রবিউল আউয়াল ১৪৩০   ||   মার্চ ২০০৯

তালেবানে ইলমে নবুওয়তের প্রতি কিছু প্রয়োজনীয় নির্দেশনা

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

০১ সফর ১৪৩০ হিজরী মোতাবেক ২৯ জানুয়ারি ২০০৯ ঈসায়ী তারিখে মারকাযুদ দাওয়াহ থেকে শিক্ষা সমাপনকারী সকল তালিবে ইলমকে মারকাযে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল,তাদের কর্মজীবনের ব্যস্ততা সম্পর্কে অবগতি লাভ করা এবং তাদের  সঙ্গে মতবিনিময় করা। এ সময় মারকাযের আসাতিযায়ে কেরামের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর কিছু প্রয়োজনীয় কথা লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল এবং তাদের সামনে পেশ করা হয়েছিল। ইতিপূর্বে প্রকাশিত আলোচনার মতো এই আলোচনাটিও এখানে প্রকাশ করা হচ্ছে। যেন মাদরাসার নেসাববদ্ধ পড়াশোনা সমাপ্ত করে কর্মজীবনে পদার্পণকারী তালাবায়ে কেরামের সামনে কথাগুলো থাকে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে, সকল তালিবে ইলমকে এই বিষয়গুলোর ওপর আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

 আমীনুত তালীম

মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা

বেরাদরানে মুহতারাম, আল্লাহ তাআলার শোকর যে, দীর্ঘ বিরতির পর আবার আবনাউল মারকাযের মজলিস অনুষ্ঠিত হচ্ছে; আল্লাহ তাআলা একে ফলপ্রসূ করুন এবং কবুল করুন।

এ উপলক্ষে আমরা নিজেদের ও আপনাদের সবাইকে ওই পুরনো কথাগুলোই স্মরণ করাচ্ছি, যা তাওজীহাতুন আবেরা নামে আবনাউল মারকাযের প্রথম মজলিসে পেশ করা হয়েছিল এবং পরবর্তী সময়ে যেগুলো মাসিক আলকাউসার-এর শিক্ষার্থীদের পাতায় ধারাবাহিকভাবে কয়েক কিস্তিতে প্রকাশিত হয়েছে।

এই মুহূর্তে আমরা বিক্ষিপ্ত কয়েকটি কথা আলোচনা করে নিচ্ছি, যাতে সেগুলো আমাদের অন্তরে বসে যায় এবং ইলমী ও আমলী যিন্দেগিতে তা অনুসরণে আমরা মনোযোগী হতে পারি। (১) প্রথম কথা এই যে, মুআস্সাসাতু আবনাইল মারকায-এর সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য হল আমাদের মাঝে যে সাত্হিয়্যত (অগভীরতা)রাস্মিয়্যত(গতানুগতিকতা) ও তামশিয়া (যেনতেনভাবে চালিয়ে দেওয়ার প্রবণতা) রয়েছে, যেগুলো সর্বপ্রকার উন্নতি ও সফলতার অন্তরায়, সেগুলোর চিকিৎসা করা। আর জিদ্দিয়্যত (যথাযতভাবে নাশাত ও আযীমতের সাথে কোনো কাজ সম্পাদন করা) ও মুহাসাবা (হিসাব-নিকাশ)-এর যিন্দেগি অবলম্বনের জন্য পরস্পরকে উদ্বুদ্ধ করা। যেন পরস্পরের এই উদ্বুদ্ধকরণটিই অগ্রসরের একটি উদ্যোগে পরিণত হয়। তাই আমাদের সম্ভাব্য প্রচেষ্টা এই হওয়া উচিত, যেন এই মজলিসটিও একটি প্রথাগত বিষয়ে পর্যবসিত না হয় এবং এতেও যেন সাত্হিয়্যততাম্শিয়া-র ঘুন না ধরে যায়।

