রিবার প্রচলিত কয়েকটি রূপ
রিবা প্রধানত দুই প্রকার : ১. রিবা নাসিয়্যাহ ২. রিবাল ফযল; একে রিবাল বাইও বলা হয়।
এখানে আমরা শুধু রিবা নাসিয়্যাহর প্রচলিত কয়েকটি রূপ নিয়ে আলোচনা করব।
রিবা নাসিয়্যাহর সংজ্ঞা:
ইমাম আবু বকর জাস্সাস রাহ. বলেন,
هو القرض المشروط فيه الأجل وزيادة مال على المستقرض.
এমন ঋণ যাতে মেয়াদ শর্ত করা হয় এবং গ্রহিতাকে অতিরিক্ত প্রদানের শর্ত করা হয়।
-আহকামুল কুরআন ১/৫৫৭
অর্থাৎ অতিরিক্ত প্রদানের শর্তে কাউকে মেয়াদি ঋণ দেওয়া। একে রিবাল করযও বলা হয়। রিবান নাসিয়্যাহ-এর আরেক প্রকার হল, রিবাদ দাইন।
রিবাদ দাইনের সংজ্ঞা : কারো থেকে কোনো পণ্যের বিক্রিলব্ধ বকেয়া-মূল্য পরিশোধের সময় হলে তখন অতিরিক্ত প্রদানের শর্তে মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়া। অর্থাৎ অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধের শর্তে সময় বাড়িয়ে নেওয়া। জাহেলী যুগে রিবা নাসিয়্যাহর উভয় প্রকারের প্রচলন ছিল খুব বেশি।
আজও এই উভয় ধরনের রিবা নাসিয়্যাহ ব্যাংকিং জগতে এবং মার্চেন্টদের সমাজে বহুল প্রচলিত।
বাজারে বিভিন্ন পণ্য কিস্তিতে বিক্রি হয়। কিন্তু কিস্তি সময়মত দিতে না পারলে একটা নির্ধারিত হারে অতিরিক্ত দেওয়ার শর্ত করা হয়। এটা রিবাদ দাইনের অন্তর্ভুক্ত।
রিবা নাসিয়্যাহর প্রচলিত রূপ ও ক্ষেত্রসমূহ
রিবা নাসিয়্যাহকে রিবাল কুরআন, রিবাল করয ও রিবাদ দাইনও বলা হয়। প্রচলিত ব্যাংকিং সুদ এর জ্বলন্ত উদাহরণ, এছাড়াও আরো ক্ষেত্র আছে, নিম্নে একেকটি করে সবিস্তারে আলোকপাত করা হল:
১. সুদী ব্যাংক : ব্যাংকের সংজ্ঞাতেই আছে যে, ব্যাংক হল, অল্প সুদে ঋণ নেয়, আর বেশী সুদে ঋণ দেয়। সুদী ব্যাংকের কারেন্ট একাউন্ট ছাড়া সকল প্রকার একাউন্ট সুদী একাউন্ট। তাই সুদী ব্যাংকের সেভিং একাউন্ট এবং সকল ধরনের ফিক্সড ডিপোজিট সুদী। চাই তা উচঝ হোক বা ঋউজ হোক অথবা সাধারণ ফিক্সড ডিপোজিট হোক; সবই রিবা নাসিয়্যাহ একাউন্ট। অনেকে মনে করেন সরকারী হলে সেটা আর সুদী হয় না। অথচ এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।
এছাড়া কারেন্ট একাউন্টেও ইদানিং সুদের মিশ্রণ দেওয়া হয়। এ ধরনের কারেন্ট একাউন্টকে SND কারেন্ট একাউন্ট বলে। এসকল একাউন্ট খোলাই সুদী চুক্তির গুনাহ। পরে সুদ গ্রহণ করলে তার গুনাহ ভিন্ন হবে।
সুদী ব্যাংকের সেভিং একাউন্ট খোলাটাই সুদী চুক্তির গুনাহ। তাই সুদ গ্রহণ না করলেও যে কোনো ধরনের সেভিং একাউন্ট করলে সুদী চুক্তির গুনাহ হবে।
২. ডি. পি. এস/ DPS ডিপোজিট পেনশন স্কীম : এটিও সম্পূর্ণ সুদী একাউন্ট।
