তাখাসসুসের হাকীকত এবং মারকাযুদ দাওয়াহর ভর্তি বিষয়ক একটি জরুরি এ’লান
তাফাককুহ ফিদ দ্বীন, রুসূখ ফিল ইলম, ইস্তিবাগ বি সিবগাতিস সালাফ (সালাফের রঙে রঙিন হওয়া) সঠিক চিন্তা-ফিকির, সুস্থ রুচি ও সালামতে যওক, যুগের গতি-প্রকৃতি অনুধাবন (যামানা শেনাসী), তাকওয়া-তাহারাত, আদাব-আখলাক, তায়াক্কুয ও সতর্কতা এবং উলু-এ হিম্মত ইত্যাদি। এ-সমস্ত গুণাবলী প্রত্যেক মুক্তাদা আলেমের মাঝে বিদ্যমান থাকা জরুরি। আর তাখাসসুস মূলত কোনো আহলে দিল আহলে ফিকহ আলেমে দ্বীনের নেগরানি ও তরবিয়তে অবস্থান করে এ সকল গুণাবলী অর্জন করা এবং উলূমে শারইয়্যাহর কোনো এক শাস্ত্রে বা তার কোনো এক অংশে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করার নাম।
আমাদের মাদরাসী তালীমের নেযাম চালু হয়েছে মূলত ইলমের ফরজে কেফায়া অংশের হেফাজত ও এশাআতের জন্য, উম্মতের সকল শ্রেণীর রাহবারি ও রাহনুমায়ীর যিম্মাদারি আদায়ে সক্ষম একটি জামাত তৈরির জন্য, যাদের মাঝে উলেখিত গুণাবলি বিদ্যমান থাকা ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবতা হল, নেসাবী তালিম শেষ করার মাধ্যমে সাধারণত তালেবে ইলমের মাঝে উলেখিত গুণাবলি অর্জিত হয় না। ফলে ইলমের হেফাজত ও এশাআত এবং উম্মতের হেদায়েত ও রাহবারির যিম্মাদারিও যথাযথভাবে আদায় করা সম্ভব হয় না।
তো প্রাতিষ্ঠানিক নেসাব ও নেযামের এই যে অপূর্ণতা এবং ‘খালা’, এটা পূরণের জন্য বিগত পঞ্চাশ-ষাট বছর আগ পর্যন্ত এই নিয়ম চালু ছিলো যে, যী-এস্তে’দাদ তালেবে ইলমরা মাদরাসী তালিম সমাপ্তির পর মুরুববীদের পরামর্শে কোনো একজন আহলে দিল ও আহলে ফিকহ আলেমে দ্বীনের সোহবত ও নেগরানিতে সমর্পিত হত এবং একটি মু‘তাদ বিহী সময় তাঁর খেদমতে অতিবাহিত করত। এভাবে তাদের মাঝে উলেখিত গুণাবলি পয়দা হতে থাকতো এবং যে শাস্ত্রে উস্তায থেকে বিশেষ তরবিয়ত গ্রহণ করত, সে শাস্ত্রে তাদের খুসুসী মাহারাত হাসিল হয়ে যেত।
কিন্তু তখন এর জন্য বিশেষ কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ছিলো না। তবু তা অত্যন্ত মুফীদ ও মুআসসির ছিলো। কারণ তাতে তাখাসসুসের আসল রূহ বিদ্যমান ছিলো। অবশ্য পরবর্তীতে খুসুসী তরবিয়ত ও সোহবতের এই ধারা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। কেননা প্রাতিষ্ঠানিক ধারা ব্যপকতা লাভের ফলে এই ধারণাও ব্যাপক হতে থাকে যে, এর বাইরে খুসুসী তালিম-তরবিয়তের কোনো জরুরত নেই। আর এর নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা না থাকায় অনেকের পক্ষে এই সুযোগ গ্রহণ করাও দূরুহ হয়ে যায় এবং সবাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা-নির্ভর হয়ে পড়ে। ফলে তালেবে ইলমদের মাঝে উলেখিত আওসাফের ক্ষেত্রে আরও খতরনাক অবনতি ও ঘাটতি দেখা দেয়, যা পূর্ববর্তীদের মাঝে অপেক্ষাকৃত কম ছিলো।