আমরা যদি নিজেদের যিন্দেগিকে    মুহাসাবার যিন্দেগি বানানোর প্রতি মনোনিবেশ করি, উদাসীনতা ও গতানুগতিকতার পরিবর্তে সতর্কতা ও উদ্যমতা এবং যথার্থতা ও পূর্ণাঙ্গতার প্রতি অগ্রসর হতে থাকি তাহলে মনে করব মুআস্সাসা সফলকাম। আর যদি -আল্লাহ না করুন- এমন না হয়, তাহলে নিশ্চিত জানুন যে, মুআস্সাসা আপনাদের জন্য অতিরিক্ত ক্ষতির কারণ হবে। সময়, সম্পদ, মেধা ও মনোযোগ নষ্ট করার একটি নতুন পথ খোলা হবে।

মোটকথা, আমাদের সবসময় খেয়াল রাখতে হবে, যেন এ মুতামার রাসমিয়্যত ও সাতহিয়্যত দূর করার জন্য নিবেদিত হয়। তাই একে আমরা ইনশাআল্লাহ কখনো রসমি হতে দেব না।

(২) দ্বিতীয় কথা এই যে, কারো মাঝে মুহাসাবার মেযাজ না থাকার অর্থ হল সে উদাসীনতার শিকার। জিদ্দিয়্যত-এর মেযাজ না থাকার অর্থ হল সে হায্ল-এর শিকার। হায্ল-এর সূক্ষ্ম অবস্থা হচ্ছে আমলীভাবে উদ্যেগ ও অগ্রসর হওয়া ছাড়াই শুধু আফসোস করা এবং করব করছি বলেই মনকে প্রবোদ দেওয়া। মুমিনের শান হচ্ছে সে আল্লাহ তাআলার দরবারে গাফলত ও উদাসীনতা থেকে আশ্রয় কামনা করবে। আর হায্ল থেকে হয়ত চতুষ্পদ জন্তুও অনেক ঊর্ধ্বে; সে কি মানুষ যে হাযলের ওপরে ওঠতে পারেনি; অথচ চিন্তা করলে দেখবেন যে, আমরা সবাই কমবেশি হাযলের শিকার।     মুহাসাবার সম্পর্ক চিন্তা ও ভাবনার সাথে, কিন্তু সতর্ক ও তাগিদের জন্য কখনো নফসের সাথে মৌখিক সম্বোধনেরও প্রয়োজন দেখা দেয়। আমাদের পূর্বসূরিদের মাঝে এই      মুহাসাবার বড়ই গুরুত্ব ছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই মুহাসাবার ক্ষেত্রে লেখনির দ্বারা সহযোগিতা নিয়েছেন। শাইখ (রহ.) রিসালাতুল মুসতারসিদীনএর টীকায় শাইখ ইবনে আরাবী (রহ.)এর কথা উল্লেখ করেছেন-

‘‘আমাদের পূর্বসূরিরা তাদের কথা ও কাজের মুহাসাবা করতেন এবং সেগুলো খাতায় লিখতেন। ইশার পর নিজেদের মুহাসাবা নিতেন এবং খাতা উপস্থিত করতেন। সারাদিনের কথা ও কাজের প্রতি নজর বুলাতেন এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতেন। যদি ইস্তেগফার করার মতো কোনো কাজ হত তাহলে ইস্তেগফার করতেন, যদি তওবা করার মতো কোনো কাজ হত তাহলে তওবা করতেন; যদি শোকর আদায় করার মতো কোনো কাজ হত তাহলে শোকর করতেন। এরপর ঘুমোতেন।’’ -রিসালাতুল মুসতারশিদীন (টীকা) ৮১-ফয়যুল কাদীর ৫/৬৭

যদি এত লম্বা তালিকা তৈরি করতে মন না চায় তাহলে অন্তত এতটুকু তো করা উচিত, যতটুকুর কথা হযরত পাহাড়পুরী দামাত বারাকাতুহুম বলেন। তিনি এতটুকু বলেন যে, কোনো এক আমল যেমন তাহাজ্জুদের ব্যাপারে নোট রাখা-কবে পড়া হয়েছে, কবে ছুটেছে বা জামাতের ব্যাপারে নোট রাখা; তওবার ব্যাপারে নোট রাখা- সে গোনাহ পরবর্তী সময়ে প্রকাশ পেয়েছে কি না। গীবত, বদনজরি ও অন্যান্য গোনাহের ব্যাপারেও অনুরূপ নোট রাখা। আর মাঝে মধ্যে নফসের শাসন করা এবং নতুন করে তওবা করা। আল্লাহ তাআলা আমাকে এবং আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন।