৩. সুদী ব্যাংকের যে কোনো লোনই সুদী লোন। যেমন কার লোন, হোম লোন, হাউজ লোন, ইনভেস্টমেন্ট লোন, সিসি লোন, কৃষি লোন ইত্যাদি।
৪. প্রাইজবন্ড : সরকার প্রাইজবন্ড ছাড়ে। যা যে কোনো ব্যাংক থেকে ভাঙ্গানো যায়। একটা নির্ধারিত মেয়াদের পর লটারীর মাধ্যমে ড্র করা হয়। এরপর বিজয়ীদেরকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এই পুরস্কারটাই রিবা নাসিয়্যাহ বা সুদ। প্রাইজবন্ড ক্রয়ের মাধ্যমে ব্যাংককে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। আর ব্যাংক প্রাইজ বা পুরস্কার দেয়ার নামে ক্রেতাকে সুদ দিচ্ছে।
৫. ক্রেডিট কার্ড : ক্রেডিট কার্ড মূলত এক প্রকার সুদভিত্তিক লোন কার্ড। কেননা এই কার্ডের চুক্তিপত্রেই লেখা রয়েছে যে, মিনিমাম ডিউ টাইমে/ডেটে বাকী পরিশোধ না করলে প্রতিদিন নির্দিষ্ট হারে সুদ দিতে হবে। যার ফলে অধিকাংশ ক্রেডিট কার্ড হোল্ডারই সুদের আওতায় পড়ে যান। এই সুদ রিবাদ দাইনের অন্তর্ভুক্ত, যা রিবা নাসিয়্যাহ। তাই সুদ থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই যথাসময়ে বাকী পরিশোধ করে দিতে হবে। তাহলে আর সুদী কারবার হবে না।
৬. ক্রেডিট কার্ড দ্বারা এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন করলে যে চার্জ নেওয়া হয় তা সুস্পষ্ট সুদ। কেননা কার্ডের ফি তো নিচ্ছেই। এখন অতিরিক্তটা ঋণের বিনিময়ে হচ্ছে।
৭. বন্ড : সরকারী এবং বেসরকারী বন্ড। এগুলো সম্পূর্ণ রিবা নাসিয়্যাহ। সরকারী হওয়ার কারণে কিংবা নির্দিষ্ট কোনো বাণিজ্যিক প্রকল্প, কোনো কোম্পানী বা রাস্তা-ঘাট কিংবা ব্রীজ নির্মাণের জন্য ঋণ নেওয়া হচ্ছে এমন কথা উল্লেখ করার কারণে কেউ কেউ মনে করতে পারেন যে, এটা সুদী হবে না, কিন্তু এ ধারণা ভুল। স্টক এক্সচেঞ্জ বা বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্য যে কোনো ব্যাংকে যে বন্ড ক্রয়-বিক্রয় হয় তাতে সুনির্দিষ্ট সুদের ঘোষণা দেওয়া থাকে। এ সকল বন্ডও সুদী বন্ড।
৮. স্টুডেন্ট লোন : বিভিন্ন ব্যাংক কর্তৃক স্টুডেন্ট লোন দিয়ে যা অতিরিক্ত নেওয়া হয় সেটাও সুদ। এটি ইন্টারেস্ট বা সার্ভিস চার্জ যে নামেই নেওয়া হোক না কেন।
৯. লটারী : রেডক্রিসেন্ট বা এজাতীয় সরকার অনুমোদিত কিছু প্রতিষ্ঠান দশটাকা বিশটাকা মূল্যের লটারী টিকেট ছাড়ে। এক লক্ষ, দুই লক্ষ টাকা, গাড়ি, মোটর সাইকেল ইত্যাদি পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা নেয়া হয়।
এক্ষেত্রে পুরস্কার পায় কেবল দু’তিনজন। আর বাকিরা কিছুই পায় না। তাদের মূল টাকাই গচ্চা যায়। এধরনের লেনদেনকেই শরীয়তের ভাষায় ‘কিমার’ বলে। যা সম্পূর্ণ হারাম। আর এক্ষেত্রে সবাই তো অতিরিক্ত পাওয়ার উদ্দেশ্যেই দশ-বিশ টাকায় লটারি ক্রয় করে থাকে। যদিও কেউ পুরস্কার পায় আর কেউ পায়া না। তাই এতে সুদও বিদ্যমান।
