কাদীম নেযামে তালীম : কিছু বৈশিষ্ট্য
পুরনো শিক্ষা-ব্যবস্থা সকল প্রকার ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত ছিল না। শাস্ত্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এর বেশ কিছু দিক বিবেচনা ও সংশোধনযোগ্য। কিন্তু যেসকল মনীষী এই ব্যবস্থার প্রবর্তক ও দায়িত্বশীল ছিলেন তাঁদের রুচি ও দ্বীনী প্রাণশক্তির কারণে এ ব্যবস্থা এমন কিছু বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিল যা এখন নতুন শিক্ষা-ব্যবস্থায় অনুপস্থিত।
অতি সংক্ষেপে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হচ্ছে, যার অনেক উদাহরণ ছড়িয়ে আছে হিন্দুস্তানের ইলমী ও দ্বীনী ইতিহাসের হাজার হাজার পৃষ্ঠায়। নমুনা হিসেবে কিছু উদাহরণ উল্লেখ করছি।
ইখলাস ও লিলাহিয়াত এবং ‘ইছার’ ও আত্মত্যাগ
কাদীম উস্তাযগণের নিদর্শন ও সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল ইখলাস ও আত্মত্যাগ। দ্বীনী ইলমের শিক্ষাদান ও শিক্ষাগ্রহণের পরকালীন সওয়াব এবং উস্তায ও শিক্ষকের দ্বীনী মর্যাদা তাঁদের কাছে একেবারে স্পষ্ট থাকায়, এমনকি তা তাঁদের ঈমান ও আকীদায় পরিণত হওয়ায় তাঁদের বিরাট অংশ আলাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও সওয়াবের জন্যেই তালীম-তাআলমে নিয়োজিত ছিলেন। তাঁরা একে মনে করতেন সর্বোত্তম ইবাদত ও সর্বোচ্চ সৌভাগ্যের বিষয়। তাঁদের অনেকেরই জীবন ছিল অল্পেতুষ্টি ও দুনিয়া বিমুখতার এবং অনাহার ও দারিদ্রে্যর। হিন্দুস্তানী আলিমগণের উপর লিখিত প্রাচীন জীবনীগ্রন্থগুলোতে সেই আসাতিযায়ে কেরামের দুনিয়াবিমুখতা, আত্মত্যাগ ও অতি দারিদ্রে্যর অনেক মর্মস্পর্শী ঘটনা উলেখিত হয়েছে।
হিন্দুস্তানের ইতিহাস বিষয়ে পান্ডিত্যের অধিকারী মাওলানা গোলাম আলী আযাদ বুলগেরামী রাহ. তাঁর ‘মাআসিরুল কিরাম’ গ্রন্থে তাঁর উস্তায মীর তুফাইল মুহাম্মাদ বুলগেরামী রাহ. -এর সূত্রে বুলগেরামের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস মীর সায়্যিদ মুবারক (মৃত্যু ১১১৫ হি.) রাহ.-এর একটি ঘটনা উলেখ করেছেন।
উস্তায মীর তুফাইল মুহাম্মাদ রাহ. বলেন, একদিন আমি মীর সায়্যিদ মুবারক রাহ.-এর খেদমতে হাজির হলাম। তিনি অযু করার জন্য দাঁড়াতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন। আমি তাড়াতাড়ি তাকে ওঠালাম। কিছুক্ষণ পর তাঁর হুঁশ ফিরল। আমি এ দুর্বলতার কারণ জিজ্ঞেস করলাম। বারবার জিজ্ঞাসা ও চাপাচাপির পর জানালেন, তিন দিন যাবৎ অনাহারে আছেন এবং তা না কাউকে জানিয়েছেন, না কারো কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করেছেন। অবস্থা জেনে খুব কষ্ট হল। তৎক্ষণাৎ কিছু খাবার তৈরী করে নিয়ে এলাম। তিনি তা দেখে প্রথমে খুব খুশি ও মুহাববাত প্রকাশ করলেন এবং দুআ করলেন। এরপর বললেন, যদি কিছু মনে না কর তাহলে একটা কথা বলি। আমি বললাম, জী বলুন। তিনি বললেন, এজাতীয় খাবারকে হাদীছের পরিভাষায় ইশরাফের খাবার বলে। অর্থাৎ যে খাবারের প্রত্যাশা ও আগ্রহ মনে জেগেছে। ফিকহের বিধানমতে যদিও এ খাবার খাওয়া জায়েয, এমনকি তিনদিনের উপবাসীর তো শরীয়ত মৃত প্রাণী খাওয়ারও অনুমতি দেয়, কিন্তু দুনিয়া ত্যাগীদের নীতিতে এজাতীয় খাবার গ্রহণ জায়েয নয়।
