মুহাররম ১৪৩৬   ||   নভেম্বর ২০১৪

নিজের নামে লেখা বইয়ের দায় কি এড়াতে পারবে মালালা?

আনসার আববাসী

বিশিষ্ট ইসলামী ব্যক্তিত্ব, Slippery Stone First Things First-এর লেখক খালেদ বেগ সম্প্রতি The Nobel Award and Not-So-Nobel Propaganda নামক নিবন্ধে লিখেছেন, মালালা ইউসুফজাই একজন নিষ্পাপ শিশু। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে পশ্চিমা বিশ্ব তাকে নিজেদের এজেন্ডা বাবাস্তবায়নের জন্য ব্যবহার করে চলেছে। I am Malala-ই যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

  আমেরিকা প্রবাসী বেগ সাহেব দুআ করেছেন যেন আল্লাহ তাআলা মালালাকে এই ষড়যন্ত্র থেকে উদ্ধার করেন।    

  পশ্চিমা মিডিয়ার বরাত দিয়ে তিনি তার নিবন্ধে লেখেন, মালালার নোবেল প্রাপ্তির ঘোষণার পরপরই পশ্চিমা মিডিয়ায় গোটা পাকিস্তানের ভৎর্সনা শুরু হয়ে গিয়েছে। তাদের ভাষায়, পাকিস্তানের অপরাধ এই যে, তারা এই এ্যাওয়ার্ড ঘোষণার পরও নিজ দেশের অলিগলিতে মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ শোভাযাত্রা বের করেনি।

  তিনি বলেন, মালালার এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তির বিষয়ে আমেরিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, নোবেল এ্যাওয়ার্ড পেয়ে মালালা পাকিস্তানের সবচেয়ে নিঃসঙ্গদের দলে (Pakistan’s Loneliest Club) শামিল হয়ে গিয়েছে।

  বেগ সাহেব এই বিষয়ে বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন যে, পশ্চিমা বিশ্বে এমন ভাব প্রকাশ করা হচ্ছে যে, দেখ! এত বড় এ্যাওয়ার্ড দিয়ে আমরা অনুগ্রহ করেছি। কিন্তু পাকিস্তানের লোকেরা অকৃতজ্ঞ।

  আমারও আশঙ্কা হচ্ছে যে, বেচারি মালালাকে এখন আর আমেরিকা ছাড়বে না। মালালার নাম ব্যবহার করে তারা পাকিস্তানের উপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকবে। I am Malala লিখেও পশ্চিমারা এমনটিই করেছে। এই সবকিছুর পেছনে নিষ্পাপ এই শিশুর পিতার ভূমিকা বেশ সন্দেহজনক।

  বইটি উদ্ধৃত করে খালেদ বেগ বলেন, মালালার বিষয়ে পশ্চিমাদের এজেন্ডা খুবই পরিষ্কার।

 

  আমিও এই বিষয়ে বেগ সাহেবের সাথে একমত যে, I am Malala-এর মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে যে মালালার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে সে আমাদের দেখা মালালা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। বইয়ের মালালার কাছে ইসলামিয়াত বিষয়টি পছন্দ নয়; বরং সে এই ভেবে শঙ্কিত যে, পাকিস্তানের মাটিতে অসংখ্য মাদরাসা প্রতিষ্ঠা লাভ করছে।

  বইয়ের মালালা ছাত্রত্বের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসে এমন নাজুক বিষয়েও মন্তব্য করছে, যা পাকিস্তানীদের কাছে ও মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানের রাসূল অবমাননা আইন, আইন ব্যবস্থাকে শরীয়া মোতাবেক করার চেষ্টা, হুদূদ অর্ডিনেন্স এমনকি অভিশপ্ত সালমান রুশদী সম্পর্কেও সে সরব। আর এসব বিষয়ে তার অবস্থান পশ্চিমাদের মতোই।

  বইটি পড়লে মনে হয়, এতে যা কিছু লেখা হয়েছে তা মূলত একটি স্কিপ্টেরই অংশ, যার মধ্যে একটি নিষ্পাপ শিশুকে বিশেষ এজেন্ডার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যথায় বৃটেন ও পশ্চিমা দেশেও গায়ে চাদর জড়িয়ে থাকা মালালা তার বইয়ে এ কথা কীভাবে লিখে যে, জেনারেল জিয়াউল হক পাকিস্তানের হকিদলের মেয়েদের জন্য শর্টস (Shorts) পরা নিষিদ্ধ করে ঢিলেঢালা পোশাক পরাকে আবশ্যক করে দিয়েছে।

  নারীর পর্দা প্রসঙ্গে বইয়ের মালালা তার বাবার বরাত দিয়ে এ কথাও বলেছে যে, পর্দা তো চোখের হয়, বোরকার নয়।

