সফর ১৪৩৬   ||   ডিসেম্বর ২০১৪

ইসলামে মধ্যপন্থা ও পরিমিতিবোধের গুরুত্ব

মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম

প্রশংসার ক্ষেত্রে (৩)

গেল দুই কিস্তির আলোচনা ছিল প্রশংসার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়িমূলক প্রান্তিকতা সম্পর্কে। বাড়াবাড়ির বিপরীত প্রান্তিকতা হল কার্পণ্য ও শিথিলতা। যে কোনও বিষয়ে মধ্যপন্থা -যা কিনা শ্রেষ্ঠতম পন্থা- অবলম্বনের জন্য উভয়বিধ প্রান্তিকতাই পরিত্যাজ্য। প্রশংসার ক্ষেত্রে আমরা যেমন বহুমাত্রিক বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়ে পড়ি তেমনি এক্ষেত্রে স্থানভেদে আমাদের কার্পণ্যও বড় কম নয়।

            এই দ্বিমুখী প্রান্তিকতা যে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির দ্বারা ঘটছে তা নয়, একই ব্যক্তি কোথাও প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তো কোথাও সে ব্যয়কুণ্ঠ- কারও প্রশংসায় সে একটি শব্দও খরচ করতে রাজি নয়। এক জায়গায় সে অপ্রয়োজনেও প্রশংসা করছে কিংবা প্রয়োজন স্থানে প্রশংসার মাত্রা ঠিক রাখছে না, উচ্ছ্বাস-অতিরঞ্জনে বলে যাচ্ছে বহুদূর, আবার অন্য জায়গায় প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও বিলকুল প্রশংসা করছে না কিংবা কষ্টে সৃষ্টে যা একটু করছে তাতে থাকছে না প্রাণের ছোঁয়া। শুষ্ক সেই প্রশংসা যেন শ্রোতার কানে সাক্ষাৎ নিন্দা হয়েই বাজে। এভাবে কল্যাণপ্রসূ এই কর্মটির সুফল থেকে সে সম্পূর্ণ বঞ্চিত থাকছে। অতপর ব্যাপারটা এখানেই শেষ হয়ে গেলেও এক কথা ছিল। সুফলের বঞ্চনার সাথে যে কুফল জন্ম নেয়, সে এক মহা মসিবত। ব্যক্তিজীবন ছাড়িয়ে তার অভিঘাতে আক্রান্ত হয় পরিবার ও সমাজের বিস্তৃত অঙ্গন।

            এতে কোন সন্দেহ নেই যে, প্রশংসা ও সাধুবাদও মানবজীবনের অতি দরকারি এক অনুষঙ্গ। এর পরিমিত ও সতর্ক ব্যবহার ব্যক্তিগঠনের সাথে সাথে সমাজনির্মাণেও অশেষ ভূমিকা রাখে। গঠন-নির্মাণের তাগিদ যতদিন থাকবে ততদিন এর প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করার কোন সুযোগ নেই। তাই শাশ্বত দ্বীনের শিক্ষায়ও এটা নয় উপেক্ষিত। বরং কুরআন মাজীদ ও হাদীস গ্রন্থসমূহে নযর বুলালে এর বিপুল সমাদরই পরিলক্ষিত হয়। আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূলগণের বৃত্তান্ত বয়ানে তাদের প্রশংসা করেছেন তা অনুভূতিসম্পন্ন যে কোনও পাঠকের অন্তরে তাদের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা ও সমীহভাব সঞ্চার করবে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রশংসা সম্বলিত আয়াত তো বহু। একখানি অতি সংক্ষিপ্ত অথচ অশেষ সারগর্ভ আয়াত- إِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيْمٍ ‘তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত’ (সূরা কলাম : ৪)। সাহাবায়ে কিরামের প্রশংসা আছে বহু আয়াতে। যেমন বলা হয়েছে- (তরজমা) ‘তারা (মুহাজিরগণ) আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাহায্য করে। তারাই তো সত্যাশ্রয়ী’ (সূরা হাশর : ৮) ...এবং তারা (আনসারগণ) মুহাজিরদেরকে ভালোবাসে... তারা নিজেদের উপর তাদেরকে প্রাধান্য দেয় অভাবগ্রস্থ হলেও, যারা কার্পণ্য হতে নিজেদেরকে মুক্ত করেছে। তারাই তো সফলকাম’ (সূরা হাশর : ৯)। বলা বাহুল্য, কুরআন মাজীদে সাহাবায়ে কিরামের এসব প্রশংসা করা হয়েছে তো তাদের উপস্থিতিতেই।

            রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও বিভিন্ন সময়ে তাদের প্রশংসা করেছেন। কখনও সমষ্টিগতভাবে কখনও ব্যক্তিবিশেষের নাম নিয়ে। এমন কি তাদের বহুজনকে জান্নাতের সুসংবাদও দিয়েছেন। তাঁর প্রশংসা তাদের উপর কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি; বরং তাদেরকে সৎকর্মের প্রতি আরও বেশি উজ্জীবিত করেছে, তাদেরকে অধিকতর আল্লাহভীরু ও আখিরাতমুখী করে তুলেছে। কাজেই মৌলিকভাবে প্রশংসা কেবল বৈধই নয়, এটা উজ্জীবিতকরণের কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক একটা পন্থাও বটে। বলা যায় এটা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত। তাঁর প্রশংসা যেমন সাহাবায়ে কিরামকে উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করেছিল, তেমনি সেই সুন্নতের অনুসরণ কল্যাণের পথে অগ্রযাত্রায় আমাদেরও মনে প্রেরণা সঞ্চার করতে পারে। একথা সত্য যে, নববী সাহচর্যের বদৌলতে সাহাবায়ে কিরামের যে অভাবনীয় আত্মিক শুদ্ধতা অর্জিত হয়েছিল, তার থেকে আমরা যোজন যোজন দূরে অবস্থান করছি, ফলে উপস্থিত প্রশংসায় আমাদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব বিসত্মারের আশংকা রয়েছে। কিন্তু সেই শংকার কারণে একটা কল্যাণপ্রসূ ব্যবস্থাকে বর্জন করাও কিছু বুদ্ধির কাজ নয়। বিশেষত কুপ্রভাব থেকে আত্মরক্ষার জন্য যখন নববী দিক-নির্দেশনাও রয়েছে, যে সম্পর্কে আমরা প্রথম পর্বে কিঞ্চিৎ আলোকপাত করেছি। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী প্রশংসাকে কাজে লাগানো গেলে মানবিক কল্যাণ-উৎকর্ষে জীবনের ভরা-ভরতি অচিন্তনীয় থাকে না।

            কিন্তু যে কথা আগেই বলেছি, আমরা জীবনের প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রসমূহে কল্যাণকর এ আচারটি সম্পর্কে বড় উদাসীন। অথচ অযাচিত প্রশংসার এমনকি আত্মপ্রশংসায়ও আমাদের উৎসাহের কোনও কমতি নেই। প্রশংসা করা হয় ‘হঠাৎ দেখা’ লোকের, যাত্রাপথে পরিচিতের, একদিনের অতিথির, হাসপাতালের সেবক-সেবিকার অন্যের পুত্র-কন্যার, এমনকি পরস্ত্রী বা পরপতির। আর নিজের ঢাক তো নিজেই পিটাইই। অন্যদিকে যারা অতি কাছের, অনেক আপনার, তাদের বেলায় এর তেমন চর্চা নেই। অনেকেই নিজ পুত্র-কন্যাকে শাবাশ দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করে না। অনেক কর্মকর্তা অধীনস্থ কর্মচারীকে বাহবা দিতে জানে না, স্বামী-স্ত্রীদের মধ্যে পারষ্পরিক গুণগ্রহিতা তো এখন এক দুর্লভ বস্তু। এমনকি মানুষ গড়ার কারিগর যেই শিক্ষক সমাজ তাদের ছাত্রদেরকে সাধুবাদ জানানোর প্রবণতা কদাচ পরিলক্ষিত হয়।

            একথা ঠিক যে, প্রশংসার চোখে যে-কারও সদগুণকেই দেখা উচিত। অন্যের ভালো কিছুকে ভালো বলতে না পারা কোন সাধুচরিত্র নয়। সভ্য-ভব্য লোক যে কারও সুকৃতিকে সাধুবাদ জানাবে বৈকি! হোক না সে অনাত্মীয়, অপরিচিত বা ক্ষণিকের দেখা কেউ। কিন্তু সহবতের এই মহৎ আদবটি দ্বিপাক্ষিক সম্বন্ধের ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যেই বেশি দরকার।