তাঁর এ কথা শোনামাত্র আমি উঠে দাঁড়ালাম এবং খাবারের পাত্রগুলো নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম। দরজার ওপাশে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আবার নিয়ে এলাম এবং বললাম, হযরত! আমি যখন এ খাবার নিয়ে ফিরে গেলাম তখন কি আপনার মনে হয়েছে যে, আমি আবার এগুলো নিয়ে ফিরে আসব? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, এখন তো আর এ খাবার ইশরাফের খাবার নয়। কারণ, এখন তো আর এ খাবারের প্রত্যাশা ছিল না। আমার এ কৌশলে হযরত খুব আনন্দ পেলেন এবং বললেন, তুমি তো আশ্চর্য বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিলে! এরপর আগ্রহের সাথে সেই খাবার গ্রহণ করলেন। (মাআসিরুল কিরাম পৃ. ৯৬-৯৭)
এ এক বিরল ও অসাধারণ ঘটনা হলেও হিন্দুস্তানের ইলম ও দ্বীনের ইতিহাসে উস্তাযগণের আত্মত্যাগ ও অল্পেতুষ্টি এবং দারিদ্র্য ও দুনিয়া বিমুখতার ঘটনা এত প্রচুর যে, তা এ শিক্ষা-ব্যবস্থার ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছিল। [দ্র. নুযহাতুল খাওয়াতির, মাআসিরুল কিরাম, তাযকিরায়ে উলামায়ে হিন্দ এবং নিযামে তালীম ও তরবিয়ত ইত্যাদি]
উস্তাযগণের ইখলাস ও ইছারের আরেকটি ঘটনা উলেখ করছি, যা প্রায় এক শতাব্দী পরের।
মাওলানা আব্দুর রহীম ছাহেব (মৃত্যু ১২৩৪ হি.) রাহ. রামপুরে দরস দিতেন। রোহিলা খন্ডের এক ইংরেজ কর্মকর্তা মাস্টার হকিংস তাঁকে বেরেলী কলেজের অধ্যাপনার জন্য আড়াইশ রুপী মাসিক বেতনের প্রস্তাব দিল, যা ছিল ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে বর্তমানের হাজার বারো শ রুপীর চেয়েও বেশি মূল্যের। এরপর সে এই ওয়াদাও করল যে, অল্পকিছু দিনের মধ্যেই এই বেতন আরো বাড়ানো হবে। সাথে সাথে আপনারও পদোন্নতি হবে।
কিন্তু আব্দুর রহীম ছাহেব রাহ. এ উযর পেশ করলেন যে, ‘রিয়াসাত’ থেকে মাসিক দশ রুপি পাই। তা বন্ধ হয়ে যাবে। হকিংস বলল, আমি তো সেই বেতনের পঁচিশ গুণ বেশি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। তিনি বললেন, আমার বাড়িতে একটি বড়ই গাছ আছে, যার বড়ই খুবই মিষ্টি এবং আমারও খুব পছন্দের। বেরেলীও চলে গেলে সে গাছের বড়ই খেতে পারব না। ইংরেজ বেচারা এখনো মাওলানার মনের কথা বুঝতে পারল না। তাই বলল,
রামপুর থেকে আপনার আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা করা যাবে। সুতরাং বাড়ির গাছের বড়ই খেতে পারবেন। মাওলানা বললেন, এখানে আরেকটি বিষয় হল, রামপুরে আমার কাছে যে ছাত্ররা পড়ে তাদের পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। আর আমিও তাদের খেদমত থেকে বঞ্চিত হব। ইংরেজ নাছোড়বান্দা। বলল, আমি ঐসকল ছাত্রের জন্য ভাতা নির্ধারণ করে দেব। ওরা বেরেলীতেই আপনার কাছে থেকে পড়াশোনা করতে পারবে। অবশেষে এই আলেমে দ্বীন তাঁর সর্বশেষ তীরটি নিক্ষেপ করলেন, যার কোনো জবাবই ইংরেজের কাছে ছিল না। তিনি বললেন, এই সব কথা ঠিক, কিন্তু দ্বীনী শিক্ষাদানের বিনিময় গ্রহণের বিষয়ে কিয়ামতের দিন আমি আলাহ তাআলার কাছে কী জবাব দেব? (ইনসানী দুনিয়া পর মুসলমানোঁ কে উরুজ ও যাওয়াল কা আছর, নুযহাতুল খাওয়াতির বরাতে পৃ. ৩২৪)
