যিলক্বদ ১৪৩৫   ||   সেপ্টেম্বর ২০১৪

ধারণা : কিছু নীতি, কিছু বিধান কিছু উদাহরণ

মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَحِيمٌ

উপরের আয়াতটি সূরা হুজুরাতের এক প্রসিদ্ধ আয়াত। এ আয়াতে মৌলিকভাবে তিনটি বিষয় থেকে বেঁচে থাকার আদেশ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, হে ঈমানদারগণ! বেঁচে থাক বহু ধারণা থেকে। নিশ্চয়ই কিছু ধারণা গোনাহ। আর (একে অন্যের পিছনে) অনুসন্ধানে লিপ্ত হয়ো না। আর একে অন্যের গীবত করো না। তোমাদের কেউই কি পছন্দ করবে। নিজ মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে? নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে তা অপছন্দের। তোমরা আলস্নাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।

যে তিন বিষয় থেকে এ আয়াতে বেঁচে থাকতে বলা হয়েছে তার প্রথমটি হচ্ছে ‘যন’ বা ধারণা। আমরা জানি যে, ধারণা দুই রকমের হয় : প্রমাণভিত্তিক ধারণা ও প্রমাণহীন ধারণা। বিভিন্ন কারণে মানুষের মনে ধারণা জাগে। সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিক বিষয় থেকেও ধারণার সৃষ্টি হয়। অজ্ঞতার কারণে ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়। যা ‘কারণ’ নয় তাকে ‘কারণ’ মনে করার ফলে ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়। দু’একটি উদাহরণ দেওয়া যাক।

সূরা হজ্বে আল্লাহ তাআলা একশ্রেণির লোকের কথা বলেছেন,

 وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَعْبُدُ اللَّهَ عَلَى حَرْفٍ فَإِنْ أَصَابَهُ خَيْرٌ اطْمَأَنَّ بِهِ وَإِنْ أَصَابَتْهُ فِتْنَةٌ انْقَلَبَ عَلَى وَجْهِهِ خَسِرَ الدُّنْيَا وَالْآَخِرَةَ ذَلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِينُ  

আর কোনো কোনো মানুষ আল্লাহর ইবাদত করে কিনারায় দাঁড়িয়ে, অতপর তার যদি কোনো (পার্থিব) স্বার্থ লাভ হয় তবে সে এর দ্বারা আশ্বস্ত হয়। আর যদি কোনো (পরীক্ষাগত) বিপদ আসে তবে সে ঊর্ধ্ব মুখে ফিরে যায়। সে দুনিয়া আখেরাত দুইই হারায়। এ-ই তো স্পষ্ট ক্ষতি। (সূরা হজ্ব ২২ : ১১)

এ আয়াতের প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, কিছু লোক এমন ছিল যারা মদীনায় আসার পর কিছু পার্থিব প্রাপ্তি যোগ হলে, যেমন, স্ত্রীর পুত্র সন্তান হলে বা ঘোড়া শাবক প্রসব করলে, বলত-

هذا دين صالح

 ‘এই ধর্ম ভালো’! আর এমন কিছু না হলে বলত-

هذا دين سوء

 ‘এই ধর্ম ভালো না’! (এ জাতীয় লোকের কথা এ আয়াতে বলা হয়েছে।) -সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৭৪২

তো এই যে ধারণা, ধর্ম-বিচারের এই যে মানদন্ড এ তো চূড়ান্ত অজ্ঞতা। দ্বীন বা আদর্শের সত্যাসত্যের মানদন্ড কি গ্রহণকারীর মনোবাঞ্ছা পুরণ হওয়া বা না-হওয়া দ্বীন বা আদর্শের মানদন্ড তো তার শিক্ষার যথার্থতা।

