,এই ঢালকে অক্ষুণ্ণ রাখুন এবং ঈদকে ‘ওয়ীদে’ পরিণত না করুন
রমযানুল মুবারক বান্দার জন্য আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নেয়ামত। এই মাসের দিবস-রজনীকে আল্লাহ তাআলা খায়ের ও বরকত দ্বারা পূর্ণ করে রেখেছেন। তাকওয়া অর্জনের অনুশীলনের জন্য এবং ইবাদত-বন্দেগী ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সকল আমলের জন্য ভরা বসন্ত বানিয়েছেন। এ মাস শুধু একটি মাসই নয়; বরং গোটা বছরের এটা তাপকেন্দ্র। এ মাস থেকেই মুমিন গোটা বছরের তাকওয়া-তাহারাতের সঞ্চয় গ্রহণ করে। গোটা বছরের ঈমানী প্রস্ত্ততি এ মাস থেকেই গ্রহণ করে। হাদীস শরীফের ভাষায় :
‘আল্লাহ তাআলার ক্বসম! মুসলমানদের জন্য এর চেয়ে উত্তম মাস আর নেই এবং মুনাফিকদের জন্য এর চেয়ে ক্ষতির মাসও আর নেই। মুসলমান এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সঞ্চয় করে।’
আরো বলেছেন, এ মাস মুমিনের জন্য গনীমত এবং মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ। -মুসনাদে আহমদ ২/৩৩০; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৩/১৪০
সহীহ ইবনে খুযাইমাতেও এই হাদীস (হাদীস : ১৮৮৪) শব্দের সামান্য ব্যতিক্রমের সঙ্গে বিদ্যমান রয়েছে।
উপরোক্ত হাদীস থেকে বোঝা গেল যে, রমযানের খায়ের ও বরকত থেকে বঞ্চিত থাকা মুনাফিকীর দলীল।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নিফাক থেকে রক্ষা করুন এবং মুমিনের মতো এ মাসের ইস্তেকবালের তাওফীক দান করুন এবং মুমিনের মতোই এই মূল্যবান সময়কে কাজে লাগানোর তাওফীক নসীব করুন।
আল্লাহ তাআলা যেমন রমযানকে খায়ের ও বরকত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের মওসুম বানিয়েছেন তেমনি গোটা বছরের ঈমানী কুওয়ত হাসিলের কেন্দ্র বানিয়েছেন। এরই সঙ্গে আরো অনুগ্রহ এই করেছেন যে, এ মাসে সৃষ্টিজগতে এমন অনেক অবস্থা ও পরিবর্তনের সূচনা করেন যা গোটা পরিবেশকেই খায়ের ও বরকত দ্বারা ভরপুর করে দেয়। হাদীস শরীফে এসেছে যে, এ মাসে আল্লাহর হুকুমে জান্নাতের সকল দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের সকল দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বড় বড় জ্বিন ও শয়তানকে বন্দী করা হয় এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে এক ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে-
يَا بَاغِيَ الْخَيْرِ أَقْبِلْ وَ يَا بَاغِيَ الشَّرِّ أَقْصِرْ
‘হে কল্যাণ-অন্বেষী, অগ্রসর হও, হে অকল্যাণের পথিক, থেমে যাও।’
এসবের প্রভাবে রমযান মাসে চেতনে বা অবচেতনে ভালো কাজের দিকে আগ্রহ হতে থাকে। সৌভাগ্যশালী ওইসব ব্যক্তি, যারা এই আসমানী প্রেরণাকে মূল্য দেয় এবং হিম্মতের সঙ্গে কর্মের ময়দানে ঝাপিয়ে পড়ে।