দরসে নিমগ্নতা
দরস-তাদরীসে পুরনো উস্তাযগণের যে নিমগ্নতা ও নিবিষ্টতা ছিল তা সরাসরি তাঁদের ঘটনা ও উদাহরণ ছাড়া উপলব্ধি করা কঠিন। পঠন-পাঠন ছিল তাঁদের রূহের খোরাক এবং তা পরিণত হয়েছিল তাদের ইবাদত-আকীদায়। জীবনের সুদীর্ঘকাল এবং দিনরাতের বেশি থেকে বেশি সময় তাঁরা পঠন-পাঠনেই মশগুল থাকতেন।
মালিকুল উলামা আলামা ওজীহুদ্দীন গুজরাটী রাহ. প্রায় পঁয়ষট্টি সাতষট্টি বছর দরস দিয়েছেন। মাওলানা আব্দুস সালাম লাহোরী রাহ., মোলা আব্দুল হাকীম শিয়ালকুঠি রাহ., মাওলানা আলী আজগর কনৌজী রাহ. প্রমুখের অধ্যাপনার সময়কাল ছিল ষাট বছর।
মাওলানা আহমদ আমীঠবী উরফে মোলা জীওয়ান রাহ. জীবনের শেষদিন পর্যন্ত দরস দিয়েছেন। এভাবে অন্যদের ঘটনাও ইতিহাসের পাতায় সংরক্ষিত আছে। মানবীয় প্রয়োজন ও অল্পকিছু বিশ্রামের সময় ছাড়া উস্তাযগণের পুরো সময়ই কাটতো দরস-তাদরীসে। কেউ কেউ খাওয়ার সময় এবং হাঁটাচলার সময়ও পড়াতেন। মোলা আবদুল কাদের বাদায়ূনী রাহ. তার উস্তায মাওলানা আব্দুলাহ বাদায়ূনী রাহ. সম্পর্কে লিখেছেন, তিনি যখন ঘরের বাজার-সদাই করার জন্যে হাটে যেতেন তখন ছাত্রদের একটি দলও তাঁর সাথে যেত। তিনি সে সময়ও তাদের পড়াতে থাকতেন। (মুন্তাখাবাতুত তাওয়ারীখ পৃ. ৫৬)
মাওলানা আব্দুল হাই ফিরিঙ্গী মহলী রাহ. ফজরের নামাযের আগেও ছাত্রদেরকে সময় দিতেন এবং সে সময়ও এক সবক পড়ানো হয়ে যেত। কাদীম উস্তাযগণের আরো অনেকেই এই সময় সবক পড়াতেন।
ছাত্রদের সাথে সম্পর্ক
ছাত্রদের সাথে উস্তাযগণের সম্পর্ক এত গভীর ছিল, যার দৃষ্টান্ত বর্তমান যুগে এবং বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় খুঁজে পাওয়া কঠিন। উস্তাযগণ ছাত্রদের মনে করতেন আপন সন্তানের মত এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করতেন এবং খাওয়াপরায় নিজ পরিবারের সদস্য গণ্য করতেন। বাদশাহ আকবরের শাসনামলের শাহী চিকিৎসক ও প্রসিদ্ধ শিক্ষক হাকীম আলী গিলানী রাহ. সম্পর্কে ‘তাযকেরায়ে উলামায়ে হিন্দ’-এর রচয়িতা লেখেন, ‘তিনি সারাক্ষণ ছাত্রদের পড়ানোর কাজে থাকতেন এবং তাদেরকে ছাড়া খাবার খেতেন না। (মুন্তাখাবুত তাওয়ারীখ পৃ. ৫১)
ছাত্রদের সাথে উস্তাযুল মুলক মাওলানা মুহাম্মাদ আফযাল জৌনপুরী রাহ.-এর এত হৃদ্যতা ছিল যে, তাঁর প্রসিদ্ধ শাগরেদ মোলা মাহমুদ জৌনপুরী রাহ.-এর যখন ইন্তিকাল হয়ে গেল তখন তিনি সেই শোক আর কাটিয়ে উঠতে পারেননি। মাওলানা গোলাম আলী আযাদ বুলগেরামী রাহ. লেখেন-চলিশ দিন পর্যন্ত তাঁকে কেউ হাসতে দেখেনি। চলিশ দিন পর তিনিও তার শাগরেদের সাথে গিয়ে মিলিত হন। অর্থাৎ ইন্তিকাল করেন। (মাআসিরুল কিরাম)