ইসলাম তো তার অনুসারীদের এ প্রতিশ্রুতি দেয়নি যে, ইসলাম গ্রহণ করলে তোমার সব ইচ্ছা পূরণ হবে, পার্থিব স্বার্থসিদ্ধি হবে, দুনিয়াতে যা চাবে তা-ই পাবে! বরং ইসলাম মানুষকে প্রতিশ্রুতি দেয় আখিরাতের নাজাতের আর দুনিয়াতে ঈমান-ইয়াকীন ও তায়াক্কুলের স্তর অনুপাতে মানসিক শান্তি ও প্রশান্তির, খাইর ও বরকতের। তাহলে মনের কোনো একটি ইচ্ছা পূরণ না হলেই এ ধারণা করা যে, ‘এ দ্বীন সত্য নয়’ (নাউযুবিল্লাহ) এক ভিত্তিহীন ও অবান্তর ধারণা।

এ জাতীয় ভিত্তিহীন-অপ্রাসঙ্গিক ধারণা এ যুগের কোনো কোনো মুসলমানের মধ্যেও দেখা যায়। অনেককে এ ধরনের ঘটনা বলতে শোনা যায় যে, ‘অমুকের বড় সমস্যা ছিল, অমুকের ছেলে খুব অসুস্থ ছিল, অনেক চেষ্টা-তদবীর, অনেক ডাক্তার-কবিরাজ দ্বারাও সমাধান হল না। এরপর অমুক (ভন্ড) ফকীরের কাছে যাওয়ার পর ছেলে সুস্থ হয়েছে, সমস্যার সমাধান হয়েছে! সুতরাং ঐ লোক সহীহ লোক! ইত্যাদি।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসকল ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষী পাওয়া যায় না। শুধু বলে, অমুকে বলেছে। অমুকের কাছে শুনেছি। আর কোনো সময় যদি ঘটনাচক্রে সুস্থতা বা সমাধান হয় তাহলে তা আল্লাহর ফয়সালায় হয়েছে। এর দ্বারা কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত ভন্ডামীগুলো সহীহ হয়ে যায় কীভাবে? কিন্তু অনেক মানুষ অজ্ঞতার কারণে এবং ঈমানী দুর্বলতার কারণে সুস্থতা ও সমাধানকে ঐ ভন্ডের বা ভন্ডামীর অবদান মনে করে। এটা ভুল ধারণা, ভিত্তিহীন ধারণা।

তাহলে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বিষয় থেকেও মানুষের মনে ধারণার সৃষ্টি হয়। তো কুরআন মজীদের ইরশাদ- ‘বেঁচে থাক বহু ধারণা থেকে।’ সেই ‘বহু ধারণা’ কী - তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি; অনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘বহু ধারণা’ থেকে বেঁচে থাক। অর্থাৎ, ধারণার ক্ষেত্রে সতর্ক হও। ধারণাবাজী পরিহার কর। বহু ধারণা আছে যা বর্জনীয়। সুতরাং মনে যা-ই আসে তা-ই বাস্তব মনে করো না। ভিত্তিহীন ধারণা, অপ্রাসঙ্গিক ধারণা মনে আসামাত্র বাতিল করে দাও। মনে স্থান না পেলে তা ক্ষতি করতে পারে না এবং গুনাহও হয় না। কিন্তু মনে স্থান পেলে তা মুখেও আসতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে অন্যায় আচরণও হয়ে যেতে পারে। আর কে না জানে, গীবত ও মিথ্যা অপবাদ গুনাহ। কারো সাথে অন্যায় আচরণ করা গুনাহ।

ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রাহ. (১৬১ হি.) থেকে বর্ণিত আছে-

الظن ظنان : ظن اثم وظن ليس باثم. فأما الذي هو اثم فالذي يظن ظنا ويتكلم به، والذي ليس باثم فالذي يظن ولا يتكلم به، والظن في كثير من الأمور مذموم.