আমরা যদি রমযানের ফাযাইল সম্পর্কে অবগত হই তবে বুঝতে পারব যে, রমযান হল তিজারতের মওসুম। কিন্তু কোথাকার তিজারত? রমযান হল আখিরাতের তিজারতের মওসুম। যে তিজারতের মাধ্যমে মানুষ আখিরাতের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে, যে তিজারতের লভ্য হল আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাতুন নায়ীন, যে তিজারতে সফল হওয়া ছাড়া দুনিয়ার সকল তিজারতই শুধু ব্যর্থতা ও ব্যর্থতা।
রমযানে দুনিয়াবী তিজারত নিষিদ্ধ নয়, তবে এমনভাবে তাতে মগ্ন হয়ে পড়া যেন এ মাস এই তিজারতেরই জন্য এসেছে-এটা এই নেয়ামতের না- শোকরী ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশেষত ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে রমযানের শেষ দশকে যে অবস্থা আমাদের সমাজে পরিলক্ষিত হয় তা তো খুবই বেদনাদায়ক। ব্যবসায়ীগণ তাদের পণ্য বিক্রিতে মশগুল, আর অন্যরা শুধু পণ্য ক্রয়ে নয়, মার্কেট ও বিপনী বিতানগুলোর পরিদর্শন ও প্রদক্ষিণে মগ্ন, না ফরয নামাযের জামাতের ইহতিমাম, না তারাবীর জামাতে উপস্থিতি, না পূর্ণ তারাবী পড়ার তাওফীক। তিলাওয়াত, তাসবীহ, দুআ ও রোনাযারীর তো প্রশ্নই অবান্তর। এরপর নগ্নতা ও নারী-পুরুষের সহবিচরণসহ অন্যান্য হারাম কাজগুলো তো রয়েছেই, যেগুলো লা’নত ও অভিশম্পাত ডেকে আনে।
মনে রাখা উচিত যে, প্রকৃত পক্ষে রমযান হল, আখেরাতের তিজারতের মওসুম। এ মাসের সময়গুলো খুব বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগীতে অতিবাহিত করা উচিত। অন্তত ফরয রোযা এবং সুন্নতে মুয়াক্কাদা তারাবীর সঙ্গে সেহরীর সময় তাহাজ্জুদ, কিছু পরিমাণে হলেও যিকির ও তেলাওয়াত প্রত্যেকেরই করা উচিত। বাজারের ব্যবসা-বাণিজ্যে এতখানি মগ্ন হওয়া উচিত নয় যে, ফরয নামাযের জামাত ও তারাবী ছুটে যায়। এছাড়া তিজারতে ধোকাবাজি ও প্রতারণা এবং সুদ ও জুয়াসহ অন্য সকল হারাম কার্যকলাপ থেকে তো সারা বছরই বেঁচে থাকা ফরয, রমযান মাসে এর অপরিহার্যতা আরও বেড়ে যায়। কেননা, বরকতপূর্ণ সময়ের গুনাহও অত্যন্ত কঠিন ও ধ্বংসাত্মক হয়ে থাকে।
এই ঢালকে অক্ষুন্ন রাখুন
হাদীস শরীফে এসেছে- الصِّيَامُ جُنَّةٌ অর্থাৎ রোযা হল ঢাল। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৮৯৪
রোযা গুনাহ থেকে রক্ষাকারী ঢাল। রোযার মাধ্যমে অন্তরে তাকওয়া পয়দা হয়। ঈমানী লজ্জা জাগ্রত হয়, যা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার অনেক বড় উপায়। রোযা কবরে, হাশরে এবং আখিরাতের সকল মনযিলে বান্দার জন্য ঢাল। সবশেষে জাহান্নামের আগুন থেকেও রক্ষাকারী ঢাল।
তবে এগুলো তখনই হবে যখন রোযা শুধু আইনী রোযা না হয়ে প্রকৃত রোযা হবে। আইনী রোযা বলতে উদ্দেশ্য হল সঠিক নিয়তের সঙ্গে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রীমিলন এবং ওইসব কাজকর্ম থেকে বিরত থাকা যা ফিকহ ও ফতোয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে রোযাকে বিনষ্ট করে। কোনো সন্দেহ নেই যে, এটুকুদ্বারা রোযার অপরিহার্যতা থেকে দায়মুক্ত হওয়া যায়, কিন্তু এটুকুদ্বারা রোযা ‘ঢাল’ হয় না। রোযা তখনই ঢাল হয় যখন ঈমান ও ইহতেসাবের সঙ্গে তা আদায় করা হয় এবং রোযার সকল আদব রক্ষা করা হয়।
