শাওয়াল ১৪৩৫   ||   আগস্ট ২০১৪

গাজায় আক্রমণ : ইহুদী-নৃশংসতার আরেক উদাহরণ

ফিলিস্তিনের মযলূম মুসলমানের রক্ত ঝরছে। আহত-নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। শত শত বাড়িঘর ধ্বংসস্ত্তপে পরিণত হয়েছে। ইহুদী নীচতা ও হিংস্রতার আরেকটি নতুন উদাহরণ এ হামলার ঘটনা।

ইহুদীদের জাতীয় ইতিহাস হীনতা ও নীচতার এক কলঙ্কিত ইতিহাস। একসময় এ জাতি ছিল আল্লাহ রাববুল আলামীনের অনুগ্রহধন্য। সমসাময়িক জাতিগোষ্ঠির উপর আল্লাহ তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলেন। অনেক নবী ও রাসূল তাদের মধ্যে পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু আল্লাহর অনুগ্রহ পেয়ে এরা হয়ে উঠেছিল নাফরমান ও না-শোকর। কুরআন মাজীদে তাদের জাতীয় ইতিহাসের এই দুই ধারা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে। একপর্যায়ে এরা এতই উদ্ধত হয়ে উঠল যে, আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করল। আল্লাহর বিধানসমূহ নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করল, এমনকি আল্লাহর রাসূলগণকে হত্যা করল!

এই চরম না-শোকরী ও না-ফরমানীর কারণে এ জাতি হয়ে গেল মাগযূব- আল্লাহর ক্রোধে নিপতিত। আর এরই প্রকাশ ঘটল এদের কর্ম, বিশ্বাস ও জাতীয় চরিত্রে। সংশয় ও কপটতা এদের বিশ্বাসের, শঠতা ও প্রতারণা এদের কর্মের এবং হীনতা ও হিংস্রতা এদের চরিত্রের শিরোনাম হয়ে দাঁড়াল। আর সময় সময় এদের উপর নেমে এল চরম শাস্তির খড়গ। এই ধারা অতি প্রাচীন। সূরা বনী ইসরাইলের শুরুতে এর বিবরণ উল্লেখিত হয়েছে।

শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এদের আচরণ তো সর্বজনবিদিত। অল্প কিছু মহাপ্রাণ ছাড়া যাঁরা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছিলেন, এরা সর্বদা লিপ্ত ছিল ইসলাম ও ইসলামের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে চক্রান্তে। একাধিকবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যার অপচেষ্টাও তারা করেছে। কিন্তু আল্লাহ তাঁর নবীকে অলৌকিকভাবে রক্ষা করেছেন। এরপর হাজার বছর যাবৎ লাঞ্ছনা ও ভাসমান  জীবনই ছিল এদের ভাগ্যলিপি। তবু এদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন নেই। সুযোগ পেলেই এরা স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করে। উনিশ শতকের মাঝামাঝিতে পশ্চিমাদের যোগসাজসে ফিলিস্তিনের বুকে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এরা আবার নিপীড়কের ভূমিকায়। অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে আরব মুসলমানের রক্ত ঝরিয়ে চলেছে। অথচ এরা দুদিনও টিকতে পারত না যদি না পশ্চিমা সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা এরা পেত এবং যদি না মুসলিম বিশ্বের, বিশেষত মধ্য প্রাচ্যের মুসলিম-নেতৃত্বের ভীরুতা ও নতজানুতা এবং স্বার্থ ও ক্ষমতার লিপ্সা এদের পথকে মসৃণ করত।

ফিলিস্তিনে আমাদের মুসলিম ভাই-বোনের রক্তক্ষরণে আমাদের হৃদয়ে কতটুকু বেদনা জাগছে তা তিনিই জানেন যিনি অন্তর্যামী। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এ ঘটনা-ধারা কুরআনের বর্ণনাকেই প্রতিষ্ঠিত করছে এবং আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, ঈমানী চেতনায় জাগরণ, দ্বীনী পরিচয়ে ও ভ্রাতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ আমাদের সামনে নেই।

ধর্ম-বর্ণ এবং ভাষা-ভূখন্ড নির্বিশেষে সকল কুফরী শক্তি যে এক জোট ও এক মিল্লাত তার কত সুস্পষ্ট উদাহরণ এসকল ঘটনা। আমেরিকা-বৃটেন ও জাতিসংঘের তো বলাই বাহুল্য, ভারতীয় সংসদে প্রবল দাবি সত্ত্বেও পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ফিলিস্তিন-প্রসঙ্গে ভারতীয় লোকসভা কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করবে না। অন্যদিকে ইসরাইলের এক নারী তার প্রকৃত ইহুদি-চরিত্র প্রকাশ করে ফিলিস্তিনিদের ঘরে ঘরে আক্রমন চালানোর এবং নারী-শিশুদের অবাধ নিধনের আহবান জানিয়েছে। কারণ এইসব ঘরে এবং এইসব নারী-শিশুদের মাঝেই তো সন্ত্রাসীরা প্রতিপালিত হয়!

হায়! ফিলিস্তিনী মুসলিমগণ আজ তাদের নিজ ভূমিতেই সন্ত্রাসী। কারণ তাঁরা আপন ভূমির অধিকার ছাড়তে প্রস্ত্তত নন! পক্ষান্তরে জবরদখলকারী ইহুদী জাতিই হচ্ছে সন্ত্রাস-দমনকারী! সালাম ঐ আরব মা ও ঐ আরব বাবাকে যাঁরা তাঁদের সন্তানের রক্তের বিনিময়ে এক চরম অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃঢ়পদে দাঁড়িয়ে আছেন। আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহে আমাদের ফিলিস্তিনী ভাই-বোনদের সাহসিকতা ও সর্বাত্মক প্রতিরোধই সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে আছে ইহুদী সম্প্রসারণের পথে। নতুবা -আল্লাহ হেফাযত করুন- এরা তো মদীনাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও এদের পৈত্রিক ভূমি মনে করে থাকে!

ইয়া আল্লাহ! আমাদের মযলুম ভাই-বোনদের সাহায্য করুন। যালিমের যুলুম থেকে তাদের রক্ষা করুন এবং আবার আমাদের জাগিয়ে দিন। ঈমান ও আমলের যে সম্পদে ও হাতিয়ারে আমাদের পূর্বসূরীগণ সমৃদ্ধ ছিলেন সেই সম্পদ ও হাতিয়ার আবার আমাদের দান করুন। ষ

 

 

advertisement