অর্থাৎ ধারণা দুই প্রকার : ক. যা গুনাহ। খ. যা গুনাহ নয়। গুনাহ হচ্ছে ধারণা করা এবং অন্যকে বলা। আর যা গুনাহ নয় তা হচ্ছে ধারণা করল কিন্তু অন্যকে বলা থেকে বিরত থাকল। আর বহু বিষয়ে ধারণা নিন্দিত (বাসাইরু যাবিত তামফীয়, ফায়রোযাবাদী)

সহীহ বুখারী হাদীসে আছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

 ان الله تجاوز لأمتي عما وسوست أو حدثت به انفسها ما لم تعمل به او تكلم

অর্থাৎ আমার উম্মতের মনে যে সকল কথা আসে আল্লাহ তা মাফ করে দিয়েছেন যে পর্যন্ত না (সে অনুযায়ী) কোনো কাজ করে বা মুখে উচ্চারণ করে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৬৬৪)

আরো দেখুন : সহীহ বুখারী, হাদীস ৫২৬৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১২৭

এরপর বলা হয়েছে- ان بعض الظن اثم অর্থাৎ : নিশ্চয়ই কিছু ধারণা গোনাহ।

শরীয়ত যে ধারণাকে গোনাহ বলেছে তারও অনেক প্রকার আছে। যেমন এক. আল্লাহ তাআলার সম্বন্ধে অসমীচীন ধারণা পোষণ করা। আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করতে হবে। তাঁর সম্বন্ধে কুধারণা পোষণ করা হারাম। যেমন কেউ আল্লাহ তাআলার সম্বন্ধে এ ধারণা পোষণ করল যে, তিনি আমাকে মাফ করবেন না। (নাউযুবিল্লাহ) এটা আল্লাহ পাকের মহত্ব ও ক্ষমাশীলতার বিষয়ে কুধারণা।

এ বিষয়ে সালাফের মানসিকতা লক্ষ্য করুন। আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক রাহ. বলেন, আমি আরাফার অপরাহ্ণে সুফিয়ানের কাছে এলাম। তিনি দুই হাটুর উপর দাঁড়িয়ে অঝোর কাঁদছিলেন। আমিও তাঁর সাথে কাঁদতে লাগলাম। তিনি তখন আমার দিকে ফিরে বললেন- ما شأنك তোমার কী হয়েছে? আমি জিজ্ঞাসা করলাম من اسوء هذا الجمع حالا এ সমাবেশে কার হালত সবচেয়ে শোচনীয়? তিনি বললেন- الذي يظن أن الله عز وجل لا يغفر لهم যে মনে করে যে, আল্লাহ এদের মাফ করবেন না। (হুসনুয যন্নি বিল্লাহ, ইবনে আবিদ দুনয়া ১ : ৯২ (৭৮))

আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে সুধারণা রাখা তো ঈমানের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এক বিখ্যাত হাদীসে কুদসীতে আছে, (তরজমা) ‘আমার প্রতি বান্দার যে ধারণা আমি সে ধারণার কাছে থাকি। যদি সে আমাকে স্মরণ করে আপন মনে আমিও তাকে স্মরণ করি আপন মনে। আর যদি সে আমাকে স্মরণ করে কোনো মজলিসে আমি তাকে স্মরণ করি তার চেয়ে উত্তম মজলিসে। সে যদি আমার দিকে এক বিঘৎ আসে আমি তার দিক এক হাত যাই। সে যদি এক হাত আসে আমি তার দিকে চার হাত যাই। সে যদি আমার দিকে হেঁটে আসে আমি তার দিকে দৌঁড়ে যাই।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৪০৫ ; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৭৫)

সহীহ মুসলিমে হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকালের তিন দিন আগে ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) ‘তোমাদের প্রত্যেকের মৃত্যু যেন এ অবস্থায় হয় যে, সে আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করেছে।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭৮৮)

মুসনাদে আহমদ ও অন্যান্য হাদীসের কিতাবে .... আবুল আসওয়াদ আল জুরাশী-এর মৃত্যুশয্যার একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী ওয়াছিলা ইবনুল আসাক রা. তাকে দেখতে গেলেন। আবুল আসওয়াদ তাঁর ডান হাতখানি নিয়ে নিজ চোখে মুখে ফেরাতে লাগলেন। কারণ এ হাত দিয়ে হযরত ওয়াছিলা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামের হাতে বাইয়াত হয়েছিলেন। ওয়াছিলা রা. বললেন, ‘আমি আপনাকে শুধু একটি প্রশ্ন করব।’ আবুল আসওয়াদ বললেন, ‘কী প্রশ্ন?’ ওয়াছিলা রা. বললেন, ‘আপনার রবের প্রতি আপনার ধারণা কী?’ তিনি মাথা নেড়ে ইশারায় বললেন, ‘সুধারণা’। ওয়াছিলা রা. বললেন, ‘‘সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি আমার বান্দার ধারণার কাছে থাকি। সুতরাং সে আমার সম্পর্কে যেমন ইচ্ছা ধারণা রাখুক’।’’ (মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৬০১৬ ; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৯৭৫)

