দ্বীনের বিষয়ে প্রতিবাদী হোন
আমাদের পূর্বসূরীরা আমাদেরকে বয়কট করা শেখাননি, কিন্তু কখনও কখনও এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যখন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না যে, হয় আমাদের কথার মূল্য দেওয়া হবে, অন্যথায় আমরা ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করব না। কোথাও বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠান হচ্ছে, সকল আয়োজন জমজমাট, কিন্তু পর্দা-পুশিদার কোনো ব্যবস্থা নেই। আপনি ভাবছেন যে, ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না করলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠবে। তাদের মন খারাপ হবে। কিন্তু একথা কি ভেবেছেন যে, আপনি তাদের অভিযোগের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করলেও তারা আপনার অভিযোগের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করেনি। আপনি একজন পর্দানশীন নারী। আপনাকে দাওয়াত করার ব্যাপারে আগ্রহী হলে কেন তারা সেখানে পর্দার ব্যবস্থা করল না? তারা যখন আপনার বিশ্বাস ও আদর্শ সম্পর্কে সচেতন হতে পারেননি তখন আপনার জন্যও তাদের মনরক্ষার ব্যাপারে সচেতন হওয়া জরুরি নয়। পরিষ্কার বলে দিন, এ ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। যে পর্যন্ত কিছু নারী শক্ত হয়ে এই সংকল্প না করবেন- নিশ্চিত থাকুন-ততদিন পর্যন্ত অবস্থার পরিবর্তন হবে না।
দুনিয়াদারদের ব্যাপারে আর কত দিন ছাড় দেওয়ার মানসিকতা পোষণ করবেন?
আমাদের একজন বুযুর্গ হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ইদরীস ছাহেব কান্দলভী রাহ.। আল্লাহ তাআলা তাঁর মর্তবা বুলন্দ করুন। আমীন। সে সময় দ্বীনদার, আলেম-ওলামার ঘরে মেঝেতে বসার রেওয়াজ ছিল। তাঁর ঘরেও এই ব্যবস্থা ছিল। ঘরের মেয়েরা চিন্তা করলেন যে, যুগ বদলে গেছে, মেঝেতে বসার রেওয়াজ এখন আর নেই। অতএব সোফার ব্যবস্থা করা দরকার। তাদের প্রস্তাব শুনে হযরত মাওলানা বললেন, ‘সোফার প্রতি আমার কোনো আকর্ষণ নেই, আর তাতে আমি আরামও বোধ করি না। মেঝেতে বসে কাজ করতে আমার ভালো লাগে।’ মেয়েরা বললেন, ‘আপনার নিচে বসে কাজ করতে ভালো লাগে, কিন্তু অনেক দুনিয়াদার মানুষ আপনার সঙ্গে সাক্ষাত করতে আসে তাদেরও কি কিছুটা খাতির করা উচিত নয়?’ উত্তরে মাওলানা যে আশ্চর্য কথা বলেছেন, তা এই যে, ‘তোমরা আমাকে দুনিয়াদারদের খাতির করার পরামর্শ দিচ্ছ, কিন্তু আমাকে বল দেখি, দুনিয়াদাররা আমার খাতিরে তাদের রীতি-নীতিতে কতটুকু পরিবর্তন এনেছে?’
