মানুষের মনে অনেক ধরনের চিন্তা-ভাবনা জাগ্রত হয়। তাতে ভালো-মন্দ সব ধরনের চিন্তার সমাবেশ থাকে। ভালো চিন্তার পাশাপাশি জাগ্রত হয় মন্দ চিন্তা, আবার মন্দ চিন্তার পাশপাশি জাগ্রত হয় ভালো চিন্তা। ভালো আর মন্দ- এ দুটোর মধ্যে বাধে সংঘর্ষ অর্থাৎ বাহাছ-বিতর্ক। তাতে কখনও ভালো চিন্তার পক্ষ বিজয়ী হয় আবার কখনো বিজয়ী হয় মন্দ চিন্তার পক্ষ। যে পক্ষ বিজয়ী হয় শেষতক সে চিন্তা অনুসারেই ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট কর্ম সম্পাদনে অগ্রসর হয়। এই ধরুন, মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে নামায আদায় করার মতো একটি ভালো চিন্তা মনে জাগ্রত হল। অমনি না যাওয়ার চিন্তাও উপস্থিত। দু’ পক্ষের মধ্যে শুরু হল বাহাছ-বিতর্ক ও দলীল-প্রমাণ পেশ করার পালা। দু’পক্ষের তরফ হতেই পেশ হতে থাকল যুক্তি-তর্ক ও দলীল-প্রমাণ। এক পক্ষ মসজিদে যাওয়ার গুরুত্ব, ফযীলত ইত্যাদি উপস্থাপন করে মসজিদে যাওয়ার অনুকূলে দলীল দাঁড় করাতে থাকল, অপর পক্ষ যাওয়ার বিপক্ষে নানা রকম ওজর-আপত্তি ও অসুবিধার দিকগুলি তুলে ধরে ঘরেই নামায সেরে নেওয়ার জন্য দলীল দাঁড় করাতে সচেষ্ট হল। অবশেষে এ বাহাছ-বিতর্কে যে পক্ষ বিজয়ী হবে সে অনুযায়ীই মসজিদে যাওয়া বা না যাওয়ার কর্মটি সম্পাদিত হবে। মসজিদে যাওয়ার অনুকূল পক্ষ বিজয়ী হলে মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে নামায আদায় করা হয়ে উঠবে, আর না যাওয়ার পক্ষ বিজয়ী হলে মসজিদে যাওয়া আর হয়ে উঠবে না। এরূপ বাহাছ-বিতর্ক শুধু নামাযের জন্য মসজিদে যাওয়া বা না যাওয়ার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং মানুষের ঈমানী চিন্তা-চেতনা থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা আমল ও প্রত্যেকটা ভালো বা মন্দ চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্রেই মনের মধ্যে চলে থাকে এরূপ বাহাছ-বিতর্কের পালা। নফসের সাথে বাহাছ চলে প্রতিনিয়ত, প্রতি মুহূর্তে। আমরা ভেবেও দেখি না, প্রতিদিন কতবার কতভাবে মনের মধ্যে চলে থাকে এরূপ বাহাছ-বিতর্ক এবং কতবার কোন পক্ষ হয় বিজয়ী কিংবা পরাজিত।
মনের মধ্যে চলমান এরূপ বাহাছের মধ্যে নেতিবাচক পক্ষ নিয়ে থাকে নফসে আম্মারাহ তথা কু-প্রবৃত্তি। আর নফসে আম্মারার সহযোগী হল শয়তান। শয়তানের পক্ষ থেকে সে পায় সমর্থন ও মদদ। আর ইতিবাচক পক্ষ নেয় ফিতরতে সালীমা তথা সু-স্বভাব বা সু-প্রবৃত্তি। আর ফিতরতে সালীমা বা সু-স্বভাবের সহযোগী হল ফেরেশতা। ফেরেশতার পক্ষ থেকে সে পায় সমর্থন ও মদদ। প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে রয়েছে এরূপ সমর্থন ও মদদকারী শয়তান ও ফেরেশতা। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের প্রত্যেকের সাথে নিযুক্ত রাখা হয়েছে তার সহযোগী জিন তথা শয়তান ও সহযোগী ফেরেশতা।-মুসনাদে আহমদ ৩৬৪৮