১০. পোস্ট অফিসের সঞ্চয়পত্র : পোস্ট অফিসের মাধ্যমে সরকারীভাবে বিভিন্ন নামের সঞ্চয়পত্র স্কীম রয়েছে। এগুলোর প্রত্যেকটি সম্পূর্ণ সুদী, রিবা নাসিয়্যাহ-এর অন্তর্ভুক্ত।
১১. জমি বন্ধক : বাংলাদেশের প্রায় সকল এলাকায় বহুল প্রচলিত লেনদেন হল, জমি বন্ধক রীতি। জমির মালিক একটা মোটা অংকের টাকা নেয়। বিনিময়ে বন্ধক গ্রহীতা জমিটি ভোগ করে এবং মেয়াদান্তে মালিক পুরো টাকা ফেরত দিয়ে জমিটি বুঝে নেয়। এক্ষেত্রে ঋণ গ্রহিতার জন্য বন্ধকি জমি ভোগ করা রিবা নাসিয়্যাহর অন্তর্ভুক্ত, যা হারাম। কোনো কোনো এলাকায় এটাকে জমি কট দেওয়াও বলে। আবার কেউ জমি খায়খালাসি দেওয়া বলে। নাম যাই হোক লেনদেন এবং হুকুম একই।
১২. বাড়ি বন্ধক : জমি বন্ধকের মত ঢাকা শহরে বাড়ি বন্ধকের প্রথা চালু হয়েছে। তা হল, বাড়িওয়ালা নিজ প্রয়োজনে ৫ বা ১০ লক্ষ টাকা ঋণ নেয়। বিনিময়ে পাঁচ বছর বা দশ বছর ঋণদাতাকে তার ফ্ল্যাটে বিনা ভাড়ায় থাকার সুযোগ দেয়। পরবর্তীতে যখন ঋণ পরিশোধ করে দিবে তখন এই চুক্তি সমাপ্ত হবে। এই লেনদেনও সম্পূর্ণ সুদী ও রিবা নাসিয়্যাহর অন্তর্ভুক্ত। যা সুস্পষ্ট হারাম। কেননা ঋণের কারণেই এ সুবিধা পাচ্ছে।
১৩. বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে সিকিউরিটি বেশি দিলে ভাড়া কমিয়ে দেওয়া : বাড়ি বন্ধকের উপরোক্ত পদ্ধতি নাজায়েয হওয়ার কারণে অনেকে হীলা হিসাবে এ পদ্ধতি চালু করেছে। যেমন, কোনো বাড়িওয়ালার টাকার প্রয়োজন । যেখানে সাধারণ হিসেবে অগ্রিম নেয়ার কথা ২০ হাজার টাকা, কিন্তু এর স্থলে বাড়িওয়ালা পাঁচ লক্ষ টাকা সিকিউরিটি মানি দাবি করে এবং এর বিনিময়ে ভাড়া কমিয়ে দেয় (যেমন, সাধারণ হিসেবে ভাড়া যদি হয় ১০ হাজার টাকা এক্ষেত্রে ভাড়া হবে ১/২ হাজার টাকা)- এটাও হারাম। কেননা ৫ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়ার কারণেই মূলত তার থেকে ভাড়া কম নিচ্ছে। এই ঋণকে ছুতা হিসেবে সিকিউরিটি মানি বলা হয়েছে। মূলত সিকিউরিটি মানি তো সেটাই যা সচরাচর সবাই দিয়ে থাকে। যা দিলে ভাড়া কমানো হয় না। ভাড়া স্বাভাবিকই থাকে। নাম যাই দেওয়া হোক ফেরতযোগ্য ৫ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়ার কারণেই ১০ হাজার টাকার ভাড়া ১/২ হাজারে নেমে এসেছে।
ফাযালা বিন উবাইদ রা. বলেন, যেই ঋণ কোনো মুনাফা নিয়ে আসে তা রিবার প্রকারসমূহের একটি। -সুনানে বাইহাকী ৫/৩৫০
ইমাম মালেক রাহ. বর্ণনা করেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, যে ব্যক্তি কোনো বস্তু ঋণ দিবে সে যেন অতিরিক্ত কোনো কিছু শর্ত না করে। যদিও এক মুঠো ঘাস হোক না কেন। -মুআত্তা মালেক, হাদীস ২৫১৩