দুনিয়াদারদের কিছু মনে করার পরোয়া করবেন না
যাদের অন্তরে আপনাদের পর্দার মর্যাদা নেই, তারা যদি আপনাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয় তবে আপনারা কেন তাদের মনরক্ষায় ব্যস্ত হবেন? এ ধরনের অনুষ্ঠানে পর্দার ব্যবস্থা করা হলে কারো কোনো ক্ষতি হয় না। কোনো বেপর্দা নারী যদি মেয়েদের আলাদা ব্যবস্থায় পর্দার মধ্যে বসেন তাহলে তার কোনো অসুবিধা হয় না, অন্যদিকে কোনো পর্দানশীন নারী বেপর্দা পরিবেশের সম্মুখীন হলে তার জন্য সেটা কেয়ামতসম বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
চিন্তার ধারা পরিবর্তন করুন। এতদিন যদি এভাবে ভাবা হয়ে থাকে যে, তারা কী মনে করবে, তাদের মনে কষ্ট হতে পারে, তাহলে এবার আপনারাও কিছু মনে করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনারাও বলুন, এ ধরনের দাওয়াতে অংশগ্রহণ করা আমাদের জন্য কষ্টকর। আর পর্দার ব্যবস্থা না করে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে, এতে আমরা বিরক্ত হয়েছি। মনে রাখবেন, যতদিন পর্যন্ত আপনারা এটা করবেন না ততদিন পর্যন্ত এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না।
এই পুরুষদেরকে বের করে দেওয়া হোক
যেসব অনুষ্ঠানে মেয়েদের আলাদা ব্যবস্থা থাকে সেখানেও দেখা যায় যে, মেয়েদের অংশে ছেলেদের ব্যাপক আনাগোনা। ছেলেরা আসছে, হাসি-তামাশা করছে, ছবি তুলছে। অথচ বাহ্যত রয়েছে নারী-পুরুষের আলাদা ব্যবস্থা। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কিছু নারী দাঁড়িয়ে কেন প্রতিবাদ করেন না যে, পুরুষরা এখানে কেন আসছেন? এখানে পর্দানশীন মেয়েরা রয়েছেন। এই পুরুষদের এখান থেকে বের করে দেওয়া হোক।
দ্বীনের বিষয়ে হস্তক্ষেপ, এরপরও নিশ্চুপ থাকা!
বিয়ে-শাদীতে অনেক ছোট ছোট বিষয় নিয়েও ঝগড়া-বিবাদ হয়ে থাকে। অমুক বিষয়ে আমাদের প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয়নি, ওই আচরণটা সুন্দর হয়নি ইত্যাদি কত অভিযোগ! আপনারা দ্বীনদার পর্দানশীন নারী, আদর-আপ্যায়নে ত্রুটি হয়েছে কিংবা অন্য কোনোভাবে কষ্ট হয়েছে আপনারা সবর করুন, কিন্তু যখন দ্বীনদারীর বিষয়ে ত্রুটি-অবহেলা করা হয় তখন নিশ্চুপ থাকা আপনাদের জন্য জায়েয নয়। ভরা অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে বলে দিন, ‘এই বিষয়গুলো বরদাশত করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’ যতক্ষণ পর্যন্ত কিছু নারী-পুরুষ এ বিষয়ে সংকল্পবদ্ধ না হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত পর্দা ও শালীনতা রক্ষার ব্যবস্থা হবে না এবং অবস্থার পরিবর্তন হবে না।
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সংকল্পবদ্ধ হোন, অন্যথায় আল্লাহর আযাবের জন্য প্রস্ত্তত হয়ে যান। কারো মধ্যে যদি সেই আযাব সহ্য করার মতো সাহস থাকে তবে সে জন্য প্রস্ত্তত থাকুন, অন্যথায় উপরোক্ত পন্থা অনুসরণ করুন।
পরিবেশ তৈরি করে নিন
আমার ওয়ালিদ হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটা কথা বলতেন। কথাটা মনে রাখার মতো। তিনি বলতেন, তোমরা বলে থাক, পরিবেশ খারাপ হয়ে গেছে, সমাজের অবস্থা পরিবর্তন হয়ে গেছে। আরে, নিজেদের পরিবেশ নিজেরা প্রস্ত্তত কর। তোমাদের সম্পর্ক ও মেলামেশা তোমাদের সমমনা লোকদের সঙ্গেই হওয়া চাই। যারা দ্বীনের বিষয়ে তোমাদের সমমনা নয় তাদের রাস্তা ভিন্ন, তোমাদের রাস্তা ভিন্ন। অতএব তোমরা নিজেদের একটা বৃত্ত গড়ে তোল, যারা দ্বীনদারীর ক্ষেত্রে একে অপরের সহযোগী হবে। আর যারা এসব বিষয়ে তোমাদের জন্য প্রতিবন্ধক, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক কমিয়ে ফেল।’ #