৪৩ বছর : না-দাবির স্বাধীনতা !
ব্যক্তি মানুষের স্বাধীনতার গুরুত্বই রাষ্ট্রের স্বাধীনতার তাৎপর্য আমাদের সামনে স্পষ্ট করে তুলে। মানুষের নানা মাত্রিক স্বাধীনতা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাআলার দান। স্বাধীনতার অবয়ব ও অনুভ‚তি ধারণ করার উপলক্ষ বিভিন্ন হলেও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, এ সবই বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার ইহজাগতিক বড় উপহার। সে হিসেবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের বাসিন্দা হিসেবে আমরা প্রত্যেকেই আল্লাহ তাআলার প্রতি কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ এ স্বাধীনতা অর্জনে বিভিন্নভাবে যারা শ্রম ও ত্যাগ দিয়েছেন তাদের সবার প্রতিও। আর এ কৃতজ্ঞতার প্রমাণ আমাদের দিতে হবে অর্জিত স্বাধীনতাকে সুরক্ষার মধ্য দিয়ে। স্বাধীনতাকে আরও অর্থবহ ও সুফলদায়ক করার মধ্য দিয়ে। বিশেষত দুনিয়ায় স্বাধীনতার নেয়ামতপ্রাপ্ত বান্দাদের দায়িত্ব হচ্ছে স্বাধীনতার মূল দাতা আল্লাহ তাআলার প্রতি কৃতজ্ঞতা-প্রকাশক বিশ্বাস অভিব্যক্ত করা এবং সে অনুযায়ী আমল-আচরণ করা। কিন্তু অন্য অনেক নেআমত হাতে আসার পর মানুষ যেমন তার দায়িত্ব ভুলে যায়-এক্ষেত্রেও ঘটছে সেটিই। স্বাধীনতা অর্জনের পর স্বাধীনতার সুরক্ষা এবং আল্লাহ তাআলার হুকুমের আনুগত্য করার দায়িত্বটিই যেন আমরা ভুলতে বসেছি। একারণে স্বাধীনতার সুফল ভোগের পরিবর্তে আমরা অনেক সময় উল্টো ফল ভোগ করতেও বাধ্য হতে চলেছি।
এখানে একটি বিষয় স্মর্তব্য যে, স্বাধীনতার আগে স্বাধীনতা বিষয়ক সব চেষ্টার কেন্দ্রবিন্দু ছিল স্বাধীনতা অর্জন। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের পরের চেষ্টার অবয়ব একই রকম হতে পারে না। এখন সব চেষ্টার মূল লক্ষ্য থাকবে স্বাধীনতা রক্ষা। অর্জন আর রক্ষার এ ভিন্নতা আসলে ভিন্নতা নয়, বরং সম্পূরণ বা পরিপূরণের মতো। অথচ একশ্রেণীর মানুষের আচরণ ও চিৎকারে এ-দুটি বিষয়ের সম্বন্ধ গুলিয়ে যাওয়ায় স্বাধীনতার চেহারা ও ধারণাটাই কিছুদিন যাবৎ প্রশ্নবিদ্ধ হতে চলেছে বলে অনেকে মনে করেন। যে কারণে পরাধীনতার পরোক্ষ নিয়ামকগুলোই কেবল নয়, প্রত্যক্ষ কিছু কিছু কারণও দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর গুলিতে গত একযুগ যাবৎ শত শত বাংলাদেশী নাগরিক নিহত হওয়া। এর সঙ্গে আহত ও অপমানিত হওয়ার হাজার হাজার ঘটনা তো আছেই। অবশ্য এর ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনা সময় থেকেই। কোনো কোনো সময় একদিনের সীমান্ত গুলিবর্ষণে ৩/৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কোনো কোনো মাসে ভারতীয় বিএসএফ-এর এ-জাতীয় গুলিবর্ষণের ঘটনাও বার বার ঘটেছে। ঈদ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দিবসেও এমন ঘটনা ঘটেছে। স্বীকার-অস্বীকার, পাল্টা অভিযোগ, বিচারের আশ্বাসসহ অনেক কথাবার্তার পরও এ-জাতীয় ঘটনা এখনো পুরোদমে চলছে। কোনো কোনো মহল থেকে বলা হচ্ছে, আমাদের দিক থেকে স্বাধীনতা সুরক্ষায় প্রত্যয়ের অভাব ও কৌশলগত আত্মসমর্পণের কারণেই এ-জাতীয় স্বাধীনতা-পরিপন্থী ঘটনা কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। এই স্বাধীনতার মাসে বেদনাদায়ক এই বাস্তবতাটির দিকে সংশ্লিষ্ট সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নজর দেওয়া দরকার বলেই আমরা মনে করি।