এমতাবস্থায় আলেমগণ নতুন করে ভাবতে শুরু করেন। বড় মাদরাসাগুলোতে এমন একটি নেযাম গড়ার চিন্তা শুরু করেন, যেখানে দাওরা হাদীস সমাপনকারী বাছাইকৃত ছাত্ররা আরও কিছুদিন মাদরাসার পরিবেশে থাকার সুযোগ পাবে। যাদের বুনিয়াদি এস্তে’দাদ রয়েছে, যওক ও শওক রয়েছে এবং যাদের ভিত তৈরি হয়ে গেছে তারা যেন প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশেই আহলে দিল ও আহলে ফিকহ বুযুর্গানে দ্বীনের বিশেষ তরবিয়ত ও তত্ত্বাবধান লাভ করতে পারে, তাঁদের নেগরানিতে কোনো ফন বা ফনের একটি অংশে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করতে পারে এবং তাদের মাঝে যেন হাস্বে তাওফীক উলেখিত গুণাবলি ও এখতেসাস পয়দা হতে থাকে। এজন্য তাঁরা প্রাতিষ্ঠানিক তাখাসসুসের পদ্ধতি চালু করেছেন।
আমার জানা মতে, এই মাকসাদগুলো সামনে রেখে হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ বানূরী (১৩২৬-১৩৯৭ হি.) রাহ. এই উপমহাদেশে সর্বপ্রথম তাখাসসুসের নেযাম চালু করেন। মাদরাসায়ে আরাবিয়া নিউটাউন (বর্তমানে জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া বানূরী টাউন)-এ তিনি তা শুরু করেন। প্রথমে ‘আততাখাসসুস ফী উলূমিল হাদীসিশ শরীফ।’ পরে ‘আততাখাসসুস ফিল ফিকহিল ইসলামী।’ অতপর ‘আততাখাসসুস ফিদ দাওয়াহ ওয়াত তাহকীক’, দারুত তাসনীফ ইত্যাদি বিভাগ আরম্ভ করেন। আনুমানিক একই সময়ে হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ শফী (১৩১৪-১৩৯৬ হি.) রাহ. দারুল উলূম কৌরঙ্গী (বর্তমানে জামেয়া দারুল উলূম করাচী)-তে ‘আততাখাসসুস ফিল ফিহকি ওয়াল ইফতা’ নামে আলাদা তাখাসসুস বিভাগ খুলেছিলেন। এই হিসাবে প্রচলিত পদ্ধতির তাখাসসুসের বয়স মাত্র পঞ্চাশ বছরের মত। কিন্তু আফসোস! তাখাসসুসের এই রীতি উরুজে পৌঁছার আগেই তানাযযুলের শিকার হয়ে পড়েছে! আর এখন তো ইলা মাশাআলাহ রসমিয়্যাত ও সাতহিয়্যাতের ভয়ানক ঘুণও তাতে লেগে গেছে! তাখাসসুস ক্রমান্বয়ে দাওরা হাদীস পর্যন্ত নেসাবের একটি অংশে পরিণত হতে চলেছে! কিতাবি এস্তেদাদসহ যেসমস্ত গুণাবলি দরসে নেযামীর মাধ্যমেই অর্জিত হবার কথা, তাখাসসুসকে এখন সেগুলো অর্জনের শেষ ক্ষেত্র ভাবা হচ্ছে। একটি জিনিষকে তার মাউজুর বাইরে ব্যবহার করলে যা হবার এখানেও তাই হচ্ছে! না তাখাসসুসের আসল মাকসাদ হাসিল হচ্ছে, না নতুন কোনো মাকসাদ! আমার ধারণায় বর্তমানে তাখাসসুস অযত্ন-অবহেলা এবং জরাজীর্ণতার অসহনীয় একটা দাউর পার করছে। আলাহ তাআলা সকলকে হেফাজত করুন, সিরাতে মুস্তাকীমের উপর দৃঢ়পদ রাখুন। আমীন।
মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকার ইফতিতাহ হয়েছে ১৪১৬ হিজরীর শাওয়ালে। যে কয়জন আকাবিরের নির্দেশ ও নেগরানিতে মারকায শুরু হয়েছে তাদের নিকট এর বুনিয়াদি মাকসাদ হলো উচ্চতর পড়াশোনা এবং তাখাসসুসের বিষয়ে অধিক দৃষ্টি দেওয়া। তাই আলাহ্র উপর ভরসা করে সে বছরই মারকাযে ‘আততাখাসসুস ফী উলূমিল হাদীসিশ শরীফ’ এবং ‘আততাখাসসুস ফিল ফিকহি ওয়াল ইফতা’ শিরোনামে কিছু নকল-হরকত শুরু হয়েছিলো। গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা এবং অনেকদিনের একান্ত ইচ্ছা সত্ত্বেও ‘আত তাখাসসুস ফী উলূমিল কুরআনিল কারীম’ এবং ‘আত তাখাসসুস ফিদ দাওয়াহ ওয়াল ইরশাদ’ শুরু করা সম্ভব হয়নি। আলাহ তাআলা এর জন্য রিজাল ও আসবাব পয়দা করে দিন। সকল শো’বাকে কবুল ও মঞ্জুর করে নিন। সাতহিয়্যাত ও রসমিয়্যাত থেকে হেফাজত করুন। তাখাসসুসের হাকীকত পর্যন্ত পৌঁছার তাওফীক দান করুন। আমীন।
