শার্লির ধৃষ্টতা ও দুঃখ : গোড়ায় হাত দিন
বেদনাদায়কভাবে আবারো তাওহীনে রেসালাত বা প্রায় পৌনে দু’শ কোটি মুসলমানের প্রাণপ্রিয় নবীজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি গোস্তাখির ঘটনা ঘটেছে ফ্রান্সে। পরের ঘটনাটি ঘটেছে অনেক ব্যাপক পরিসরে, দম্ভের সাথে। ফ্রান্সে প্রথমে যারা নবীজীর প্রতি গোস্তাখি করেছিল, তারা ছিল গুটিকয়েক মানুষ, আর তাদের অপকর্ম ছিল সীমিত পরিসরে। তারপরও সেটি ছিল এক ক্ষমাহীন ধৃষ্টতা। প্যারিসের শার্লি এবদো পত্রিকার কথাই আমরা বলছি। তারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যঙ্গচিত্র বা কার্টুন প্রকাশ করেছিল। একই কাজ বারবার করেছিল। এরপর কিছু বন্দুকধারী কর্তৃক পত্রিকার সম্পাদক ও একজন কার্টুনিস্টসহ ডজনখানেক লোককে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার জের ধরে পরের দিন আরো পাঁচ জন রাজপথে নিহত হয়। ঘটনাটি ঘটেছিল জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।
এরপরই শুরু হয় নবীজীর প্রতি অবমাননামূলক ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের উদ্ধত মহড়া। মিলিয়ন মার্চ নামে ৪০জনেরও বেশি বিশ্বনেতার (রাষ্ট্র পরিচালক) নেতৃত্বে কয়েক লাখ লোক শার্লি এবদো পত্রিকার পক্ষে এবং নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে শোভাযাত্রা বের করে। আর সেই শোভাযাত্রায় তারা কুখ্যাত ব্যঙ্গ কার্টুন সংবলিত ফেস্টুন বহন করে। তাদের উৎসাহ ও সমবেদনার ধাক্কায় শার্লি এবদো নামের ম্যাগাজিনটি প্রায় ৫০ লাখ কপির একটি সংস্করণ প্রকাশ করে এবং সেই সংস্করণের প্রচ্ছদে নতুন করে আবার ধিকৃত ব্যঙ্গচিত্র ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহার করা হয়, যেখানে তার নিয়মিত প্রকাশনা ৬০ হাজারের মত।
শার্লি এবদো কর্তৃপক্ষ এই ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস পেয়েছে তাদের প্রতি প্রকাশ করা সহানুভূতি ও নিরঙ্কুশ সমর্থনের কারণে। হাস্যকর ব্যাপার হল, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মতো গাজায় তাজা শিশু হত্যাকারী রাষ্ট্রনায়কও ছিল ওই বিশ্বনেতাদের তথাকথিত শান্তিমার্চের সারিতে। রাসূলে কারীমের প্রতি অবমাননাকারী পত্রিকা কর্তৃপক্ষের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থনের কারণে অবমাননাকর পরিস্থিতি এভাবেই আরো অবনতির দিকে যায়। ফ্রান্সসহ ইউরোপের বেশ কিছু দেশে মসজিদগুলোতে হামলা হয়। নিরীহ মুসলমানদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। সন্ত্রাস ও আবেগ-উন্মাদনার অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের অভিযুক্ত করা হতে থাকে। এ অভিযোগ ও বাচনিক আক্রমণের জের ধরেই মুসলিমবিশ্বের রাজনৈতিক নেতারাও শার্লি এবদোর রাসূল অবমাননাকারী কর্মীদের ওপর হামলার নিন্দা করে বিবৃতি দেন। কিন্তু শার্লি এবদোর ন্যক্কারজনক কান্ডের কোনো প্রতিবাদ করতে সাহসী হন না। কয়েকজন মুসলিম প্রতিনিধি প্যারিসের কথিত মিলিয়ন মার্চেও যোগ দিয়েছিলেন। অবশ্য মরক্কোর প্রতিনিধি মিছিলে শার্লি এব্দোতে প্রকাশিত কার্টুন সংবলিত ফেস্টুনের ব্যবহার দেখে মিছিল বয়কটও করেন। সবকিছু মিলিয়ে শার্লি এবদো অফিসে হামলা ও হত্যার প্রেক্ষাপটে গোস্তাখে রাসূলদের পক্ষেই পশ্চিমা দেশ ও গণমাধ্যমের বড় অংশ জোরালো ভূমিকা রাখতে শুরু করে। আর ঢালাওভাবে মুসলমানদের দোষারোপ করা হতে থাকে।