(৩) তৃতীয় কথা এই যে, একজন আলেমের মধ্যে সাবধানতা ও সচেতনতার গুণ থাকা উচিত। একজন আলেমকে দূরদর্শী ও পরিণামদর্শী হতে হবে। সুগভীর চিন্তা ও সুদূর পরিণাম ভাবনা ছাড়া কোনো আহবানে সাড়া দেওয়া কোনো বিবেকবান আলেমের কাজ হতে পারে না।

কেউ এসে বলল, আমরা ইসলামী ব্যাংকিং করতে চাচ্ছি, আমরা আপনাকে আমাদের শরীয়া বোর্ডের সদর বা রোকন বানাতে চাই অথবা আমরা ইসলামী বীমা বা অমুক অমুক আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলতে চাচ্ছি, আপনি আমাদের পথনির্দেশনা দিন। আপনি আমাদের সদরের পদ কবুল করুন। অথবা কেউ এসে বলল, আমরা অমুক রাজনৈতিক দল বা দাওয়াতি প্রতিষ্ঠান করেছি বা করতে চাচ্ছি আপনি এতে শরিক হোন অথবা আপনাকে মুরুববী মানি, আপনি আমাদের নেতৃত্ব দিন।

এধরনের কতই না দাওয়াত আসতে পারে। আপনি কি শুধু নাম শুনেই আর মৌখিক বিনয় দেখেই তাদের দাওয়াত কবুল করবেন? এমনটি হতে পারে না। আপনাকে বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা কাজ নিতে হবে। অন্যদের থেকে শিক্ষা নিতে হবে। প্রথমত আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে ওই যিম্মাদারি আপনি সামলাতে পারবেন  কি  না? নতুবা (আমি তোমাকে অক্ষম দেখছি, তুমি দুজনের মাঝেও ফয়সালা করতে যাবে না)এর নির্দেশনা মোতাবেক ভিন্ন বিভাগে অনাধিকার চর্চা করতে না যাওয়া উচিত।

যদি আপনি যোগ্য হন, যা আপনার তালীমী মুরুববী বা মেহেরবান, আমানতদার পরামর্শদাতা উস্তাদ যিনি আপনার অবস্থা ভালোভাবে জানেন, শুধু তাঁর সাক্ষ্যতেই প্রমাণিত হতে পারে; তাহলে দেখতে হবে যে, ওই ব্যাপারে আপনি যথেষ্ট সময় দিতে পারবেন কি না, আপনার নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানের কোনো আইনি অবস্থান আছে কি না; প্রতিষ্ঠান সে মোতাবেক চলবে কি না; প্রতিষ্ঠান কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে আপনি তা বুঝবেন কি না; পরিভাষা, ভাষা ও পেশার ভিন্নতার কারণে আপনি নিজে বুঝছেন না, বরং তাদের তাকলীদ করে শুধু সুআস্থা ও সুধারণার ভিত্তিতে দস্তখত করছেন কি না।

আপনি নিজেকে যাই মনে করুন না কেন, আপনার নামের অপব্যবহার হতে দেবেন না। নামের ওজন ও মর্যাদা নষ্ট করবেন না। আজকাল অপরিণামদর্শী কিছু সংস্থা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নামের তত্ত্বাবধানের রোগ মহামারীর আকার ধারণ করেছে। সচেতনতার পরিচয় দিন; গড্ডালিকা প্রবাহে নিজকে ভাসিয়ে দেবেন না। সতর্কতা ও সচেতনতা পূর্বসূরিদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল। তাই উত্তরসূরিদের মাঝে এগুণ থাকা অপরিহার্য।