            এ ব্যাপারে সবার আগে আসে শিশুর কথা। পিতামাতার পক্ষে শিশুর মনোভুবন এক উর্বর কোমল ভূমি। এ ভূমি তাদের হাতে আল্লাহ তাআলার আমানত। তাদের কর্তব্য তাতে মানবিক বীজ বোনা। সেই বপন প্রচেষ্টার এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ শাবাশ-সাধুবাদ। শিশুমনে তা জলসিঞ্চনের কাজ করে। শিশুর ছোট্ট একটু কাজে বাবা-মা যখন বাহবা ধ্বনি দিয়ে ওঠে তখন আপনা-আপনিই তার বুকে হিম্মতের বীজ বুনে যায়। ‘আমিও পারি’ ‘আমিও পারব’ এই মনোবলে সে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। শিশু যত বড় হতে থাকে তার ভেতর প্রশংসার কার্যকারিতা ততই বাড়তে থাকে। দৈহিক বৃদ্ধির সাথে বোধ-অনুভবের পুষ্টি প্রকৃতির এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় তার অনুভূতি প্রতিনিয়ত শাণিত হতে থাকে। তাই তার সাথে কৃত কোনও আচরণই বৃথা যায় না। সে সবটাই নিয়ে নেয়। তার মত করেই নেয়। এজন্যই তার প্রতি আচরণে খুব সতর্কতা দরকার। কে জানে কোন্ আচরণ তার মনে কী বীজ বুনে দেবে। প্রথম শিক্ষক হওয়ার সুবাদে সদগুণাবলীর বীজ বপন ও তার অংকুরোদ্গম ঘটানোর দায়িত্ব তো বাবামায়ের উপরই বর্তায়। সে দায়িত্ব পালন খুব সহজ হয়ে যায় সাধুবাদের চর্চায়।

            ভালো কাজের প্রশংসা না করে কেবল দোষ-ত্রুটির জন্য নিন্দা-ভৎর্সনা করতে থাকলে শিশুর মনে হীনম্মন্যতা জন্মায়। সে কুণ্ঠিত ও আড়ষ্ঠ হয়ে পড়ে। হয়ে পড়ে অনুদার ও একরোখা। হরদম তিরস্কারাক্রান্ত শিশু পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা হারায়। সে তাদের ভালোবাসতে পারে না। ভালোবাসার গুণটাই তার মধ্যে যথার্থরূপে বিকাশ লাভ করতে পারে না। এরূপ শিশু পিতামাতার সাথে স্বচ্ছন্দ হয় না। তাদের সাথে লুকোছাপা করতে অভ্যস্থ হয়ে যায়। তারা মনের দিক থেকে তো দূরে সরে যায়ই, দৈহিকভাবেও আড়ালে থাকার চেষ্টা করে। এ অবস্থায় পৌঁছে যাওয়ার পর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পিতামাতার আর কিছু করার থাকে না। এরপর তারা সেই সন্তানকে গড়ে তোলার যত চেষ্টাই করে না কেন, তার বিশেষ ফল পাওয়া যায় না। অন্যদের চেষ্টাও তেমন কাজে আসে না। কেননা তাকে তো অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে ফেলা হয়েছে। গড়ে ওঠার জন্য যে হিম্মত, স্বচ্ছন্দতা, প্রাণশক্তি, উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রভৃতি সদগুণের দরকার ছিল তার ভেতর তা বিকাশলাভ করতে দেওয়া হয়নি। তা যে ইচ্ছাকৃত দেওয়া হয়নি এমন নয়। বরং এটা ভুল কর্মপন্থার কুফল। আসলে তো তাকে গড়ে তোলারই চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ত্রুটির জন্য তিরস্কারের সমান্তরালে সঠিক কাজের প্রশংসা না থাকায় সবটা আচরণকে সে অনাদর ও অবহেলা হিসেবে দেখেছে। কোন প্রচেষ্টাকে সে ইতিবাচকরূপে নেয়নি। তা নিত কেবল তখনই, যখন ভালো কাজের জন্য প্রশংসাও পেত।

            ভালো কাজের প্রশংসায় শিশুমনে ভালোবাসা জন্মায়। পিতামার প্রতি ভালোবাসা তো মানুষের মজ্জাগত। সদাচরণ সেই মজ্জাগত ভালোবাসাকে উচ্ছলিত করে। সঠিক কাজটির জন্য ‘বাহবা’ শুনলে কে না খুশি হয়? বাবামায়ের ‘বাহবা’ সন্তানকে আরও বেশি খুশি করে। এতে সে বাবামায়ের সাথে স্বচ্ছন্দ হয়ে ওঠে। তার মনের আগল তাদের সামনে খুলে দেয়। সাবলীলভাবে নিজের সব চাওয়া-পাওয়া, ইচ্ছা-অনিচ্ছা তাদের সামনে মেলে ধরতে পারে। সহজে তাদের মতামত গ্রহণ করে ও মতামতকে মূল্য দিতে শেখে। অজান্তেই তার গোটা জগত গড়ে ওঠে তাদেরকেই কেন্দ্র করে। এরূপ সমত্মানকে গড়ে তোলা কতই না সহজ। অনেক কিছু গড়ে যায় আপনিই।

