মেহরে নবুওয়ত
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
নবুওয়তের ১০ম বর্ষ
হিজায পর্বতমালার ওপর অবস্থিত একটি শ্যামল জনপদ তায়েফ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে গমন করলেন। কিন্তু তায়েফবাসী নবীজীর ওপর চরম নির্যাতন করল। তিনি যখন তাদের উপদেশ দিতেন তখন তারা তাঁর প্রতি পাথর নিক্ষেপ করত। এতে নবীজীর দেহ মোবারক রক্তে রঞ্জিত হয়ে যেত। রক্ত প্রবাহিত হয়ে জুতোয় এসে জমে যেত। তখন জুতা থেকে পা বের করা কষ্টকর হয়ে যেত। একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত আঘাত পেলেন যে, বেহুশ হয়ে গেলেন। যায়েদ ইবনে হারিছা রা. সঙ্গে ছিলেন। তিনি নবীজীকে তুলে শহরের বাইরে নিয়ে আসলেন। চেহারা মোবারকে পানির ছিটা দেওয়ার পর হুশ আসল এবং নবীজী সেখান থেকে ফিরে আসলেন। সে সময়ও নবীজী বলেছেন, ‘এরা যদিও ইসলাম গ্রহণ করল না কিন্তু এদের বংশধররা অবশ্যই ইসলাম গ্রহণ করবে এবং এক আল্লাহকে স্বীকার করবে।’
আট বছর পর গোটা তায়েফ মুসলমান হয়ে গিয়েছিল।
নবুওয়তের ১১শ বর্ষ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের চলাফেরার পথে যেয়ে তাদের সঙ্গে মিলিত হতেন এবং পথচারীদেরকে ইসলাম সম্পর্কে বোঝাতেন। একদিন এক স্থান থেকে কিছু মানুষের কথাবার্তার আওয়াজ শুনে নবীজী সেখানে গেলেন। মদীনার ছয়জন মুসাফির সেখানে অবস্থান করছিলেন। নবীজী তাদেরকে বোঝালেন এবং ইসলামের দাওয়াত দিলেন। তারা সবাই মুসলমান হয়ে গেল।
নবুওয়তের ১২ শ বর্ষ
(১) ২৭ রজব মিরাজের ঘটনা সংঘটিত হল। তখন নবীজীর বয়স ৫১ বছর পাঁচ মাস। এতদিন মুসলিমগণ শুধু দুই নামায : ফজর ও আছর পড়তেন, এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয হল।
(২) হজ্বের মওসুমে মদীনা শরীফ থেকে ১৮ জন মানুষ মক্কায় এলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করলেন। ফিরে যাওয়ার সময় নবীজী তাঁদের সঙ্গে হযরত মুসআব ইবনে উমায়ের রা.কে মদীনায় পাঠালেন। যেন মদীনাবাসীকে তিনি ইসলামের শিক্ষা প্রদান করতে পারেন। ওই পবিত্র ভূমিতে ইসলাম খুব দ্রুত প্রচারিত হল। হযরত মুসআব ইবনে উমায়ের রা.-এর দাওয়াতের মাধ্যমে বনু নাজ্জার ও বনু আশহাল-এর গোত্রসমূহ এবং অন্যান্য গোত্রের অনেক মানুষ এক বছরের মধ্যেই মুসলমান হয়ে গেল।
নবুওয়তের ১৩ শ বর্ষ
(১) মদীনা থেকে ২জন নারী ও ৭৩ জন পুরুষ মক্কায় এলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে বায়আত হলেন। তারা নবীজীকে বললেন, আপনি মদীনায় চলুন। নবীজী তাদের আবেদন গ্রহণ করলেন এবং বললেন যে, মদীনাতেই তিনি বসবাস করবেন। তারাও ওয়াদা করলেন যে, ইসলামের ওপর দৃঢ়পদ থাকবেন এবং নবীজীর সাহায্য ও আনুগত্য করবেন।
(২) মক্কার দুশমনরা যখন জানতে পারল যে, মক্কার বাইরেও ইসলাম ছড়িয়ে পড়ছে তখন তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করার পরিকল্পনা করল (নাউযুবিল্লাহ)। এক রাতে তারা নবীজীর গৃহ ঘেরাও করে, কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বেষ্টনীর মধ্য থেকে বের হয়ে যান।
হিজরত : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর থেকে বের হয়ে তিন দিন তিন রাত ছাওর গুহায় আত্মগোপন করে থাকেন। আবু বকর সিদ্দীক রা. সঙ্গে ছিলেন। পয়লা রবীউল আওয়াল সোমবার (১ হিজরী) গুহা থেকে বের হলেন। সফরের জন্য পূর্ব থেকেই দুটি উট প্রস্ত্তত ছিল। একটিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. ছওয়ার হলেন। অন্যটিতে আমের ইবনে ফুহায়রা (আবু বকর সিদ্দীক রা.-এর গোলাম) ও অন্য একজন পথ প্রদর্শক বেদুঈন।
চারজনের এই ক্ষুদ্র কাফেলা মদীনার পানে যাত্রা করল।
যখন দুশমনেরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মক্কাত্যাগ সম্পর্কে জানতে পারল তখন তারা অস্থির পয়ে পড়ল এবং যে তাঁকে ধরে আনতে পারবে কিংবা তাঁর শির কেটে আনতে পারবে তার জন্য বড় বড় পুরষ্কার ঘোষণা করল। পুরষ্কারের লোভে অনেকেই তাঁর খোঁজে বের হয়েছিল কিন্তু শুধু দুজন নবীজীর নিকট পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হল। একজন সুরাকা ইবনে মালেক। সে নিজের ভুল বুঝতে পেরে নবীজীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল এবং মক্কায় ফিরে গেল। অন্যজন বুরায়দা আসলামী। তার সঙ্গে সত্তরজনের একটি বাহিনী ছিল। সেও নবীজীকে দেখার পর এবং তাঁর কথা শোনার পর মুসলমান হয়ে গেল এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সামনে অগ্রসর হল।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)