রোযার আদবগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে এভাবে বলা যায় যে, রোযার হালতে রোযাদার আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ওইসব কাজ পরিত্যাগ করে যা তার জন্য অন্য মাসগুলোতে হালাল ছিল এবং রমযানের রাতেও যা তার জন্য হালাল। এ বিষয়গুলো শুধু এজন্য পরিত্যাগ করে যে, রোযার হালতে এই কাজগুলো থেকে বিরত থাকার আদেশ আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন। তাহলে যে সব মন্দ কাজ সব সময়ের জন্য আল্লাহ তাআলা হারাম ও নিষিদ্ধ করেছেন যথা গীবত, শেকায়েত, মিথ্যা, প্রতারণা, সুদ, জুয়া, খিয়ানত, আত্মসাৎ, ঝগড়া-বিবাদ, হারাম পানাহার, নামায না পড়া, সিনেমা, টিভি, ভিসিআর দেখা ইত্যাদি পরিহার করা কি অপরিহার্য নয়? মোটকথা রোযার আদব এটাই যে, হারাম কাজ ও হারাম বিষয়াদি থেকে বিরত থাকবে এবং শুধু দুই অঙ্গ নয়, শরীরের সকল অঙ্গের রোযা রাখবে। মুখ, কান, চোখ এবং হাত-পা সকল অঙ্গকে গুনাহ থেকে পবিত্র রাখবে। যাতে ওই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত না হতে হয় যা ওই দুই মহিলা সম্পর্কে বলা হয়েছে, যারা রোযার হালতে অন্যের গীবত করেছিল। হাদীসটি এই-
إِنَّ هَاتَيْنِ صَامَتَا عَمَّا أَحَلَّ اللهُ لَهُمَا وَأَفْطَرَتَا عَلى مَا حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِمَا
‘এরা দু’জন ওই কাজগুলো থেকে তো বিরত থেকেছে যা আল্লাহ তাআলা (অন্য সময়) তাদের জন্য হালাল করেছেন, কিন্তু ওইসব কাজ থেকে বিরত থাকেনি যা আল্লাহ তাআলা (সবসময়ের জন্য) হারাম করেছেন।’ -মুসনাদে আহমদ ৫/৪৩১
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই ইরশাদ রোযাদারের সর্বদা স্মরণ রাখা কর্তব্য যে, ‘যে মিথ্যা, মূর্খতাসূলভ আচরণ ও গুনাহ পরিত্যাগ করে না তার পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ -সহীহ বুখারী হাদীস ১৯০৩; ইবনে মাজাহ হাদীস ১৬৮৯১; সুনানে কুবরা, নাসায়ী হাদীস ৩২৪৫-৩২৪৮
তদ্রূপ এই ইরশাদও-
‘রোযা শুধু পানা- হার ত্যাগের নাম নয়; বরং অশ্লীল ও অর্থহীন কাজ থেকেও বেঁচে থাকা জরুরি। অতএব কেউ যদি রোযাদারের সঙ্গে ঝগড়া করতে থাকে কিংবা মূর্খসূলভ আচরণ করতে থাকে তখন এ কথা ভেবে নিজেকে নিবৃত্ত রাখবে যে, আমি রোযাদার, আমি রোযাদার।’ -সহীহ ইবনে খুযায়মা হাদীস ১৯৯৬; সহীহ ইবনে হিববান হাদীস ৩৪৭০
হাদীস শরীফের মূল আরবী পাঠ এই-
لَيْسَ الصِّيَامُ مِنَ الأَكْلِ وَالشُّرْبِ، إِنَّمَا الصِّيَامُ مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ، فَإِنْ سَابَّكَ أَحَدٌ أَوْ جَهَّلَكَ عَلَيْكَ فَقُلْ إِنِّيْ صَائِمٌ إِنِّيْ صَائِمٌ
মনে রাখা উচিত যে, রোযা দুনিয়া ও আখেরাতে ঢাল তখনই হবে যখন তাকে অক্ষুণ্ণ রাখা হবে। যদি একে বিদীর্ণ করে ফেলা হয় তবে তো এর মাধ্যমে আত্মরক্ষার সুফল পাওয়া যাবে না। হাদীস শরীফে এসেছে-
الصِّيَامٌ جُنَّةٌ مَا لَمْ يَخْرِقْهَا
