তালেবানে ইলমে নবুওয়তের প্রতি কিছু প্রয়োজনীয় নির্দেশনা
আজ থেকে পাঁচ বছর আগে ১৪২৪ হিজরীতে একবার মারকাযুদ দাওয়াহ থেকে শিক্ষা সমাপনকারী সকল তালিবে ইলমকে মারকাযে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল,তাদের কর্মজীবনের ব্যস্ততা সম্পর্কে অবগতি লাভ করা এবং তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করা। এ সময় মারকাযের আসাতিযায়ে কেরামের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর কিছু প্রয়োজনীয় কথা লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল এবং তাদের সামনে পেশ করা হয়েছিল। বিষয়টি জানার পর কিছু বন্ধু আলকাউসারের শিক্ষার্থীদের পাতায় তা প্রকাশ করার অনুরোধ করেন যেন মাদরাসার নেসাববদ্ধ পড়াশোনা সমাপ্ত করে কর্মজীবনে পদার্পণকারী তালাবায়ে কেরামের সামনে কথাগুলো থাকে। এ পরামর্শ আমাদের কাছেও মুনাসিব বলে মনে হয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে, সকল তালিবে ইলমকে এই বিষয়গুলোর ওপর আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
আমীনুত তা’লীম
মারাকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
রুসূখ ফিল ইলম ও তাফাক্কুহ অর্জন করার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলি
১. ‘মাহিরে ফন’ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা।
২. প্রচুর অধ্যয়ন।
৩. গুরুত্বপূর্ণ কিতাবসমূহ একাধিকবার অধ্যয়ন করা। -সফাহাত মিন ছবরিল উলামা ১৯৭
৪. গভীরভাবে অনুধাবন করে অধ্যয়ন করা।
৫. বিভিন্ন ধরনের অধ্যয়ন ও গ্রন্থ সংগ্রহ।
৬. অধিক অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সাহায্য গ্রহণ ও তাঁদের সাথে মতবিনিময় করা। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা.-এর উক্তিটি নিশ্চয়ই মনে আছে- ‘বিলিসানিন সাউল ওয়া কালবিন আকূল’।
৭. ইলমের পিপাসা ও ইলমের জন্য বিলীন হওয়ার মানসিকতা।
৮. ‘আহলে ফন’-এর দীর্ঘ সাহচর্য এবং অনুগত সোহবত।
৯. স্বভাবগত রুচি ও যোগ্যতা।
১০. আখলাকের পরিচ্ছন্নতা ও অন্তরের স্বচ্ছতা।
দাওয়াত প্রসঙ্গ
১. দাওয়াতী তাসনীফ ছাড়াও এ ব্যাপারে দাওয়াত ও তাবলীগের সাথে সাহায্য-সহযোগিতা, মাঝে মাঝে তাদের সাথে অংশগ্রহণ, মজলিসে দাওয়াতুল হক-এর সাথে সাহায্য-সহযোগিতা এবং তাদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ, মসজিদসমূহে দরসে কুরআন, দরসে হাদীস-এর সিলসিলা [তবে যোগ্যতা অর্জিত হওয়ার পরে উসূল ও আদাবের প্রতি লক্ষ রেখে] ওয়াজ-নসীহত, তালীম-তরবিয়তের জন্য ঘরোয়া মাহফিল, নিজ নিজ মাদরাসায় একটি সাপ্তাহিক মজলিস-যাতে হাদীস, সীরাত, হায়াতুস সাহাবা এবং আকাবিরের মালফুযাত শোনানো যেতে পারে। &
ইমামত, খিতাবাত, আলোচনা ও মন-মানসিকতা গঠন, সতর্কতার সাথে [যদি যোগ্যতা থাকে তবে] প্রশ্নোত্তর পর্ব, এভাবে নিজস্ব ব্যস্ততার পাশাপাশি অন্যান্য দাওয়াতী কাজকর্মের জন্য চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে।