কলব (মন/অন-র/হৃদয়) হল সব রকম ভাবনা- চেতনার আকর। মনের মধ্যে আছে একটি স্মৃতিভাণ্ডার। সেই স্মৃতিভাণ্ডারে সঞ্চারিত হয় ও সঞ্চিত থাকে সব রকমের আবেগ, অনুভূতি, কল্পনা, অনুমান, সংবেদন ইত্যাদি। এসবের কোনোটি যখন চিন্তা ও ইচ্ছায় রূপ নিয়ে কোনো লক্ষ্যে অগ্রসর হতে চায়, তখন মন তাকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। এ হিসাবে মনকে তুলনা করা যায় একটা ইঞ্জিনের সাথে। আর ঐ চিন্তা বা ইচ্ছাকে তুলনা করা যায় একজন আরোহীর সাথে। আমাদের জড় দেহ হল সেই গাড়ির বডি সমতুল্য। আর রূহ তথা আত্মা বা প্রাণ হল ইঞ্জিনের শক্তি সমতুল্য। আত্মার শক্তিতে মনরূপ ইঞ্জিন তার গাড়ির বডি তথা এই জড় দেহ নিয়ে অগ্রসর হয় গন-ব্যের দিকে। অবশ্য এই জড়দেহ ছাড়াও রূহ (আত্মা/প্রাণ) ও কলবের আরো একটা অজড় দেহ রয়েছে, যাকে বলে জিসমে মিছালী তথা প্রতীকী বা রূপক দেহ। নিদ্রাবস্থায় এই জিসমে মিছালী নিয়েই আত্মা ও কলব বিচরণ করে থাকে। উল্লেখ্য, নিদ্রার সময় পরমাত্মা বিচরণে বের হয়। জীবাত্মা তখনও জড় দেহে বিদ্যমান থাকে, ফলে জড় দেহ বেঁচে থাকে।
কলব তথা ইঞ্জিন যেদিকে চলে জড় দেহরূপ গাড়ির বডিও সেদিকেই চলে। রূহ, কলব ও জড়দেহ এই তিনটি মিলেই হল একটি গাড়ি। এই গাড়ির চালক হয়ে থাকে ফিতরতে সালীমা (সুস্থ স্বভাব) কিংবা নফস (কু-প্রবৃত্তি)। ফিতরতে সালীমা হল মানুষের মধ্যে আল্লাহপ্রদত্ত একটি সুস্থ স্বভাব, যা মানুষকে ইতিবাচক পথের নির্দেশনা দিয়ে থাকে। কুরআন মজীদের একটি আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত স্বভাব-প্রকৃতি (র অনুসরণ কর) যার উপর তিনি মানবকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোনো পরিবর্তন নেই। এটাই সঠিক দ্বীন।-সূরা রূম : ৩০
এ আয়াতে ফিতরত বলে ফিতরতে সালীমা তথা সুস্থ স্বভাবকেই বোঝানো হয়েছে, যা মানুষকে দ্বীনসম্মত ইতিবাচক পথের দিক-নির্দেশনা দিয়ে থাকে। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে জন্মগতভাবে এ স্বভাব প্রদত্ত হয়ে থাকে। এ সম্বন্ধে হযরত আবু হুরায়রা রা. কর্তৃক বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, প্রত্যেক সন্তান ফিতরতে সালীমার উপর জন্মগ্রহণ করে, তারপর তার পিতা-মাতা তাকে ইয়াহুদী বানায় বা নাসারা (খৃষ্টান) বানায় কিংবা মাজুসী (অগ্নিপূজক) বানায়। যেমন একটি অবলা প্রাণী একটি সুস্থ বাচ্চা জন্ম দেয়, তোমরা সেই বাচ্চাদের মধ্যে কর্তিত কান বিশিষ্ট কোনো শাবক দেখতে পাও কি?-সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম
এ হাদীসে বোঝানো হয়েছে যে, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে জন্মগতভাবে যে স্বভাব প্রদত্ত হয় তা তাকে ইতিবাচক পথের দিক-নির্দেশনা দেয়, নেতিবাচক পথের দিক-নির্দেশনা দেয় না; বরং পরবর্তীতে পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতার প্রভাবে তার মধ্যে নেতিবাচক চিন্তা-চেতনার উদ্রেক হয়। যেমন একটি প্রাণীর বাচ্চা জন্মগতভাবেই কর্তিত কান বিশিষ্ট হয় না, পরবর্তীতে মানুষ তার কান কেটে খুঁতযুক্ত করে দেয়।
সারকথা, মানুষের মধ্যে জন্মগত যে সুস্থ স্বভাব সেটাই হল ফিতরতে সালীমা। পক্ষান্তরে নফস বা প্রবৃত্তি হল মানুষের মধ্যে রাখা এমন এক শক্তি যাতে ভালো মন্দ উভয় বৃত্তি থাকে। উভয় রকম প্রভাব গ্রহণের যোগ্যতাই আল্লাহ তার মধ্যে রেখেছেন। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে (তরজমা) শপথ (মানুষের) নফসের এবং যিনি তাকে (সবদিক থেকে) সুসমঞ্জস করেছেন। অতঃপর তিনি তার (নফসের) মধ্যে ভালো ও মন্দের বৃত্তি দিয়ে দিয়েছেন। যে নফসকে পবিত্র করে সে নিশ্চিত সফলকাম হয় আর যে তাকে কলুষিত করে সে ব্যর্থমনোরথ হয়। -সূরা আশ-শামস : ৭-১০
এই আয়াতে বোঝানো হয়েছে যে, নফসের মধ্যে ভালো মন্দ উভয় রকম প্রভাব গ্রহণের যোগ্যতা রাখা হয়েছে। যখন সে শয়তানের কু-মন্ত্রণা কিংবা পারিপার্শ্বিকতার কু-প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয় এবং নেতিবাচক দিকটি তার মধ্যে প্রবল হয়ে উঠে তখন সে হয় নফসে আম্মারাহ বা কু-প্রবৃত্তি। আবার ক্রমাগত নফসের কথা অমান্য করতে থাকলে, মন্দকে বারবার তার সামনে মন্দ হিসেবে তুলে ধরতে থাকলে এবং প্রতিনিয়ত সু-দিক-নির্দেশনা প্রদান অব্যাহত রাখলে সেও মন্দকে মন্দ বলতে শেখে এবং মন্দের পক্ষে উস্কানী বন্ধ করে দেয়। এ পর্যায়ে উপনীত হলে তখন নফসকে বলা হয় নফসে লাওয়ামাহ তথা মন্দকে তিরষ্কারকারী প্রবৃত্তি। তারপর এ অবস্থা আরও অব্যাহত থাকলে একপর্যায়ে নফসের পক্ষ থেকে এতমিনান হওয়া যায় যে, সে আর মন্দের উষ্কানী দিবে না। নফস এ পর্যায়ে উপনীত হলে তাকে বলা হয় নফসে মুতমায়িন্না অর্থাৎ এমন নফস, যার ব্যাপারে এতমিনান হওয়া যায় এবং যার ব্যাপারে আশঙ্কামুক্ত থাকা যায়। তবে স্বভাবগতভাবে নফসের মধ্যে কু-প্রভাব গ্রহণের বৃত্তি প্রবল থাকায় এবং শুরু থেকেই শয়তান কর্তৃক তাকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা জোরদার হওয়ায় নফস বলতে নফসে আম্মারাহ তথা কু-প্রবৃত্তিকেই বোঝানো হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত তিনটি শব্দ অর্থাৎ নফসে আম্মারা, নফসে লাওয়ামা ও নফসে মুতমাইন্না, কুরআন মজীদে বিদ্যমান রয়েছে। তবে উল্লেখিত অর্থেই সেখানে এই শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে এমন মনে করা ঠিক নয়। এটা সুফিয়ায়ে কেরামের একটি পরিভাষা।