বিগত ১৭/১৮ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে মারকাযের যিম্মাদারগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে মারকাযের সকল শো’বার প্রথম সাল মুশতারাক হবে। যিনি তাখাসসুসের যে বিভাগে দাখেলা নিতে আগ্রহী তিনি সে বিভাগেই পরীক্ষা দিবেন এবং তাতে ভর্তি হবেন। তবে সকল বিভাগের সালে আউয়াল অভিন্ন এবং মুশতারাক নেসাবে গঠিত হবে। ইনশাআলাহ তাতে ‘আল ফিকহুল আম লিদ্দীন’, ‘আল আকলুল আম’, কিছু মা‘লুমাতে আ-ম্মাহ এবং
ما لا يسع طالبا جهله
-এর অধীনে আসে এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যে সমস্ত বিষয় তাখাসসুসের সঙ্গে সংশিষ্ট সকলের জানা থাকা আবশ্যক, কিন্তু ফন ভিন্ন হওয়ার কারণে কোনো শো’বার নেসাবেই তা সংযুক্ত করা সম্ভব হয় না, এমন বিষয়গুলিই মূলত মুশতারাক নেসাবে শামিল হবে। যবান ও কলমের পোখতাগির জন্যও তামরীন ইত্যাদি নেসাবভুক্ত থাকবে।
এক্ষেত্রে প্রত্যেক শো’বার যে নেসাব চলছিল, তার কিছু অংশ মুশতারাক সালে চলে আসবে। এরপর গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন ও পরিমার্জনেরর সাথে চলমান নেসাবের বাদবাকি অংশ সালে দুওম ও সালে সুওমে পুরা করা হবে। আর যেমনটা বারবার আরজ করা হয়েছে, দুই/তিন বছরের এই তাখাসসুস মূলত ‘কিসমুত তাখাসসুস’ নয়, এটা ‘কিসমুত তাদরীব।’ একে বেশির বেশি তাখাসসুসের ‘তামহীদ’ বলা যেতে পারে। সুতরাং তিন সালের পর যাদের হিম্মত হবে এবং এদারা যাদের ব্যাপারে মুনাসিব মনে করবে, তারা যত দিন ইচ্ছা মেহনত জারি রেখে তাখাসসুসের মঞ্জিলের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে এবং ইনশাআলাহ সে আর কখনো এ-ময়দানের নিমগ্নতা ভুলতে পারবে না।
دريں ورطہ كشتى فرو شد ہزار * كہ پيدا نہ شد تختئہ بر كنار
مكتب عشق كا انداز نرالا * جس نے سبق ياد كيا اسے پهر چهٹى نہيں ملى
দাখেলার তারিখ, ইমতিহানের বিষয়বস্ত্ত পূর্বের মতোই। ফরম বিতরণ হবে ৫ শাওয়াল যোহর পর্যন্ত। এ-দিনই বাদ-যোহর লিখিত পরীক্ষা। ৬ শাওয়াল সকাল থেকে মৌখিক পরীক্ষা।
পরীক্ষার বিষয়
* ‘আততাখাসসুস ফী উলূমিল হাদীসিশ শরীফ’ বিভাগের লিখিত পরীক্ষা ফাতহুল বারী, ১ম খন্ড ও মুকাদ্দিমা ফাতহুল বারী ৮ম ও ৯ম পরিচ্ছেদ থেকে এবং মৌখিক পরীক্ষা সংশিষ্ট যে কোনো কিতাব থেকে নেওয়া হতে পারে।
* ‘আততাখাসসুস ফিল ফিকহি ওয়ালইফতা’ বিভাগের লিখিত পরীক্ষা ফাতহুল কাদীর (কিতাবুল বুয়ূ) ও নূরুল আনওয়ার থেকে এবং মৌখিক পরীক্ষা হিদায়া ছালিছ ও সংশিষ্ট যে কোনো বিষয় থেকে নেওয়া হবে। ষ