উ ম্মা হ : নিঃসঙ্গ গাজার পাশে ছিল কেবল ব্যথিত অশ্রুর দানা
গত ২৭ ডিসেম্বর-’০৮ থেকে ইসরাইল লাগাতার বিমান হামলা শুরু করেছিল গাজায়। ২২ দিনের মাথায় ব্যাপক জীবন ও রক্তক্ষয় এবং ধ্বংস ও কান্নার পর গাজায় পরিচালিত হামলা বন্ধ করেছে ইসরাইল। এটাকে এখন এক তরফা যুদ্ধবিরতিও বলা হচ্ছে। হামাসও ইসরাইলের উদ্দেশ্যে রকেট ছুঁড়া থেকে বিরত থাকার কথা বলেছে।
প্রথম দিন থেকেই গাজায় ইসরাইলী আগ্রাসনের দৃশ্যটি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে। ইসরাইল সরকার ও সৈনিকদের নৃশংসতার চিত্র তাতে ধরা পড়েছে। বেসামরিক গাজাবাসী নারী ও শিশু আক্রান্ত হয়েছেন ব্যাপকভাবে। সে যুদ্ধে নিহত হন ১৩ শ মুসলমান। আহত হন কয়েক হাজার। আহতদের মাঝে নারী-শিশুর সংখ্যাই ছিল বেশি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মিডিয়ায় এ বর্বর ঘটনাসমূহের যে সব চিত্র পরিবেশিত হয়েছে তাতে বহু পাথরহৃদয় মানুষেরও দু’ চোখ বেয়ে পানি নেমে এসছে। এ দেশের বহু মা এবং শিশু গত জানুয়ারি মাসের কোনো কোনো রাতে কেবল এজন্য কেঁদেছেন যে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বহু নিষ্পাপ শিশুকে ইসরাইলি বোমার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় হাসপাতালের উদ্দেশ্যে দৌড়ে নিয়ে যেতে তারা দেখেছেন টিভির পর্দায়।
অথচ এই বর্বরতার বিরুদ্ধে পৃথিবীর মাদবর-মোড়লরা কোনো প্রতিবাদী শব্দ উচ্চারণ করেনি। উল্টো পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রটির ঘৃণিত ও ধিকৃত বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ইসরাইলের পক্ষে কথা বলেছেন। হামাসের রকেট হামলা থেকে আত্মরক্ষা করতে ফিলিস্তিনের বুকে ইসরাইলের বিমান হামলার অধিকার রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। দুনিয়ার ‘সন্ত্রাস দমন ও শান্তি বাস্তবায়ন’ নিয়ে পেরেশান বড় বড় মাদবর-মোড়লরা সবাই প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ইসরাইলের বর্বরতাকে সহায়তা দিয়েছেন। আর ন্যাক্কারজনক ভূমিকা পালন করেছেন মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর কর্ণধাররা। বিশেষত আরব রাষ্ট্রগুলোর নেতারা ছিলেন একদম নীরব। এতে খুবই খুশীর কারণ ঘটেছে ইসরাইলের। ইসরাইলের এক মন্ত্রী হাসিমুখে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মডারেট আরব রাষ্ট্রগুলোর মৌন সম্মতির ভিত্তিতেই তারা গাজায় হামলা চালিয়েছে। যুদ্ধ বিরতির কোনো রকম প্রস্তাবে তাই তারা সাড়া দেয়নি,দিতে চায়নি। তার বক্তব্যকে মিথ্যা বলার মতো ধৃষ্ঠতাও (!) দেখাতে পারেনি মধ্যপ্রাচ্যের কোনো নেতা। খোদ মাহমুদ আববাসের সমর্থন আদায় করার পরই ইসরাইল গাজায় বর্বর অভিযান চালিয়েছে বলে কোনো কোনো সূত্রে খবর বেরিয়েছে।
আবার অন্যদিকে বারাক হোসেন ওবামা শপথ নেওয়ার আগে আগে (১৮ জানুয়ারি) গাজায় পরিচালিত বিমান হামলা বন্ধ করেছে ইসরাইল। বলা হচ্ছে, ওবামার মধ্যপ্রাচ্য-নীতিকে শুরুতেই একদিকে কাত করে নিতে এ সময়টাকে যুদ্ধের আগুন ও ধোঁয়া দিয়ে ঢেকে দিয়ে ছিল ইসরাইল। কিন্তু নতুন এই প্রেসিডেন্ট তার শপথগ্রহণের দ্বিতীয় দিনই ইসরাইল ও হামাসকে যৌথভাবে শান্ত থাকার আহবান জানিয়েছেন। ইসরাইলের জন্য এ আহবানটির ভাষা ও পদ্ধতি কিছুটা অনভিপ্রেত হওয়ার কথা। এর আগের মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেবল হামাস বা ফিলিস্তিনিদেরকেই অস্ত্র ত্যাগ কিংবা শান্তি স্থাপনের আহবান জানিয়ে এসেছেন। ভাবখানা থাকতো এমন যে, শান্তিভাঙ্গার কাজটা যেন ফিলিস্তিনিরাই করতো, ইসরাইলের মতো ভদ্র (?) পক্ষের তাতে কোনো ভূমিকাই থাকত না।
এজন্য তাকে কিছু বলারও দরকার নেই।’ ওবামার শাসনকালে ইসরাইলের কোন্ মূর্তি বেশি দেখা যাবে এবং আমেরিকার মতো দেশের প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসে বারাক হোসেন ওবামা কী এমন কারিশমা দেখাবেন-সম্ভবত আর ক’দিন পর সেটা পরিষ্কার হবে। কিন্তু এবারের গাজা আগ্রাসনের সময় একটি অভাব ও বাস্তবতা অত্যন্ত প্রকট হয়ে ধরা পড়েছে। সেটি হচ্ছে, কেবল দরদী, শক্তিহীন মানুষের অশ্রুপাত ছাড়া এবার গাজার পক্ষে কোনো সরব কণ্ঠ ও সক্রিয় হাত ছিল না। মুসলিম শক্তি ও শাসকদের তীব্র অনৈক্য, দ্বিধা, সংশয় ও ভীতির বিষয়টির ছিল উগ্র প্রকাশ। বড় শক্তিকে চটিয়ে মজলুম মুসলমানদের পক্ষে কেউ দাঁড়াতে চায়নি, কথা বলতে চায়নি, আরব-আজম, উন্নয়নশীল-উন্নত কোনো মুসলিম রাষ্ট্রই নয়। এমন কেন হচ্ছে? এর কার্যকারণ খুঁজে দেখা দরকার। কেবল আজকের নয়, ভবিষ্যতের রক্তঝরা অধ্যায় থেকে জীবন ও সভ্যতাকে বাঁচাতেও সেটা দরকার।#