(৪) বাহ্যিক চরিত্র ও অভ্যন্তরীণ আখলাকের শুদ্ধতার সাথে সাথে উলামা ও তলাবার কাছে আরো একটি বিষয় কাম্য। তা হল চিন্তা-চেতনার সুউচ্চতা ও উৎকর্ষতা। তাকে ফিকরে আরজুমান্দ-এর অধিকারী হতে হবে। চিন্তার অগভীরতা তার শান হতে পারে না। তাকে সুস্থ ও সুউচ্চ চিন্তার অধিকারী হতে হবে।

চিন্তার সুউচ্চতা বড় বিশাল ও বিস্তৃত ময়দান। ছোট ছোট জিনিসও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং রয়েছে সর্ববৃহৎ জিনিসও। কবি বলেন,

‘‘গর্ব করো না যে বাদশাহর খেদমত করছ, বরং কৃতজ্ঞ হও এই ভেবে যে, বাদশাহ তোমাকে খেদমতে নিয়োজিত রেখেছেন।’’

এই পংক্তিটিতে চিন্তার সুউচ্চতার দীক্ষা রয়েছে। প্রায় সব কাজেই দ্বিমুখী চিন্তা-চেতনার সংমিশ্রণ রয়েছে, তার মধ্য থেকে আমরা সবসময় শুধু সুস্থ ও সুউচ্চ ফিকিরটি গ্রহণ করব; নীচ ও হীন ফিকির  গ্রহণ করে নিজের হীনতার পরিচয় দেব না।

(৫) মানব সেবার কাজটি আমাদের দ্বারা সাধারণত হয়ই না এবং খেদমতে খালকের এই সুন্নত আমাদের থেকে হারিয়ে গেছে। তাই ব্যক্তিগতভাবে হলেও সামর্থ্য অনুযায়ী এ সুন্নত যিন্দা করার চেষ্টা করা উচিত। মুহতারাম উস্তাদ মাওলানা মুহাম্মাদ তকী উছমানী দামাত বারাকাতুহুম তাঁর সম্মানিত পিতা হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ শফী (রহ.)এর অভ্যাস বর্ণনা করেছেন যে, তাঁর কাছে যখনই কোনো অর্থ আসত তা থেকে এক দশমাংশ ভিন্ন করে     রেখে দিতেন এবং সেখান থেকেই দান-খয়রাত করতেন। মূলত হাদীসের বাণী সদকা দ্বারা সম্পদ হ্রাস পায় না। এর ওপর আমাদের ঈমান বড়ই দুর্বল। তাই এদিকে আমাদের মনোযোগ খুব কমই হয়ে থাকে। কুরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছে- (তরজমা) তুমি তোমার হাত তোমার গ্রীবায় আবদ্ধ করে রেখো না এবং তা সম্পূর্ণ প্রসারিতও করো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে পড়বে। -সূরা বনী ইসরাঈল ২৯

এটা আমাদের সামনে রাখা উচিত এবং দান-খয়রাতের আমল ব্যাপক করা দরকার। আর নিজের ও পরিবার-পরিজনের পেছনে খরচেও সওয়াবের নিয়ত করে নেওয়া উচিত।

(৬) একটি জরুরি কথা এও যে, মারকাযুদ দাওয়াহ লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের দিক থেকে অনেক উঁচু মানের একটি প্রতিষ্ঠান। আমরা নিজেদেরকে এ প্রতিষ্ঠানের খেদমত আঞ্জামদানের যোগ্য মনে করি না। মুরুববীরা বসিয়ে দিয়েছেন, তাই কিছু করার চেষ্টা করি। আল্লাহ তাআলা সংশোধন করে দিন এবং উত্তরোত্তর উন্নতি দান করুন। এসব বলার উদ্দেশ্য হল, এ প্রতিষ্ঠান তার আমলী অস্তিত্ব এবং এর কার্যক্রম হিসাবে যে মানের, সাধারণত একে আরো অনেক উঁচু স্তরের মনে করা হয়। তাই আমাদের সবার যিম্মাদারি হচ্ছে মানুষের এই সুধারণার মর্যাদা রক্ষা করা এবং প্রতিষ্ঠানের মান ও অবস্থানের ওপর কোনরূপ আঘাত না আসতে দেওয়া। এটা আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্ব। আমরা এমন সব কথা, এমন সব কাজ এবং এমন সব চিন্তা-চেতনা থেকে বিরত থাকব, মারকাযের কোন উস্তাদ, কোন শিক্ষাসমাপনকারী থেকে মানুষ যা আশা করে না। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন।

