শিক্ষানীতি ও কুরআন মজীদের কিছু আয়াত
মুহাম্মাদ ফজলুল বারী
কুরআনে কারীম আল্লাহর কালাম, আসমানী ওহী, নূরুম মুবীন (উজ্জ্বল জ্যোতি) এবং হেদায়েতের কিতাবুম মুবীন (সুস্পষ্ট কিতাব)। কুরআনের প্রতি ঈমান, এর তিলাওয়াত এবং একে জীবনের কর্মনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে নাজাতের একমাত্র পথ এবং খালিক ও মালিকের সন'ষ্টি অর্জনের একমাত্র উপায়।
কুরাআনের সাথে ঈমানী সম্পর্কই বান্দার সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য। কিন' যাদের ঈমানের দৌলত নসীব হয়নি তারাও একে জ্ঞানের উৎসগ্রন' বলে বিশ্বাস করে এবং জ্ঞানের বিষয়ে এর পথ নির্দেশ গ্রহণ করে।
কিন' বাংলাদেশের মতো মুসলিম দেশের বুদ্ধিজীবীদের এই সৌভাগ্য হয় না যে, শিক্ষানীতি প্রণয়নের সময় তারা একবার কুরআন খুলে দেখবে। চাই সেটা কুরআনের প্রতি বিশ্বাস ও অনুরাগের ভিত্তিতে হোক, যা ঈমানের দাবি এবং দুনিয়া-আখেরাতের সফলতার একমাত্র চাবিকাঠি। অথবা জ্ঞান-বিজ্ঞানের একটি পথ নির্দেশক গ্রন' মনে করেই হোক। অন-ত পার্থিব কল্যাণ অর্জনের উদ্দেশ্যেও যদি তারা কুরআন খুলত তাহলে উপকৃত হত। কেননা, এটাও এক সময় তাদেরকে নিযে যেতে পারত পরম সৌভাগ্যের দিকে। সম্ভবত এই ভয়েই তারা এদিকে চোখ তুলেও তাকায় না!
আহা! যদি আমাদের বুদ্ধিজীবীরা বুঝত যে, জ্ঞানের ব্যাপারেও কুরআনের বাণী হচ্ছে পূর্ণাঙ্গতম ও যথার্থতম। আর এটাই তো কুরআন মজীদের শান।
আজ আমি শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যাপারে কুরআনের নির্দেশনা ও মূলনীতি নিয়ে বিস-ারিত আলোচনা করতে চাই না। আজ শুধু এ বিষয়ের কিছু আয়াত পেশ করার মাধ্যমে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চই। যদি তারা এ নিয়ে চিন-া করেন তাহলে অনুধাবন করবেন যে, এতে যেমন ধর্মীয় জ্ঞানের বুনিয়াদী নীতিমালা রয়েছে তেমনি রয়েছে জাগতিক জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কেও মৌলিক নীতিমালা। যদি তারা বোঝার চেষ্টা করেন।
১. পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে জমাট রক্ত দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। পড়, আর তোমার প্রতিপালক মহামহিমান্বিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানত না। নিশ্চয়ই মানুষ সীমালঙ্ঘন করে। এই কারণে যে, সে নিজেকে অমুখাপেক্ষী মনে করে।-সূরা আলাক : ১-৮
২. দয়াময় আল্লাহ, তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনিই তাকে ভাব প্রকাশ করতে শিখিয়েছেন।-সূরা রহমান : ১-৪
৩. ইহা একটি কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি। যেন আপনি বের করে আনেন সকল মানুষকে তাদের রবের আদেশে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। অর্থাৎ পরাক্রান-, প্রশংসাভাজন আল্লাহ তাআলার পথের দিকে।-সূরা ইবরাহীম : ১
৪. মুমিনদের প্রত্যেক দল হতে তাদের এক অংশ কেন বের হয় না, যাতে তারা তাফাক্কুহ ফিদ্দীন (দ্বীনের গভীর জ্ঞান) অর্জন করতে পারে এবং যাতে তাদের সমপ্রদায়কে সতর্ক করতে পারে যখন তারা তাদের নিকট ফিরে আসবে-যাতে তারা সতর্কতা অবলম্বন করে।-সূরা তাওবা : ১২২
৫. আপনি বলুন, যারা জ্ঞানী আর যারা অজ্ঞ তারা কি সমান হতে পারে? সেই লোকেরাই নসীহত গ্রহণ করে যারা বুদ্ধিমান।-সূরা যুমার : ৯
৬. তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদের মর্যাদা সমুন্নত করেছেন। তোমরা যা কর আল্লাহ সে ব্যাপারে পূর্ণ অবহিত আছেন।-সূরা মুজাদালাহ : ১১
৭. আর তোমাদেরকে সামান্যই জ্ঞান দেওয়া হয়েছে।-সূরা বনী ইসরাইল : ৮৫
৮. আমি যাকে ইচ্ছা মর্যাদাল উন্নীত করি। সকল জ্ঞানীর উপর আছেন সর্বজ্ঞানী।-সূরা ইউসুফ : ৭৬
৯. আর আপনি বলুন, হে আমার রব! আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দিন।-সূরা ত্বা-হা : ১১৪
১০. তারা শুধু পার্থিব জীবনের বাহ্যিক দিকটুকুই জানে। আর আখেরাত সম্পর্কে তারা বে-খবর।-সূরা রূম : ৭