দুই. আল্লাহ পাক যেসব বিধি-বিধান দান করেছেন সে সম্পর্কে কুধারণা পোষণ করাও গোনাহ। ইসলামের বিধি-বিধান সম্পর্কে এ দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে যে, এর প্রত্যেকটিই আমাদের জন্য কল্যাণকর। এই বিধি-বিধানের অনুসরণের মধ্যেই আছে আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ। জ্ঞান ও অধ্যয়নের স্বল্পতা বা চিন্তা-ভাবনার অগভীরতার কারণে বিশেষ কোনো বিধানের সুফল ও সৌন্দর্য হয়তো আমি পুরোপুরি বুঝতে পারছি না কিন্তু এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যেসব বিধান আমাদের দান করেছেন তা সবই আমাদের কল্যাণের জন্য। আমাদের দুনিয়া-আখেরাতের শান্তি ও সফলতার জন্য। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে এই সুধারণা রাখা ফরয। অথচ আমাদের দুর্ভাগ্য দেখুন, মুসলিমসমাজে জন্মগ্রহণ করেও আজকাল অনেকের চেতন বা অবচেতন মনের ধারণা, ইসলামী শরীয়তের বিধান এখন চলবে না, পর্দার বিধান চলবে না! সুদের বিধান চলবে না! জিহাদের বিধান চলবে না! এগুলো পশ্চাৎপদ বিধান! যুগ-সময় এখন অনেক ‘এগিয়ে’ গেছে। এই যুগে এই সময়ে ঐসকল বিধান অচল! (নাউযুবিল্লাহ)। অথচ এগুলো কিছু দাবিমাত্র। এ প্রসঙ্গে তার কাছে কোনো দলীল নেই। কিছু বেদ্বীন মুলহিদ এসকল কথা বলেছে আর তার নফস ও শয়তান এগুলোকে তার কাছে সুশোভিত করে দিয়েছে। নতুবা ভোগবাদ ও স্বার্থবাদের মোহ এবং বেদীন মুলহিদশ্রেণির অন্ধ-অনুসরণ থেকে মুক্ত হয়ে ইসলামের বিধানাবলীর সুফল ও সৌন্দর্য সম্পর্কে চিন্তা করলে এবং সঠিক উপায়ে সঠিক সূত্র থেকে জ্ঞান অর্জন করলে ইনশাআল্লাহ কোনো সংশয় থাকবে না।

তিন. দ্বীনের ধারক-বাহকের সম্পর্কে ধারণা। সাহাবা-তাবেয়ীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন, মুজাহিদীন-মুহাদ্দিসীন সম্পর্কে কুধারণা পোষণ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। এটা ঠিক যে, তাঁরা কেউ মাসূম ছিলেন না এবং ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে ছিলেন না। কিন্তু এর অর্থ তো এই নয় যে, যে কোনো অভিযোগে তাদের অভিযুক্ত করা যাবে।

কারো কারো স্বভাবই এই যে, নেতিবাচক চিন্তায় তার মস্তিষ্ক বেশি সক্রিয় হয়। একটি কথার, একটি ঘটনার যে একাধিক দিক থাকতে পারে এ সম্ভাবনাই তার মনে জাগে না বা জাগলেও পাত্তা পায় না। এ স্বভাব মানুষকে নিষিদ্ধ ধারণার শিকার করে। উম্মাহর পূর্বসূরীদের সম্বন্ধে এ ধরণের নেতিবাচক প্রবণতা খুবই ভয়াবহ। কারো মনে কোনো সাহাবী-তাবেয়ী সম্পর্কে, কোনো ফকীহ-মুহাদ্দিস সম্পর্কে এ জাতীয় ধারণার সৃষ্টি হলে জ্ঞানী ব্যক্তির সাথে আলোচনা করে তা নিরসন করা অতি প্রয়োজন। এখানে উদাহরণস্বরূপ সাহাবা-যুগের একটি ঘটনা উল্লেখ করছি। ঘটনাটি সহীহ বুখারীতে আছে।