১৪. ঐচ্ছিক প্রভিডেন্ট ফান্ড : সরকারী বা বেসরকারী ঐচ্ছিক প্রভিডেন্ট ফান্ড সুদী ফান্ড। ঐচ্ছিক হওয়ার কারণে এতে টাকা জমা দেওয়ার অর্থ ঋণ দিয়ে পরবর্তীতে অতিরিক্ত নেওয়া। আর এটাই রিবা নাসিয়্যাহ। আর পুরো সরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রভিডেন্ট ফান্ডের বাধ্যতামূলক যে অংশ এই ফান্ডে কেটে রাখা হয় এবং পরবর্তীতে এর সাথে অতিরিক্ত যে অংশ দেওয়া হয় তা সুদ নয়। তা নেওয়া জায়েয। তবে সরকারী প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক কেটে রাখার পাশাপাশি ঐচ্ছিকও কিছু কাটানোর সুযোগ থাকে। এক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকের অতিরিক্ত অংশ কাটানো সুদী চুক্তির অন্তর্ভুক্ত এবং এই অতিরিক্ত কর্তিত অংশের উপর উদ্বৃত্ত যা দিবে তা সুদ। তা নেওয়া বৈধ হবে না। তাই বাধ্যতামূলকের অতিরিক্ত উক্ত ফান্ডে জমা রাখাও জায়েয হবে না। কেননা ঐচ্ছিক অংশ রাখার অর্থই হল সুদী চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া। এছাড়া স্বায়ত্ত¡শাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রভিডেন্ট ফান্ডের সকল টাকা সুদী ব্যাংক বা বীমাতে রেখে বৃদ্ধি করা হয়। পরবর্তীতে সেটিই তাদেরকে দেওয়া হয়। তাই এসকল প্রতিষ্ঠানের ঐচ্ছিক ও বাধ্যতামূলক প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমার অতিরিক্ত নেওয়া জায়েজ হবে না। কেননা সেগুলোও সুদের অন্তর্ভুক্ত।
১৫. লাভের হার নির্ধারণ না করে নির্দিষ্ট পরিমাণ মুনাফা প্রদানের শর্তে বিনিয়োগ করা: ব্যাংক ছাড়াও ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যবসায়ীদেরকে ব্যবসার জন্য টাকা প্রদান করে লাভ হিসেবে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়ার শর্ত করা হয় এটাও সম্পূর্ণ সুদী লেনদেন ও সুদী বিনিয়োগ। ব্যবসার জন্য দেওয়া আর লাভ দেওয়ার কথা হলেই অনেকে মনে করেন তা ইসলামী হয়ে যায়; সুদী থাকে না। অথচ ব্যবসার জন্য টাকা দিয়ে নির্ধারিত অংকের কিছু দেওয়ার চুক্তি বা শর্ত করাই সুদ ও রিবা নাসিয়্যাহ। এক্ষেত্রে হালালভাবে বিনিয়োগ করতে চাইলে ব্যবসার প্রকৃত লাভের শতকরা হার নির্ধারণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে লাভ হলে নির্ধারিত অংশ অনুযায়ী ভাগ পাবে। আর লাভ না হলে পাবে না।
