রবিউল আউয়াল ১৪৩০   ||   মার্চ ২০০৯

নজীরবিহীন হত্যাকান্ড : এরপরও কি আমরা ফিরে আসব না

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায়  যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল এর নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। একসঙ্গে এতজন সেনাকর্মকর্তা নৃশংসভাবে নিহত হওয়ার ঘটনা পৃথিবীতে আর কোথাও ঘটেনি। এটা যেমন মর্মান্তিক তেমনি ন্যাক্কারজনক। এর পিছনে কার্যকর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণগুলো অবশ্যই আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।

যাদের মাধ্যমে এই দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে প্রথমদিকে তাদের ক্ষোভ ও বঞ্চনার কথা বলা হলেও পরে হত্যাকান্ডের ব্যাপকতা ও নৃশংসতা  লক্ষ করার পর সবাই একে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলেই মনে করছেন। অবিচার ও বঞ্চনার শ্লোগান তুলে অত্যন্ত ব্যাপক ও নৃশংস জুলুমের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। বলাবাহুল্য যে, জুলুম ইসলামের দৃষ্টিতে প্রত্যাখ্যাত। এই মর্মান্তিক ঘটনার পর আমাদের অনেকগুলো বিষয় গভীরভাবে ভেবে দেখা উচিত।

১. মানুষের জান-মাল, ইজ্জত-আব্রুর বিষয়টা এতই তুচ্ছ হয়ে গিয়েছে যে, খুব সামান্য ঘটনাতেই খুনাখুনি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। সভ্যতামানবতার পরম উৎকর্ষের যুগেও কেন এমন হচ্ছে এবং কেন একটি জাতি সর্বদাই উত্তেজিত ও মারমুখী হয়ে থাকছে-এটা আমাদের খুব ভালোভাবে ভেবে দেখা উচিত।

আমাদের শিক্ষা, আমাদের সংস্কৃতি কেন আমাদেরকে সভ্য করে তুলতে পারছে না এবং আমাদের নৈতিকতার মান-উন্নত করতে পারছে না-এটা আমাদেরকে ভেবে দেখতে হবে।

২. যারা কথায় কথায় ইসলামপন্থীদের সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী বলে গালি দেয়, ইসলামকে ব্যাকডেটেড বলে (নাউযুবিল্লাহ) মুখ ঘুরিয়ে রাখে তাদের ভেবে দেখা উচিত, এই অবস্থানটা তাদের নিজেদের জন্য এবং জাতির জন্য কতটা কল্যাণজনক। যে জাতি ঈমান ও আল্লাহর ভয় থেকে রিক্তহস্ত হয়ে যায় তারা যতই প্রশিক্ষিত ও সুশৃঙ্খল হোক, তারা যে কখনও কখনও চরম নিষ্ঠুর ও বর্বর হয়ে উঠতে পারে-এটা তো বার বার দেখা যাচ্ছে।

৩.  যেসব অতি প্রগতিশীল মহল সব সময় জাতিকে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের সবক দিয়ে থাকেন তাদের ভেবে দেখা উচিত, শুধু প্রতিবাদই জীবনের একমাত্র অনুষঙ্গ নয়, আনুগত্য ও সহনশীলতা এবং ত্যাগ ও উদারতারও অনেক বেশি প্রয়োজন জীবনে রয়েছে। এ বিষয়ে কতটুকু প্রেরণা ও নির্দেশনা জাতি তাদের কাছে পেয়ে থাকে।  বিভিন্নভাবে শুধু বিভেদ-বিভক্তি এবং ঘৃণা ও উত্তেজনার বার্তাই জাতির কাছে পৌঁছানো হয়। কীভাবে একটি জাতির মনস্তাত্ত্বিক ভারসাম্য সৃষ্টি হয় তা বোধ হয় আমাদের লেখক-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক বন্ধুদের নতুন করে ভাবা উচিত।

৪. আমাদের বিশ্বাস করা উচিত যে, ক্ষমতায় থাকাকালে যে কোনো অসতর্কতা কখনও ভালো ফল দান করে না। এর পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ হতে পারে। শুধু অসতর্ক ব্যক্তির জন্যই নয়, অনেক নিরপরাধ মানুষের জন্যও, এমনকি গোটা সমাজের জন্যই এটা এক অভিশাপ হয়ে যেতে পারে।

৫. দেশের সীমান্তরক্ষা, সামগ্রিক প্রতিরক্ষা ও শান্তি-শৃঙ্খলায় নিয়োজিত সব বাহিনীর সদস্যদের সকল পর্যায়ে পারস্পরিক সমঝোতা, হৃদ্যতা ও দায়িত্বশীলতা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। এ বাহিনীসমূহের মাঝে ছোট-বড় কোনো অসমঝোতার ক্ষেত্রগুলোতেও দেশি-বিদেশি কোনো পর্যায়ের সুযোগ ও স্বার্থ সন্ধানীরা যেন সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে পূর্ণ সচেতনতা রক্ষার নীতি গৃহীত হওয়া উচিত।

আমরা এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ডে নিহতদের মাগফিরাত কামনা করি এবং তাদের শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাই।

আমরা মনে করি, প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত এবং আগামীতে যেন এ ধরনের ঘটনা আর ঘটতে না পারে সেজন্য সকল দায়িত্বশীল মহলে সচেতনতা, আন্তরিকতা ও উপযুক্ত কর্মপন্থা গ্রহণ করা উচিত।

 

 

advertisement