            যেমন আত্মবিশ্বাস। এ গুণ কারও বড় হয়ে ওঠার জন্য ভিত্তিস্বরূপ। শিশু তার যোগ্যতা অনুপাতে যে কৃতিত্বই প্রদর্শন করে, বড়দের অনুপাতে যত তুচ্ছই হোক না কেন, তার নিজ দৃষ্টিতে তা অতি মহত এবং প্রশংসার দাবিদার। কে করবে সেই প্রশংসা? প্রথমত পিতামাতাই তো। কিন্তু অনেক পিতামাতাই তা করে না। এতে শিশু হোচট খায়। সে নিজেকে অবজ্ঞাত মনে করে এবং দ্বিধাগ্রস্থ হয়। পক্ষান্তরে যারা প্রশংসা পায় তারা হয় উদ্দীপিত। বাহ্যিক সেই উদ্দীপনা ভেতরে ভেতরে রচনা করে আত্মবিশ্বাস। আরও বড় কিছু করতে পারার বিশ্বাস স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তাদের মধ্যে জন্ম নেয়। আরও জন্ম নেয় শ্রদ্ধাশীলতা ও গুণগ্রাহিতা। কৃতিত্বের স্বীকৃতিদাতা পিতামাতার প্রতি ভালোবাসার সাথে শ্রদ্ধাশীলও হয়ে ওঠে। ফলে গুরুজনকে শ্রদ্ধা করার তালিম পৃথকভাবে দেওয়ার খুব একটা দরকার পড়ে না। গুণের কদর করা হয়েছে দেখে গুণগ্রাহিতার বীজ তাদের মধ্যে বুনে যায়। পরে তারাও অন্যের গুণ স্বীকার করে-সংকীর্ণতার পরিচয় দেয় না। এভাবে হয়ে ওঠে উদারমনা। পরশ্রী তাদের কাতর করে না। এমনিভাবে ডালপালা বিস্তার করে এক পর্যায়ে সদগুণের মহীরূহে পরিণত হয়ে যায়।

            মোটকথা সন্তান পরিচর্যায় পরিমিত প্রশংসাকেও কাজে লাগানো উচিত। সতর্কতার সাথে ভুল-ত্রুটি শোধরানোর সাথে সাথে তাদের কানে ‘মাশা আল্লাহ’-এর মধুবর্ষণও বাঞ্ছনীয়। উন্নতির পথে অগ্রযাত্রা ও সদগুণাবলীর বিকাশ সাধনে এটা অত্যন্ত ফলপ্রসূ।

            একই কথা প্রযোজ্য শিক্ষকদের ক্ষেত্রে। অনেক শিক্ষকের অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় প্রশংসা করতে জানেই না বা মনে করে ছাত্রদের কখনও প্রশংসা করতে নেই। তা তাদের তরবিয়তকে ব্যহত করে। তাদের এ কর্মপন্থাও প্রান্তিকতার দোষে দুষ্ট। সন্তানের পক্ষে যেমন পিতামাতা, ছাত্রের পক্ষেও তেমনি উস্তায ও শিক্ষক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রধান দায়িত্বশীল। গঠন-নির্মাণে ছাত্রের নিজ সাধনা প্রচেষ্টা অপেক্ষা শিক্ষকের প্রযত্ন ও দায়িত্বশীলতা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কাজেই দৃষ্টি কেবল ছাত্রের মেহনত ও মেহনতের ত্রুটি-বিচ্যুতিতে নিবদ্ধ রাখলে তাকে একদেশদর্শিতাই বলতে হবে। তার কর্তব্য নিজ প্রযত্নের দিকেও নজর রাখা। এ নজর শিক্ষককে পিতৃতুল্য হওয়ার দাবি জানায়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসে শিক্ষকের সেই মহিমাই স্বীকৃত। তিনি ইরশাদ করেন,