কিন্তু পূর্বোক্ত লেনদেনে লাভ হিসেবে নির্দিষ্ট কিছু দেওয়ার কথা হলে চুক্তি অনুযায়ী সে তা দিতে বাধ্য থাকে। লাভ হোক বা না হোক সর্বাবস্থায় তাকে তা দিতেই হয়। এটাই সুদ। তদ্রƒপ কোনো কিছু নির্দিষ্ট না করে এমনিতেই ব্যবসার জন্য কাউকে টাকা দেওয়া। এক্ষেত্রে কথা হয় যে, লাভ হিসেবে প্রতিমাসে কিছু কিছু দিবে। এটাও সুদী চুক্তি এবং রিবা নাসিয়্যাহর অন্তর্ভুক্ত।
১৬. জুয়েলারী দোকানে স্বর্ণ বন্ধক রেখে সুদের উপর লোন প্রদান করা হয়। তেমনিভাবে ব্রাক, আশা, গ্রামের মহাজন সুদের ভিত্তিতে লোকদেরকে লোন দিয়ে থাকে। এগুলো সবই রিবা নাসিয়্যাহ।
১৭. ফরম বিক্রির ছুতায় রিবা নাসিয়্যাহ : কোনো কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা সোসাইটি মানুষকে সুদবিহীন লোন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু তাদের নিয়ম হল, ঋণের পরিমাণ অনুযায়ী ফরম কিনতে বাধ্য করা হয় আর ঋণের হার অনুযায়ী ফরমের দাম কম-বেশি হয়। যেমন, দশ হাজার টাকা ঋণের জন্য পাঁচশত টাকার ফরম ক্রয় করতে হয়। আর বিশ হাজার টাকার জন্য এক হাজার টাকার ফরম ক্রয় করতে হয় । আর নির্ধারিত মেয়াদের ভেতর তা পরিশোধ না করলে পরে আবারও আরেকটি ফরম ক্রয় করে পূরণ করতে হয়। বাহ্যিকভাবে এটি ফরম ক্রয়-বিক্রয়। কিন্তু এর মাধ্যমেই সুদ অগ্রীম আদায় করে নেওয়া হচ্ছে। এজন্যই ঋণের পরিমাণ বাড়লে ফরমের মূল্যও বাড়তে থাকে। এটা হচ্ছে রিবা নাসিয়্যাহ গ্রহণের হীলা-বাহানা ও ছুতা অবলম্বন।
১৮. কিস্তি-বিক্রি : বাজারে ফ্রিজ, কম্পিউটার ইত্যাদি ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী কিস্তিতে বিক্রি হয়। এই বিক্রির চুক্তিপত্রের মধ্যেই উল্লেখ থাকে সময়মত পরিশোধ করতে না পারলে একটা নির্দিষ্ট হারে সুদ বাড়বে। এটা রিবাদ দাইন ও রিবা নাসিয়্যাহর অন্তর্ভুক্ত। তাই এ ধরনের শর্ত সম্পূর্ণ নাজায়েয। আর বাধ্য হয়ে কেউ এধরনের শর্তে ক্রয় করলে নির্ধারিত মেয়াদের ভেতরই কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। নতুবা সুদ দেওয়ার গুনাহ হবে। অতএব এ ধরনের ক্ষেত্রে সুদ থেকে বাঁচতে চাইলে যথাসময়ে মূল্য পরিশোধ করে দিতে হবে।
১৯. ইনস্টাবাই : Instabuy বিভিন্ন কোম্পানী ক্রেডিট কার্ড হোল্ডারকে বিনা সুদে এবং অতিরিক্ত মূল্য ছাড়া ২/৩ বা ১২ কিস্তিতে মূল্য পরিশোধের সুবিধা দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রেও যথাসময়ে মূল্য পরিশোধ না করলে অতিরিক্ত সুদ দিতে হয়। এতে কারবারটি সুদী কারবারে পরিণত হয়ে যায়। তাই ইনস্টাবাই-এর সুবিধা গ্রহণ করলেও যথাসময়ে কিস্তি পরিশোধের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যথায় কারবার সুদী হয়ে যাবে। অর্থাৎ রিবাদ দাইনের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
আল্লাহ আমাদেরকে সকল প্রকার সুদ থেকে হেফাযত করুন, আমীন