হজ্বের মওসুমে মিসরের এক লোক আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর কাছে এসে বলল, আপনাকে কিছু বিষয় জিজ্ঞাসা করতে চাই। আপনি তার জবাব দিবেন। এক. আপনি কি জানেন, ‘উসমান রা. উহুদ যুদ্ধের দিন পলায়ন করেছিলেন?’ ইবনে ওমর রা. বললেন, ‘হ্যাঁ’। মিসরী বলল, ‘আপনার কি জানা আছে, তিনি বদরের যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন?’ ইবনে ওমর রা. বললেন, ‘হ্যাঁ’। মিসরী বলল, ‘তিনি যে বাইয়াতে রিদওয়ানেও অনুপস্থিত ছিলেন তা-ও কি জানেন?’ ইবনে ওমর রা. বললেন, ‘হ্যাঁ’। মিসরী বলে উঠল, ‘আল্লাহু আকবার!’ (অর্থাৎ এত দোষ যার সে কেমন লোক!) আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বললেন, শোনো, বিষয়গুলো তোমাকে বুঝিয়ে বলছি। (তোমার প্রথম অভিযোগ) ওহুদ যুদ্ধে ছত্রভঙ্গ হওয়া। এ বিষয়ে আমার সাক্ষ্য এই যে, আল্লাহ তা ক্ষমা করে দিয়েছেন। (কারণ, ওহুদ যুদ্ধের ঘটনায় কুরআন মজীদে সাধারণ ক্ষমা ঘোষিত হয়েছে। দ্র. সূরা আলে ইমরান ৩ : ১৫২, ১৫৫)

এরপর বদরের যুদ্ধে তাঁর অনুপস্থিতি। এর কারণ হচ্ছে, আল্লাহর রাসূলের কন্যা ছিলেন তাঁর স্ত্রী। আর তিনি অসুস্থ ছিলেন। একারণে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে (স্ত্রীর কাছে থাকার আদেশ করেছিলেন এবং) বলেছিলেন, তুমি বদরে উপস্থিত একজনের মতো সওয়াব ও গনীমত পাবে।’

এরপর বাইয়াতে রিদওয়ানে তাঁর উপস্থিত না থাকা। এর কারণ হচ্ছে, (স্বয়ং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে মক্কায় কাফিরদের কাছে পাঠিয়েছিলেন) মক্কাবাসীর কাছে তাঁর চেয়ে অন্য কেউ অধিক সম্মান ও মর্যাদা পাত্র হলে উসমান রা.-এর জায়গায় তাকেই পাঠানো হত। উসমান রা. মক্কায় যাওয়ার পর বাইয়াতে রিদওয়ান সংঘটিত হয়েছিল তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাতের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, এ হচ্ছে উসমানের হাত। এরপর তা আপন বাম হাতের উপর রেখে বলেছিলেন, এ হচ্ছে উসমানের বাইয়াত! (সুবহানাল্লাহ)

মিসরীর তিন অভিযোগের জবাব দেয়ার পর ইবনে ওমর রা. বললেন, ‘এ জবাবগুলো নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যাও।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৬৯৮)

চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গের জন্য এ ঘটনায় অনেক শিক্ষণীয় বিষয় আছে।

