যিলহজ্ব ১৪২৯   ||   ডিসেম্বর ২০০৮

মুমিনের জন্য সব অবস্থাই কল্যাণকর

মুহাম্মাদ এনামুল হাসান

ছোট্ট বন্ধুরা! কেমন আছ তোমরা? আশা করি ভালোই আছ এবং মন দিয়ে লেখাপড়া করছ।  কিন্তু ভালো থাকতে চাইলেই সব সময় ভালো থাকা যায় না। নানা দুঃখ-কষ্ট, অসুখ-বিসুখ আমাদেরকে আক্রমণ করে। এই যে, এখন মৌসুম পরিবর্তন হচ্ছে। গরম শেষ হয়ে শীত আসছে। এই সময় অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। কারো অসুখ অল্পতেই সারে, কারো সারে দেরিতে। অসুস্থতারই একটি ঘটনা আজ তোমাদের শোনাব। ঘটনাটা শিক্ষণীয়। বড় একজন বুযুর্গ আলিম ও হাদীস বিশারদ ছিলেন ইবনুল আছীর রাহ.।

ইলমে হাদীসের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাই এ নামটির সাথে কমবেশি পরিচিত। আসলে এ নামে ছিলেন তিন সহোদর। প্রত্যেকেই ইলমের জগতে এক একটি নক্ষত্র। হাদীস, ইতিহাস ও আরবী সাহিত্যের বহু অমূল্য গ্রন্থ তারা রচনা করে গিয়েছেন। আজ তোমাদেরকে বড় ভাইয়ের কথাই শোনাব। যিনি মাজদুদ্দীন ইবনুল আছীর নামে পরিচিত। ইলমে হাদীসের জগতে তার রয়েছে অসামান্য অবদান। তিনি যেমন একজন বড় আলিম ছিলেন, তেমনি তার লেখা ও রচনার নিপূণতা ছিল চমৎকার। তৎকালীন ইরাকের মাওসিল (মসূল) শহরের শাসক তাকে দপ্তরের প্রধান নিযুক্ত করেন।

সব সরকারী চিঠিপত্র ও ফরমান তিনি লিখতেন। তার যোগ্যতার কারণে শহরের শাসক তার উপর যারাপরনাই সন্তুষ্ট ছিল। দিন কেটে যেতে লাগল। হঠাৎ তিনি কঠিন এক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লেন। হাত-পা অচল হয়ে গেল। হাটা-চলা করতে পারেন না, কিছু লিখতেও পারেন না। বিছানায় শুয়ে থাকা ছাড়া তার আর কোনো উপায় ছিল না। এদিকে বাড়ির লোকজন, শাসক, সরকারী কর্মকর্তাগণ সকলেই পেরেশান হয়ে গেল।  দেশের বড় বড় হাকীম ও কবিরাজদের নিয়ে আসা হল। তারা বহু চেষ্টা করেও তার অসুস্থতার কোনো সুরাহা করতে পারল না।

সবাই তার এ অবস্থার জন্য শুধু আফসোস করতে লাগল। বন্ধুরা! তোমাদেরও নিশ্চয়ই খুব খারাপ লাগছে, তাই না! এত বড় একজন মানুষ শয্যাশায়ী হয়ে গেলেন অথচ কেউই কিছু করতে পারছে না। কিন্তু মজার কথা হল, যার জন্য সবাই এত      চিন্তিত, তিনি একদম প্রশান্তত। তিনি আল্লাহর ফয়সালায় খুশি। আল্লাহ তাআলাও চেয়েছেন তার দ্বারা দ্বীনের কিছু খেদমত হোক। এ অবস্থায়ই তিনি ইলমী সাধনা শুরু করলেন। অনেক মহামূল্যবান গ্রন্থ রচনা করলেন। নিজে লিখতে পারতেন না, অন্যকে নির্দেশনা দিয়ে লেখাতেন। এভাবেই জামেউল উসূল, নিহায়াসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কিতাব রচনা করেছেন।

বন্ধুরা। তোমরা বল তো, তিনি অসুস্থ অবস্থায় যে কাজ করতে পেরেছেন, সুস্থ অবস্থায় কি তা করতে পারতেন? নিশ্চয়ই পারতেন না। কারণ, সুস্থ হলে আবার শাসকের দপ্তরে যেতে হত। তার কাজেই মশগুল থাকতে হতো। বিভিন্ন শ্রেণীর লোকজন নানা প্রয়োজনে তার কাছে ভিড় জমাত। অথচ তিনি অসুস্থ হওয়ায় শাসকের কাজও করতে হত না। লোকজনও তার কাছে আসত না। আর এই অবকাশটিকে তিনি মহৎ ইলমী কাজে ব্যয় করেন। তাই কখনও রোগাক্রান্ত হলে হতোদ্যম হওয়ার কিছু নেই। বরং সে অবস্থায়ই আল্লাহর কাছে সুস্থতার প্রার্থনার সঙ্গে সঙ্গে দোয়া করতে হবে আল্লাহ তাআলা যেন আমাদেরকে দ্বীনের জন্য কবুল করেন। আমাদের চাওয়া-পাওয়া একমাত্র আল্লাহর কাছেই। আমরা যে অবস্থায় থাকি না কেন আল্লাহ যদি আমাদের কবুল করেন, সেটাই আমাদের আসল সফলতা, জীবনের সার্থকতা।

তবে বন্ধুরা! আজকের ঘটনা পড়ে শয়তানের ধোকায় পড়ো না যেন। যারা সুস্থ আছো তারা অসুস্থ হবার ইচ্ছা করে বসো না। সুস্থতা আল্লাহ তাআলার বিশেষ নেয়ামত। অসুস্থতা কামনা করলে তিনি অসন্তুষ্ট হবেন। অতএব, এমন ভুল কখনও করবে না।

তথ্যসূত্র : ওফায়াতুল আইয়ান ৪/৭-৮

 

 

advertisement