যাহোক, বলা হচ্ছিল যে, মনরূপ ইঞ্জিনের (গাড়ির) চালক হয়ে থাকে এই ফিতরাতে সালীমা কিংবা নফস তথা কু-প্রবৃত্তি।
যখনই মনের মধ্যকার আবেগ, অনুভূতি, কল্পনা, অনুমান ও সংবেদন ইত্যাদির কোনোটি চিন্তা ও ইচ্ছায় রূপ নিয়ে কোনো দিকে অগ্রসর হতে চায় এবং মনরূপ ইঞ্জিন তার গাড়ি নিয়ে তাকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে মনস্থ করে, তখনই ফিতরতে সালীমা ও নফসের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়-কে চালকের আসনে আসীন হবে। শুরু হয় দুই চালকের মধ্যে যুক্তি-তর্ক ও দলীল-প্রমাণ দিয়ে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করার বাহাছ বা বিতর্ক। তাতে যে বিজয়ী হয়, সে-ই চালকের আসনে সমাসীন হয় এবং গাড়িকে নিয়ে চলে তার পছন্দের গন্তব্যের দিকে। আর জড়দেহ সেই ইঞ্জিনের সাথে যুক্ত হয়ে তার অনুসরণ করে। তাই ভালো চিন্তা-চেতনাকে চূড়ান্ত ইতিবাচক গন্তব্যে পৌঁছাতে হলে শয়তান বা নফসে আম্মারার সাথে বাহাছ করে ফিতরতে সালীমা তথা সু-স্বভাবকে বিজয়ী হতে হয়। সে জন্য জানতে হয় নফসে আম্মারাকে পরাস- করার মতো যুক্তি-তর্ক ও কৌশলাদি। নফসের সাথে বাহাছ’ শিরোনামে এরূপ প্রতীকী বাহাছসমূহের বিবরণ ও তাতে বিজয়ী হওয়ার মতো কৌশলাদি নিয়েই আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
বিষয়টির গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা, নফসে আম্মারাহ থেকে মুক্ত নয় কেউ। নফসে আম্মারার পক্ষ হতে ক্ষতির আশংকামুক্ত নয় কেউ। অতএব কেউ নফসে আম্মারাহ ও নফসে আম্মারার মন্দ উস্কানী থেকে নিরাপদ নয়। তদুপরি নফসে আম্মারার সহযোগী শয়তানও রয়েছে প্রত্যেকের সাথে। ভালো-মন্দের বিবেচনা বাদ দিয়ে অবলিলায় জীবন চালাতে চায় যারা, তাদের কথা ভিন্ন। তারা কোন চিন্তার পরিণতি কী হবে তা গুরুত্বের সাথে না নিলে সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু যে মুমিনের ব্রত থাকবে মন্দ চিন্তাকে প্রতিহত করে ভালো চিন্তাকে বিজয়ী করা এবং তদনুযায়ী ভালো-চিন্তা-চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করা ও ভালো কর্ম সম্পাদন করা, তাকে অবশ্যই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিতে হবে।