ছুটির দিনগুলোর একাংশ দাওয়াতী কার্যক্রমে অতিবাহিত করা উচিত। কেননা অন্য সময়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন ও অন্যান্য ব্যস্ততার কারণে এ দিকে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।
২. ‘উসূলুদ দাওয়াহ’ বিষয়ক নির্ভরযোগ্য কোনো আরবী কিতাব এবং হযরত থানভী রাহ.-এর রিসালাসমূহ বিশেষত মুফতী যায়েদ সংকলিত ‘দাওয়াত ও তাবলীগ কে উসূল ও আহকাম’ অবশ্যই মুতালাআ করা উচিত।
৩. একজন আলিমের জন্য দাওয়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ পন্থা হল, ‘দাওয়াত বিসসীরাতিল হাসানাহ’ বা দাওয়াত বিলহাল’ অর্থাৎ নিজের সীরাতকেই অনুসরণীয় হিসেবে গড়ে তোলা, যাতে কোনো কিছু বলা ছাড়াই শুধু আপনাকে দেখেই মানুষ সংশোধিত হতে পারে। এ বিষয়টি অনেক সাধারণ মানুষের মধ্যেও রয়েছে। আহলে ইলমকে তা অর্জন করার চেষ্টা করা উচিত, যাতে তারা ‘খায়রুল জুলাসা’-এর বাস্তব নমুনা হতে পারেন।
৪. দৈনিক ও মাসিক পত্রিকাসমূহের জন্য প্রবন্ধ বা রচনা তৈরি করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ দাওয়াতী কাজ। আল্লাহ তাআলা যদি কবুল করেন এবং তাওফীক দেন তবে আপনারাও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মারকাযের মাসিক পত্রিকাতেও লেখালেখির সুযোগ পাবেন ইনশাআল্লাহ। (আলহামদুলিল্লাহ, মাসিক আলকাউসারের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা এ সুযোগ করে দিয়েছেন।)
তাদরীস প্রসঙ্গ
এ ব্যাপারে কিছু পরামর্শ এই :
১. পাঠ্যসূচির মধ্যে কিছু উপযোগী ও উপকারী পরিবর্তন যদিও জরুরি, কিন্তু যেহেতু বিষয়টি আপনাদের আয়ত্ত্বাধীন নয়, তাই আপনারা এর পিছনে পড়বেন না। তাছাড়া কোনো বিষয়ে পরিবর্তন সাধনের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হল, পরিবর্তনটিকে ফলদায়ক বানানো। পূর্বের ত্রুটি দূর করা এবং নতুন কোনো ত্রুটি যাতে সৃষ্টি না হয় তা নিশ্চিত করা। পরিবর্তনের কথা বলা সহজ, কিন্তু সেই পরিবর্তনকে ফলপ্রসূ বানানো অত্যন্ত কঠিন। যার মধ্যে এ বিষয়ের যোগ্যতা বা উপযুক্ততা নেই তার জন্য দায়িত্বশীল হওয়ার পরও পুরনো পরীক্ষিত পন্থাই অনুসরণ করা উচিত।
২. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, শিক্ষাদান পদ্ধতি সহজ থেকে সহজতর করা এবং যুগচাহিদা অনুযায়ী এতে নতুনত্ব আনয়নের চেষ্টা করা। এজন্য উস্তাদকে শিক্ষার্থীদের চেয়ে অধিক পরিশ্রম করতে হয়। আরামপ্রিয় উস্তাদগণ এ জন্য প্রস্ত্তত হতে চান না। কোন্ বিষয়টি কীভাবে পড়াতে হবে এবং কোন্ কিতাব কীভাবে পাঠদান করতে হবে, ছাত্রগড়ার পন্থা কী, ব্যক্তি নির্মাণ কীভাবে হবে-এসব বিষয় এই সংক্ষিপ্ত তালিকার আলোচ্য বিষয় নয়। এজন্য তরবিয়াতুল মুদাররিসীন-এর কোনো