অথচ শার্লি এবদো অফিসে বন্দুক নিয়ে গিয়ে ওই হামলাটি কারা করেছে- সে ব্যাপারে প্রমাণিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কেউ নিশ্চিত হতে পারেনি। অভিযুক্ত দু’জন হামলাকারী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী তারা ছিলেন হামলাকারীদের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু আদালতের মাধ্যমে কিংবা প্রমাণিত হওয়ার কোনো স্বীকৃত উপায়ে এ অভিযোগটি প্রমাণিত হয়নি। নিহত দু’জনকে বলা হচ্ছে মুসলিম এবং একই সঙ্গে হামলাকারী। তাই ফ্রান্সে বসবাসরত এবং ইউরোপে অবস্থানকারী মুসলমানদের নানাভাবে নাজেহাল করা হচ্ছে। কিন্তু বিদেশি পত্রিকার পরিবেশিত তথ্য অনুযায়ী প্যারিসের পুলিশের প্রচারণার বিপরীতে ফ্রান্সের রাজনৈতিক দল-ফ্রন্ট ন্যাশনালের সাবেক প্রধান দাবি করেছেন, প্যারিসে শার্লি এবদোতে হামলার ঘটনাটি ছিল আমেরিকা ও ইসরাইলি এজেন্সিগুলোর যৌথ ষড়যন্ত্র। তিনি বলেছেন, নির্ভরযোগ্য তথ্য রয়েছে যে, ইসলাম ও পশ্চিমাদের মাঝে দূরত্ব ও যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টির জন্য এই কান্ডটি ঘটানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ফ্রান্সের পক্ষ থেকে স্বীকৃতি দেওয়ায় আমেরিকা ও ইসরাইল অসন্তুষ্ট ছিল। ষড়যন্ত্রমূলক এই হামলাটি ছিল সেই স্বীকৃতিরই প্রতিশোধ।
এ কথা ঠিক যে, শার্লি এবদোতে কারা হামলা করেছে নিশ্চিতভাবে সেটা প্রমাণিত হয়নি। একই সঙ্গে এটাও সত্য যে, হামলাকারীরা আইন নিজ হাতে তুলে নিয়েছেন এবং নিজ দেশীয় আইন লংঘন করেছেন। এজাতীয় আইন-অমান্যকারীরা সাধারণত বিভিন্ন পর্যায়েই নিন্দিত হয়ে থাকেন। কিন্তু হামলাটি কি প্রকৃতই মুসলমানদের কোণঠাসা করার ষড়যন্ত্র কি না সেটিও দেখার বিষয় রয়েছে। এবং এ জাতীয় হামলার উস্কানি দেওয়া ও প্রেক্ষাপট তৈরির পেছনে যারা ভূমিকা রেখেছিল তারাও কাদের হয়ে কাজটি করেছিল সেটিও খুঁজে দেখা দরকার। মূলত যারা হামলা করেছে, তাদের নিন্দা করতে হলে যারা কার্টুন ছাপিয়ে হামলার ক্ষেত্র তৈরি করেছে বলতে হবে, তারা অনেক বেশি নিন্দা ও ধিক্কারের কাজ করেছে। এ পর্যায়ে আমরা বলতে পারি, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য এবং বে-আইনি কাজ ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে মার্চ বা শোভাযাত্রার মাধ্যমে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া ভালো কাজ। কিন্তু এ ভালো কাজেরও আগের কাজ হচ্ছে শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার উপাদান (নবীজীর অবমাননা) নিঃশেষ করে দেওয়া এবং উস্কানিদাতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী হাতগুলোকে নামিয়ে দেওয়া। বিশ্বনেতারা পরের কাজটি করেছেন পরম উৎসাহে। কিন্তু আগের কাজটি একদমই করেননি; বরং তারা তাদের করণীয়ের বিপরীত ভূমিকা রেখেছেন। অথচ যদি তারা আগের কর্মটি করতেন, ১৭০ কোটি মুসলমানের প্রিয়নবীর অবমাননার প্রতিবাদ করতেন, শার্লি এবদোর ঘৃণ্য (কার্টুন) কর্মকান্ডের নিন্দা জানাতেন তাহলে অনেক ভালো করতেন। এতে উত্তেজনা প্রশমিত হত এবং প্রথম গর্হিত অন্যায়ের কর্তারা আস্কারা পেত না। দুঃখের বিষয় হল, ওটা তো তারা করেনইনি, উল্টো সবাই কার্টুন সংবলিত ফেস্টুন বহন করেছেন। কেউ কেউ এমন ফেস্টুন নিজের গায়ে পরিধান করেছেন- যেখানে লেখা ছিল -আমি শার্লি। এতে ওই পত্রিকা
আরো আস্কারা ও উৎসাহ পেয়েছে এবং এ কারণেই দ্বিগুণ উৎসাহে নবী-অবমাননার ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস পেয়েছে।