মালিকুল উলামা আব্দুল আলী বাহরুল উলূম রাহ.-কে যখন মুনশী সদরুদ্দীন খান ‘বুহার’ নিয়ে আসতে চাইলেন এবং অনেক বেশি অযীফার প্রস্তাব করলেন তখন মাওলানা বললেন, আমার সাথে একশ তালিবুল ইলম আছে। তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা না হলে আমি যেতে পারব না। মুনশী সাহেব তাদেরও দায়িত্ব নিলেন এবং মাওলানা সেখানে গেলেন।
মাদরাজের নবাব তাঁর জন্যে এক হাজার রুপী মাসিক ভাতা নির্ধারণ করলেন। তাঁর সেই ভাতা পুরোটাই ছাত্রদের পেছনে খরচ হয়ে যেত। তার কিছুই ফিরিঙ্গী মহলে পরিবারের জন্য পাঠাতে পারতেন না। সেজন্যে তাঁর ছেলে মাওলানা আব্দুন নাফে কয়েকবার মাদরাজে যান এবং কয়েকবার পিতার সাথে এ বিষয়ে কথা বলেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে লখনৌ ফিরে যান। এমন ঘটনা হিন্দুস্তানের ইতিহাসে দুর্লভ নয়। তাছাড়া এই যুগের অনেক আলিমও তাঁদের ঐ যুগের উস্তাযগণের স্নেহ-মমতা এবং ত্যাগ ও উদারতার অনেক ঘটনা নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করেছেন।
উস্তাযের সাথে ছাত্রদের সম্পর্ক
নিজ উস্তাযগণের সাথেও ছাত্রদের সম্পর্ক এত গভীর ছিল যা
বাস্তবিকপক্ষেই ছিল সৌভাগ্যানুভূতি, হৃদ্যতা ও আন্তরিকতার চূড়ান্ত নমুনা। এ ঘটনা তো ইতিহাসের পাতায় সর্বদা জীবন্ত থাকবে যে, একবার উস্তাযুল উলামা মোলা নিযামুদ্দীন ফিরিঙ্গী মহলী রাহ.-এর মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল। এই সংবাদ শুনে তাঁর এক শাগরেদ সায়্যিদ যরীফ আযীমাবাদী কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে গেলেন। আরেক শাগরেদ সায়্যিদ কামালুদ্দীন আযীমাবাদী এ শোক সহ্য করতে না পেরে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে গেলেন। পরে জানা গেল, সংবাদটি ভুল ছিল। (নুযহাতুল খাওয়াতির, মাওলানা আব্দুন নাফে রাহ.-এর আলোচনা, খন্ড ৭)
এ ধরনের ঘটনা যদিও দুর্লভ, কিন্তু
উস্তাযের প্রতি ছাত্রদের ওফাদারী ও উৎসর্গিতপ্রাণ হওয়ার এজাতীয় ঘটনা পুরনো শিক্ষা-ব্যবস্থার একান্ত বৈশিষ্ট্য। এ ধারার আলিমগণ তাঁদের রচিত কিতাবে যেভাবে উস্তাযগণের আলোচনা করেন তা থেকেও তাঁদের গভীর ও
অন্তরঙ্গ মুহাববতের প্রকাশ পাওয়া যায়।
সমকালীন রাজা বাদশাহ ও আমীর-রঈসের মূল্যায়ন
পুরনো শিক্ষা-ব্যবস্থার একটি বৈশিষ্ট্য ছিল, সমকালীন রাজা-বাদশাহ, আমীর-উমারা এবং সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ সে সময়ের মুখলিস উস্তায ও মর্যাদাবান আলিমগণের খেদমত করতে পারাকে নিজেদের পরম সৌভাগ্য ও নাজাতের ওসীলা মনে করত।
হিন্দুস্তানের মুসলিম শাসনামলের ইতিহাসে রাজা-বাদশাহ ও আমীর-রঈসগণের ইলমের পৃষ্ঠপোষকতা ও আলিমের মর্যাদা দানের অনেক ঘটনা সংরক্ষিত আছে। তারীখে ফেরেশতা’র লেখক মুহাম্মাদ কাসেম রেজাপুরী লেখেন, একবার মালিকুল উলামা
