যিলহজ্ব ১৪৩৫   ||   অক্টোবর ২০১৪

সজাগ একটি চোখ

রাইয়ান বিন লুৎফুর রহমান

গত রবিউস সানী মাসে আল্লাহ তাআলার অশেষ অনুগ্রহে তাঁর পবিত্র ঘরে হাযির হওয়ার তাওফীক হয়। এই সফরে অনেক কিছু দেখার, অনেক কিছু শেখার সুযোগ হয়। সেখান থেকে একটি শিক্ষনীয় ঘটনায় সবাইকে শরিক করার জন্য আজকের এ লেখা।

      এই সফরে আমার সবচে বড় প্রাপ্তি ছিল উস্তাযে মুহতারাম মুফতী আবুল হাসান মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ  (মুদীর ছাহেব হুযুর) এবং মাওলানা ইয়াহইয়া ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম-এর সান্নিধ্য। আমরা যখন কুয়েত এয়ারওয়েজের বিমানে আরোহন করি তখন সবে আঁধারের বুক চিরে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। সফরের প্রস্ত্ততি, বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত থাকায় রাতটি প্রায় নির্ঘুম কেটেছে। সবার চোখে মুখে ছিল ক্লান্তির ছাপ। তাই বিমান আকাশে উড়াল দেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে কখন যে চোখদুটো লেগে এলো বলতে পারবো না। অনেক্ষণ পর যখন চোখদুটো খুলল মনে পড়ল আমি বাইতুল্লাহর মুসাফির। হৃদয়ে অন্যরকম পুলক অনুভব করলাম। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম বিমানের প্রায় সকল যাত্রী কেউ ঘুমাচ্ছে আর কেউবা ঝিমুচ্ছে। কিন্তু দেখলাম একটি চোখ তখনো সজাগ। হাতে কলম নিয়ে গভীর মনোযোগের সাথে কিছু একটা লিখছেন। তিনি আর কেউ নন আমার পরমপ্রিয় উস্তায ও মুরববী হযরত মাওলানা মুফতী আবুল হাসান মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম। এতদিন শুধু কিতাবের পাতায় পড়েছি আমাদের মহান আসলাফ-আকাবির ঘরে-বাইরে সফরে সর্বাবস্থায় সময়ের হেফাযত করতেন। আজ স্বচক্ষে দেখার তাওফীক হল। হযরত মাওলানা তাকী উসমানী ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম লিখেন. ‘আমার পিতা মুফতী শফী রাহ. ঘরে থাকুন বা সফরে সর্বাবস্থায় তাঁর কলম সচল থাকত। সবসময় তিনি কিছু না কিছু লিখতে থাকতেন। এমনকি অধম তাঁকে মোটরগাড়ী, মোটর রিকশায় বসেও লিখতে দেখেছি। অথচ গাড়ী এবং রিকসার ঝাঁকুনিতে এই সময় লেখালেখি করাটা অনেক কঠিন ছিল। (মেরে ওয়ালিদ মেরে শায়খ, পৃষ্ঠা ১৫০)

তাবলীগ জামাতের দ্বিতীয় আমীর হযরতজী ইউসুফ ছাহেব রাহ. সংকলিত ‘হায়াতুস সাহাবা’ একটি অতুলনীয় কিতাব। এই কিতাবেরও উল্লেখযোগ্য একটি অংশ সফরের হালতে তৈরি হয়েছে’। (ভূমিকা হায়াতুস সাহাবা, শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ.)

      তাফসীরে তাওযীহুল কুরআনের সূরাগুলোর শেষে নযর বুলালে বুঝে আসে হযরত মুফতী তাকী উসমানী ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম এই তাফসীরের বড় একটি অংশ সফরের অবস্থায় লিখেছেন। আকাবির-আসলাফের জীবনী বিষয়ক গ্রন্থগুলোতে এমন অসংখ্য ঘটনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আজ চোখের সামনে আমাদের মহান আসলাফের জীবন্ত নমুনা দেখতে পেয়ে সমগ্র দেহে অন্যরকম শিহরণ অনুভব করলাম। সেই সাথে নিজেদের গাফলত-উদাসীনতার কথা স্মরণ হয়ে মনে মনে লজ্জিত হলাম।

গত বছরও প্রায় কাছাকাছি এমন একটি ঘটনার সাক্ষী হওয়ার তাওফীক নসীব হয়।

      ময়মনসিংহের বিখ্যাত বালিয়ার পীর ছাহেব হুযুর রাহ.-এর ইন্তেকালের পর কাকরাইলের বড় হুযুর (মাওলানা যুবায়ের ছাহেব) দামাত বারাকাতুহুম ময়মনসিংহ সফর করেছিলেন। কিসমত আমাকেও সেই মোবারক সফরে বড় হুযুরের সফরসঙ্গী হওয়ার সুযোগ করে দেয়। সেই সফরে বড় হুযুর প্রায় পুরো সময়টাই কুরআন তেলাওয়াতে নিমগ্ন ছিলেন। মোটকথা, যারা বড় হয়েছেন সময়ের কদরদানি করেই বড় হয়েছেন। বাইতুল্লাহর সফরে বিমানের মধ্যে মুদীর ছাহেব হুযুরের সেই আত্মসমাহিত রূপটি স্মৃতির পাতায়  এক এক করে আকাবিরের ঘটনাগুলো তাজা করে দিল।

সফর থেকে ফিরে এসে দেখলাম মুদীর ছাহেব হুযুরের সেই লেখাটি ‘ধর্মনিরপেক্ষতা না থাকলেই সাম্প্রদায়িকতা!’ শিরোনামে আলকাউসারে প্রকাশিত হয়েছে। আমরা যেন এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে পারি। এই লেখাটি যখন লিখছি তখন মুদীর ছাহেব হুযুর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন। [এখন অবশ্য হুযুর বাসায় থেকেই চিকিৎসা গ্রহণ করছেন সাথে। সাথে এই অসুস্থতা নিয়েও যথাসাধ্য দ্বীনী খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।] আমরা দু’আ করি, আল্লাহ তাআলা হুযুরকে দ্রুত সুস্থ করে দিন এবং আমাদের উপর তাঁর ছায়াকে দীর্ঘ করুন। আমীন। 

 

 

advertisement