১১. আর যে বিষয়ে আপনার যথাযথ জ্ঞান নেই তার পিছে পড়বেন না। কান, চোখ, অন-র এগুলোর প্রত্যেকটি সম্পর্কে কৈফিয়ত চাওয়া হবে।-সূরা বনী ইসরাইল : ৩৬
১২. আমি লুকমানকে জ্ঞান দান করেছি এবং বলেছি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। যে কৃতজ্ঞ হল সে তো নিজের কল্যাণের জন্যই তা করল। আর যে অকৃতজ্ঞ হয় আল্লাহ (তার থেকে) মুখাপেক্ষীহীন, প্রশংসার্হ।-সূরা লুকমান : ১২
১৩. আমি যাদের কিতাব দান করেছি তারা আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয় তাতে আনন্দ পায়। কিন' তাদের দলে কিছু এমন লোক আছে যারা এর কিছু অংশকে অস্বীকার করে। আপনি বলুন, আমি আল্লাহর ইবাদত করতে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করার ব্যাপারে আদিষ্ট হয়েছি। আমি তাঁর দিকেই ডাকি এবং তার কাছেই আমার প্রত্যাবর্তন। অনুরূপভাবে আমি কুরআন নাযিল করেছি বিধানরূপে আরবী ভাষায়। আপনার নিকট ইলম আসার পরও যদি আপনি তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করেন তাহলে আল্লাহর মোকাবেলায় আপনার কোনো অভিভাবক ও রক্ষাকারী থাকবে না।-সূরা রা’দ : ৩৬-৩৭
১৪. তারা ফিরিশতাদ্বয় থেকে এমন বিষয় শিখত যা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটায়। আর আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া তারা কারো কোনো ক্ষতি করতে পারত না। আর তারা তাদের থেকে এমন বিষয় শিখত, যা তাদের ক্ষতি সাধন করে, উপকার করে না।-সূরা বাকারা : ১০২
১৫. আমি দাউদ ও সুলায়মান উভয়কেই হেকমত ও জ্ঞান দান করেছিলাম। আর পর্বতসমূহকে দাউদের অনুগত করেছিলাম। সেগুলো এবং পক্ষীকুল (তার সাথে) তাসবীহ পাঠ করত। আমি ছিলাম এ সব কিছুর কর্তা। আর আমি তাকে তোমাদের জন্য বর্ম বানানো শিখিয়েছিলাম। যাতে যুদ্ধে তা তোমাদেরকে একে অপরের আঘাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এরপরও কি তোমরা কৃতজ্ঞ হবে না?
আর আমি প্রবল বায়ূকে সুলায়মানের আদেশের অনুগত করেছিলাম। তার আদেশে তা প্রবাহিত হত ঐ দেশের দিকে যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি। আর প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কে আমি পূর্ণ অবগত
এবং কোনো কোনো জিন এমন ছিল যারা সুলায়মানের অন্যান্য কাজও করত। আমি তাদেরকে স্বীয় নিয়ন্ত্রণে রাখতাম।-সূরা আম্বিয়া : ৭৯-৮২
১৬. তারা আপনাকে যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, এখনই আমি তার কিছু বৃত্তান- তোমাদেরকে পাঠ করে শোনাব। আমি তাকে জমিনে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম এবং তাকে সব ধরনের উপায়-উপকরণ দান করেছিলাম।-সূরা কাহ্ফ : ৮৩-৮৪
১৭. ইউসুফ আ. বললেন, আমাকে দেশের রাজকোষের দায়িত্বে নিযুক্ত করুন। আমি বিশ্বস- রক্ষক ও বিজ্ঞ।-সূরা ইউসুফ : ৫৫
১৮. কারূন বলল, এই সকল (ধন সম্পদ) তো আমি নিজের বুদ্ধিমত্তা বলেই প্রাপ্ত হয়েছি।-সূরা কাসাস : ৭৮
১৯. আর তাদের নবী তাদেরকে বললেন, আল্লাহ তাআলা তালূতকে তোমাদের বাদশা নিযুক্ত করেছেন। তারা বলল, আমাদের উপর রাজত্ব করার তার কী অধিকার আছে? রাজত্বের জন্য তার চেয়ে আমরাই বেশি যোগ্য। তাকে তো আর্থিক সচ্ছলতা দেওয়া হয়নি। নবী বললেন, তোমাদের জন্য আল্লাহ তাকেই নিযুক্ত করেছেন এবং তিনি তাকে জ্ঞানে ও দেহে সমৃদ্ধ করেছেন। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা স্বীয় রাজত্ব দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, প্রজ্ঞাময়।-সূরা বাকারা : ২৪৭
২০. যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ থাকবে, অবশ্য তার জন্য হবে সংকীর্ণতার জীবন। আর কিয়ামতের দিন আমি তাকে অন্ধ অবস'ায় উঠাব।-সূরা ত্বা-হা : ১১৪
২১. আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, নিশ্চয়ই তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। ফিরিশতাগণ ও জ্ঞানীগণও (এ সাক্ষ্য দেন)। আল্লাহ ন্যায়-নীতিতে প্রতিষ্ঠিত। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি পরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী।-সূরা আল ইমরান : ১৮