শিহাবুদ্দীন দৌলতাবাদী খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে তখনকার সুলতান ইবরাহীম শারকী তাঁকে দেখতে গেলেন। শারীরীক অবস্থার খোঁজ-খবর নিলেন। চিকিৎসার ব্যবস্থার করলেন এবং প্রয়োজনীয় কিছু কথাবার্তা বললেন। এরপর এক পেয়ালা পানি নিয়ে মাওলানার মাথার উপর ঘুরিয়ে সেই পানি নিজেই পান করে ফেললেন। আর বললেন, হে খোদা! কাযী সাহেবের জন্য যে বিপদ নির্ধারিত তা আমার উপর নাযিল করুন আর তাকে সুস্থতা দান করুন। (তারীখে ফেরেশতা ৪/৬৭৭)
[নোট : তারপর সুলতান রোগাক্রান্ত হয়ে ইন্তিকাল করলেন আর কাযী সাহেব সেই বছরই ৮৪০ হি. অথবা তার দুই বছর পর ৮৪২ হি.-ইন্তিকাল করেন]
আমীর ফাতহুল্লাহ সিরাজীর মৃত্যুর পর বাদশাহ আকবর তার মনের অবস্থা ও আক্ষেপ এভাবে প্রকাশ করেন- ‘যদি ফিরিঙ্গীরা (ইংরেজরা) তাঁকে বন্দি করত আর আমার রাজা কোষাগারের সমস্ত সম্পদ মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করত তাহলে সেটাও হত খুবই সস্তা ও লাভজনক লেনদেন। তাঁর মতো মহামূল্য-জওহারের বিনিময়ে এ হত খুবই নগণ্য মূল্য।’
মোলা আবদুল হাকীম শিয়ালকুটিকে তৎকালীন বাদশাহ দুইবার রূপা দিয়ে ওজন করেছিলেন আর কাযী মুহাম্মাদ আসলাম হারবী (আলামা মীর যাহেদের আববা)-কে একবার স্বর্ণ দিয়ে। এ ছিল বরেণ্য ব্যক্তিদের স্বীকৃতি ও মূল্যায়নের তৎকালীন শাহী পদ্ধতি।
‘আগসানে আরবাআ’ কিতাবের লেখক মাওলানা ওয়ালী উলাহ ফিরিঙ্গী মহলী মাদরাজে মাওলানা বাহরুল উলূমকে রাজকীয় অভ্যর্থনার চিত্র এঁকেছেন এভাবে- ‘পালকি শাহী মহলের নিকট পৌঁছলে মাওলানা নামতে গেলেন। নবাব তাঁকে বসে থাকার অনুরোধ করলেন। তারপর সেই পালকি নিজ কাঁধে বয়ে শাহী মহলে নিয়ে গেলেন এবং শাহী মসনদে নিজের আসনে তাঁকে বসালেন। এরপর কদমবুসি করলেন আর বললেন, আমার কী যোগ্যতা আছে যে, আপনি কদম রেখে আমার ঘর আলোকিত করবেন।’
রাজা-বাদশাহ ও আমীর-উযীররা ছাড়াও জমিদার-জায়গীরদার ও সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণী মাদরাসার দায়িত্ব গ্রহণ ও উলামা তালাবার খেদমত করাকে মহা সৌভাগ্য মনে করতেন। তাদের সদিচ্ছা, সৎসাহস ও দ্বীনী ইলমের পৃষ্ঠপোষকতার বদৌলতে সারাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অসংখ্য দ্বীনী প্রতিষ্ঠান।
মাওলানা গোলাম আলী আযাদ বুলগেরামী তাঁর নিজ অঞ্চল ‘আওয়াধ’-এর তৎকালীন অবস্থা বর্ণনা করেছেন। সেই বর্ণনা থেকে অন্যান্য অঞ্চলের অবস্থাও অনুমান করা যায়। তিনি লেখেন, ‘পুরো ‘আওয়াধ’ ও ‘ইলাহাবাদ’ অঞ্চলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দশ মাইল বা খুব বেশি হলে বিশ মাইল পর পর ছিল সমাজের উচ্চ শ্রেণী, বিত্তবান বা উচ্চ বংশীয় লোকদের মহলা। যারা ছিল সুলতান বা আমীরদের বেতনভুক্ত, তাদের জায়গীরপ্রাপ্ত। তারা মসজিদ, মাদরাসা ও খানকা প্রতিষ্ঠা করে রেখেছিলেন এবং উস্তায ও মুদাররিসগণ সব জায়গায় দ্বীনী ইলম বিস্তারে মশগুল ছিলেন। ইলমে দ্বীনের প্রতি তাঁরা সৃষ্টি করেছিলেন ব্যাপক আগ্রহ। ইলমের পিপাসুরা ইলম অর্জনের উদ্দেশ্যে এক শহর থেকে অন্য শহরে দলবেঁধে সফর করত এবং যেখানেই সুযোগ হত ইলম অর্জনে মশগুল হয়ে যেত। প্রত্যেক অঞ্চলের সামর্থ্যবান ব্যক্তিগণ ঐ সকল তালিবুল ইলমদের প্রতি খেয়াল রাখতেন এবং তাদের কোনো খেদমত করতে পারাকে পরম সৌভাগ্য মনে করতেন। শাহজাহান ‘আনা-রাল্লাহু বুরহা-নাহু’-এর একটি বাণী ছিল (অর্থ) ‘পূর্ব হচ্ছে আমাদের রাজ্যের শীরায -নগরী’। (মাআসিরুল কেরাম পৃ. ২২২)