‘রোযা ঢাল, যে পর্যন্ত না তাকে বিদীর্ণ করা হয়।’ -সুনানে নাসায়ী হাদীস .. সহীহ ইবনে খুযায়মা হাদীস ১৮৯২
জিজ্ঞাসা করা হল, কীভাবে রোযা বিদীর্ণ হয়ে যায়? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
بِكَذِبٍ أَوْ غِيْبَةٍ
‘মিথ্যা বললে কিংবা গীবত করলে।’ -তবরানী, আওসাত, হাদীস ৭৮১০
ঈদের স্বরূপ ও উদযাপনের পদ্ধতি
ঈদুল ফিতর-এর তাৎপর্য হল মাহে রমযান লাভ করা এবং রোযার তাওফীকপ্রাপ্ত হওয়ার উপর আনন্দ প্রকাশ করা। আর এই মহা নেয়ামতের উপর আল্লাহ তাআলার শোকরগোযারী ও তার বড়ত্ব বয়ান করাই হল এই আনন্দের মূলকথা। আনন্দ প্রকাশের পদ্ধতি শরীয়ত এই নির্ধারণ করেছে যে, গোসল করে পাক-সাফ হয়ে যাও। বেজোড় সংখ্যক খেজুর খাও কিংবা কোনো মিষ্টিদ্রব্য খাও। সদাকায়ে ফিতর আদায় কর। নিজের কাছে বিদ্যমান কাপড়গুলোর মধ্যে সর্বোত্তম কাপড় পরিধান কর, যা অবশ্যই পরিষ্কার হতে হবে। এরপর তাকবীর বলতে বলতে ঈদগাহের দিকে যাও। ইমামের পিছনে নামায আদায় কর এবং খুতবা শ্রবণ কর। ফেরার সময় সম্ভব হলে ভিন্ন রাস্তা দিয়ে ফিরে আস। আসা-যাওয়ার সময় এবং ঈদগাহে যাদের সঙ্গে সাক্ষাত হয় তাদেরকে সালাম কর। কারো সঙ্গে নতুন সাক্ষাত হলে মুসাফাহাও কর। একে অন্যকে কবুলিয়াতের দুআ দাও। এই সময় সাহাবায়ে কেরাম এই দুআ করতেন-
تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكُمْ
-ফাতহুল বারী ২/৫১৭
‘ঈদ মোবারক’ বলে শুভকামনা প্রকাশ করা যদিও মুবাহ, কিন্তু তা একটি রসমের মতো হয়ে গিয়েছে। অনেক সময় দেখা যায় যে, সালামের পরিবর্তে এই শব্দটাই ব্যবহার করা হয়। মোটকথা, এ সময়ের মাসনূন দুআ ওইটাই যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই হল ঈদুল ফিতরের দিন ঈদ উদযাপন করে আল্লাহ তাআলার শোকর আদায়ের পন্থা। এর বাইরে যে সব প্রচলিত বিষয় রয়েছে, যদি সেগুলোতে কোনো না-জায়েয বিষয় ও অশ্লীলতা না থাকে, তবে তা মোবাহ পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকবে। ওগুলো ঈদের মাসনূন আমল নয়। ওগুলোকে যদি মাসনূন মনে না করা হয় এবং এত গুরুত্ব না দেওয়া হয় যে, পরিত্যাগ করা দোষণীয়, তবে তাতে অসুবিধা নেই। অন্যথায় ওগুলো পরিত্যাজ্য বিষয়াদির অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। আর যেসব নাজায়েয ও অশ্লীল কার্যকলাপ সমাজে প্রচলিত রয়েছে সেগুলো সর্বাবস্থাতেই নাজায়েয, ঈদের বরকতময় দিবসে সেগুলোতে লিপ্ত হওয়া আরো মারাত্মক না-জায়েয বলে গণ্য হবে।
ঈদকে ‘ওয়ীদ’ বানাবেন না
আরবী ভাষায় ‘ঈদ’ অর্থ আনন্দ আর ‘ওয়ীদ’ অর্থ অভিশাপ। আল্লাহর করুণা অভিশাপে পরিণত হয় নেয়ামতের বে কদরী করার দ্বারা কিংবা নেয়ামতের অপব্যবহার করার দ্বারা। ঈদ আল্লাহ তাআলার নেয়ামত। প্রত্যেক জাতির ঈদ তথা উৎসব রয়েছে। আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে দু’টো ঈদ ( ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা) দান করেছেন।