 إنما أنا لكم مثل الوالد لولده أعلمكم ‘আমি তো তোমাদের জন্য সন্তানের পক্ষে পিতৃতূল্য- আমি তোমাদের শিক্ষাদান করি।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩১৩; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪০; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৮; সহীহ ইবনে খুযাইমাহ, হাদীস ৮০) অর্থাৎ শিক্ষাদানে তোমাদের প্রতি আমার মমতা পিতার মত। এ হাদীসের তাৎপর্য অনেক। বিস্তারিত ব্যাখ্যার স্থান এটা নয়। এইটুকু বুঝলেও কম নয় যে, শিক্ষককে পিতার মন ও পিতার দৃষ্টি নিয়ে ছাত্র গড়তে হবে। সেই আদর্শের শিক্ষক কখনও একদেশদর্শী আচরণ করবে না। ছাত্রের দোষ-ত্রুটি ধরে কৃতিত্ব নেওয়ার প্রতি নয়; বরং ত্রুটি শোধরানোর উপায় নিরূপণের প্রতি নজর রাখবে, সেই সঙ্গে তার অর্জন-অগ্রগতির প্রতিটি কদমে সাধুবাদ জানিয়ে তাকে আরও বেশি অর্জনে অনুপ্রাণিত করে রাখার চেষ্টা করবে। নিন্দা-ধিক্কারও যে সব সময় ক্ষতিকর তাও নয়। কিন্তু এটিই একমাত্র দাওয়াই নয়; বরং ক্ষেত্রবিশেষে তা কুফলও জন্মায়। সে কুফল যে প্রশংসাও জন্মায় না তাও নয়; কিন্তু মৌলিকভাবে প্রশংসা একটি ইতিবাচক কর্ম। সে হিসেবে নিন্দা অপেক্ষা প্রশংসা অবশ্যই অগ্রাধিকার রাখে। নিন্দার চরিত্র হল দমানো, নির্বাপণ ও দূরে সরানো। প্রশংসার কাজ উজ্জীবিত ও উদ্দীপিত করা এবং কাছে টানা। তাই প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নিন্দা-ভৎর্সনার প্রয়োগ থাকবে বটে, কিন্তু প্রেরণাদায়ী সাধুবাদই হতে হবে আসল নীতি। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইরশাদ,

 بشروا ولا تنفروا ‘তোমরা সুসংবাদ দাও,ঘৃণা সৃষ্টি করো না।’

            নিশ্চিত করেই বলা যায়, পরিমিত প্রশংসা, যার জন্য প্রাণরসে সিঞ্চিত ‘মাশাআল্লাহ’-এর চেয়ে উপযুক্ত কোন বাক্য নেই, শিক্ষার্থীর পক্ষে কল্যাণকরই হয়ে থাকে। এতে যেমন বাহ্যিক জ্ঞানস্পৃহা বাড়ে তেমনি মন-মানসিকতা ও চিন্তা-চেতনায়ও সমৃদ্ধি আসে। একজন উন্নতমনা, উদারচেতা ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কৃতবিদ্য তৈরি করতে হলে শাবাশ-মাশাআল্লাহ’র ব্যবহার চাইই-চাই।

            এ নীতির ব্যবহার আর সব ক্ষেত্র অপেক্ষা বোধ করি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেই অনেক কম। নিত্য সাহচর্যের কারণে তাদের চোখে পারস্পরিক দোষ-গুণ অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই পড়ে। মানব-চরিত্রে অকৃতজ্ঞতার একটা ব্যাপারও আছে। শিক্ষা-সাধনা দ্বারা সেই প্রবণতাকে দমন করা না হলে চোখে-মনে দোষটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। ফলে সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সদগুণ আড়ালে পড়ে যায়। এ জন্যই দম্পতি পরস্পরে নিন্দার চালাচালি যতখানি হয়, প্রশংসার আদান-প্রদান ততখানি হয় না। হয়ত অত্যুক্তি হবে না, আকছার দম্পত্তি পারস্পরিক প্রশংসার কোন ধারণাই রাখে না। অথচ পারিবারিক শান্তি-সম্প্রীতির জন্য এর প্রয়োজন অনেক বেশি। স্ত্রীর একটি প্রশান্তিবাক্য কর্মক্লান্ত স্বামীকে কতই না জীবনীশক্তি জোগাতে পারে। তদ্রূপ স্বামীর মাশাআল্লাহ উচ্চারণও পারে স্ত্রীর একঘেয়ে জীবনকে হর্ষমুখর রাখতে। কিন্তু সেই ধারণা না থাকায় আকছার দম্পতি বিষয়কর্মের নিরানন্দ ঘানি টানার ভেতরই জীবন সাঙ্গ করে দেয়। তা বৃথা জীবনসাঙ্গ কেন হবে? একরাশ স্বপ্ন নিয়ে যেই দাম্পত্যে প্রবেশ, সে জীবন কেন মধুময় হবে না? হতে বাধ্য যদি নযর একে অন্যের মেহনত, তার দান, তার ভূমিকা, তার কষ্ট ও তার সদগুণের প্রতি দেওয়া হয় আর মুগ্ধ চাহনির স্বতঃস্ফূর্ত ব্যঞ্জনায় মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয় ‘মাশাআল্লাহ’, তুমি ভালো, তোমার অনেক কষ্ট, তুমি উত্তম কথা বলেছ, বেশ বেঁধেছ, তুমি সুন্দরও বটে- এসব তো শক্ত কোন কথা নয়। তা হলে বলতে কুণ্ঠা কেন? অথচ ছোট ছোট এই কথাগুলো ধুমায়িত ক্ষোভেও জল ঢেলে দিতে পারে। মনের কষ্ট ও ইন্দ্রিয় জ্বালা জুড়ানোর জন্য অর্থ-বিত্তের পেছনে দৌড়ঝাঁপ করছ, অথচ রসনার একটু সঞ্চালন দুঃখ বেদনার পাহাড় টলিয়ে দিতে পারে। দরকার এই বোধকে জাগ্রত করা। এই বোধের অভাবও নানাবিধ দাম্পত্য সমস্যার এক গুরু কারণ। এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনার উল্লেখ করা যেতে পারে।