মনের মধ্যে কখন কোন ধরনের আবেগ অনুভূতি প্রবেশ করবে, কখন মনের পর্দায় কোন আবেগ অনুভূতি আবির্ভুত হবে, মন কখন কী বলে উঠবে, কোন চিন্তা মনের মধ্যে বারবার ঘুরপাক খেতে থাকবে তা কারও ইখতিয়ারি বিষয় নয়। এ বিষয়টি সম্পূর্ণ আল্লাহর ইখতিয়ারে। তবে চিন্তাকে সংকল্পের স্তরে পৌঁছানোর মধ্যে বান্দার ইখতিয়ার থাকে। এ জন্য কোন পাপ কাজের সংকল্প করলে এবং সংকল্পজাত পদক্ষেপ শুরু করলে বান্দা পাপী হয়। কেননা, এটা তার নিজ ইখতিয়ারে ঘটে থাকে। অতএব মনে কোনো খারাপ আবেগ-অনুভূতি মাথা চাড়া দিয়ে উঠলে বা কোনো খারাপ ইচ্ছা জাগ্রত হলে সেটা যেন সংকল্পে রূপ নিতে না পারে সেজন্য মনের জবান দিয়ে তার বিপক্ষে বক্তব্য রাখতে হবে, সেই খারাপটার অনুকূলে নফস ও শয়তান বক্তব্য রাখলে নফস ও শয়তানের সাথে বাহাছ করতে হবে, নফস ও শয়তানের পেশ করা দলীল-প্রমাণ ও যুক্তিকে খণ্ডন করতে হবে। নফসের সাথে বাহাছ’ শিরোনামে এমন সব বাহাছের কথাই তুলে ধরা হবে। এসব বাহাছে বিজয়ী হতে পারলেই হবে নফসের সাথে জিহাদে বিজয়। নফসের সাথে জিহাদ করুন এবং মুজাহিদের কাতারে শামিল হোন।
তবে মনে রাখতে হবে যে, নফসের এই বাহাছে জয়লাভ করার জন্য আল্লাহ তাআলার রহমত একান্ত প্রয়োজন। আল্লাহ তাআলার রহমত ব্যতীত শুধু যুক্তি-তর্ক দিয়ে জয়লাভ করা সম্ভব নয়। সুতরাং এই বাহাছের শুরু হবে ‘আউযুবিল্লাহ ..’ দ্বারা, বাহাছের শেষও হবে ‘আউযুবিল্লাহ ..’ দ্বারা। অর্থাৎ সকল অবস্থায় এবং সর্বক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আশ্রয় প্রার্থনা করা এবং তাঁর রহমত কামনা করা।
‘নফসের সাথে বাহাছ’ শিরোনামে অদ্যাবধি কেউ কিছু লিখেছেন বলে আমার জানা নেই। তবে সুফিয়ায়ে কেরামের লেখায় এ সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত এসেছে পর্যাপ্ত। তারা নফসের বিভিন্ন মন্দ চিন্তা ও নেতিবাচক ইচ্ছাকে প্রতিহত করার কৌশলাদি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং এ ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে দিক নির্দেশনা পেশ করেছেন। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সুফিয়ায়ে কেরাম প্রদত্ত সেসব দিক-নির্দেশনা, বিভিন্ন মনীষীর ব্যক্তি-অভিজ্ঞতা ও আমার নিজের কিঞ্চিত বাস্তব চিন্তা-ভাবনার বর্ণনাকে ভিত্তি বানিয়ে তার উপর দাঁড় করানো হবে ‘নফসের সাথে বাহাছ’ শীর্ষক লেখা। আলোচনা ধারাবাহিকভাবে আলকাউসারের সংখ্যাসমূহে চলতে থাকবে ইনশাআল্লাহ। প্রতি সংখ্যাতেই ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের আলোচনা পেশ করা হবে, যাতে পাঠকবর্গকে পূর্বের কোনো সংখ্যা পাঠ না করার দরুণ পরবর্তী কোনো সংখ্যার আলোচ্য বিষয় পাঠ করতে ও বুঝতে বেগ পেতে না হয় এবং প্রতি সংখ্যাতেই তারা ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের আমেজ অনুভব করতে পারেন। আলোচনা তাত্ত্বিক ভঙ্গিতে নয়; বরং গল্পের ভঙ্গিতে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হবে, যাতে পাঠকবর্গ গল্পের আমেজে আত্মিক বিষয়াদির তাত্ত্বিক জাটিলতা অতিক্রম করতে সক্ষম হন।