ফেব্রুয়ারির দু’দিন সীমান্তে ভারতীয় বাহিনীর গুলিবর্ষণে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যার ঘটনা গণমাধ্যমে এসেছে। বিভিন্ন কারণে এ ঘটনাদুটির বৈশিষ্ট্য ও ফলাফল আরো মারাত্মক বেদনাবহ বলেই নাগরিক সাধারণের চোখে পড়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারতীয় বাহিনী বিএসএফ-এর গুলিতে কিশোরী ফেলানীর মর্মান্তিক হত্যা এবং চাপাইনবাবগঞ্জের গরুব্যবসায়ী হাবিবকে দিগম্বর করে অত্যাচার-অপমানের পর এই ২ ফেব্রুয়ারির দিনাজপুরের বিরামপুর সীমান্তে নিরীহ কৃষক নুরুল ইসলাম হত্যার ঘটনাটি সবাইকে ছুঁয়ে গেছে। কোনো রকম আইন লংঘন কিংবা উস্কানির ঘটনা ছাড়াই নজরুলকে চাষবাসরত অবস্থায় বাংলাদেশের সীমান্তের ভিতরে গুলি করে হত্যা করেছে ভারতের বিএসএফ। অপরদিকে এর দশদিন পর ১১ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহের মহেশপুরে লেবুতলা সীমান্তের ওপারে গরু আনতে গিয়ে বিএসএফ-এর গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় আমিরুল ইসলাম ও ফয়জুদ্দীন নামের দুই বাংলাদেশী। দশদিনের ব্যবধানে সীমান্তে দুটি গুলিবর্ষণের ঘটনায় ৩ জন মানুষ নিহত হওয়ার পর আরো কিছুদিন পার হয়ে গেল। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশের কোনো মহল [ক্ষমতাসীন+ বিরোধীদল (সংসদীয়)+বিরোধীদলসমূহ (আন্দোলনরত)] আনুষ্ঠানিকভাবে ওই ঘটনা-দুটির প্রতিবাদ জানালেন না। সংবাদপত্রে বিবৃতি দিলেন না; রাজনৈতিকভাবেও কোনো কথা বললেন না। মতাদর্শিক হিংস্র ও শ্লোগানবাদী গণমাধ্যম, সুযোগ সন্ধানী সুশীলদেরও কেউ ভাব ধরে কিছু উদগিরণের গরজও অনুভব করলেন না। স্বাধীনতার বিভিন্নমুখী কাণ্ডারীরা সবাই পাল্লা দিয়ে নীরবতা পালন করলেন। এ যেন বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিকদের সীমান্ত হত্যার ব্যাপারে জাতীয় উদ্যোগে ‘না-দাবি ঘোষণা’ করা হল।
আগে বিএসএফ গুলিবর্ষণের ঘটনাগুলোর সময় কোনো না কোনো পক্ষ থেকে কিছু প্রতিবাদ ও ক্ষোভ-নিন্দা ব্যক্ত হত। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং দেশের বড় দলগুলির পক্ষ থেকে প্রতিবেশী ভারতের কংগ্রেস-বিজেপি নামের দুই শক্তিকেন্দ্রের প্রতি (সামগ্রিকভাবে ভারতের আগ্রাসী নীতিরই প্রতি) আনুগত্য ও মেরুকরণে এসব প্রতিবাদের উৎসাহ ও প্রেরণা যেন সবার মাঝেই নিখোঁজ হয়ে গেছে। ভারতীয়দের আশীর্বাদ সংগ্রহের দৃষ্টিকটু মহড়ার নিচে প্রতিবাদ ও ক্ষোভ-নিন্দার লজ্জাকাতর হাতকচলানোর দিনটাও যেন এবার শেষ হয়ে গেল। স্বাধীনতার মাসে ভিনদেশী বাহিনীর গুলিবর্ষণে স্বাধীন নাগরিকদের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এবং এ-জাতীয় স্বাধীনতা-হন্তারক ঘটনা বন্ধের উপায় নিয়ে ভাবাই কি স্বাধীনতার প্রধান চেতনা নয়? অথচ আমাদের ক্ষমতা ধরে রাখা এবং ক্ষমতায় যেতে চাওয়া প্রধান কর্তা-কর্ত্রীদের এসব নিয়ে ভাবার কোনো অবকাশ আছে বলে মনেই হয় না।
কেউ চোখ না দিলেও ২ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিরামপুর সীমান্তে নজরুল ইসলাম হত্যার ঘটনাটি ছিল বড়ই হৃদয়স্পর্শী। যে কারণে ১৭ ফেব্রুয়ারি নয়া দিল্লিতে দুই দেশের স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের ১৬তম রুটিন বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের নাগরিক হত্যার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। অবশ্য বৈঠকের মূল এজেণ্ডাগুলো ছিল : সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, চোরাচালান ও মানবপাচার এবং সীমান্তের সামগ্রিক নিরাপত্তা। তবুও দু-চার শব্দের সেই ‘উদ্বেগ’টাই ঢাকার পত্র-পত্রিকায় খবর হয়ে প্রকাশ হয়েছে। ‘মুখরক্ষার’এই ‘উদ্বেগ’টুকু পেয়েই ঢাকার গণমাধ্যম যেন বেঁচে-বর্তে গেছে।
