তাঁর জন্ম ১২৮০ হিজরী (১৮৬৩ ঈ.) বর্তমান ভারতের উত্তর প্রদেশের থানাভবনে। হযরত হাফেয হোসাইন আলী রাহ.-এর কাছে তিনি কুরআন মজীদ হেফয করেন। ফারসী ও আরবীর প্রাথমিক কিতাবগুলো নিজ গ্রামে পাঠ করেন হযরত মাওলানা ফতেহ মুহাম্মদ থানভী রাহ.-এর কাছে। ১২৯৫ হিজরীতে ইলমে দ্বীনের উচ্চস-রের পাঠ গ্রহণের জন্য দারুল উলূম দেওবন্দে ভর্তি হন। দারুল উলূম দেওবন্দের প্রথম যুগের ফারেগদের মাঝে তিনি ছিলেন অন্যতম। কেরাত ও তাজভীদের মশক করেন মক্কা মুকাররমায়। শৈশব থেকেই তিনি মেধা ও প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে আসছিলেন। ১৩০০ হিজরীতে প্রথমে কানপুরের মাদরাসায়ে ফয়যে আমে মুদাররিস নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে জামেউল উলূমের প্রধান পরিচালকের আসন অলংকৃত করেন। তারপর থানাভবনের খানকাহে ইমদাদিয়ায় অবস্থান গ্রহণ করেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেই তাবলীগে দ্বীন, তাযকিয়ায়ে নফস এবং রচনা ও লিখনির এমন বিশাল ও মহান খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন সমকালে যার কোনো তুলনা পাওয়া যায় না। এই বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব ছিলেন হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রাহ.।
হযরত থানভী রাহ.-এর ইলম ও দ্বীনী প্রজ্ঞা ছিল অত্যন্ত গভীর ও বিস্তৃত। তাঁর লিখিত গ্রন্থগুলোর পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় এ কথার প্রমাণ বিদ্যমান। হযরত থানভী রাহ.-এর রচনার পরিমাণের এই বিশালত্ব এবং মানুষের উপকার গ্রহণের এই ব্যাপকতার দিক থেকে উপমহাদেশে তাঁর নজীর খুব বেশি নেই। তাঁর ছোট বড় গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন শ। তাঁর একটি রচনা ‘বেহেশতী জেওর’-এর চাহিদাই এমন যে, প্রতি বছর বিভিন্ন স্থান থেকে তার হাজার হাজার কপি ছাপা হয় এবং মানুষের হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর লিখিত কুরআন তরজমা অত্যন্ত প্রাঞ্জল ও ইলমদীপ্ত। একই সঙ্গে বয়ানুল কুরআন তাঁর লেখা এক মহান তাফসীর।
ভারত উপমহাদেশ এবং এর বাইরেরও হাজার হাজার মানুষ তাঁর কাছ থেকে ইসলাহ ও তারবিয়ত গ্রহণ করেছেন। এসব কারণেই তাঁর ‘হাকীমুল উম্মত’ (উম্মাহর আত্মিক চিকিৎসক) উপাধিটি ব্যাপক প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। মূল নামের চেয়ে এই উপাধিতেই মানুষ তাঁকে বেশি দ্রুত চিনতে পারে।
তাঁর রচনা ও মাওয়ায়েজ (ওয়াজ ও বয়ানের সংকলন) থেকে লাখ লাখ মানুষ ইলমী ও আমলী কল্যাণ লাভ করেছে। তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল ইলম, হিকমত, মারিফত ও তরীকতের এমনই এক ঝর্ণাধারা যে, তা থেকে অর্ধ শতাব্দীকাল পর্যন- উপমহাদেশের মুসলমানরা সরাসরি হৃদয়ের তৃষ্ণা নিবারণ করেছেন এবং পরিতৃপ্ত হয়েছেন। তাঁর ওফাতের পরও তাঁর অগণিত গ্রন্থাবলির মধ্য দিয়ে সেই ঝর্ণাধারা থেকে এখনও বহু মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।
হযরত হাকীমুল উম্মতের জীবন ছিল অত্যন্ত শৃঙ্খলাপূর্ণ। বিভিন্ন কাজের জন্য তাঁর সময় থাকত পূর্ব নির্ধারিত এবং প্রতিটি কাজ তিনি সময় ধরে সম্পন্ন করতেন। প্রতিদিন বহু চিঠি তাঁর কাছে আসত এবং তিনি সময়মতো প্রতিটি চিঠির জবাব লিখে পাঠাতেন।
১৬ রজব ১৩৬২ হিজরী (১৯৪৩ ঈ.) রাতে তিনি থানাভবনেই ইন্তেকাল করেন এবং বুযুর্গ মুজাহিদ হাফেয জামেন শহীদ রাহ.-এর মাযারের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়। আল্লাহ তাআলা এই মহান খাদেমে দ্বীনকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুন।
[একটি উর্দূ পত্রিকা থেকে সংগৃহিত
সংগ্রহ ও অনুবাদ : আবু তাশরীফ]