আত্মশুদ্ধি এবং আহলে দিল বুযুর্গদের সাথে সম্পর্ক
কাদীম শিক্ষা-ব্যবস্থা ও এর নীতি নির্ধারক দায়িত্বশীলদের এক উলেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য এই ছিল যে, তারা নিজেদের ইলমী গভীরতা, শাস্ত্রীয় পান্ডিত্য, খ্যাতি ও উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন হওয়ার সাথে সাথে নিজেদের আত্মশুদ্ধি ও তাআলক মাআলাহর প্রতিও পূর্ণ মনোযোগী ছিলেন। তাঁরা যেমন ইলম অর্জনের জন্য দক্ষ ও শাস্ত্রজ্ঞ
উস্তাযগণের শরণাপন্ন হওয়াকে জরুরি মনে করতেন তেমনি কলবের ইসলাহ ও সংশোধনের জন্য আহলে দিল বুযুর্গ-মাশায়েখের জুতো বহন এবং তাঁদের দরবারে ভিখারী হয়ে থাকাকেও নিজের পূর্ণতার জন্য জরুরি মনে করতেন। এতে তাঁদের খ্যাতি ও মানমর্যাদা মোটেই প্রতিবন্ধক হত না। একদিকে তারা সমকালীন রাজা বাদশাহ ও আমীর উমারার সামনে আত্মমর্যাদাশীল ও শাহী মেযাজের অধিকারী প্রমাণিত হতেন অন্যদিকে চাটাইয়ের বাদশা-বুযুর্গদের সামনে অতি বিনয়ী।
আত্মবিলোপ ও আত্মমর্যাদাবোধের দুর্লভ সম্মিলন ছিল সেই মুখলিস আলিমগণের জীবন ও চরিত্রের এক অনন্য বেশিষ্ট্য।
হিন্দুস্তানের তালীমী ইতিহাসের এ দিক কোনোভাবেই উপেক্ষা করা সম্ভব নয় যে, যে ব্যক্তিত্বদের আলাহ তাআলা ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা এবং অমর কীর্তি দান করেছেন এবং সারা হিন্দুস্তানে শত শত বছর ইলমী ঘরানাগুলো শাসন করেছেন, অবশ্যই তাদের সমকালীন কোনো ছাহেবে দিল মুখলিস বুযুর্গের সাথে ইসলাহী সম্পর্ক ছিল।
হিন্দুস্তানের তালীম-তাদরীসের কেন্দ্র ও ঘরানাগুলোতে প্রথমত তিনজন মনীষীর ভূমিকাই ছিল প্রধান। যাঁদের পর তাঁদের ছাত্র ও ছাত্রের ছাত্ররা কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এই ভূখন্ডে ইলমের প্রদীপ প্রজ্বলিত রেখেছেন। এঁরা হলেন দিল্লির প্রসিদ্ধ তিন উস্তায : আলামা আব্দুল মুকতাদির কিন্দি থানেশ্বরী (মৃত্যু ৭৯১ হি.) রাহ., তাঁর শাগরেদ মাওলানা খাজেগী দেহলবী (মৃত্যু ৮০৯ হি.) রাহ. এবং শায়খ আহমদ থানেশ্বরী (৮০১ হি.) রাহ.।
এই তিন মনীষীই ছিলেন শায়খ নাসীরুদ্দীন চেরাগ দেহলবীর মুরীদ ও তরবিয়তপ্রাপ্ত। তালীমী-সিলসিলার দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় ব্যক্তি ছিলেন আলামা ওজীহুদ্দীন ইবনে নাসরুলাহ গুজরাটী রাহ. (মৃত্যু ৯৯৮), যিনি আহমাদাবাদে সাতষট্টি বছর ‘মাকূল ও মানকূল’ পড়ানোর খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। তাঁর জীবদ্দশাতেই তাঁর ছাত্রশিষ্যরা আহমাদাবাদ থেকে লাহোর পর্যন্ত
বিভিন্ন জায়গায় ইলমী খিদমতে ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলে জীবদ্দশাতেই উস্তাযুল আসাতিযার মর্যাদা লাভ করেছিলেন। (সূত্র, তারীখে গুজরাট, কৃত : মাওলানা সায়্যিদ আব্দুল হাই রাহ.)