কী ঘটেছিল ২ ফেব্রুয়ারি বিরামপুর সীমান্তে? ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার একটি পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবরের কিছু টুকরো তুলে ধরা হলো- ‘ভোর থেকে ভারতের সীমান্তসংলগ্ন বাংলাদেশের জমিতে ধানের চারা রোপণ করছিলেন একদল শ্রমিক। সকাল ১০টার দিকে তাদের স্ত্রীরা পুঁটলিতে বাঁধা খাবার নিয়ে খেতের কাছে যান। শ্রমিকেরা একে একে জমি থেকে ওঠে আসেন। খেতের পাশের একটি পুকুরে হাত-মুখ ধুতে যান। তখনই রাইফেল হাতে ছুটে আসেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) একদল সদস্য। রাইফেলের নল শ্রমিকদের দিকে তাক করা। এ দৃশ্য দেখে শ্রমিক ও তাদের স্ত্রীরা ভয়ে তটস্থ। নজরুল ইসলাম নামের একজন শ্রমিক ভয়ে ভয়ে বিএসএফের এভাবে আসার কারণ জিজ্ঞেস করেন। আর ঠিক তখনই বিএসএফ তার বুক লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন নজরুল। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। তার স্ত্রীর আনা খাবার পড়ে থাকে। ...
স্বামী হারিয়ে পাগলপ্রায় পলাশী মাতম করতে করতে বলেন, ‘মুই দৌড়ে গিয়ে মোর গুলিবিদ্ধ স্বামীকে জড়িয়ে ধরনু। এডা (একজন) বিএসএফ আসে, মোর বুকত কষি লাথি মারল। মুক ফেলে দিল। তারপর মোর স্বামীর এক হাত ধরে এক বিএসএফ এবং আরেকটা বিএসএফ আসি তাঁর একটা পা ধরল। মোর স্বামীকে ছেঁচড়ে কাঁটাতারের বেড়ার কাছত নিয়ে গেল। মুই বিএসএফের পা ধরি কান্নাকাটি করনু, তাও মোক স্বামীক থুয়ে গেল না। হারা গরিব মানুস। ওরাই (স্বামী) কামাই করার লোক আছিল। কী দোষ আছিল মোর স্বামীটার? হামার দেশত আসে ক্যান তাঁরে গুলি করি মারি কুকুরের মতো ছেঁচড়ে নিয়ে গেল বিএসএফ? মুই বিচার চাও। ছৌল (সন্তান) দুইটাকে নিয়ে মুই এখন কটে যানু?’. ..
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজিবির এক সদস্য বলেন, নজরুলের বুকের ডান পাঁজরে একটি গুলির চিহ্ন রয়েছে। তাঁর লাশ টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ায় শরীরের পেছনের অংশ ছিলে গেছে।
এঘটনায় বেলা আড়াইটার দিকে দিনাজপুর বিজিবির সেক্টর কমান্ডার হ্লা হেন মং এবং বিএসএফের রায়গঞ্জ সেক্টর কমান্ড্যান্ট জশওয়াস্ত সিং পতাকা বৈঠক করেন। এ সময় সেখানে বিজিবি ২৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল জাহিদুর রশিদ এবং বিএসএফের ৯৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কমান্ড্যান্ট রাজেন সুদ উপস্থিত ছিলেন।
পতাকা বৈঠক শেষে হ্লা হেন মং সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘যে স্থানে হত্যাকাণ্ডটি হয়েছে, সেটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। তবু বিএসএফ বরাবরের মতো এ ঘটনার জন্য বাংলাদেশিদের দায়ী করার চেষ্টা করেছে। আমরা লিখিতভাবে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি।’ (আমার দেশ, ইনকিলাব, নয়াদিগন্তের নয়, বর্ণনাটি প্রথম আলোর)