বিশ্বনেতাদের একপেশে ও হঠকারিতাপূর্ণ এই আচরণে দেশে দেশে আরও রক্তক্ষয়ের পথ তৈরি হয়েছে। নাইজারে গত কয়েকদিনে প্রায় ১০ জন বিক্ষুব্ধ নবীপ্রেমিকের মৃত্যু হয়েছে। পৃথিবীজুড়ে পৌনে দু’শ কোটি মানুষের হৃদয় ভেঙ্গে গেছে। প্রিয়নবীর অবমাননাকারীদের পাশে দাঁড়িয়ে কথিত বিশ্বনেতারা যেভাবে বৈধতার সনদ দিলেন তাতে নবীজীর উম্মতিদের হৃদয়ে হতাশা নেমে আসতে বাধ্য। এ হতাশা ও মর্মবেদনা নিঃসন্দেহে অনেক সংক্রামক ও শক্তির ধারক হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ইচ্ছাকৃতভাবেই বিশ্বের একটি চক্র আবার ক্রুসেডের অবতারণা করতে চায় পৃথিবীতে। এজন্য তারা বারবার বিনা কারণে মুসলমানদের অন্তরে জ্বালা সৃষ্টি করছে। এর জন্য ঠুনকো একটি অজুহাত ও শেস্নাগান তারা ব্যবহার করছে। তারা বলছে, এসবই মত প্রকাশের স্বাধীনতা। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। কে কার অবমাননা করছে সেটা বড় কথা নয়, বরং কারো মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করা যাবে না। কোনো মহান সত্তার অবমাননা করলেও করতে দিতে হবে। মূলত মতপ্রকাশের স্বাধীনতার শিরোনামে তারা নিজেদের কিছু গোষ্ঠীকে মুসলমানদের ধর্মীয় আবেগে আঘাত করার সুযোগ করে দিয়ে থাকেন। অথচ এ স্বাধীনতাটি যে শর্তযুক্ত তা তো পুরো বিশ্বেই স্বীকৃত। আমাদের দেশের কথাই ধরা হোক। এখানে প্রধানমন্ত্রী বা সাবেক কোনো বড় নেতার অবমাননার জন্য ইতিমধ্যেই শাস্তি হয়েছে। আদালত অবমাননার শাস্তি তো হরহামেশাই হয়ে থাকে। ধরা যাক আমেরিকা, বৃটেন বা ফ্রান্সের কথা। সে দেশের কোনো নাগরিক কি তাদের সামনে গিয়ে যাচ্ছেতাই গাল-মন্দ করতে পারবে? না আজ পর্যন্ত করতে পেরেছে? এরই মধ্যে খ্রিস্টান ধর্মের বর্তমান প্রধান পোপ স্বীকার করে বলেছেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতার সীমা থাকতে হবে। কোনো অবস্থাতেই মতপ্রকাশের কথা বলে কোনো ধর্মের বা গোষ্ঠীর শ্রদ্ধার পাত্রকে আঘাত বা অবমাননা করা যাবে না। সুতরাং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে নবী-অবমাননার ঘটনাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও অগ্রহণযোগ্য ও উস্কানিমূলক একটি প্রবণতা।
মুসলমানরা এমনিতেই অপরের শ্রদ্ধাভাজনদের অসম্মান করা থেকে বিরত থাকার শিক্ষা পেয়ে থাকে। কাউকে পীড়া দেওয়া, কষ্ট দেওয়া, আহত করার অনুমোদন ইসলাম দেয় না। অপর দিকে ধর্মীয়ভাবেও ইহুদী-খ্রিস্টানদের সাথে বিরুদ্ধতা থাকলেও তাদের নবীকে মুসলমানরা কখনো গালি দেয় না- গালি দিতে পারে না। ইহুদী-খ্রিস্টানরা মুসলমানদের নবীকে গালি দিলেও মুসলমানরা এর উল্টোটা করে না এবং করতে পারে না। কারণ হযরত মূসা ও ঈসা আলাইহিমাস সালামকে সম্মান করা মুসলমানদের ঈমানের অঙ্গ।
পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, মুসলমানরা আবেগপ্রবণ, মাথাগরম। অথচ বাস্তব ক্ষেত্রে নবীর প্রতি বিষোদ্গার এবং ঘৃণা প্রকাশের মতো জঘন্য কাজগুলো তারাই করছে, মুসলমানরা নন। তারপরও দোষ দেওয়া হচ্ছে মুসলমানদের।
শার্লি এবদোর প্রতি পশ্চিমা নেতাদের হাঁকডাক করে নিঃশর্ত সমর্থনদান বেশ কয়েকটি বিষয় ও ইস্যুকে নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতেই পৃথিবীর বহু দেশে লাখ লাখ মানুষ হত্যা করা হয়েছে। ইরাকে ১০ লাখ, ফিলিস্তিনে শিশুসহ হাজার হাজার, মিয়ানমারে মুসলমানদের হত্যা করে বাড়িঘর-ছাড়া করে দেওয়া হচ্ছে। হত্যা চালানো হচ্ছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও চীনে। এত অসংখ্য মুসলমানের হত্যা ও নিপীড়নের শিকার হওয়ার পরও বিশ্বনেতাদের একটি মিলিয়ন মার্চ তো দূরের কথা ২০-২৫ জনের ব্যানার-খবরও প্রকাশ হয়নি। কোনো যৌথ বিবৃতিও শোনা যায়নি। অথচ অপদার্থ ও অবমাননাকারী একটি পত্রিকার জন্য বিরাট হাঁকডাক দিয়ে বিশ্বনেতাদের অংশগ্রহণে মিলিয়নমার্চ করা হল। এতে মূলত কতটা ভারসাম্যপূর্ণ-ন্যায়ানুগ ও যৌক্তিক আচরণের নজির দুনিয়ায় স্থাপিত হয়েছে?