            ‘আরেফ বিল্লাহ হযরত আবদুল হাই রাহ. বলেন, আমি একবার আমার জনৈক মুরীদের বাড়িতে দাওয়াত খেতে যাই। খাওয়া-দাওয়া শেষে অভ্যাসমত পর্দার আড়াল থেকে তার স্ত্রীকে জানাই ‘খাবার বেশ সুস্বাদু হয়েছে, তৃপ্তিভরে খেয়েছি।’ একথা বলতেই ভেতর থেকে চাপা কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি হতভম্ব। এমন কী বলে ফেললাম, যাতে সে মনে আঘাত পেল। কষ্টে কেঁদেই ফেলল! আমি তাকে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলাম। সে বলল, হযরত! চল্লিশ বছর যাবৎ দাম্পত্য জীবন যাপন করছি। এই দীর্ঘ জীবনে স্বামীকে কত রান্নাবান্না করে খাইয়েছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটিবারও তার মুখে রান্নার প্রশংসা শুনিনি। কখনও বলেনি, আজ রান্না ভালো হয়েছে। অথচ আপনি এই একবার খেয়েই বললেন, রান্না ভালো হয়েছে। আপনার মুখে এই প্রশংসা শুনে সারা জীবনের পুঞ্জীভূত বেদনা উথলে উঠেছে। এটাই কান্নার কারণ (ইসলাম ও আমাদের জীবন, ৫খ-, ১২৮ সংক্ষেপিত)।

            একজন বড় মানুষের প্রত্যক্ষ স্বাক্ষ্য হিসেবে ঘটনাটি উল্লেখ করা গেল। না হয় এরূপ ঘটনা আমাদের সমাজে বিরল কিছু নয়। আমরা অধিকাংশ পুরুষই স্ত্রীর সদগুণ দেখতে অভ্যস্থ নই। তাই তাদের প্রশংসা কদাচ করি। প্রশংসা তো করিই না। উল্টো স্ত্রীর সামনে পরস্ত্রীর প্রশংসা করে তার কাটা ঘায়ে লবণের ছিটা দেই। অনুরূপ স্ত্রীগণও কম যায় না। তাদেরও অনেকের চোখে নিজের স্বামী এক নির্গুণ পদার্থ। এটা একরৈখিক দৃষ্টিরই কুফল। না হয় প্রত্যেক স্ত্রীর মধ্যেই প্রশংসনীয় অনেক গুণ আছে, অনুরূপ আছে প্রত্যেক স্বামীর মধ্যেও। নিজ গুণগ্রাহিতাকে কাজে লাগালে চোখে বরং সেগুলিই বেশি পড়বে। তাই দরকার দৃষ্টিকোণের বদল। প্রত্যেকে অন্যজনের এক একটি সদগুণ দেখে দেখে যদি সেজন্য সাধুবাদ জানানো শুরু করে দেয় তবে অবশ্যই একদিন তাদের প্রেম-ভালোবাসায় প্রাণসঞ্চার হবে এবং দাম্পত্যজীবন হয়ে উঠবে সুখময়।