কেউ কেউ বলতে চেষ্টা করেন, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়। এর আগে এ রাষ্ট্রটি ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের একটি অংশ-পূর্ব পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তান বা প্রধান অংশের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে এ অঞ্চলের মানুষের ক্ষোভ ও আন্দোলনে সহযোগিতা দিয়েছে আমাদের প্রতিবেশী বড় রাষ্ট্র-ভারত। বিশেষত ১৯৭১-এ ভারতের নানা মাত্রিক সহায়তা বাংলাদেশ গঠনে প্রধান ভ‚মিকা রেখেছে। সুতরাং ভারত আমাদের মুক্তিসংগ্রামের বন্ধু এবং পাকিস্তান হচ্ছে হানাদার। সেই হিসেবে পাকিস্তানের বর্বরতা এবং ভারতের বন্ধুত্বের কথা বারবার স্মরণ ও উচ্চারণই হচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। স্বাধীনতা রক্ষার নাম করে ভাবনার এই আঙ্গিক আমরা বদলাতে পারব না। সেজন্যেই ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে স্বাধীন বাংলাদেশী নাগরিকদের সীমান্ত হত্যা নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করার সুযোগ নেই।
অবশ্য অপরপক্ষ এ-জাতীয় মনোভাবকে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ না বলে ‘মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের শত্রু ছিল পাকিস্তান, বন্ধু ছিল ভারত। এটি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধকালের ঘটনা। ওই সময়ের চেতনাও বটে। কিন্তু ওই যুদ্ধকালীন ঘটনা বা চেতনাই মুক্তিযুদ্ধের স্থায়ী চেতনা হতে পারে না। কারণ স্বার্থের বিবেচনায় রাষ্ট্রের শত্রু-মিত্র পরিবর্তন হয়। ভারতের মুক্তিযুদ্ধকালীন সহযোগিতা ও বন্ধুত্ব প্রশংসনীয় হলেও পরের অব্যাহত সীমান্তহত্যা সে বন্ধুত্বের মুখে প্রশ্ন দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। অন্তত ভারতের এই আচরণ সংশোধনযোগ্য ও প্রতিবাদযোগ্য। এক্ষেত্রে আগের ‘বন্ধুত্বের’ দোহাই দিয়ে নীরব থাকা তো যায় না। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে হবে এবং স্বার্থ, সম্পর্ক, নিরাপত্তা ইস্যু সামনে নিয়ে ‘বন্ধুত্বে’র সম্পর্ক নতুনভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান চেতনা হলো : দেশরক্ষা, দেশের স্বাধীন নাগরিকদের জীবন ও মর্যাদা রক্ষা। একতরফা সম্পর্কের শ্লোগান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হতে পারে না। অন্তত ভারতের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য ও আত্মসমর্পণকে স্বাধীনতাযুদ্ধের চেতনা হিসেবে বার বার সাব্যস্ত করা উচিত নয়। তবে যারা এসব বলছেন তারাও এখন সীমান্তহত্যায় নীরবতা পালন করছেন। এ যেন ভারতের কোনো না কোনো মহলের প্রতি আনুগত্যে বাংলাদেশের সব মহলের সম্মিলিত অংশগ্রহণ। হত্যার মুখে, দখলের মুখে, আগ্রাসনের মুখে ‘না-দাবির নিঃশব্দ সম্মতি’ জ্ঞাপন। শত স্বাধীনতা-হন্তারক আচরণেও কোনো শব্দ না করাটা কিছুতেই সঙ্গত ও সমীচীন হতে পারে না। এবং এটা শুধু ভারতের বিপরীতেই নয়, পাকিস্তানের সঙ্গে, মিয়ানমারের সঙ্গে এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও এ-জাতীয় পরাধীনতাবাদী আচরণ ও অবস্থান কাম্য হতে পারে না। ৪৩ বছরে যেখানে কোনো মানুষ কৈশোর-যৌবন পেরিয়ে প্রৌঢ়ত্বে কদম রাখে- সেখানে আমাদের স্বাধীনতা যেন আরো ভঙ্গুর, আরো ক্ষয়িষ্ণু, আরো প্রত্যয়হীন হয়ে উঠেছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
দুনিয়াব্যাপী মুসলমানরা কষ্টে আছেন। চারদিকে নয়া উপনিবেশ ও আধিপত্যের পদধ্বনি। এর মধ্যেই আল্লাহ তাআলার কাছে আমাদের স্বাধীনসত্তা ও মানচিত্র রক্ষার প্রার্থনা পুনঃপুনঃ উচ্চারণ করতে হবে। আমাদের স্বাধীনতার জন্য রাব্বুল আলামীনের প্রতি কৃতজ্ঞতার আচরণ ও ঘোষণা দিতে হবে। একই সঙ্গে যথাযথ উপায়ে স্বাধীনতা সুরক্ষার প্রয়াস বজায় রাখতে হবে। বিশ্বাস, ঐতিহ্য ও প্রাত্যহিক আমলের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার সত্য আলো ও অনাবিল উজ্জ্বলতা ফুটিয়ে তুলতে হবে। হ