চার. এক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র সামাজিক জীবন। আল-মু‘আশারাহ। ইসলামী শরীয়ত ‘আলমুআশারাহ’ শব্দটা অনেক ব্যাপক। আমরা সামাজিক বলতে সমাজবদ্ধ জীবনকে বুঝি। কিন্তু ইসলামী শরীয়তে মুআশারাহ আরো ব্যাপক অর্থে ব্যবহার হয়। দু’জন ব্যক্তি যেখানে আছে বা যেখানেই কোনো সঙ্গ আছে, সেখানেই ইসলামী শরীয়তের মুআশারাহ ও তার বিধান এসে যাবে। আমি গাড়িতে সফর করছি, আমার পাশের সিটে একজন বসা। তিনি আমার সফরসঙ্গী। তার সাথে আমার সঙ্গীসুলভ আদব রক্ষা করতে হবে। তার হক সম্পর্কে খেয়াল রাখতে হবে। এটা মুআশারার বিধান। কুরআনে কারীমে এসেছে وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِএর অর্থ অনেক বিস্তৃত। এক অর্থ হলো, যে আমার সঙ্গে বসা। সুতরাং ইসলামী শরীয়ত আমাকে এমন সঙ্গীর সাথেও সুন্দর আচরণ করার, আদব রক্ষা করার এবং তার হক সম্পর্কে সতর্ক থাকার কথা বলে। বাসের হেলপারও আমাদের সঙ্গী। ড্রাইভারও। কিন্তু তাদের সাথে আমাদের আচরণ কেমন হয়! এটা ঠিক যে, তাদের পক্ষ থেকেও অনেক সময় খারাপ আচরণ করা হয়। কিন্তু আমাদের পক্ষ থেকেও তো হয়। এভাবে রিক্সার চালক; সেও সঙ্গী। আমি তার সঙ্গ লাভ করছি। সেও আমার সঙ্গ লাভ করছে। অথচ আমাদের মনেই হয় না যে, সে আমার সঙ্গী। ফলে ইসলামী শরীয়তের যে মুআশারাহ ও সঙ্গতার বিধান সেগুলো রক্ষা করা হয় না। অনেক সময় দেখা যায়, রিক্সার চালকের সাথে দুর্ব্যবহার করা হয়। সে হয়তো কখনো অন্যায় আচরণ করে এক মাত্রার, জবাবে আমরা অন্যায় আচরণ করি দশ মাত্রার।

যাইহোক, ইসলামী শরীয়তের মুআশারার বিষয়টা অনেক ব্যাপক। যেখানেই দু’জন সেখানেই মুয়াশারাহ। তো মুয়াশারাহ সুন্দর হওয়ার জন্য; শান্তিময় হওয়ার জন্য, এক গুরুত্বপূর্ণ বিধান, ভিত্তিহীন প্রমাণহীন কুধারণা বা অমূলক ধারণা থেকে বেঁচে থাকা। স্ত্রী স্বামী সম্পর্কে, স্বামী স্ত্রী সম্পর্কে, বাবা সন্তান সম্পর্কে, সন্তান বাবা সম্পর্কে, ভাই ভাই সম্পর্কে, সঙ্গী সঙ্গী সম্পর্কে, কর্মকর্তা কর্মচারী সম্পর্কে, কর্মচারী কর্মকর্তা সম্পর্কে, কর্মস্থলের সঙ্গী একে অপরের সম্পর্কে এভাবে একে অন্যের বিষয়ে কুধারণা এবং ভিত্তিহীন ধারণা থেকে বেঁচে থাকতে হবে।

অনেক সময় এমন হয় যে, মূলত কিছুই হয়নি এরপরও শুধু ধারণার ভিত্তিতে দু’জনের মাঝে বিবাদ সৃষ্টি হয়ে যায়। স্বামী-স্ত্রীর সুন্দর সম্পর্ক চুরমার হয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে একটি সুন্দর ঘটনা আছে। ঘটনাটি আমাদের উপকারে আসবে ইনশাআলস্নাহ আবু হুরায়রা রা. বলেন, বনু ফাযারার এক লোক আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, ‘আমার স্ত্রী একটি কালো পুত্র প্রসব করেছে।’ (অর্থাৎ পুত্রের বর্ণের কারণে তার সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে)। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমার কি উট আছে?’ সে বলল, ‘জ্বী’, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘সেগুলোর রং কি?’ সে বলল, ‘লাল।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘সেগুলোর মাঝে কি ছাই রংয়ের উট আছে?’ সে বলল, ‘জ্বী আছে।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এ রং সেগুলোতে কীভাবে এল?’ সে বলল, ‘হয়তো আগের কোনো উট ছাই বর্ণের ছিল। সেখান থেকে তা ছাই বর্ণের হয়েছে।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এ পুত্রেরও পূর্ব পুরম্নষের মাঝে হয়ত কেউ কালো ছিল, যার থেকে এ রং এসেছে।’ -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৩০৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫০০