কর্মশালায় অংশগ্রহণ করা উচিত, যার পরিচালনাকারীগণ আকলে সালীমের অধিকারী এবং অভিজ্ঞতা-সম্পন্ন হবেন এবং এ ধরনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের সোহবত ও তাদের সাথে চিঠিপত্রের মাধ্যমে সম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি। ‘আদাবুল মুআল্লিমীন’ ও ‘তরীকায়ে তাদরীস’ বিষয়ক আসলাফ ও আকাবিরের রচনাবলি, বিশেষত পরবর্তী ও বর্তমানের আকাবিরের রচনাবলি, যথা-হযরত থানভী রাহ., হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দা.বা., মুফতী সাঈদ আহমদ পালনপুরী দা.বা., মাওলানা নূরে আলম খলীল আমীনি দা. বা. প্রমুখের রচনাবলি অবশ্যই পাঠ করা উচিত। মাওলানা উসমানী দা.বা.-এর ছোট্ট পুস্তিকা ‘আপ দরসে নেযামী কী কিতাবেঁ কেয়সে পড়হায়েঁ’-এ বিষয়ে উত্তম রাহনুমায়ী প্রকাশ করতে পারে। তাঁর অপর রচনা ‘হামারা তা’লীমী নেযাম’-এর মধ্যেও পাঠদান-পদ্ধতি সম্পর্কে ভালো আলোচনা রয়েছে।
৩. তালিবে ইলমদের তাকরার, মুতালাআ ও তামরীনী কাজসমূহের পিছনে অক্লান্ত পরিশ্রম ছাড়া শুধু নিয়মের দায়িত্ব পালন দিয়ে ছাত্র গড়ার কাজ হয় না।
৪. যকী ও আ’লা-মুতাওয়াস্সেত ছাত্ররাই মনোযোগপ্রাপ্তির অধিক হকদার। তারা পরীক্ষায় নম্বর পেয়ে যায় শুধু এজন্য তাদের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকা ঠিক নয়; বরং যে শ্রেণীতে যে বিষয়ের যেই কিতাবটিতে একজন যকী বা আ’লা -মুতাওয়াসসেত ছাত্রের যে পরিমাণ যোগ্যতা অর্জিত হওয়া কাম্য এবং রচনা ও লিখনীর যে পরিমাণ পরিপক্কতা যেই শ্রেণীতে অর্জিত হওয়া উচিত, তা তার মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে কি না এর খোঁজ-খবর রাখা একজন দায়িত্বশীল মুদাররিসের অবশ্যকর্তব্য। এর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় তাম্বীব, আমলী নির্দেশনা এবং সেই অনুযায়ী কাজ উসূল করা এবং দুর্বলতার কারণ চিহ্নিত করে তার সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করাও একজন শফীক উস্তাদের দ্বীনী ও আখলাকী দায়িত্ব।
পিছনের যুগের সচেতন ও রুচিশীল মুদাররিসগণ পাঠদানকে সহজতর করার জন্য তালাবা ও পরিবেশের অনুকূল কিতাব রচনা করতেন। কখনও তা পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত হত এবং কখনও সহযোগী বইয়ের কাজ দিত। ছদরুশ শরীয়া, মুল্লা জামী, মাওলানা আবদুল হালীম, মাওলানা আবদুল হাই, মাওলানা আবদুল্লাহ প্রমুখ আলেমগণের ঘটনাবলি সবারই জানা রয়েছে। এই ধারাটি বর্তমান সময়েও চলমান রয়েছে। হযরত মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী রাহ., মুফতী সাঈদ আহমদ পালনপুরী দা.বা., মাওলানা আনওয়ার বদখশানী এবং হযরত মাওলানা সালাহুদ্দীন রাহ-এর শিক্ষাদান পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে দেখুন, এমন বহু নযীর আপনারা পেয়ে যাবেন।