            আসলে প্রশংসার প্রয়োজন রয়েছে মানবজীবনের সবখানেই। নিকট ও দূর সব রকম সম্পর্কে মাধুর্য আনয়নে এর কার্যকারিতা অনঃস্বীকার্য। ভাই-ভাই ও ভাইবোনের মধ্যে প্রশংসা-বিনিময় থাকলে রক্তের বন্ধন অমলিন হয়ে থাকবে। জন্মগত এ সম্পর্কটি কতই না চমৎকার। কিন্তু আমাদের কর্মদোষে এর চমৎকারিত্ক্ষুণ্ণ হয়ে যায়। মধুর ভ্রাতৃত্ব এখন বড় দুর্লভ। তার বহুবিধ কারণের মধ্যে গুণগ্রাহিতার অভাব উল্লেখযোগ্য। এর অভাবে এক ভাইয়ের বা বোনের চোখে অন্যের দোষ যেমন ধরা পড়ে, গুণটা তেমন পড়ে না। ফলে দোষের চর্চা হয় ঠিকই, গুণ কোন আলোচনায় আসে না। অথচ দোষের পরিবর্তে যদি গুণের আলোচনা হত, তবে এ সম্পর্কে কখনও ঘুণ লাগতে পারত না। এমনকি এক পক্ষের গুণবাদও সম্পর্কটির মহিমা রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারত। একের প্রশংসা অন্যের মনে রেখাপাত করতই। একই কথা প্রযোজ্য অন্যান্য আত্মীয়বর্গের ক্ষেত্রেও। তাই একান্ত আপনারজনসহ সকল আত্মীয়-স্বজনকে সুসম্পর্কের আওতায় রাখার জন্য আমাদের কর্তব্য সব রকম কুণ্ঠা ঝেড়ে ফেলা এবং যে যতটুকু প্রশংসার উপযুক্ত তাকে তা দেওয়া।

            প্রশংসার ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত। এর আওতায় এসে যায় গোটা মানব সমাজই। অনাত্মীয় কোনও ব্যক্তির উপযুক্ত প্রশংসা করা গেলে সে পরমাত্মীয়ের মতই আপন হয়ে যেতে পারে। আবার প্রশংসায় কুণ্ঠা প্রদর্শন তাকে পারে আরও দূরে সরাতে। এমনকি বিদ্বিষ্ট বানাতে। তা হতে পারে অতি তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করেও। ধরুন, কেউ একটি পণ্য কিনল, হয়ত সেটি একটি পোশাক। নিজ রুচি অনুযায়ী অনেক খোঁজাখুঁজি ও দরদাম করে পসন্দমত কোন বিপণি থেকে সেটি সংগ্রহ করেছে। মনের মত পোশাক কিনতে পেরে সে বেজায় খুশি। তার আশা ছিল সকলে সেটি পসন্দ করবে। বলবে, পোশাকটি সুন্দর, আপনাকে বেশ মানিয়েছে। কিন্তু সাধের পোশাকটি পরে যখন আপনার সামনে আসল বেফাঁস এক মন্তব্য করে বসলেন। দিলেন তার আনন্দ মাটি করে। পোশাকটিতে প্রশংসা করার মত কিছুই কি ছিল না? আপনার রুচিমত না হোক, সে নিজ রুচি অনুযায়ীই তো সেটি বেছে নিয়েছে। আপনার রুচি দিয়ে সেটি কেন বিচার করতে গেলেন। যখন পোশাকটি আপনার নিজের নয়? তা ছাড়া সামগ্রিক বিচারে আপনার পসন্দমত না হলে তার বিশেষ কোন দিক, যেমন রং, সুতা, সেলাই ইত্যাদি যে কোনও একটার উল্লেখ করে বলা যেত, ‘এটা বেশ ভালো’। তা তো করলেনই না উল্টো কোনও দোষের উল্লেখ করে দিলেন তাকে দমিয়ে। মনে হতে পারে এটা অতি তুচ্ছ ব্যাপার। কিন্তু একটুখানি অনাদর আর একটু অবহেলা অনেক ভয়ংকর পরিণতিই ডেকে আনতে পারে। আসলে তো প্রশংসা করতে না পারাটা গুণগ্রাহিতার অভাব থেকেই হয়। কাজেই আজ হয়ত তার পোশাকটিকে অবহেলা করা হল, কাল করা হবে তার টুপিটির, আরেকদিন জুতাটির, কখনও অন্য কিছুর। এভাবে আপনার শীতল আচরণের দাগ তার অন্তরে জমাট বাঁধতে থাকবে। পরিণামে সে আপনাকে এড়িয়ে চলবে এবং আপনাকে ঘৃণার চোখে দেখবে। কাউকে বিদ্বিষ্ট বানানোর মধ্যে তো কোনও কৃতিত্ব নেই। বরং শত্রুকে বন্ধুতে পরিণত করার মধ্যেই স্বার্থকতা। আর সেটা সম্ভব প্রশংসার মাধ্যমেই।