তো পিতা-পুত্রের বর্ণ আলাদা হওয়া স্ত্রী অসতী হওয়ার প্রমাণ নয়। এ ভিন্নতার অন্য বাস্তব কারণ থাকতে পারে। কিন্তু ঐ বেদুইন একেই অসতী হওয়ার প্রমাণ মনে করেছে এবং কুধারণার শিকার হয়েছে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বোধগম্য দৃষ্টান্ত দিয়ে তার কুধারণা দূর করেছেন। অনেক সময় কারো কোনো কথা বা কাজে সন্দেহ জাগে যে, সে হয়তো এই অর্থে কথাটা বলেছে বা এ উদ্দেশ্যে কাজটা করেছে। সেক্ষেত্রে দেখতে হবে, এই সন্দেহের পেছনে কি কোনো বাস্তব দলিল আছে? না এ শুধুই আমার মনের ধারণা? এ তো শয়তানের পক্ষ থেকেও এসে থাকতে পারে। যেন দুইজনের মাঝে বিবাদ ঘটে। সেজন্যে ইসলামী শরীয়তের এবং আদাবুল মুআশারার এক গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যথাসম্ভব আমি যেন আমার সঙ্গীর কথা ও আচরণের ভালো অর্থ গ্রহণ করি। কারো কোনো কথার ভালো এবং মন্দ দুই অর্থই যদি হতে পারে তাহলে ভালোটা যেন গ্রহণ করি। এটা সন্দেহ এবং সন্দেহের কারণে যে বিবাদ হয় তা থেকে বেঁচে থাকার উপায়। এমনিভাবে কারো কোনো আচরণের ভালো এবং মন্দ উভয় উদ্দেশ্যই যদি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেক্ষেত্রে আমার করণীয়, ভালো উদ্দেশ্য হিসাবে কাজটাকে গ্রহণ করা। বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়াব রাহ. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক সাহাবী আমাকে লিখে পাঠিয়েছেন,

 أن ضع أمر اخيك على أحسنه ما لم يأتك ما يغلبك، ولا تظنن بكلمة خرجت من امرئ مسلم شرا وانت تجد لها في الخير محملا، ومن عرض نفسه للتهم فلا يلومن الا نفسه، ومن كتم سره كانت الخيرة في يده وما كافيت من عصى الله فيك بمثل ان تطيع الله تعالى فيه

অর্থাৎ তোমার ভাইয়ের কাজ ও অবস্থা তার উত্তম অর্থে গ্রহণ কর যে পর্যন্ত না এর বিপরীতে ভারী কোনো প্রমাণ আসে এবং কোনো মুসলিমের কোনো কথার মন্দ ব্যাখ্যা করো না যে পর্যন্ত তার কোনো ভালো ব্যাখ্যা করা তোমার পক্ষে সম্ভব হয়। আর যে নিজের সম্পর্কে সন্দেহের সুযোগ সৃষ্টি করে সে যেন শুধু নিজেকেই ভৎর্সনা করে। আর যে নিজের গোপন কথা গোপন রাখে কর্তৃত্ব তার হাতেই থাকে। আর যে তোমার বিষয়ে আল্লাহর নাফরমানী করল এর উত্তম বিনিময় এর চেয়ে আর কী হতে পারে যে, তুমি তার বিষয়ে আল্লাহর ফরমাবরদারী কর। (শুআবুল ঈমান, বাইহাকী ৩ : ১৫০)

নসীহতের এ বাক্যগুলো এত পরিষ্কার যে, এগুলোকে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই।