  ইসলামী আইন বাবাস্তবায়নের কারণে একদিকে যেমন সে জেনারেল জিয়াউল হককে অপছন্দ করে অন্যদিকে স্বৈরশাসক মোশাররফের উদার নীতি তার কাছে ভালো লাগে। বরং সে এমনও বলেছে যে, স্বৈরশাসক মোশাররফ যা করেছে কোনো গণতান্ত্রিক সরকারও তা করতে পারেনি।

  সেই মালালা উদাহরণ দিয়ে দিয়ে বলেছে, মোশাররফ তো টিভি চ্যানেল উন্মুক্ত করেছে এবং তাতে নাচ প্রদর্শনেরও অনুমতি দিয়েছে। এর পাশাপাশি ভেলেন্টাইন ডে ও নববর্ষ পালন (New Year Celebration)-এরও অনুমতি দিয়েছে।

  বইয়ের মালালার তো এই বিষয়েও আপত্তি যে, জিয়াউল হক পুরুষের এক সাক্ষী আর নারীর দুই সাক্ষী হওয়াকে বিধিবদ্ধ করেছেন। অথচ এই বিধান ব্যবহারকারী সকলেই জানে যে, এটি আল্লাহ তাআলার বিধান। কিন্তু এই শিশুটির তা জানা নেই!

  বইয়ের মালালা লিখেছে, কুরআন মাজীদের কোথাও এমনটি নেই যে, নারী পুরুষের উপর নির্ভরশীল (Dependent)। অথচ আল্লাহ তাআলা তো সূরা নিসায় (৪ : ৩৪) অত্যন্ত স্পষ্টভাবেই পুরুষকে নারীর কর্তা ও দায়িত্বশীল ঘোষণা করেছেন।

  পাকিস্তানের নিউক্লিয়ার প্রোগ্রাম সম্পর্কে পিতার উদ্ধৃতিতে মালালা লিখেছে, আমাদের রাজনীতিবিদগণ যদি পারমাণবিক বোমার পেছনে এত পয়সা খরচ না করতেন তবে এদেশে আরো অনেক স্কুল প্রতিষ্ঠা করা যেত।

  আমেরিকার প্রধানমন্ত্রী বারাক ওবামার পক্ষ থেকে আফগানিসত্মানে অতিরিক্ত একুশ হাজার সৈন্য প্রেরণ প্রসঙ্গে মালালা লিখেছে, আফগানিসত্মানের চেয়ে পাকিস্তানকে নিয়েই আমেরিকা বেশি উদ্বিগ্ন। আর এর কারণ আমার মতো কোনো মেয়ে বা স্কুল নয়; বরং এর কারণ হল পাকিস্তানের ২০০ পারমাণবিক বোমা।

  সে বলে, এসব বোমা কে নিয়ন্ত্রণ করবে-মূলত তা নিয়েই আমেরিকা উদ্বিগ্ন।

  এ্যাবোটাবাদে উসামা বিন লাদেনের অবস্থানের প্রসঙ্গ টেনে মালালা লিখেছে, আমি এ কথা বিশ্বাস করি না যে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী উসামা বিন লাদেনের অবস্থান সম্পর্কে জানত না। সে এ-ও লিখেছে যে, সবাই এ কথা বিশ্বাস করে যে, আইএসআই উসামার এ্যাবোটাবাদে অবস্থান সম্পর্কে জানত। বইয়ের মালালা যেন এমন সব কথাই বলে দিয়েছে, যা আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের এজেন্ডার সাথেই পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ।

  এখন লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যে, নোবেল পাওয়া মালালা বইয়ের মালালা থেকে নিজেকে কীভাবে বাঁচায়। এসবের পেছনে তার পিতারও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। তাই তার এ কথাও ভাবা দরকার যে, নোবেল প্রাইজ তো ইরাক, আফগানিসত্মান, পাকিস্তান ও অন্যান্য ইসলামী রাষ্ট্রে সামরিক অভিযান পরিচালনাকারী ওবামাও পেয়েছেন। একই পুরস্কার তো ফিলিসিত্মনীদের রক্ত পিপাসু ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ তিন মন্ত্রীও পেয়েছে। এই পুরস্কার তো সোভিয়েত ইউনিয়ন ধ্বংস করার কারণে মিখাইল গর্ভাচেভও পেয়েছে। আর এ কথাও মনে রাখা দরকার যে, আহমদী (কাদিয়ানী) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ড. আবদুস সালামও এই পুরস্কার পেয়েছে প্রতিবাদস্বরূপ পাকিস্তান ছাড়ার ৫ বছর পর। আর ড. আব্দুস সালামকে নিয়ে পাকিস্তানে বিতর্কের কারণ এই ছিল না যে, সে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। বরং কারণ এই ছিল যে, ড. আবদুস সালাম নিজেকে এবং পশ্চিমা বিশ্ব তাকে মুসলিম দার্শনিক লিখত।

ভাষান্তর : আব্দুল্লাহ ফাহাদ

 

 

 

 

advertisement