মুসলিম রাষ্ট্রগুলো পর্যন্ত শার্লি এবদোতে নবীজী অবমাননাকারী সম্পাদক-কার্টুনিস্ট হত্যার নিন্দা করল, কিন্তু বারবার নবীজীর যে ব্যঙ্গচিত্র ছাপানো হয়েছে শার্লি এবদোতে তার কোনো নিন্দা করল না এবং প্রতিকার চাইল না। এর মানে হল, শার্লি এবদোর অমার্জনীয় অপরাধ তাদের কারো চোখে ধরাই পড়ছে না। তারা শুধু পরের ঘটনাকেই বড় করে দেখছেন। আগের বর্বরতা ও ন্যক্কারজনক কান্ডের কিছুই দেখতে চাচ্ছেন না। এখন পর্যন্ত ওআইসির একটি জরুরি সভা করার প্রয়োজনীয়তাও তারা অনুভব করেননি।
আমরা মনে করি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার একটি সর্বজনীন সংজ্ঞা ও সীমা আলোচনা করে ঠিক করতে হবে এবং সেটা সবাইকে মানতে হবে। যারা এর বিরোধিতা করবে এবং স্বেচ্ছচারিতার পথে যাবে তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে যখনই মুসলমানদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত আসবে তখন বিশ্বের মুসলমানদের উচিত হবে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে থেকে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিবাদ জানানো। নিজেদের গণতান্ত্রিক ও নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করে নিজ নিজ সরকারকে বাধ্য করতে হবে ওই বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জোরালো প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করার। নিজ নিজ দেশে কূটনীতিকদের স্মারকলিপি দিয়ে প্রতিবাদ তুলে ধরতে হবে।
অবশ্য এ প্রসঙ্গে একটি কথা বলে রাখা ভালো যে, হুবেব নবী বা নবীপ্রেম উম্মতির জীবনে এমন এক হৃদয়-ভেজানো অধ্যায় যে, যারা নবীর ইশকে পড়ে যায় দুনিয়ার কোনো প্রাচীর, কোনো নিয়ম কিংবা ফতোয়া তাদের আবেগের গতি রোধ করতে পারে না। ধৃষ্ট নবী-অবমাননাকারীর টুটি চেপে ধরার জন্য সব কিছুই তারা উপেক্ষা করতে পারে। সুতরাং যতদিন নবী অবমাননার গোড়ায় হাত না দেওয়া হবে, যতদিন এসব নবী-অবমাননাকারীদের প্রতি হামলার কারণ বন্ধ না করা হবে ততদিন পর্যন্ত তাদের থামানো যাবে না। গাজী আলীমুদ্দীন অথবা মুমতাজ কাদেরীর মতো উৎসর্গিত প্রাণ যখন-তখন যে কোনো দেশে দাঁড়িয়ে যেতে পারে। কারণ, অবমাননার ঘটনা নবীর প্রেমে পাগল এসব বান্দাদের হঠাৎ-ই দাঁড় করিয়ে দেয়। এদের কে কবে কোথায় থামাতে পেরেছে? অতএব এদেরকে দমিয়ে দেওয়ার কসরত করার চেয়ে এমন লোক ও এমন অবস্থা যেন সৃষ্টিই না হয় সেদিকে মনোযোগ দেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।