যিলক্বদ ১৪৩৫   ||   সেপ্টেম্বর ২০১৪

চেহারা ও চরিত্র

খাদিজা বিনতে যাইনুল আবিদীন

চেহারা আল্লাহ তাআলার নেআমত, তাঁর বিশেষ দান। আল্লাহ সবচেয়ে সুন্দর চেহারা দিয়েছেন মানুষকে। মানুষের মাঝে সবচেয়ে সুন্দর চেহারা দিয়েছেন নারীকে। সাদা-কালো, ধূসর, বাদামী কত রঙের, কত বর্ণের মানুষ। কত মানুষের কত রূপ। কোটি কোটি মানুষের মাঝে একজনের চেহারা আরেকজনের সাথে মেলে না। এটা আল্লাহর কুদরত, তাঁর কুদরতের নিদর্শন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। (রূম ৩০ : ২২)

আমরা আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের আয়না দেখার দুআ শিখিয়েছেন। اللهم حسنت خلقي فحسن خلقي  হে আল্লাহ! যেমনিভাবে আপনি আমাকে সুন্দর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, তেমনি আমার চরিত্রকে সুন্দর করে দিন। 

এ দুআর মাঝে চেহারার সাথে চরিত্রের উল্লেখ এসেছে। চেহারা বলতে শুধু চেহারা নয়; চেহারাসহ পুরো দৈহিক গঠন উদ্দেশ্য। চেহারার মাধ্যমে বাইরের সৌন্দর্য ফুটে উঠে আর চরিত্রের মাধ্যমে ফুটে ওঠে ভেতরের সৌন্দর্য। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চেহারার সৌন্দর্যের শুকরিয়ার সাথে সাথে চরিত্রের সৌন্দর্য প্রার্থনা করতে শিখিয়েছেন। শুধু সুন্দর চেহারা নয়, শুধু রূপ-চর্চা নয়, মনযোগ দিতে হবে চরিত্র সুন্দর করার প্রতি; চেহারার চেয়েও বেশি মনযোগ দিতে হবে।

আমরা মেয়েরা অনেক সময় নিজের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হই, আত্মবিস্মৃত হয়ে পড়ি। নিজের চেহারা, রূপ-সৌন্দর্যের অহমিকায় ভুলে যাই চেহারার স্রষ্টার কথা; যিনি আমাকে দান করেছেন সুন্দর চেহারা। ভুলে যাই এ চেহারার ব্যবহার তাঁরই হুকুম মত করতে হবে, তাঁর নাফরমানিতে নয়। চেহারার ব্যবহার যদি তাঁর হুকুম মত হয় তবেই হবে চেহারার নেআমতের শুকরিয়া আদায়। আর শুকরিয়া আদায় করলে তিনি নেআমত বাড়িয়ে দেন। আর  জেনে রাখা উচিত, না-শুকরির পরিণাম বড় ভয়াবহ। আমরা আমাদের চারপাশে অথবা পত্র-পত্রিকায় এমন অনেক মানুষ দেখি যাদের সুন্দর চেহারা ছিল, রূপ-লাবণ্য ছিল, কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেছে। ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে জীবন-স্বপ্ন। তাদের জন্য আমাদের শুভ কামনা। তাদের প্রতি সহমর্মিতা পোষণ হবে চেহারার নেআমতের শুকরিয়া আদায়। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, তাদের ঘটনার মাঝে আমাদের জন্য রয়েছে শিক্ষা।

সুন্দর চেহারা। এটি একটি আপেক্ষিক বিষয়। একই চেহারা কারো কাছে সুন্দর, কারো কাছে সুন্দর নয়। আবার কারো কাছে নিজের চেহারা নিজের কাছেই সুন্দর লাগে না। কেউ কালো হয়েও সুন্দর, কেউ ফর্সা হয়েও সুন্দর নয়। আমার চেহারা যেমনই হোক বানর-শিম্পাঞ্জির মত তো নয়। সুতরাং তোমার শোকর হে আল্লাহ!

দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরিক মিল একান্তই জরুরী। এই মিলই একটি সংসারকে মজবুতভাবে 

এক হলো আল্লাহর নাফরমানির মাধ্যমে চেহারার না-শুকরি, আরেকটি না-শুকরি হলো চেহারা নিয়ে অন্যের সাথে বড়াই করা, অহংকার করা। কারো চেহারা আমার মত সুন্দর নয় বলে তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। এটা প্রথম প্রকারের না-শুকরির চেয়ে আরো মারাত্মক। এ কারণে আল্লাহ আরো বেশি অসন্তুষ্ট হন। আমার এ রূপ-সৌন্দর্য তো আল্লাহর দান, আমার অর্জিত কিছু নয়। সুতরাং আমি কী নিয়ে গর্ব করি। এ তো আল্লাহর দেয়া নেআমত, যখন তখন তিনি তা ছিনিয়ে নিতে পারেন। সুতরাং আমি কিসের অহংকার করি। এ তো আমার হাতে আল্লাহর দেয়া আমানত। আমাকে এ আমানত রক্ষা করতে হবে তাঁর হুকুম মত। একে ব্যবহার করতে হবে তাঁর সন্তুষ্টির পথে।  

সকলেই সুন্দর চেহারার প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের বিবেচনা ও মূল্যায়ন চেহারা দিয়ে নয়; তাকওয়া, উত্তম চরিত্র ও দ্বীনদারির মাধ্যমে। সুতরাং যে নারী বা পুরুষ দ্বীনদারিতে ও চরিত্রে সুন্দর সে-ই প্রকৃত সুন্দর।

 

বিবাহের ক্ষেত্রে চারটি বিষয়কে মানুষ সর্বোচ্চ বিবেচনায় রাখে; বংশ, সম্পদ, সৌন্দর্য ও দ্বীনদারি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘দ্বীনদারিকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দাও’। কারণ সুন্দর চেহারার মূল্য শুধু এ দুনিয়ায়, বরং বলতে হয় যতদিন যৌবন আছে ততদিন।  কিন্তু দ্বীনদারি ও চরিত্রের মূল্য দুনিয়াতে এবং আখেরাতেও। সুতরাং শুধু সুন্দর চেহারা নয় বরং সুনদর চরিত্রও হোক আমাদের কাম্যবস্ত্ত। 

 

 

advertisement