বড়’র সোহবতে কিছুক্ষণ
বড়দের সোহবতে সময় পার করতে পারা ভাগ্যের ব্যাপার। আমাদের চারপাশেই আছেন অনেক বড়জন, কিন্তু অবহেলায় আমরা তাঁদের কাছে যাই না, আদর নেই না, খেদমত করি না।
আমি যে বছর শরহে বেকায়া পড়ি সে বছর মাঝে মাঝে পাহাড়পুরী হুযুর দামাত বারাকাতুহুমের খেদমতে যেতাম। বাসার কাছে হওয়াতে যাওয়াটা সহজ ছিল। বাসা থেকে হেঁটেই যেতে পারতাম। তাই ইচ্ছা হলেই যেতাম। কিন্তু ঐ ‘ইচ্ছা’টা হত না। শয়তানের ওয়াসওয়াসা খুব কাজ করত। আমার উস্তাযে মুহতারাম মাওলানা আবু তাহের রাহমানী ছাহেব দা. বা. প্রায়ই বলতেন, পাহাড়পুরী হুযুরের ফয়েজ ও বরকত নিও। ছোট ছিলাম; ফয়েয ও বরকতের গুরুত্ব কম বুঝতাম। ফলে হুযুর যতই বলতেন খুব একটা যাওয়া হত না। বেশি যাওয়া না হলেও মাঝে মাঝে গিয়েছি। প্রথম এক-দু’বারেই হুযুর আমাকে মুখস্ত করে নিয়েছেন। এরপর কণ্ঠ শুনলেই চিনে ফেলতেন। সালাম দিলে ওয়াআলাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ বলে বলতেন, মুজীব এসেছ? আমি অবাক হতাম! আমি তো হুযুরের ছাত্র বা আত্মীয়-স্বজন কেউ নই। প্রতি সপ্তাহে আসি এমনও না, অথচ কণ্ঠ শুনেই চিনে ফেলেন!। বড়রা আসলে এমনই হন। ছোটদের অনেক ভালবাসেন, স্নেহ করেন। অনেক আদর করেন, মমতা করেন।
বড়দের কাছে গেলেই অর্জন হয়। ইচ্ছা করলেও অর্জন হয়, না করলেও হয়। মাদরাসার কোনো এক বিরতিতে হুযুরের খেদমতে হাযির হলাম। হুযুর সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, চল, বাজারে যাই। বাসার কাছেই মুসলিম বাজার। হুযুরের হাত থেকে বাজারের ব্যাগ নিয়ে হুযুরের সাথে বাজারে গেলাম। বাজার করার উত্তম পদ্ধতি সেদিন শিখলাম। হুযুর মুদী দোকানগুলোর প্রথম দোকানটিতে দাঁড়ালেন। প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর দাম জিজ্ঞেস করে একবার দাম-দর করলেন। অতপর কিনে ফেললেন। আমি শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম আর শেখার চেষ্টা করলাম। হুযুর খুব অল্প কথা ব্যয় করে, অল্প সময়ে বাজার থেকে ফারেগ হলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলার কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় স্থান মসজিদ আর সবচেয়ে অপছন্দনীয় স্থান হল বাজার। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৭১) সুতরাং যথাসম্ভব বাজারে কম যাওয়া উচিত। কোনো প্রয়োজনে যেতে হলে অল্প সময়ে কেনা-বেচা করে বেরিয়ে আসা এবং কোনো কিছু কেনার সময় দর-দাম করে নেওয়া। দর-দাম করলে দিলের মাঝে একটু প্রশান্তি আসে। জিনিস-পত্রের মূল দাম সম্পর্কে সাধারণ ধারণা পাওয়া যায়। তাই হুযুর দর-দাম করে বাজার করলেন। দর-দাম করে নিলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে ।
আরেকদিনের কথা, এক মাদরাসার মাহফিলে হুযুর ছিলেন প্রধান অতিথি। আমি হুযুরের সাথে ট্যাক্সিক্যাবে করে যাচ্ছিলাম। আমার অনেক ঘুম পাচ্ছিল। ঘুমালে হুযুরের গায়ের উপর পড়ি কি না এই ভয়ে ঘুমাতে পারছিলাম না। ঘুম আটকাতে না পেরে নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভেঙ্গে দেখি আমার ঘুমন্ত মাথা হুযুরের কাঁধের উপর। আমি ঘুমাচ্ছি আর হুযুর আমার মাথা নিজ কাঁধের উপর রেখেছেন। যেন ঘুমটা আরামদায়ক হয়। আমি ভয়ে ঘুমাতে পারছিলাম না আর হুযুর আমার ঘুমকে আরামদায়ক করার ব্যবস্থা করছেন! বড়দের শফকত আছে বলেই আমাদের জীবনটা এত সহজ, এত সুন্দর। আল্লাহ তাআলা বড়দেরকে আমাদের মাঝে নিরাপদ, সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন দান করুন। আমাদেরকেও তাঁদের কাছ থেকে বেশি বেশি ফয়েয ও বরকত গ্রহণ করার তাওফীক দান করুন। আমীন।