সফর ১৪৩০   ||   ফেব্রুয়ারী ২০০৯

বিশ্ব ইজতেমা : ঈমান ও আমলের সংশোধনই মুসলিম উম্মাহর সৌভাগ্যের প্রসূতি

প্রতি বছরের মতো এবারও টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বিশ্ব ইজতেমা। ঈমান ও ইয়াকীনে বলীয়ান হওয়া এবং এর বার্তা পৃথিবীর দিকে দিকে পৌঁছে দেওয়ার প্রত্যয়ে উজ্জীবিত করাই এই ইজতেমার মূল লক্ষ্য। আর এ কথা বলাই বাহুল্য যে, মুক্তি ও সফলতার সকল প্রশ্নই ঈমান ও ইয়াকীনের সঙ্গে যুক্ত।

ঈমান ও ইয়াকীন যেমন ব্যক্তিকে সকল অন্যায় ও পাপাচার থেকে বিরত রাখে তেমনি সকল ন্যায় ও কল্যাণে উদ্বুদ্ধ করে। একজন ঈমানদার মানুষ শুধু ব্যক্তিজীবনেই আদর্শ মানুষ হন না, তিনি তার চারপাশের জগতের জন্যও হয়ে থাকেন আল্লাহর রহমত।

ঈমান মানুষের অন্তরে জাগ্রত করে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি। সকল প্রতিভা ও যোগ্যতা, সকল দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং আল্লাহর সকল দান ও নেয়ামত সম্পর্কে ঈমান মানুষকে দায়িত্বশীল করে। আমার সকল কথা ও কাজ সম্পর্কে আল্লাহর কাছে জবাব দিতে হবে-এই বিশ্বাস যত দৃঢ় হবে ততই তার বোধ ও বিশ্বাস, কর্ম ও জীবন আলোকিত হয়ে উঠবে।

আজ একদিকে যেমন শিক্ষা-দীক্ষা, সভ্যতা-সংস্কৃতি এবং আবিষ্কার ও উদ্ভাবন পিছনের সকল সময়কে অতিক্রম করে গেছে তেমনি অন্যায়-অবিচার, দুর্নীতি ও অনৈতিকতা এবং পাশবিকতা ও হিংস্রতাও অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।

আজ বিশ্বের মানবতাবাদী চিন্তাবিদরা মানব-জাতির এই দ্বিমুখী যাত্রায় অত্যন্ত চিন্তিত ও অস্থির! উন্নতি ও অবনতির  প্রচন্ড বৈপরীত্যে হতবাক! কিন্তু আসলেই কি বৈপরীত্য? শুধু জ্ঞান ও তথ্যের এবং বাক্য ও যন্ত্রের উন্নয়নই কি উন্নতি? উন্নতি নয় বলেই তো এর সঙ্গে যুক্ত হয় অবনতি ও অধঃপতনের ধারা।

মানুষের অন্তকরণ যখন ঈমান ও বিশ্বাসে আলোকিত হয়, যা শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্ববাসীর জন্য নিয়ে এসেছেন তখনই তার প্রকৃত উন্নতির সূচনা হয় আর তখনই তার কর্ম ও চরিত্র এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞা উন্নতি ও কল্যাণের পথে ধাবিত হয়। কোনো এক অশুভ মুহূর্তে উন্নতি ও অগ্রগতির যে সংজ্ঞা বিশ্ব তৈরি করে নিয়েছিল-এ ধরনের ঈমানী সমাবেশগুলো হল তার ঔষধ।আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ঈমানী চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার তাওফীক দান করুন।

 

ওবামার শপথ গ্রহণ

নীতির পরিবর্তন কতদূর সম্প্রসারিত হবে?

নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামা ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। জর্জবুশের সরকারের বিভিন্ন নীতি তে তিনি পরিবর্তন আনবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে বলাবাহুল্য যে, এই পরিবর্তনটা পুরোপুরি মার্কিনীদের স্বার্থ কেন্দ্রিক।

গোটা বিশ্বে ন্যায়-অন্যায়, বিচার-অবিচার ইত্যাদির একটি আধুনিক মানদন্ড আছে। সেই মানদন্ডটির ভদ্র নাম জাতীয় স্বার্থ। তবে জাতীয় স্বার্থ কত জাতের বিবেচনা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তা একমাত্র তারাই জানেন যারা এই সব শব্দের অর্থ ও মর্ম নির্ধারণের অধিকারী।

অতএব নীতির পরিবর্তন কতদূর সম্প্রসারিত হবে, তা কি সনাতন স্বার্থীয় ধারায় প্রবাহিত হবে না, মজলুম ও নিপীড়িতদেরকেও তা স্পর্শ করবে-এটা ভবিষ্যতই বলে দিবে। আপাতত যে খবরটা শঙ্কা জাগাচ্ছে তা হল, নব নিযুক্ত মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের একটি বক্তব্য।

সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, পাকিস্তানে আল কায়েদার কোনো শীর্ষ নেতা বা ঘাঁটির অবস্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গেলে ওয়াশিংটন অবশ্যই সেখানে হামলা চালাবে। সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যে। অর্থ যে কী তা বিশ্বাবাসী প্রত্যক্ষ করেছে ইরাকে, আফগানিস্তানে ও অন্যান্য মুসলিম জনপদে। আমাদের করণীয় একটাই, পৃথিবীর সকল শক্তির দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আসমানের শক্তির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা। এটা আমরা ভুলে গেছি বলেই আমাদের যে দৃষ্টি  ছিল উর্ধ্বমুখী তা আজ নিম্নমুখী। ফলে আমাদের কাজ-কর্ম এবং আমাদের সিদ্ধান্ত ও সংকল্পও আমাদেরকে শুধু নীচের দিকেই নিয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি উত্তরণ চাই তবে অবশ্যই আমাদেরকে দৃষ্টির গতিপথ বদলাতে হবে। উর্ধ্বমুখী দৃষ্টিই আমাদেরকে উর্ধ্বমুখী করতে পারে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন।

 

 

advertisement