রবিউল আউয়াল ১৪৩০   ||   মার্চ ২০০৯

ভু ল প থ : ভুলপথের পথিকদের নিয়ন্ত্রণ করাই কাম্য

খসরূ খান

আবার জেএমবি সদস্যদের ধরা পড়ার ঘটনা ঘটছে। প্রথমে ঢাকার অনতিদূরের গাজীপুরে ধরা পড়েছে কয়েক সদস্য। বানানো বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ। সংবাদ সম্মেলনে আকস্মিকভাবে একটি বোমা ফাটিয়ে দিয়েছে সেখানে এক জেএমবি সদস্য। পুলিশ, সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন তখন। ধৃত জেএমবি সদস্যদের জেরা-জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তাদের আরো কিছু খবর। সে খবর অনুযায়ী ঢাকার আশপাশের আরো কিছু অঞ্চল থেকে আরো কজন জেএমবি সদস্য ধরা পড়েছে পরবর্তী কদিনে। ঘটনাগুলো মিডিয়াতে এসেছে এবং এ বিষয়ে প্রশাসনের সর্বোচ্চ সতর্কতা ও তত্ত্বতালাশের কথাও প্রচারিত হয়েছে। মিডিয়াতে প্রকাশ হয়েছে যে, গোয়েন্দাসূত্রের খবর ছিল, একুশে ফেব্রুয়ারির দিন জেএমবি সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে হামলা চালাতে পারে। সে হিসেবে প্রশাসন আগে থেকেই খোঁজখবর পুরোদমে চালিয়ে গেছে। একুশের দুদিন আগ থেকে ধরপাকড় শুরু হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খোঁজখবর ও ধরপাকড়ের এ অভিযান চলবে।

যত্রতত্র বোমা মেরে কিংবা নিরীহ মানুষকে হতাহত করে বিচারব্যবস্থা পরিবর্তনের এ ধরনের প্রয়াসের সঙ্গে যে, ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই-এ সরল সত্যটি এদেশের মানুষ জেনেছেন এদেশের আলেম-ওলামার প্রচেষ্টাতেই।

কয়েক বছর আগে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে জেএমবির প্রথম আত্মপ্রকাশের পর ইমাম-খতীব ও ওলামাসমাজ তড়িৎ ও সাহসী ভূমিকার মধ্য দিয়ে জাতিকে সচেতন করে তুলেছিলেন। এক্ষেত্রে জাতীয় মসজিদের মরহুম খতীবের ভূমিকা ছিল বিরাট এবং অগ্রগণ্য। মূলত বোমা মেরে যেকোনো আদর্শের নাম দেওয়া এবং তাকে দুর্নাম করা ও আতংকজনক বিষয়ে পরিণত করার অধিকার কারো নেই। তাই যেকোনো প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সন্ত্রাসী তৎপরতায় নিয়োজিত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ ও প্রয়াস   প্রশংসনীয়। সে হিসেবে বোমা ও বোমার সরঞ্জামসহ জেএমবি সদস্যদের গ্রেফতার তৎপরতাকে শান্তিপ্রিয় নাগরিক আগ্রহের সঙ্গেই সাধুবাদ জানাবেন।

এদেশের বহু ক্ষেত্রের মতো সন্ত্রাস ও বোমার ক্ষেত্রেও এক ধরনের মতলবী কিংবা সরলীকৃত প্রচারণার জোর দেখা যায়। বুঝে-না বুঝে জেএমবি সদস্যরা যেহেতু ইসলামী আইন ও বিচারের দাবিতে বোমাবাজি করে থাকে তাই অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে দিয়ে ইসলামবিদ্বেষী শক্তি ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইসলামী আদর্শ প্রচার প্রতিষ্ঠান কিংবা ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠার নিয়মতান্ত্রিক প্রয়াসে নিবেদিত প্রতিষ্ঠানকে জেএমবির সঙ্গে এক কাতারে এনে দাঁড় করায়। এবং

মতলবী পদ্ধতিতে ইসলামসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও মহলকে নানাভাবে ঘায়েল করার অবিরত চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। সাধারণত সুশীল সমাজ ও দেশী-বিদেশী মিডিয়ার একটি অতি পশ্চিমানুরক্ত গ্রুপ এ কাজটি করে থাকে। এরা মূল কাজ বন্ধ করিয়ে প্রশাসনকে বিপথগামী করার বহু কসরতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরই অংশ হিসেবে বে-আইনী প্রয়াস প্রসঙ্গে কওমী মাদরাসা বিরোধী প্রোপাগান্ডা মারাত্মক পর্যায়ে চালানো হয়। অথচ আকল-বুদ্ধিহীন মানুষেরাও দেখতে পাচ্ছে, বোমা-সন্ত্রাসের ঘটনায় ধৃত ও জড়িতদের মাঝে কওমী মাদরাসার সাধারণ ছাত্র-শিক্ষককে কদাচিত-ও পাওয়া যায়নি, যাচ্ছেও না।

জেএমবি হোক, সর্বহারা হোক কিংবা রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের যে-ই হোক, এ দেশে অন্যায়ভাবে মানুষ হতাহত করে যে বা যারা আদর্শ প্রতিষ্ঠার কথা বলে আমরা মনে করি তারা ভুল পথে আছে। দেশ ও নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য তাদের নিয়ন্ত্রণ করা এবং প্রয়োজনে আইনের আওতায় নিয়ে আসার সতর্ক সরকারী উদ্যোগ শুভ। এসব ক্ষেত্রে দেশী-বিদেশী প্রচারণাবিদদের দ্বারা অহেতুক প্রভাবিত না হয়ে, রাগ-বিরাগ, জেদ-আক্রোশ ও অহেতুক সন্দেহের গুরুত্ব না দিয়ে সঠিক তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে কাজ করে গেলে তাতে জনসমর্থন অব্যাহত থাকবে বলেই আশা করা যায়।#

 

 


 

 

advertisement