অভিজ্ঞতার একটা কথা আছে الحزم سوء الظن ‘অর্থাৎ সতর্কতার দাবি হচ্ছে কুধারণা’-এর অর্থ এই নয় যে, আমি সবার কথাকেই শুধু সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখবে। বরং অর্থ হল, আমি সবার সাথেই সতর্কতা অবলম্বন করব। আমি যদি আগে থেকে জানতাম যে, সে তোমার কোনো ক্ষতি করতে চায় তাহলে যেমন সতর্ক থাকতাম তেমন সতর্কতা আমি প্রথম থেকেই অবলম্বন করব। কিন্তু এর জন্যে তো তার সম্বন্ধে কুধারণার তো প্রয়োজন নেই। আমার কাজ সতর্কতা অবলম্বন করা। দলিল প্রমাণ ছাড়া কারো বিষয়ে খারাপ ধারণা করা নয়। দেখুন, কারো সাথে আপনি টাকা পয়সার লেনদেন করবেন তো সেই লেনদেনে আপনি সাবধান থাকুন। লোকটা যদি খারাপও হয় তাহলেও সে যেন আপনার কোনো ক্ষতি করতে না পারে। তার ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করবেন না। কারণ সে বিষয়ে আপনার কাছে কোনো দলিল নেই। আর ইসলামী শরীয়তে প্রমাণ ছাড়া কারো ব্যাপারে খারাপ ধারণা করা নিষেধ।

সাবধান থাকার অর্থ ঐ নিয়মগুলো পালন করা যার দ্বারা বাহ্যত ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না। যেমন লেনদেন লিখিত হওয়া, ডকুমেন্ট থাকা ইত্যাদি। সাবধান থাকার কথা শরীয়তই আপনাকে বলেছে, আবার প্রমাণ ছাড়া কুধারণা থেকেও বাঁচতে বলেছে। এই ভারসাম্যপূর্ণ নির্দেশনাই ইসলামী শরীয়তের শিক্ষা এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় হল, কারো প্রতি যদি আমার অনিচ্ছাতেই কোনো খারাপ ধারণা এসে যায়, তাহলে কী হবে? অনিচ্ছার কোনো ধারণা যদি গোনাহের কারণ হয় তাহলে আমাদের মতো দুর্বল মানুষের কী উপায়? সেজন্যে শরীয়ত বলে, অনিচ্ছার ধারণায় গুনাহ হবে না। তবে সেই ধারণার ভিত্তিতে যদি তার সমালোচনা করা হয় বা তার সাথে কোনো অন্যায় আচরণ করা হয় তাহলে সেটা হবে গোনাহ। তাই এ সন্দেহের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্যে আমার কর্তব্য তা মুখে প্রকাশ না করা এবং এর ভিত্তিতে কোনো আচরণ না করা। অনিচ্ছার সন্দেহ আমার ইখতিয়ারাধীন নয়, কিন্তু এই আচরণ আমার ইখতিয়ারাধীন। ধারণা ইখতিয়ারাধীন না হওয়ার পরও যখন সে অনুযায়ী আমার থেকে কোনো আচরণ প্রকাশ পাবে তখন সেটা হবে গোনাহ। সেজন্যে প্রতিষেধক হল, অমূলক ধারণা বা সন্দেহকে প্রশ্রয় না দেওয়া। এই নীতি মেনে চলতে পারলে আশা করা যায় ভিত্তিহীন, অমূলক ও কুধারণার অনিষ্ট থেকে আমরা মুক্ত থাকতে পারব। সামাজিক জীবনে কুরআনের এ শিক্ষাকে অবলম্বন করলে ইনশাআল্লাহ মুআশারার অনেক বিচ্যুতি ও অশুভ পরিণাম থেকে বেঁচে থাকা যাবে। এ দরসে শুধু একটি বিষয়ে আলোচনা করা হল বাকী দুটো বিষয়ে পরের কোনো দরসে আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন এবং চিমত্মা ও কর্মের সকল অনাচার থেকে হিফাযত করুন। আমীন।

সাপ্তাহিক দরসে কুরআন থেকে। ধারণ ও লিখন : তাওহীদুল ইসলাম তাইয়েব

 

 

 

 

advertisement