সু খ ও দু ঃ খ
পৃথিবীতে যেমন ভালো আছে তেমনি মন্দও আছে, সুখ যেমন আছে তেমনি আছে দুঃখ। আনন্দের পাশাপাশি আছে বেদনাও। পৃথিবীর জীবনে মানুষ যেমন অন্যের ভক্তি-ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা ও মূল্যায়ন লাভ করে তেমনি শত্রুতা ও অবিশ্বাস এবং অকৃতজ্ঞতা ও অবমূল্যায়নেরও শিকার তাকে হতে হয়। এটাই বাস্তবতা। আর বাস্তবতাকে স্বীকার করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। জ্ঞানীরা বলেন, বাইরের পৃথিবীর সুখ ও দুঃখ প্রকৃতপক্ষে মানুষের অর্ন্তজগতেরই প্রতিচ্ছবি, অন্তর যদি দুঃখময় হয় তাহলে পৃথিবীর সবকিছুতেই আমরা দেখি দুঃখের ছায়া। আর অন্তরে যদি আনন্দ থাকে তাহলে চারপাশের সবকিছুতেই আমরা আনন্দের হাসি দেখতে পাই। এমনকি কষ্টের মধ্যেও আনন্দ লাভের উপকরণের কোনো অভাব হয় না।
রাফেয়ী রাহ. লিখেছেন, ‘তুমি যদি প্রশান্ত হৃদয়ে এই জগতকে অভ্যর্থনা জানাতে পার তাহলে দেখবে এখানে আনন্দের কী বিপুল সম্ভার! আর কষ্টের আয়োজনগুলো কত তুচ্ছ ও নগণ্য। তুমি তখন এ সত্য উপলব্ধি করবে যে, এই বিস্তৃত জগৎসংসার যখন সংকীর্ণ ও জ্বালাময় বলে মনে হয় সে সময় আসলে জগৎ নয়, তোমার হৃদয়টিই হয়ে গিয়েছিল সংকীর্ণ।’
অন্য জায়গায় লেখেন, ‘হৃদয়ের সৌন্দর্যে সকল বস্ত্ত সুন্দর হয়ে ওঠে। কেননা, তাতে তখন প্রতিফলিত হয় হৃদয়ের আলো। ছোট কুড়ে হয়ে ওঠে বালাখানা। কিন্তু তা তো ওই কুড়ের কীর্তি নয়, হৃদয়ের প্রশস্ততা। তখন দিনের আলো যেন পিপাসার্তের সমুখে সুমিষ্ট পানির পেয়ালা। আর অাঁধার রাতের তারকারাজি যেন আকাশপরীর বসনে হিরে-জওহরের অমূল্য জড়োয়া। আর ভোরের আলো, মৃদুমন্দ বায়ু যেন বাতাসে ভেসে বেড়ানো অদৃশ্য বাগান।
আসলে এসবই হল তোমার হৃদয়ের আনন্দ। আল্লাহর শপথ! তিনি এ জগতকে আদেশ করেছেন, যেন সে হাসিমুখে থাকা কোনো হৃদয়কে নিরাশ না করে।’
মুমিনের জন্য অসংখ্য কষ্টের মাঝেও রয়েছে শান্তির উৎস। সে উৎস ‘রিযা বিল কাযা’। তাকদীরে বিশ্বাস। যে চিত্ত আল্লাহর ফয়সালায় সমর্পিত তার জন্য শান্তি ও সান্ত্বনার কোনো অভাব নেই। কেননা, তার বিশ্বাস এই যে, সকল অবস্থাই আমার জন্য কল্যাণকর। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মুসলিমের অবস্থা কত ভালো! যদি সে স্বচ্ছলতা লাভ করে তাহলে আল্লাহর শোকরগোযারী করে, তখন এটা তার জন্য কল্যাণকর হয় আর যদি সে অস্বচ্ছলতার মুখোমুখি হয় তাহলে সবর করে তখন সেটাও তার জন্য কল্যাণকর হয়ে যায়। #