রজব ১৪৩৫   ||   মে-২০১৪

১৯-০৫-১৪৩৫ হি.২১-০৩-২০১৪ ঈ. জুমাবার

আজ মারকাযের বার্ষিক মাহফিল। প্রধান প্রাঙ্গণ হযরতপুরে উলামা-তলাবাসহ অনেক দ্বীনদার মানুষের সমাগম হল। বাদ আসর থেকে মাহফিল শুরু হল। এসময় বিশেষভাবে তালিবুল ইলমদের উদ্দেশে বয়ান করেন মারকাযের আমীনুত তালীম মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম। হুযূর বলেন, মানুষের জীবনকে সুন্দর ও সুশোভিত করে আদাবুল মুআশারাহ। আদাব তো কুরআনে কারীমেও আল্লাহ তাআলা শিক্ষা দিয়েছেন। সূরা হুজুরাত, সূরা নূর, সূরা আহযাব এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত সহজ ও সুন্দরভাবে এবং হেকমতের সাথে সাহাবায়ে কেরামকে শিক্ষা দিয়েছেন আদাব। সেজন্যে সাহাবীদের জীবনী, তাবিয়ী তাবে তাবিয়ী এবং পুরো উম্মতের নেক মানুষদের জীবনী পড়ে পড়ে আমাদেরকে আদাব শিখতে হবে। এবিষয়ে তালিবুল ইলম ভাইয়েরা ইমাম বুখারীর আল আদাবুল মুফরাদ, মাওয়ারদীর আদাবুদ দুন্য়া ওয়াদ দ্বীন এবং ইবনে মুফলিহের আল আদাবুশ শারইয়্যাহ বা কমপক্ষে থানভী রাহ.-এর আদাবুল মুআশারাহ এবং শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ.-এর মিন আদাবিল ইসলাম মুতালাআ করতে পারেন।

তিনি আরো বলেন, আমরা অনেকেই মনে করি- আদাব হল যওকী বা রুচিগত বিষয়। কিংবা পরবর্তীদের ইজতিহাদ ও চিন্তা ফিকির থেকে নেয়া। অথচ আমাদের জানা নেই যে, অধিকাংশ আদবের উৎসই হল হাদীস ও সুন্নাহ, আছারে সাহাবা ও সীরাতুস সালাফ বা সাহাবী ও পূর্বসূরি বুযুর্গদের জীবন চরিত।

আরেকটি বিষয় হল, আমরা সকল আদবকেই মনে করি মুস্তাহাব বা তার চেয়েও নিচু পর্যায়ের। অথচ কিছু কিছু আদব এমনও আছে যেগুলো ফরয বা ওয়াজিবের পর্যায়ের।

বাদ মাগরিব হযরতপুর এলাকার বাচ্চাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত ইবতিদায়ী বিভাগের বিভিন্ন প্রদর্শনী হল। অভিভাবকদের উপস্থিতিতে ছোট বাচ্চারা তিলাওয়াত, দুআ, হাদীস, মাসায়েল, শুআবুল ঈমান, কবীরা গোনাহর বর্ণনা ইত্যাদি শোনায়।

এশার আগেই সংক্ষিপ্ত বয়ান করেন মারকাযের মুরববী ও তত্ত্বাবধায়ক হযরত পাহাড়পুরী হুযূর দামাত বারাকাতুহুম। ফরয নামাযের পাশাপাশি নফল নামাযের গুরুত্ব ও ফযীলত বিষয়ে তিনি বলেন, অল্প সময়েই অনেক বেশি সওয়াব লাভ করা যায় এই নফল নামাযগুলোর মাধ্যমে। তাহাজ্জুদের নামায তো আল্লাহর ওলীদের খুবই প্রিয় নামায। সূর্য উঠার পর আছে ইশরাকের নামায। দুই রাকাত নামাযে পূর্ণ একটি হজ্ব ও ওমরার সওয়াবের কথা এসেছে হাদীসে। আরো দুই রাকাত বাড়িয়ে পড়লে বান্দার সারাদিনের সকল প্রয়োজন আল্লাহ তাঁর নিজ যিম্মায় নিয়ে নেন। এমনিভাবে চাশতের নামায। ফাইয়ে যাওয়ালের নামায। আওয়াবীনের নামায। এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমল। কিয়ামতের দিন বান্দার কত উপকার যে হবে এই নামাযে! সেজন্যে অল্প সময়ের এই বিশাল সওয়াব থেকে উপকৃত হওয়া দরকার।

