দুআয়ে মাগফিরাতের আবেদন
বিগত কয়েক মাসে আমাদের পরিচিত কয়েক ভাই-বন্ধু ও তাদের আপনজন ইন্তেকাল করে গেছেন। আমাদের ভাই দারুল উলূম নেযামিয়া মোমেনশাহীর মুহতামিম মাওলানা আমীনুল হক ছাহেবের মুহতারামা আম্মা কয়েকদিন আগে ইন্তেকাল করেছেন। আমার সৌভাগ্য যে, আমার ছোট ছেলে মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ (নেযামিয়ার হিফ্য বিভাগের ছাত্র) মরহুমার ইন্তেকালের কিছুদিন পূর্বে তাঁর স্নেহলাভে ধন্য হয়েছে। এর এক দ্ইু মাস আগে তাঁর এক ভাইও ইন্তেকাল করে গিয়েছিলেন।
এই ১৪৩৬ হি.-এর জুমাদাল আখিরাতেই আমাদের মহব্বতের মানুষ জনাব হাজ্বী চাঁনখান ছাহেব ইন্তেকাল করেছেন। তিনি তাঁতিবাজার ইসলামিয়া মাদরাসা ঢাকা’র উস্তায মাওলানা হাবীবুর রহমান খান ছাহেবের বড় ভাই ছিলেন। বড় সাদামাটা মানুষ ছিলেন। বেশ কিছু ভালো গুণাবলীরও অধিকারী ছিলেন তিনি। মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া’র লাইব্রেরির পুরোনো সকল আলমারি তাঁর বানানো।
কয়েক মাস আগে জামিয়া রাহমানিয়া মুহাম্মদপুর সাত মসজিদ রোডের উস্তায মুহতারাম মাওলানা হিফযুর রহমান ছহেবের (লাকসামী হুজুর) মুহাতারামা আম্মা ইন্তেকাল করেন।
কয়েক মাস আগে বিন্নুরী টাউন করাচিতে আমাদের দাওরায়ে হাদীসের সহপাঠী মাওলানা রুহুল অমীন যশোরীও আখেরাতের পথে পাড়ি জমান। এর আগে গত রমযানে মাওলানা হাবীবুল্লাহ (বিন্নুরী টাউনে আমরা যখন তাখাসসুস পড়ি তখন তিনি সম্ভবত কানযুদ দাকায়েক বা কুদূরী পড়েন) ইন্তেকাল করে যান।
এ এক যাত্রা পরিক্রমা। এখানে আগমন মূলত ‘সেখানে’ গমনেরই ভূমিকা। সৌভাগ্যবান সে যে আল্লাহমুখী হয়ে, যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করে তারপর যায়। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সেই তাওফীক দিন। আমীন
আখেরাতের এই যাত্রীদের আপনজন ও আত্মীয়-স্বজনের খেদমতে আমরা তা’যিয়াত পেশ করছি। আল্লাহ তাআলা তাদের ‘সবরে জামীলে’র তাওফীক দিন। তিনিই তাদের ‘কাফীল’ হয়ে যান। এই মরহুমদের জন্য আমরা দুআ করছি। পাঠকবর্গের কাছেও তাদের জন্য (এবং কবরবাসী সকল মুসলিমের জন্য) দুআর আবেদন করছি, আল্লাহ যেন তাদের ক্ষমা করে দেন, তাদের কবরকে নূরে নূরান্বিত করে দেন, তাতে রহমতের বারিধারা বর্ষণ করেন, সবার কবরকে জান্নাতের বাগিচা বানিয়ে দেন।
সর্বশেষ যে ইন্তেকালের সংবাদ এসে পৌঁছেছে তা হল, গত ২৮ জুমাদাল আখিরাহ শনিবার দিবাগত রাত আমাদের মুরুব্বী সাথী মুহতারাম মাওলানা রফীকুল ইসলাম ছাহেবের (প্রাক্তন উস্তাযে হাদীস ও ইফতার যিম্মাদার: দারুল উলূম খুলনা) বড় ছেলে বেরাদারে আযীয তামীম ইবনে রফীক আল্লাহর কাছে চলে গেছেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি খুব অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু ছবর ও শোকরের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছিলেন। বাবা-মা তার চিকিৎসা ও তা’লীম-তারবিয়াতের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও আল্লাহর ফযল ও করমে কুরআনের হাফেয হয়েছিলেন এবং মাশাআল্লাহ এ বছর যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসায় দাওরায়ে হাদীস পড়ছিলেন। সম্ভবত আজ থেকে বারো বছর আগে খুলনায় তাদের বাড়িতে তাকে দেখতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। মাওলানা হাসান জামীল বললেন, এই অধমকে মরহুম মহব্বত করতেন। সুযোগে অধমের সাথে দেখা করারও আকাক্সক্ষা ছিল। আমি যদি আগে জানতাম তাহলে হয়ত নিজেই গিয়ে তার সাথে দেখা করতাম। আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি, এই অল্পবয়স্ক নেক ছেলেটির ওসিলায় যেন তিনি আমাদের ক্ষমা করে দেন। আমীন।
আমরা বেরাদারে আযীয মরহুম তামীমের মুহতারাম বাবা-মা, তার নানাজান হযরত মাওলানা আবদুর রউফ ছাহেব (শায়খুল হাদীস: গওরহরডাঙ্গা মাদরাসা) এবং তার সকল আত্মীয়-স্বজন, উস্তাযবৃন্দ ও সহপাঠীদের খেদমতে তা‘যিয়াত পেশ করছি।
أحسن الله عزاءكم، وعظم أجركم، وغفر لميتكم.
ভাই তামীমের জন্য দুআ করছি, আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করেন।
মুহাম্মাদ আবদুল মালেক
১ রজব ১৪৩৬ হি.