বাহ্যত অনেকের মনে হতে পারে যে, এটাও অন্যান্য জাতির পর্ব-উৎসবের মতোই একটি উৎসবমাত্র, কিন্তু বাস্তবতা এই যে, ইসলামী ঈদ অন্যান্য জাতির পর্ব-উৎসব থেকে সব দিক থেকে স্বাতন্ত্রের অধিকারী। স্বরূপ ও তাৎপর্য এবং বিধান ও উদযাপন-পদ্ধতি সব দিক থেকে এতে ভিন্নতা রয়েছে। এ বিষয়টি সংক্ষিপ্ত আকারে আলকাউসারের অক্টোবর-নভেম্বর ’০৬ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।
যদি ইসলামী ঈদকে শুধু একটি বার্ষিক উৎসব গণ্য করা হয় এবং অন্যান্য জাতির মতো ঈদের সঙ্গেও মনগড়া কার্যকলাপ যুক্ত করা হয় তবে নিঃসন্দেহে ঈদ ‘ওয়ীদ’-এ (অভিশাপে) রূপান্তরিত হবে। আমাদের সমাজে এখন ঈদ উপলক্ষে যে পন্থা-পদ্ধতি প্রচলিত তাতে ঈদ ‘ওয়ীদ’-এ (অভিশাপে) পরিণত হওয়ার মতো অনেক বিষয় বিদ্যমান। যথা :
১. ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য এই যে, রমযানের মতো মাস লাভ করা এবং রোযার মতো ইবাদতের তাওফীকপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে আল্লাহ তাআলার শোকর আদায় এবং তাঁর বড়ত্ব ও মহিমা বর্ণনা। কিন্তু এই ‘মুসলিম সমাজে’ হাজারো আল্লাহর বান্দা এমন পাওয়া যায় যাদের না রোযার গুরুত্ব আছে, না নামাযের, কিন্তু ঈদের ‘শোভাযাত্রায়’ তারা সবার চেয়ে অগ্রগামী। যদি ঈদের দিনই তাদের আত্মোপলব্ধি হয় এবং খালেস দিলে তওবা করে আহকামে শরীয়তের পাবন্দীর দিকে ফিরে আসা হয় তবে তো অতি উত্তম, অন্যথায় এদের স্বভাব-চরিত্রই এই যে, আকাইদ ও আ’মাল এবং ফরয-ওয়াজিবের কোনো মূল্য তাদের কাছে নেই,তারা নিজেদের মুসলমানিত্বের প্রমাণ শুধু এমন হাতেগোনা কিছু দিবসে প্রদান করতে আগ্রহী যেগুলোতে কিছু আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। আর সেগুলোর সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বলাবাহুল্য যে, এই মানসিকতা- সে দ্বীনী জ্ঞানশূন্যতার কারণে হোক বা বুদ্ধিবৃত্তিক (?) কারণে- অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা ইসলমের অত্যন্ত ভুল রূপায়ন। কোনো সন্দেহ নেই যে, এই ধরনের মানসিকতা আল্লাহ তাআলার অভিশাপকে ত্বরান্বিত করে। আল্লাহ তাআলাই আমাদের হেদায়েত ও হেফাযতের মালিক। তাঁর নিকটেই হেদায়েত ও হেফাযত প্রার্থনা করি।
২. রমযানের মর্যাদা ও পবিত্রতা বিনষ্ট করার মধ্যেও যাদের কোনো সংকোচ বোধ হয় না তাদেরকে ঈদগাহে উপস্থিত দেখা যায়। রমযান মাসে না সিনেমাহলগুলোর উপর কোনো নিয়ন্ত্রন, না ভিসিআর, ডিশ, পত্র-পত্রিকার অশ্লীল বিষয় ও পাতাগুলোর উপর কোনো নিয়ন্ত্রন। আর না প্রকাশ্যে পানাহার এবং হোটেল-রেস্তোরা, কফিশপ, রেস্ট হাউস ইত্যাদির বিলাসিতা ও অশ্লীলতার উপর কোনো বিধিনিষেধ। না রাষ্ট্রীয়ভাবে, না সামাজিকভাবে। আর না ওইসব লোকদের মধ্যে এতটুকু চক্ষুলজ্জা যে, যে মাসে বড় বড় শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় সে মাসে তো অন্তত নিজেদেরকে এবং নিজেদের অধীনস্থদেরকে অশ্লীল কার্যকলাপ থেকে বিরত রাখা কর্তব্য।
