আ লে য়া
কোনো কোনো সময় জলাভূমিতে এক ধরনের আলো দেখা যায়। একে আলেয়া বলে। কীভাবে এই আলো সৃষ্টি হয়? এটা সৃষ্টি হয় মিথেন গ্যাসের কারণে। বাতাসের সংস্পর্শে এলে এই গ্যাস জ্বলে উঠে। আর তখনই দেখা দেয় আলেয়া। অনেক মানুষ বিষয়টি জানে না বলে অন্ধকার জলাভূমিতে এ ধরনের আলো দেখে ভয় পেয়ে যায়। ভূত-প্রেত জাতীয় কিছু কল্পনা করে বসে।
বাংলা সাহিত্যে ‘আলেয়া’ বা আলেয়ার আলো’ শব্দ দুটি মিথ্যা মায়া, মিথ্যা প্রলোভন অর্থেও ব্যবহৃত হয়।
এধরনের আরো কিছু প্রাকৃতিক আলো রয়েছে। যেমন ‘আকাশ-আলেয়া।’ পৃথিবীর কোনো কোনো অঞ্চলে বিশেষত দুই মেরুর কাছাকাছি অঞ্চলে এ আলো দেখা যায়। তাই একে বলে ‘মেরুজ্যোতি।’ ইংরেজিতে বলে ‘অরোরা’ (Aurora)। তুমি যদি আলাস্কা, কানাডা বা উত্তর আমেরিকার কোনো অঞ্চলে যাও তাহলে রাতের বেলায় এই আলোর খেলা তোমারও চোখে পড়তে পারে। আকাশের পূর্ব থেকে পশ্চিমে কয়েক শ মাইল দূর পর্যন্ত কখনো সবুজ-সাদাটে, কখনো লালচে, কখনো বেগুনি রংয়ের এই আশ্চর্য আলোর খেলা চলতে থাকে।
এই ‘মেরুজ্যোতি’ সৃষ্টি হয় পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের উপরিভাগে। মহাশূন্যের আধানযুক্ত কণার সঙ্গে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের সংঘর্ষের ফলে এই আলোকচ্ছটা সৃষ্টি হয়।
এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞানীরা নতুন যে বিষয়টি আবিষ্কার করেছেন তা হল, পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ২৪ ঘন্টাই মেরুজ্যোতির খেলা চলছে। বিষয়টি বিজ্ঞানীরা প্রথম জেনেছেন এই মাত্র বারো বছর আগে, মেরুদেশীয় অঞ্চল নিরীক্ষায় ব্যবহৃত নাসার কৃত্রিম উপগ্রহ ‘পোলার’-এর মাধ্যমে।
মেরুজ্যোতির রহস্য মোটামুটি ভেদ করা গেলেও বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, মাঝে মাঝেই ‘মেরুজ্যোতির’ প্রাবল্য অত্যন্ত বেড়ে যায়, কোনো আগাম সংকেত ছাড়াই। মনে হয় যেন রং ও আলোর বিস্ফোরণ ঘটল। কেন এমন হয়- এটা এখনও বিজ্ঞানীরা জানতে পারেননি।
এমন অনেক প্রাকৃতিক আলো রয়েছে যার খুব সামান্যই মানুষ দেখতে পায়। আবার এমন অনেক আলো রয়েছে, যা আমরা কখনো দেখতে পাই না। আসলে আলোর বর্ণালির খুব সামান্য অংশই মানুষের চোখে ধরা পড়ে। সূত্র : প্রথম আলো ২৩/০৩/২০০৮ ইং
প্রশ্ন এই যে, এই দৃষ্টি ও জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা নিয়েও মানব-সন্তান যদি বলে, যা দেখি না তা বিশ্বাস করি না তবে একে নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কী বলা যায়!