৫. এক কিতাব একাধিকবার পড়ানোর সুযোগ হলে দ্বিতীয় বার পড়ানোর সময় এর মুতালাআ হ্রাস পেয়ে যায়। তৃতীয় বারে তো প্রায় ‘নাই’ হয়ে যায়। অথচ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে পড়ানোর জন্য শুধু কিতাব ‘হল’ করা ছাড়াও উপস্থাপন ও পাঠদান পদ্ধতির উন্নতির জন্যও মুতালাআ অব্যাহত রাখা উচিত। প্রথম বছর কিতাবের কোনো একটি শরাহ মুতালাআ করা হলে দ্বিতীয় বছর অপর আরেকটি শরাহ মুতালাআ করা উচিত। যে সব কঠিন স্থান গত বছর ‘হল’ হয়নি তা এ বছর ‘হল’ করা উচিত। সবকিছু হয়ে গেলে ফনের ঐ কিতাবটির স্থলে প্রয়োজন হলে বা সহযোগী বই হিসেবে, বা পরবর্তীতে পড়ানোর জন্য আরেকটি কিতাব রচনা করা উচিত। যার পক্ষে তা সম্ভব নয় তিনি সেই সময়টুকু তালিবে ইলমের পিছনে বা নিয়মিত মুতালাআয় ব্যয় করতে পারেন। অনর্থক বা কম ফায়েদার কাজে মূল্যবান সময় ব্যয় না করা উচিত।
৬. التعريف بالفن والكتاب والمصنف -এর আলোচনা সাধারণত প্রথাগত, ভাসাভাসা ও তাকলীদী হয়ে থাকে। তাখাসসুসের কতক ফাযেলও এ ব্যাপারে অল্পেতুষ্টি অবলম্বন করে থাকেন অথচ এ সব বিষয়ে পরিপূর্ণ তাহকীক ও তানকীহ করে একটি মুহাককাক, মুনাক্কাহ ও জামে রচনা প্রস্ত্তত করা যেতে পারে এবং তালিবে ইলমদেরকে বেশি থেকে বেশি বাস্তবতার সঙ্গে পরিচিত করা যেতে পারে।
৭. মুসান্নিফীনের ‘তাসামুহাত’ বর্ণনা করার সময় সর্বপ্রথম যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হল, ভুলটি আসলেই ভুল কি না তা যাচাই করা। এ ব্যাপারে তাড়াহুড়া করা ইলমী আমানতদারির পরিপন্থী হওয়া ছাড়াও কখনও কখনও তা লজ্জারও কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
যদি ভুলটি প্রকৃতপক্ষেই ভুল হয় এবং পূর্ববর্তীদের কেউ তা উল্লেখও করে থাকেন তবে নিতান্ত আদবের সাথে তারই উদ্ধৃতিতে তা উল্লেখ করা যেতে পারে। তবে এতে তর্ক-বিতর্কের সূচনা হওয়ার আশংকা থাকলে এবং বিষয়টি আহকামে শরীয়তের সাথে সংশ্লিষ্ট না হলে চুপ থাকারও সুযোগ রয়েছে। কোনো বিশেষ মজলিসে ইনসাফপছন্দ ও সমঝদার ব্যক্তিদের সামনে শুধু মতামত প্রকাশের ভঙ্গিতে তা উল্লেখ করা যেতে পারে।
كلموا الناس على قدر عقولهم এই মূলনীতিটি সর্বদা সামনে রাখা উচিত। হযরত হাকীমুল উম্মত রাহ. ভুল প্রমাণিত হলে সুস্পষ্টভাবে তা বলে দেওয়ার এবং অযথা কথার মারপ্যাচ ও তাবীল না করার পরামর্শ দিয়েছেন। কেননা, এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনর্থক তাবীল করার অভ্যাস গড়ে উঠে। তবে এ নির্দেশনা মোতাবেক আমল করার জন্য মুদাররিসের পর্যায়, তালিবে ইলমের ধারণক্ষমতা, পরিবেশের সহনীয়তা ও ভুলের ধরণ ইত্যাদি সব বিষয়েই দৃষ্টি রাখা কর্তব্য।
৮. উপরের শ্রেণীর তালিবে ইলম যদি যোগ্যতাসম্পন্ন হয় তবে মূল বিষয় ও সীমার মধ্যে থেকে ইলমী মুনাকাশার সুযোগ তো আছে, তবে যে ভুল ব্যাপকভাবে মুদাররিসগণের মধ্যে প্রচলিত তা সংশোধনের জন্য এবং এ ব্যাপারে দরসে আলোচনা করার জন্য অত্যন্ত উচুমানের ‘আকল’ এবং অতি উন্নত যোগ্যতার প্রয়োজন। বিশেষত নতুন মুদাররিসগণের জন্য এ ব্যাপারে অতি সর্তকতার সাথে পদক্ষেপ রাখা জরুরি।
