এটি হাদীস নয়
এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা গেল, কেউ ফজরের দুই রাকাত (ফরয) নামায আদায় করলে আলাহ তার সারা দিনের জামিন হয়ে যান। যোহরের চার রাকাত (ফরয) ও আসরের চার রাকাত (ফরয) -এই আট রাকাত আদায় করলে সে আট জান্নাতের মালিক হয়ে গেল। মাগরিবের তিন রাকাত (ফরয) ও ইশার চার রাকাত (ফরয) -এই সাত রাকাত আদায় করলে সাত জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে গেল।
এই বক্তব্যের প্রথম অংশ (ফজরের নামায আদায় করলে আলাহ সারা দিনের জামিন হয়ে যান।) সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম ইরশাদ করেন, ‘‘যে ব্যক্তি ফযরের নামায আদায় করল সে আলাহর জিম্মায় চলে গেল...।’’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৫৭) কিন্তু বাকি অংশ কোনো হাদীসে পাওয়া যায় না। সুতরাং এ অংশ হাদীস নয়।
এর পরিবর্তে নামাযের ফযীলত বিষয়ে নিম্নোক্ত সহীহ হাদীসগুলো বলা যেতে পারে।
রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহ ওয়াসালাম বলেন, আলাহ পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি সুন্দর করে ওযু করবে এবং সময় মত তা (পাঁচ ওয়াক্ত নামায) আদায় করবে, পূর্ণরূপে রুকু, (সিজদা) করবে, খুশু খুযু সহকারে তা আদায় করবে, তার ব্যাপারে আলাহর প্রতিশ্রুতি রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করবেন। আর যে তা করবে না তার ব্যাপারে আলাহর কোনো প্রতিশ্রুতি নেই; তাকে ক্ষমাও করতে পারেন আবার আযাবে গ্রেফতার করতে পারেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪২৫)
হাদীসে কুদসীতে আলাহ তাআলা বলেন, (হে নবী!) আমি আপনার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছি এবং এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যে, যে ব্যক্তি সময়মত যত্নসহকারে তা আদায় করবে আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো। আর যে তা করবে না তার ব্যাপারে আমার কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৩০)
আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের মাধ্যমে বান্দার গুনাহ মাফ হওয়ার নিম্নোক্ত হাদীস তো সবারই জানা।
রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহ ওয়াসালাম বলেন, তোমাদের কারো বাড়ির দরজায় যদি একটি নহর থাকে আর সে তাতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তার শরীরে কি কোনো ময়লা বাকি থাকতে পারে? সাহাবার বললেন, কখনোই না। তখন রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহ ওয়াসালাম বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযও তেমন; এর মাধ্যমে আলাহ বান্দার গুনাহ মিটিয়ে দেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫২৮; সহীহ মুসলিম ১৫৫৪)
এছাড়া এধরনের আরো অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে।
আর আলকুরআনুল কারীমে তো জান্নাতুল ফিরদাউসের আধিকারীদের গুণ বলা হয়েছে -‘তারা নামাযের প্রতি যত্নবান হবে, খুশু খুযু সহকারে নামায আদায়কারী হবে।’ সুতরাং নামাযের সাথে জান্নাতের ওয়াদা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির বিষয়টি ওতপ্রত জড়িত। তাই নামাযের ফযীলত হিসেবে এ বিষয়ক কুরআনের আয়াত ও সহীহ হাদীস বলা উচিত। কিন্তু নিজ থেকে কোনো ফযীলত বানিয়ে বলা বা ভিত্তিহীন কোনো কিছু ফযীলত হিসেবে বলা ঠিক নয়।
আলাহ আমাদের ভিত্তিহীন কথা বলা থেকে হেফাযত করুন।