অন্যের সুবিধা-অসুবিধা
একদিন যোহরের নামায পড়ছিলাম। জামাত শেষে আমার সামনের কাতারে একজন মুসল্লীকে বিব্রতকর অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। পরে বুঝলাম, তিনি ঐ কাতারেই সুন্নত আদায় করতে চাচ্ছিলেন, কিন্তু তার পাশের মুসল্লী নামায শেষ করে চারজানু হয়ে বসার কারণে তার নামাযের জাগা আর নেই। তিনি বিরবির করে বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন আর এদিক সেদিক তাকাচ্ছিলেন। আমার দিকে নজর পড়তেই আমি হাতের ইশারায় তাকে পিছনের কাতারের খালি জায়গা দেখিয়ে দিলাম। তিনি সেখানে নামায আদায় করলেন। এতকিছু ঘটে গেল, অথচ যার কারণে এগুলো ঘটল তার খবরও নেই। তিনি দিব্যি বসে বসে নিজের মাঝে ডুবে আছেন।
আসলে তিনি খেয়াল করেননি। আমাদেরও অনেকসময় এমন হয়; আমি অন্যের কষ্টের কারণ হচ্ছি, কিন্তু আমার খবর নেই। এক্ষেত্রে সচেতনতার বিকল্প নেই। বিশেষ করে যখন আমি সমাজে চলাফেরা করি।
সমাজবদ্ধ জীবনের এ দিক নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা অতি ব্যাপক ও সুপরিকল্পিত। গত নভেম্বর ’১৪ সংখ্যায়ও এ বিষয়ে আমরা মাওলানা যাকারিয়া আব্দুল্লাহ ছাহেবের একটি লেখা পড়লাম- ‘অন্যের সাথে ঐ আচরণ করি যা পেলে আমি খুশি হই’। এই একটিমাত্র বাক্য বা মূলনীতি ইসলামের ‘মোয়াশারা’ নামক বিশাল বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করে। এর আলোকে আমরা সামাজিক জীবন পরিচালনা করলে আমরা নিজে শান্তি পাব, অন্যের কষ্টের কারণ হব না।
ঐ লেখায় আমরা পড়েছি, সহীহ মুসলিমে হযরত মিকদাদ রা. থেকে বর্ণিত, তারা কয়েকজন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসেছিলেন। রাতে মসজিদে অবস্থান করতেন। তো রাতে যখন আল্লাহর রাসূল মসজিদে আসতেন তখন এমনভাবে সালাম দিতেন যাতে কোনো ঘুমন্ত মানুষের ঘুম না ভাঙে এবং জাগ্রত মানুষ শুনতে পায়।
অন্যের সুবিধা-অসুবিধার প্রতি এই যে নবীজীর খেয়াল এটাই ইসলামের মোয়াশারা অধ্যায়ের মূলবার্তা।
তো যাইহোক পূর্বের ঘটনাটি এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের একটি অবলম্বনমাত্র। এমন অনেক ঘটনা চোখ মেললেই আমরা দেখতে পাই। তবে শিক্ষা নেয়ার জন্য একটি ঘটনাই যথেষ্ট। তবুও মসজিদ-কেন্দ্রিক আরেকটি বিষয় যখন মনে পড়ল সেটিও আলোচনা করা যেতে পারে। আমরা অনেক সময় মসজিদে সুতরা ছাড়া সুন্নতের জন্য দাঁড়িয়ে যাই। তাতে অন্য ভায়ের কষ্ট হয়। কখনো বা এমন স্থানে নামাযে দাঁড়িয়ে যাই যে অন্য মানুষের চলাফেরার অসুবিধা হয়। অনেক সময় উপায় থাকে না তা ঠিক, তবুও আমি যদি ইচ্ছা করি যে, অন্যের কষ্টের কারণ হব না; তাহলে কিন্তু পথ বের হয়ে যায়।
যাই হোক যিনি এই লেখাটির ওসিলা সে ভাইকেও মোবারকবাদ। তিনি নিজের কষ্টটা নিজের মাঝেই রেখেছেন। বিরক্তিকরভাবে নিজের বিরক্তির কথা প্রকাশ করেননি বা নিজের ইচ্ছা পূরণের জন্য আরেকজনের কষ্টের কারণ হননি। এ বিষয়টিও আমাদের খেয়াল রাখা দরকার- অপরের ভুল আচরণের কারণে যেন আমিও আরেকটি ভুল আচরণ করে অন্যের কষ্টের কারণ না হই। আল্লাহ আমলের তাওফীক দিন। আমীন