এ ব্যাপারে কখনও যুফার বিন হুযাইল রাহ.-এর পথ অবলম্বন করা উচিত, যা তিনি বসরায় ফিকহে হানাফী প্রচারের ক্ষেত্রে অবলম্বন করেছিলেন। কখনও নিজে না বলে তালিবে ইলমদের বোঝার জন্য (উপরের শ্রেণীর ছাত্রদের সাথে বা নাউযুবিল্লাহ আসাতিযায়ে কেরামের পিছনে পড়ার জন্য নয়) তথ্যাবলি জোগাড় করে দেওয়া যেতে পারে। কখনও প্রসিদ্ধ মতটি শোনানোর পর সহীহ মতটি একটি সম্ভাবনা বা অজানা কোনো ব্যক্তির মতামত হিসেবে কিন্তু অত্যন্ত দলীলপূর্ণ ও মজবুত আঙ্গিকে উপস্থাপন করা যেতে পারে। এরপর বলে দেওয়া যেতে পারে যে, এ বিষয়ে একটি অপ্রসিদ্ধ তাহকীক এই। তোমাদের মুতালাআ আরো বিস্তৃত ও গভীর হলে তোমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারবে। এখন এ বিষয়টি নিয়ে কারো সাথে তর্ক-বিতর্কের প্রয়োজন নেই। কেননা, অপর মতটিও তো অনেক বড় বড় ব্যক্তিরাই গ্রহণ করেছেন।
মোটকথা, যে ভুলের আলোচনা যেভাবে করা সমীচীন সেভাবেই তা করা উচিত। লক্ষ রাখতে হবে যেন পর্যালোচনাটি হজম করানো যায় এবং হৈ চৈ থেকে বিরত থাকা যায়।
সকল ভুল একই কিতাবে, একই বছর একই ব্যক্তি ধরিয়ে দেবেন তা জরুরি নয়। কোনো কোনো ভুলের ব্যাপারে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চুপ থাকারও সুযোগ রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হল, পর্যালোচনার ক্ষেত্রে আদব ও বিনয়ের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যার ব্যাপারে পর্যালোচনা হচ্ছে বা যাদের এই তাহকীকটি জানা নেই তাদের প্রতি সামান্যতম তাচ্ছিল্যের ভাবও যেন প্রকাশিত না হয় এবং এই আদবপূর্ণ বিনয়ী আলোচনার পর খামুশ হয়ে যাওয়া উচিত। বিষয়টি মানানোর চেষ্টা করা উচিত নয়-অন্যের সাথে বিতর্কের পথ অবলম্বন করা তো দূরের কথা।
৯. কোনো কিতাবের পাঠদানকে নিজের মর্যাদার তুলনায় নিম্নমানের মনে করবেন না। কিতাবের তারাক্কীর ব্যাপারে কোনো ধরনের জবরদস্তি বা বারবার অনুযোগ করবেন না। যদি সুযোগ হয় তবে আদবের সাথে দরখাস্ত করা যেতে পারে। তবে এর কারণ মর্যাদা বৃদ্ধি বা লজ্জা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যেন না হয়; বরং মুতালাআ, তাহকীক ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলাই একমাত্র কারণ হয়। এ ব্যাপারে নফসের কঠোর নেগরানীর প্রয়োজন।
১০. ফনের মৌলিক ও মি’য়ারী কিতাবসমূহের পাঠদানের ব্যাপারে কাওছারী রাহ. ‘আততাহরীরুল ওয়াজীয’-এর মধ্যে দুটি পন্থা উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে যে আলোচনায় যে পন্থা সমীচীন মনে হয় সেখানে তা অবলম্বন করা যেতে পারে।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)