            সমপেশার লোকদের দেখা যায় একজন আরেকজনের প্রশংসা করতে পারে না। এক লেখকের সামনে যখন অন্য লেখকের কোন রচনা আসে, সে তার প্রতি শীতল চোখে তাকায়। সহজে কোনও প্রশংসাবাক্য তার মুখে উচ্চারিত হয় না। এ আচরণ লেখককে হতোদ্যম করে কিংবা করে বিদ্বিষ্ট। উভয়টাই ক্ষতিকর। উচিত ছিল উদ্যম জোগানো, যাতে এ পথে সে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে। এর জন্য বাস্থবিক কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে থাকলে তার প্রতিকারার্থে তাকে সুপরামর্শ দেওয়া যেত। আর সেই অবকাশ না থাকলে ত্রুটির পেছনে পড়ারই দরকার ছিল না।

যদি না যথারীতি ‘গ্রন্থসমালোচনা’-এর ব্যাপার হয়ে থাকে। বরং প্রশংসার কোনও একটা দিক খুঁজে বের করে উদার মনোভাবের পরিচয় দেওয়াই বাঞ্ছনীয় ছিল। অবশ্য রেওয়াজী ‘গ্রন্থসমালোচনা’-এর কথা আলাদা। সেখানে দোষ-গুণ উভয়ের উল্লেখপূর্বক ইনসাফসম্মত মন্তব্যই কাম্য।

            সমপেশার অন্যান্য ক্ষেত্রেও একই দৃশ্য বর্তমান। শিক্ষক, বক্তা, ব্যবসায়ী এমনকি দাওয়াতী কর্মীদের পর্যন্ত দেখা যায়, একজন আরেকজনের প্রশংসায় উদারপ্রাণ নয়। অথচ এদের পরস্পরের ঐক্য ও সম্প্রীতির জন্য উদারনীতি অবলম্বন একান্ত জরুরি। বিশেষত দাওয়াত ও দ্বীনী খেদমতের বিভিন্ন অঙ্গনে যারা কর্মরত তারা কেউ বা তাদের কোন অঙ্গন স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়; বরং একে অন্যের সম্পূরক। সকলের সম্মিলনেই হয়ে ওঠে পূর্ণাঙ্গ। তাই তাদের পারস্পরিক বন্ধন সুদৃঢ় করার জন্য উদারনীতির কোন বিকল্প নেই। তারা একে অন্যের প্রশংসা করলে কেবল যে নিজেদের মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে উঠবে তাই নয়, অন্যদের মধ্যেও তাদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে এবং বৃহত্তর পরিসরে তাদের প্রত্যেকের কাজের সমাদরও বাড়বে। এটা দ্বীনেরই উপকার যা কিনা প্রত্যেকেরই মেহনতের লক্ষবস্ত্ত।

            এমনিভাবে অফিস-আদালত, কল-কারখানা প্রভৃতি কর্মক্ষেত্রে দায়িত্বরত কর্মকর্তা, কর্মচারী, সহকর্মী, শ্রমিক-মালিক সকলেরই উচিত পারস্পরিক কাজকর্মের মূল্যায়ন করত সাধুবাদের বিসত্মার ঘটানো। নিঃসন্দেহে তা পারস্পরিক সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে, সব রকম উন্নয়নকে করবে ত্বরান্বিত।

            আমরা যারা সহজে অন্যের প্রশংসা করতে পারি না তাদের উচিত তা না পারার কারণ সন্ধান করা। এটা কি কেবল সচেতনতার অভাব। না কোন চারিত্রিক রোগও এর জন্য দায়ী? অর্থাৎ অন্যের ভালোকে ভালো বলতে না পারার কারণ অনেক সময় হয়ে থাকে মনের সংকীর্ণতা, কখনও তার কারণ হয় অহংকার এবং কখনওবা পরশ্রীকাতরতা। এর প্রত্যেকটিই কঠিন আখলাকী ব্যাধি। আমরা ব্যাপকভাবেই এসবে আক্রান্ত হয়ে পড়েছি। যে কারণে আমরা এমন প্রশংসাকুণ্ঠ? কেবল অসচেতনতাও যদি এর কারণ হয় তবে তাও নয় উপেক্ষণীয়। তার দরুণ আমরা নিজেরা তো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি এবং ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আমাদের পরিবার ও সমাজ। সুতরাং আমাদেরকে তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বের হয়ে আসার পথ খুঁজতে হবে। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন, আমীন। 

 

 

advertisement