চিন্তার বিষয় এই যে, এইসব লোক কিন্তু ঈদগাহে উপস্থিত থাকে। ঈদগাহে উপস্থিত হওয়া যদি তওবার নিয়তে হয়, নিজেকে অপরাধী মনে করে হয় এবং ঈদের নেয়ামতের কদরদানীর জন্য হয় তবে তো খুবই উত্তম, কিন্তু বাহ্যিক অবস্থাদৃষ্টে এমন মনে হয় না; বরং শুধু একটা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করাই উদ্দেশ্য বলে মনে হয়। বলাবাহুল্য যে, এই মানসিকতাও লা’নত ও অভিশাপের কারণ এবং ঈদকে ‘ওয়ীদে’ রূপান্তরিত করার মাধ্যম।
৩. ঈদ ইসলামের শিআর (নিদর্শন)। ঈদের দিনগুলো অত্যন্ত বরকতপূর্ণ। ইসলামে ‘শিআর’-এর প্রসঙ্গটি অত্যন্ত নাযুক ও সংবেদনশীল। বিশেষ বরকতপূর্ণ সময়গুলোর মর্যাদা বিনষ্ট করা অত্যন্ত ভয়াবহ। সামান্য চিন্তা করলেই আমরা বুঝতে পারি যে, ঈদকে কেন্দ্র করে সিনেমাহলগুলোতে এবং বিভিন্ন টিভি-চ্যানেলে যে বিশেষ উদ্যোগ-আয়োজন গ্রহণ করা হয়ে থাকে- এটা কি এই ইসলামী নিদর্শনের প্রকাশ্য ও খোলাখুলি অমর্যাদা করা নয়? এসব বিষয়ের ব্যবস্থাপনা এবং প্রচার-প্রচারণায় যারা যেকোনোভাবে অংশগ্রহণ করে এবং যারা এসব অশ্লীল দৃশ্য অবলোকনের মাধ্যমে ঈদ-উৎসব উদযাপন করে তারা সবাই কি এই ‘শিআরে ইসলাম’-ইসলামের নিদর্শনের অমর্যাদার সঙ্গে জড়িত নয়? ভেবে দেখুন, অবশেষে এটা কি ঈদ থাকল না ওয়ীদে রূপান্তরিত হল?
৪. ইসলামের এই গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনের অমর্যাদার আরেকটি বিষয় নারীদের মধ্যে দেখা যায়। শহরে ও গ্রামে ঈদের দিনগুলোতে নারীরা বেপর্দা বের হয়। সৌন্দর্যের প্রদর্শনী করে রাস্তা-ঘাটে ঘুরতে থাকে। এ বাড়ি থেকে সে বাড়ি, এ জায়গা থেকে সে জায়গা ...।
পর্দাহীন যদি হতেই হয় তবুও অন্তত ইসলামী ঈদের দিনগুলোতে সংযত থাকা উচিত। নিজের উপর এতখানি অত্যাচার তো করা উচিত নয় যে, ইসলামী নিদর্শনগুলোরও অমর্যাদা করতে আরম্ভ করলেন! এই ঈদ তো পাশ্চাত্য সভ্যতা আমাদের প্রদান করেনি, এটা প্রদান করেছে ইসলাম। অতএব ইসলামের বিধান মোতাবেক তা উদযাপন করাই মুসলমানের কর্তব্য। পাশ্চাত্যের ফ্যাশন, পাশ্চাত্যের নগ্নতা ও অশ্লীলতাকে এর সঙ্গে সংযু্ক্ত করা কি মুসলমানের কাজ হতে পারে?
৫. ঈদকে ‘ওয়ীদ’ ও অভিশাপ বানানোর আরেকটি রীতি আজকাল মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে এবং সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গিয়েছে। যেহেতু ধরে নেওয়া হয়েছে যে, ইসলামী ঈদ নিছক একটি উৎসব কিংবা এতে উৎসবের দিকটিই প্রধান তাই তা উদযাপনের জন্য সাজসজ্জার সীমাতিরিক্ত আয়োজনে ডুবে যেতে দেখা যায়। রমযানের শেষ দশক এ কাজেই বরবাদ হয়ে যায়। এই সময় দিন-রাত মার্কেট ও শপিংমলগুলোতে প্রচন্ড ভিড় থাকে। পুরুষের চেয়ে নারীদের ভীড়ই বেশি, আর অধিকাংশই বেপর্দা। মজার বিষয় এই যে, এই কেনাকাটায় ওইসব লোকেরাই সবচেয়ে অগ্রগামী, যাদের না রয়েছে রোযা-তারাবীর চিন্তা, না রমযানের মর্যাদা রক্ষার অনুভূতি। তাদের তো প্রকৃতপক্ষে ঈদগাহেই উপস্থিত হওয়ার অধিকার থাকে না অথচ তারাই ঈদ-শপিংয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত। হাদীস শরীফে কুরবানী ঈদ সম্পর্কে এসেছে যে- ‘যার কুরবানী করার ইরাদা নেই সে যেন ঈদগাহে না আসে।’ কুরবানী, যা ওয়াজিব কিংবা (কোনো কোনো মাযহাব মতে) সুন্নতে মুয়াক্কাদা সেটা পরিত্যাগ করার কারণেই যখন এই ধমক দেওয়া হল যে, সে যেন ঈদগাহে না আসে তাহলে রোযার মতো ফরয বিধান যারা পরিত্যাগ করে তাদের কীভাবে ঈদগাহে হাজির হওয়ার অধিকার থাকে? হাঁ, কেউ যদি নিজেকে অপরাধী মনে করে অনুতপ্ত হয়ে ঈদগাহে উপস্থিত হয় তাহলে সেটা ভিন্ন কথা।
একটি শ্রেণী-মাশাআল্লাহ- রোযা রাখেন কিন্তু রমযানের শেষ দশকে তারাবী ছেড়ে তারাও ঈদ শপিংয়ের চক্করে ফেঁসে যান। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, রমযানে দিবসের করণীয় হল রোযা আর রাতের করণীয় তারাবী ও তাহাজ্জুদ। তারাবী হল সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এ থেকে বঞ্চিত থাকার অর্থ হল হাফেযের মুখ থেকে কুরআন মজীদ শ্রবণ করা থেকে বঞ্চিত থাকা। এটা কত বড় ক্ষতিগ্রস্ততা!
এরপর যখন নারীরা নির্লজ্জ বেপর্দা হয়ে মার্কেটগুলো দখল করে বসে আছে তখন পুরুষরা যদি তাদের ঈমানকে রক্ষা করার জন্য এবং দৃষ্টির হেফাযতের জন্য সংকল্পবদ্ধ হয়ে মার্কেটে ঘোরাঘুরি বর্জন করেন তাহলে কী অসুবিধা?
কিছু মানুষ এমনও আছেন যারা মাশাআল্লাহ রোযার সঙ্গে তারাবীরও পাবন্দী করেন এবং তারাবীতে খতমও করে থাকেন, কিন্তু তারা পনেরো বা বিশ রমযানের মধ্যেই খতম শেষ করে দেন এবং শেষ দশকে শুধু সূরা তারাবী পড়ে থাকেন, জামাতের সঙ্গে কিংবা একা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কুরআন খতম থেকে আগে ফারেগ হওয়ার উদ্দেশ্য থাকে বাইরে যাওয়া আসায় সুবিধা সৃষ্টি করা। অথচ গোটা রমযানের মধ্যে শেষ দশকের ফযীলতই সবচেয়ে বেশি। এজন্যই এতে ইতিকাফ এবং লায়লাতুল কদর তালাশ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সালাফে সালেহীন রমযানের প্রথম বিশ দিনের তুলনায় শেষ দশকে নামায, তেলাওয়াত এবং অন্যান্য ইবাদতে অনেক বেশি মেহনত করতেন। এজন্য শেষ দশকের রাতগুলো খুব বেশি করে আবাদ রাখা কর্তব্য। এই বরকতময় রাতগুলো কোনোভাবেই মার্কেটিংয়ের পিছনে নষ্ট করা উচিত নয়।
এখানে একটা বড় ভুল ধারণা এই যে, অধিকাংশ মানুষ ঈদের দিনের জন্য নতুন পোশাক পরিধান করা এবং অন্যদের পরিধান করানো বা হাদিয়া দেওয়াকে ঈদের অপরিহার্য অংশ মনে করে অথচ এই কথাটা একদম গোড়া থেকেই সঠিক নয় যে, ঈদের জন্য নতুন কাপড় মাসনূন; বরং দলীল দ্বারা শুধু এটুকু প্রমাণ হয় যে, নিজের কাছে বিদ্যমান কাপড়গুলোর মধ্যে উত্তম ও পরিষ্কার কাপড়টি পরিধান করবে।
كَانَ ابْنُ عُمَرَ يَلْبَسُ فِيْ الْعِيْدَيْنِ أَحْسَنَ ثِيَابِهِ
এক প্রস্থ উত্তম কাপড় বানিয়ে কিংবা ক্রয় করে তা জুমআ ও ঈদে পরিধান করাতে কোনো অসুবিধা নেই। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে একটি উত্তম পোশাক ছিল যা তিনি জুমআ, ঈদে কিংবা বিভিন্ন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাত করার সময় পরিধান করতেন। -আসসুনানুল কুবরা বায়হাকী ৩/২৮০-২৮১; যাদুল মাআদ ১/৪২৫
