যিলকদ ১৪২৯   ||   নভেম্বর ২০০৮

একটি ভুল ধারণা : মিনার জামারাগুলো কি স্মারক বা ভাস্কর্য?

আমার জানামতে উপরোক্ত ভ্রান্তি সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত নয়। তবে এক সাপ্তাহিক পত্রিকায় একথাটা লেখা হয়েছে। বলাবাহুল্য, এটা পড়ে অনেক মানুষ বিভ্রান্ত হতে পারেন। ওই সাময়িকীতে বলা হয়েছে যে, মিনার জামারাগুলো হচ্ছে ভাস্কর্য। তদ্রূপ আরাফার ময়দানে হযরত আদম আ. ও হযরত হাওয়া আ.-এর সাক্ষাতস্থলে যে স্তম্ভ রয়েছে তাতে ছবিও রয়েছে। এজন্য এটাও ভাস্কর্যের মধ্যে গণ্য। যারা এই অসত্য কথাগুলো লিখেছেন তাদের উদ্দেশ্য অস্পষ্ট নয়। তারা এভাবে তাদের ভাস্কর্যপ্রীতির পক্ষে সমর্থন পেশ করতে চান এবং ইসলামের নিদর্শনগুলো সম্পর্কে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মুসলমানদেরকে এই ধারণা দিতে চান যে, বিষয়টা ইসলাম ধর্মেও রয়েছে ! কিন্তু আল্লাহ তাআলা দ্বীনের  হেফাযতের দায়িত্ব নিজেই গ্রহণ করেছেন। এজন্য এই অপচেষ্টাগুলো কখনো সফল হতে পারবে না।

মিনার জামারাগুলো ভাস্কর্যও নয়, কোনো স্মারকস্তম্ভও নয়। এগুলো একটা বিশেষ স্থান নির্দেশ করার চিহ্নমাত্র। যেই তিন স্থানে হযরত ইবরাহীম আ. শয়তানকে নূড়ি নিক্ষেপ করেছিলেন ওই স্থানগুলোকে চিহ্নিত করার জন্য তিনটি স্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে। স্থানগুলোতে কোনো প্রাণীর ছবি তো দূরের কথা কোনো জড়বস্ত্তরও ছবি নেই এবং এগুলো কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা ঘটনার স্মারক হিসেবেও স্থাপিত হয়নি। তাহলে এগুলোকে ভাস্কর্য বা স্মারক স্তম্ভ কীভাবে বলা যায়?

যদি এগুলো ভাস্কর্যই হত তবে কার স্মরণে? শয়তানের স্মরণে কি? অথচ যে শয়তানের অপদস্থতার জন্যই ওই স্থানগুলোতে কঙ্কর নিক্ষেপ করা হয়, তাহলে একে ভাস্কর্য বলা কি ভাস্কর্য শব্দেরই অপপ্রয়োগ নয়?

আরাফার ময়দানে আদম-হাওয়ার (আলাইহিমাস সালাম) সাক্ষাৎস্থল হিসেবে কোনো স্থান নির্ধারিত নেই এবং এমন কোনো বিষয় প্রমাণিতও নয়। আরাফাতে জাবালে রহমতের উপর সাদা রংয়ের ছোট একটা স্তম্ভ রয়েছে, যা প্রতিবছর  হাজার হাজার হাজী সাহেবের দৃষ্টিগোচর হয়। এতে কোনো ধরনের ছবি নেই। মিথ্যাই যদি বলতে হয় তাহলে এমন মিথ্যা কেন যে, শোনামাত্রই লোকেরা বলবে, সুবহানাকা হাযা বুহতানুন আযীম। এ যে এক নির্জলা মিথ্যা।

ঐ স্তম্ভ জাবালে রহমতকে চিহ্নিত করার জন্য স্থাপিত। আরাফাতে সবদিকেই পাহাড়। এর মধ্যে কোন পাহাড়টা জাবালে রহমত, যার পাদদেশে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্বের খুৎবা দিয়েছিলেন, তা যেন লোকেরা সহজেই চিনতে পারেন এজন্য এই চিহ্ন সেখানে স্থাপন করা হয়েছে। একে ভাস্কর্য বলে দাবি করা মিথ্যাচার ছাড়া আর কী হতে পারে?

 

 

advertisement