এশার পর থেকে দেড় ঘণ্টার মতো বয়ান করেন হযরত মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলীপুরী ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম। মাদরাসা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং সমাজে এই শিক্ষার ভূমিকা ও অবদান বিষয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন তিনি। মুসলমানদের স্কুলে ইসলামী শিক্ষা অবহেলিত -এটা মুসলিমসমাজের জন্য যেমন লজ্জার তেমনি অপমানের। দ্বীনী শিক্ষার অভাবে মানুষ তার জীবনের গতি হারিয়ে ফেলে। বৈধ-অবৈধ, ভালো-মন্দ, উচিৎ-অনুচিৎ সবকিছু একসাথে মিশে জীবন হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত। সেজন্যে আবশ্যকীয়ভাবে এবং খুবই গুরুত্বের সাথে দ্বীন শিক্ষার ব্যবস্থা থাকা জরুরি।

তিনি আরো বলেন, মাদরাসায় যারা দ্বীন শিখে তাদের প্রভাবেও অনেক অপকর্ম রোধ হয়। স্কুল শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ এমন অনেক কাজ থেকে বিরত থাকে যেগুলো তার শিক্ষার মধ্যে নেই। দ্বীনী শিক্ষার যে আলো তার অন্তরে গিয়ে প্রভাব ফেলে তার বদৌলতেই সে বিরত থাকে। তো এই দ্বীনের আলো যেন সব ধরনের শিক্ষার্থী তার নিজের পড়াশোনা থেকেই আহরণ করতে পারে সে ব্যাপারে দায়িত্বশীলদের সচেতনতা মানবতার দাবি।

আল্লাহ তাআলা এই মাহফিলকে কবুল করুন এবং নাজাত ও হেদায়েতের উসিলা বানিয়ে দিন। আমীন।

বার্ষিক মাহফিলের এই ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছিল মূলত মারকাযের প্রধান প্রাঙ্গণ হযরতপুরের আশপাশের এলাকার মানুষদের উদ্দেশ্যে। সেজন্যে এই মাহফিলে তাদের সার্বিক অবস্থা ও তাদের প্রয়োজনের দিকেই বিশেষ দৃষ্টি থাকে। কিন্তু এবছর দেখা গেল মাশাআল্লাহ বিভিন্ন মাদরাসার তালিবুল ইলম ভাইদের বেশ বড় মজমা। যাদের অধিকাংশই জুমার আগে এসে পৌঁছেছেন। এটা ছিল খুবই আনন্দের। নূরানী চেহারার মানুষদের সমাগমে পুরো মারকায আলোকিত হয়ে উঠল। স্বাভাবিক কারণেই আমরা খুব খুশী হলাম। কিন্তু পরে যখন আমীনুত তালীম ছাহেব হুযূরের অনুভূতি শুনলাম, অবাক হলাম। তিনি বললেন, এটা তো খুশি হবার মত বিষয়ই। কিন্তু সাআদাত হাসিল করার আগে যিম্মাদারি আদায় করার ফিকির থাকা উচিত। তাঁদের আগমনের সাআদাতী তো আমরা হাসিল করেছি। কিন্তু তাদের ইকরামের হক আদায় করতে পেরেছি কতটুকু!

হুযূর আরো বললেন, আমি আসরের পরের আলোচনায় একথা বলতে চেয়েছিলাম যে, এটা গ্রাম এলাকা। এখান থেকে রাতে কোথাও যাওয়া মুশকিল হয়। রাস্তায় গাড়ি থাকে না। মানুষজন থাকে না। সেজন্যে যে ভাইদের আজকেই ফিরে যাওয়ার নিয়ত তারা একটু আগে আগেই রওয়ানা দিলে ভালো। কিন্তু কেন জানি কথাটা বলা হল না। পরে যখন জানতে পারলাম, রাতে কিছু তালিবুল ইলম ভাইয়ের ফিরতে অনেক কষ্ট হয়েছে, তখন খুব আফসোস হল।

তো আল্লাহ তাআলা ঐসকল ভাইকে তাঁর শান মুতাবেক জাযা দান করুন এবং এই মুহাববতের সর্বোত্তম মর্যাদা নসীব করুন। সাথে সাথে আমাদেরকে আমাদের অবহেলা ও দুর্বলতার জন্য ক্ষমা করুন। আমীন। 

 

advertisement