এই একটি প্রদীপের আলো দিয়েই জাহানাবাদ, আমীঠী জৌনপুর এবং লখনৌর বিখ্যাত দরগাহগুলো আলোকিত হয়ে পড়েছিল। এই মনীষী মাওলানা ওজীহুদ্দীন রাহ. ছিলেন শায়খ মুহাম্মাদ গাউছগায়ালিয়ারী রাহ.-এর দীক্ষাপ্রাপ্ত খলীফা। শায়খের অনেক দুআ পেয়েছিলেন তিনি।
এই সিলসিলার আরো দুজন প্রসিদ্ধ উস্তায ছিলেন, শাহ পীর মুহাম্মাদ লখনবী এবং মাওলানা গোলাম নকশাবন্দ রাহ.। তাঁরা দুজনই ছিলেন চিশতিয়া তরীকার বাইআত ও খেলাফতপ্রাপ্ত। তাঁদের মাধ্যমে অনেক মাদরাসা এবং খানকা প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। সবশেষে যে দরস ও নেসাবে তালীম গোটা হিন্দুস্তানে সমাদৃত হল এবং আফগানিস্তান ও ইরান পর্যন্ত বিস্তৃত হল এর বিখ্যাত প্রবর্তক মোলা নিযামুদ্দীন সাহালবী রাহ. (মৃত্যু ১১৬১ হি.) ছিলেন কাদেরীয়া সিলসিলার একজন শায়খ সায়্যিদ আব্দুর রাযযাক বানছারী রাহ.-এর মুরীদ ও খাদেম এবং শায়খের প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসায় পূর্ণ সমাহিত। ‘মানাকেবে রাযযাকিয়া’র প্রতিটি ছত্রে তাঁর এ ভক্তি ও প্রেমের প্রকাশ ঘটেছে।
দারুল উলূম দেওবন্দ ও তার দেশব্যাপী ইলমী ও ইসলাহী ধারার প্রবর্তক মাওলানা মুহাম্মাদ কাসেম নানুতুবী রাহ. (মৃত্যু ১২৯৭ হি.) এবং দারুল উলূমের দ্বিতীয় মুরুববী মাওলানা রশীদ আহমদ গঙ্গুহী (মৃত্যু ১৩২৩ হি.) দুজনই ছিলেন সায়্যিদুত তাইফা হাজী ইমদাদুলাহ মুহাজেরে মক্কী রাহ.-এর ইজাযতপ্রাপ্ত খলীফা।
‘নদওয়াতুল উলামা’ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মুহাম্মাদ আলী মুঙ্গেরী রাহ. ছিলেন হযরত মাওলানা ফজলে রহমান গঞ্জমুরাদাবাদী রাহ.-এর খলীফা।
মোটকথা, হিন্দুস্তানের তালীমী সিলসিলার প্রতিটি ধাপেই ছিল সমকালীন ছাহেবে দিল এবং ছাহেবে নিসবত বুযুর্গদের সযত্ন তত্ত্বাবধান। আর এ সম্পর্ক এই শিক্ষাব্যবস্থাকে দান করেছে ইখলাস ও লিলাহিয়াত এবং প্রভাব ও গ্রহণযোগ্যতা।
এখানে একটি লক্ষণীয় ও
চিন্তাউদ্দীপক বিষয় আছে, যাকে কোনোভাবেই শুধু কাকতালীয় ঘটনা বলা যায় না। আর তা এই যে, অধিকাংশ নামজাদা আলিম ও বড় বড় উস্তাযের ইসলাহী সম্পর্ক যে সকল বুযুর্গের সাথে ছিল তাদের অধিকাংশের অবস্থায়ই ছিল এমন যে, নিয়মতান্ত্রিক পড়াশোনা বা প্রসিদ্ধির বিচারে সেযুগের মানুষ তাদেরকে ‘আহলে ইলম’ হিসেবে গণ্য করত না। যেমন মাওলানা মুহাম্মাদ ইসমাইল শহীদ রাহ. এবং মাওলানা আব্দুল হাই বুরহানী রাহ.-এর মতো যুগশ্রেষ্ঠ আলেমে দ্বীনের সায়্যিদ আহমদ শহীদ রাহ.-এর মুরীদ হওয়া, মোলা নিযামুদ্দীন সাহালবী রাহ.-এর মতো যুগশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বের সায়্যিদ আব্দুর রাযযাক বানছবী রাহ.-এর মুরীদ হওয়া এবং মাওলানা মুহাম্মাদ কাসেম নানুতুবী রাহ.-এর মতো শাস্ত্রের ইমাম হাজ্বী ইমদাদুলাহ মুহাজিরে মাক্কী রাহ.