(৭) নিজের ইসলাহ এবং মানুষের ফায়েদার জন্য দাওয়াত ইলাল খায়র-এর কাজে মাঝে মধ্যে কিছু না কিছু সময় নিজেকে সম্পৃক্ত করা দরকার। তবে এ কাজের হাকীকত বোঝা শুধু আমলী শিরকত দ্বারা হবে না বরং হযরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) আওর উনকি দ্বীনী দাওয়াত নামক কিতাব এবং হযরতের মাকতূবাত ও মালফূযাত পড়ে বোঝা জরুরি।

এত শিক্ষা সমাপনকারী তালেবে ইলমদের থেকে যদি পরামর্শক্রমে দু চারজন শুধু এ কাজের জন্যই নিবেদিত হয়, তাতেই বা অসুবিধা কোথায়; বরং এমনই তো হওয়া উচিত। ছুটিগুলোতে (যাকে আমরা বিরতির দিনসমূহ বলা অধিক সঙ্গত মনে করি) কিছু দিনের জন্য হলেও বের হওয়ার  প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত।

(৮) আমলের সংশোধনী সম্পর্কে একটি কথা বলছি। কথাটি এই, তওবার একটি শর্ত এও যে, গোনাহের লাওয়াযেম ও উপায়-উপকরণ থেকেও বিরত থাকতে হবে। গোনাহের পরিবেশ থেকে দূরে থাকতে হবে। আল্লাহ তাআলা দুনিয়াকে দারুল আসবাব বানিয়েছেন। দ্বীনী বিষয়ের জন্যও আসবাব জরুরি। অবশ্যই সবকিছু সম্পাদনকারী একমাত্র আল্লাহ তাআলা। তাঁরই ওপর ঈমান আনা এবং তাওয়াক্কুল করা জরুরি। তবে যেভাবে আমরা দুনিয়াবি ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার হুকুমে আসবাব অবলম্বন করে থাকি, দ্বীনী ব্যাপারেও আমাদের আসবাব অবলম্বন করতে হবে। তাই গোনাহ থেকে বাঁচার জন্য লাওয়াযেম ও আসবাব থেকে বাঁচা, গোনাহের পরিবেশ থেকে দূরে থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি শর্ত; যা শরীয়তের একটি স্বতন্ত্র বিধানও বটে। এটা এমন এক শর্ত, যা ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে আযীমতও বেকার হয়ে যায়। তাই তওবার ওপর অটল থাকা, যাহেরি-বাতেনি গোনাহ পরিত্যাগ করা, গর্হিত ও ফাহেশ কাজসমূহ পরিত্যাগ করার ক্ষেত্রে শুধু আশা-আকাঙ্ক্ষার ওপর ভরসা না করা, বরং উপরোক্ত জরুরি শর্ত পুরো করে আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা করা এবং হিম্মত ও আযীমতকে কাজে লাগানো বাঞ্ছনীয়।

(৯) সর্বশেষ কথা ইলমী বিষয় সম্পর্কে। আর তা এই যে, আমাদের এসব এলাকার তালেবে ইলমদের মাঝে কুরআন হাদীসের নস্স ও পাঠ মুখস্থ করার প্রতি ইহতেমাম নেই। আরবের একজন সাধারণ মানুষের যত আয়াত, হাদীস, আসর, দুআ-যিকির মুখস্থ থাকে তার নজীর আমাদের এসব এলাকায় পাওয়া মুশকিল। এটা বড়ই দুঃখজনক। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা জরুরি। তাই আমরা অল্পঅল্প করেই হোক বিষয়ভিত্তিক আয়াত, হাদীস, দুআ-যিকির মুখস্থ করার প্রতি যত্নশীল হব এবং এর জন্য ভিন্ন খাতা রাখব। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দিন। আমীন।#

 

 

 

advertisement