মোটকথা, পরিষ্কার ধোয়া কাপড় যা বিদ্যমান কাপড়গুলোর মধ্যে যে কাপড়টি সবচেয়ে উত্তম তা ঈদের দিন পরিধান করা কাম্য। যদি ঘটনাক্রমে তা নতুনও হয় তাহলেও অসুবিধা নেই, কিন্তু প্রত্যেক ঈদের জন্য নতুন কাপড়ের ব্যবস্থা করাকে মাসনূন মনে করা একদম ঠিক নয় এবং এর ওপর শরীয়তের কোনো দলীলও বিদ্যমান নেই।
মুসলমানদের আর্থিক স্বচ্ছলতার যুগ অতীত হয়েছে (যখন তাদের দ্বীন ও ঈমানের হালতও বর্তমানের চেয়ে হাজার গুণ ভালো ছিল) কিন্তু ইতিহাস থেকে এটা প্রমাণ করা যায় না যে, তাদের কাছে রমযান ও ঈদুল ফিতর বিশেষ ব্যবসা-বাণিজ্যের মওসুম ছিল, যেখানে ঈদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ-আয়োজন থাকত। এখন তো বিষয়টি শুধু কাপড়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, নতুন কাপড়ের সঙ্গে চাই নতুন জুতো, মহিলাদের সাজসজ্জার সকল উপকরণ নতুন হওয়া চাই, বাচ্চাদের জন্যও সবকিছু নতুন হওয়া চাই। ঘরের আসবাবপত্র নতুন হওয়া চাই। পুরানো শুধু একটি বস্ত্তই, তা হচ্ছে ঈমান ও আমল। একে উন্নত ও নতুন করার কোনোই আয়োজন নেই। বলাবাহুল্য, মুসলিম সমাজের এটা এক দুর্ভাগ্যজনক চিত্র, যার নজির বিগত শতাব্দীগুলোতে পাওয়া যাবে না।
কেউ বলতে পারেন যে, ইসলামে জায়েয সাজসজ্জাকে বৈধ রাখা হয়েছে এবং ঈদের সময় তা পছন্দনীয়ও বটে? অবশ্যই পছন্দনীয় তবে একে সীমার মধ্যে রাখা হলে। মুবাহ সাজসজ্জার মধ্যেও বাড়াবাড়ি করা নিষেধ। এরপর এখানে আলোচনা শুধু সাজসজ্জা সম্পর্কেই নয়; বরং এতে সীমালঙ্ঘন করে রমযানের সবচেয়ে বরকতময় সময়গুলোকে বিনষ্ট করা সম্পর্কেও। প্রশ্ন এই যে, শরীয়তে এই প্রান্তিকতাও কি কাম্য ও পছন্দনীয়, নাউযুবিল্লাহ?! এরপর মুবাহ ও বৈধ সাজসজ্জাকে বাহানা বানিয়ে যারা অবৈধ সাজসজ্জার পেছনে পড়ে যায় তাদের কথা তো ভিন্নই!
মোটকথা, রমযনের শেষ দশক নিজেকে এবং নিজেদের পরিবার-পরিজনকে অন্যান্য ঝামেলা থেকে মুক্ত করে ইবাদতে নিমগ্ন করা উচিত। নফল নামায, তেলাওয়াত, যিকর ও দুআ ইত্যাদিতে মশগুল হওয়া কর্তব্য। নিজেও ইতিকাফ করার চেষ্টা করবে এবং ঘরের অন্যান্য লোকদেরকেও ইতিকাফের সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা করবে। মহিলাদেরকে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করবে। একই বছর সবার পক্ষে সম্ভব না হলে পালাক্রমে করার চেষ্টা করবে। আর দুই তিন দিনের নফল ইতিকাফ তো প্রতি রমযানে প্রত্যেকেই করতে পারেন।
আমাদের মনে রাখা উচিত যে, রমযানের শেষ দিনগুলো ঈদ-উদযাপনের প্রস্ত্ততি গ্রহণের জন্য নয়; বরং ঈমান ও আমলের তরক্কীর জন্য। আমরা যদি আমাদের কর্মের মাধ্যমে এর বিপরীত কিছু প্রমাণ করি তাহলে সেটা হবে ইসলামের অত্যন্ত ভুল রূপায়ন। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হেফাযত করুন ও সাহায্য করুন। আমীন।#