-এর মুরীদ হওয়া। এটা তাদের ঐকান্তিকতা, যথার্থ অনুসন্ধিৎসা, সৎসাহস ও অতুলনীয় বিনয়েরই প্রকৃষ্ট প্রমাণ। এ ইখলাস ও লিলাহিয়্যাতই তাদের এ সিলসিলার কাজ ও খেদমতকে বিস্তৃতি, স্থায়িত্ব ও ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা দান করেছে। ইলমের গভীরতা এবং মুতালাআ তাহকীকের স্বাদ ও লযযতের সাথে আপন আত্মিক পিপাসা ও প্রয়োজনের অনুভূতি ও তা নিবারণের ফিকির, এককথায় ইলম অর্জনের পাশাপাশি তাতে ইখলাস ও তাআলক মাআলাহর রূহ পয়দা করার চেষ্টা এ পুরনো শিক্ষা-ব্যবস্থার এক উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য, যার এক ফল এই ছিল যে, জনগণের সাথে এই ব্যবস্থার দায়িত্বশীল আলিম ও উস্তাযগণের গভীর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হত এবং সাধারণ জনগণ তাদের বাস্তব জীবনে আলিমগণের দ্বারা প্রভাবিত হত।
দ্বিতীয়ত এসকল বৈশিষ্ট্যের কারণে তারা নিজ নিজ যুগের বস্ত্তবাদী চিন্তা ও হাতছানি এবং রাজা বাদশাহ ও উচ্চবিত্তদের সাথে সম্পর্কের সুযোগ ও নানাবিধ নৈতিক দুর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন, যা থেকে শুধু ইলম ও মেধার দ্বারা মুক্ত থাকা কঠিন।
যে নিমগ্নতা ও ঐকান্তিকতা এবং যে ইখলাস ও আত্মত্যাগের সাথে এই সকল আলিম ও উস্তায সাত আটশো বছর পর্যন্ত নিজেদের দ্বীনী দায়িত্ব পালন করেছেন এবং প্রদীপ থেকে প্রদীপে আলো ঠেলে গেছেন তাতে আহলে দিল বুযুর্গদের সেই সোহবত ও তরবিয়ত এবং সেই দীক্ষা ও আত্মশুদ্ধির অনেক বড় অবদান ছিল, যা তারা ঐ আত্মিক কেন্দ্র ও ব্যক্তিত্বদের নিকট থেকে গ্রহণ করেছিলেন।
নিকট অতীতেও মাদরাসাগুলোতে এ রীতি ছিল যে, ইলম অর্জন ও শাস্ত্রীয় অধ্যয়ন সমাপণের পর ফারেগীন ছাত্ররা নিজেদের কলব ও রূহের সংশোধন ও উন্নতির জন্য এমন কোনো ব্যক্তি বা কেন্দ্রের সাথে সম্পর্ক করত যার প্রতি তাদের বা তাদের উস্তাযগণের আস্থা ও রূহানী সম্পর্ক রয়েছে। এরপর সেখানে কিছুদিন অবস্থান বা নিয়মিত যাওয়া আসার মাধ্যমে এ শাস্ত্রের সমাপণ করত, যা একান্তই পড়াশোনার সময় সম্ভব ছিল না।
সে হিসাবে মাওলানা লুৎফুলাহ ছাহেবের দরসগাহ (যা ছিল শেষযুগে একটি আন্তর্জাতিক মানের দরসগাহ)-এর ছাত্র ফারেগীন উপস্থিত হত পূর্বের শহর-নগরের রুশ্দ ও হেদায়েতের কেন্দ্র হযরত মাওলানা ফযলুর রহমান গঞ্জমুরাদাবাদী রাহ-এর দরবারে এবং উত্তর পশ্চিম হিন্দুস্তানের মাদরাসাগুলো অর্থাৎ দেওবন্দ, সাহারানপুর ও অন্যান্য মাদরাসা ও দরসগাহের উলামা তলাবা হাজির হত থানাভবন, গঙ্গুহ ও রায়পুরে, যেখানে হাজ্বী ইমদাদুলাহ মুহাজিরে মাক্কী রাহ. এবং হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ গঙ্গুহী রাহ. ও তাদের খলীফাগণ এ খেদমতে মশগুল ছিলেন। ষ
(অনুবাদে : তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব)